নিজস্ব প্রতিবেদক : যুদ্ধ-সংঘাত আর অস্ত্রের খেলায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের শিশুরাও যে রক্তাক্ত হচ্ছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ফের সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, যুদ্ধের পেছনে অর্থ ব্যয় না করে বিশ্বের শিশুদের খাবার ও স্বাস্থ্যের জন্য ব্যয় করুন। যুদ্ধ, অস্ত্র মানুষের মঙ্গল আনে না। “সবচেয়ে কষ্ট পায় আমার নারীরা, আর যুবকরা দেয় জীবন। সন্তানহারা পিতা মাতা, পিতা মাতা হারা সন্তান। তাদের কী যে বেদনা, সেটা আমরা জানি।”
ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল বুধবার শেখ রাসেল দিবস-২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “যুদ্ধের সময় কী অবস্থা হতে পারে, সেটা আমাদের নিজেদের জীবন দিয়ে দেখেছি। আমার চোখে দেখেছি, লাশ পরে আছে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায়।
“আজকে সারা পৃথিবীতে যে যুদ্ধ চলছে, কিছুদিন আগে দেখলাম ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, এখন আবার প্যালেস্টাইনের ওপর ইসরায়েল; ইসরায়েলেও শিশু মারা গেছে, প্যালেস্টাইনেও মানুষ মারা যাচ্ছে। গতকাল দেখলাম হাসপাতালে বন্দি করে মানুষ মারছে। রক্তাক্ত সেই শিশুদের চেহারা।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে বলব, যুদ্ধ বন্ধ করেন। অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করেন। আমরা যুদ্ধ চাইনা, যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। “বরং অস্ত্র বানানো এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা যে অর্থ ব্যয় হয়, সেই অর্থ সারা বিশ্বের শিশুদের খাদ্য, স্বাস্থ্য ও তাদের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হোক, এটাই আমাদের দাবি। আমরাই সেটাই চাই।”
বাংলাদেশ শান্তি চায়, সেই কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শান্তি উন্নতি দেয়, যুদ্ধ ধ্বংস করে। ধ্বংস চাই না উন্নতি চাই। আমরা শান্তির পক্ষে সবসময় কাজ করি। “ধর্ম-বর্ণ সকলকে মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। আর কেউ যদি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হয়, কেউ যদি পঙ্গু হয়, আমরা তো ছোটবেলা শিখেছি- অন্ধকে অন্ধ বলিও না, পঙ্গুকে পঙ্গু বলিও না। বরং তাদেরকে সাহায্য করো। আমাদের শিশুদেরকে সেভাবেই মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।” অনুষ্ঠানে শেখ রাসেল পদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
সোনামনিরা হবে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সৈনিক: আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ পরিচালনার জন্য শিশু কিশোরদের সেভাবে গড়ে তোলার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২৩’ উদযাপন ও শেখ রাসেল পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আগামী দিনে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ করব। আজকের শিশু কিশোররাই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ চালাবে। আমি সেভাবে তোমাদের গড়ে তুলতে চাই। “আমরা চাই, আমাদের শিশুরা আরো উন্নত হবে। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ থেকে ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ কেমন ছিল? ‘৯৬ সালে সরকারে এসে ডিজিটাল সিস্টেমের ব্যবস্থা করেছি, ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করেছি। ২০০৯ এর পর থেকে আজকে পর্যন্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। আমরা শান্তি চাই, আমরা দেশের উন্নতি চাই, দেশে মানুষকে আমরা সেভাবে গড়তে চাই।”
সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের শিশুরা লেখাপড়া শিখবে। এখানে অনেক শিশু রয়েছো, তোমারা গুরুজনের কথা মেনে চলবে, বাবা-মায়ের কথা মেনে চলবে। তোমরা লেখাপড়া শিখবে। একটা কথা মনে রাখবে, ধনসম্পদ কিছু থাকবে না, শুধু শিক্ষাটা থাকবে। শিক্ষাটাই মূল শক্তি। “আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে ছোটবেলা থেকে একটা কথাই শিখিয়েছি, টাকা-পয়সা, সম্পদ আমরা কিছুই রেখে দিতে পারব না, তোমার আর লেখাপড়া শিখতে হবে, তারা বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়েছে। আমাদের সরকারের নানা ধরনের উন্নয়নের সাথে তো আছে, কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু পর্দার আড়ালে। তারা নিজেদেরকে প্রকাশও করে না, সামনেও আসে না। তারা কাজ করে যাচ্ছে দেশের জন্য, দেশের স্বার্থে। দেশের কল্যাণে আমাকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের শিশুরা কিন্তু তাড়াতাড়ি শেখে। আমরা বৃদ্ধরা শিখতে গেলে কোথায় বোতাম টিপতে হবে সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হয়, আর ওরা কিন্তু ভেতর থেকে শিখে ফেলে।” চার বছরের নাতির কাছ থেকেও প্রযুক্তি শেখার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ও আমাকে শেখায় যে, তুমি এটা (কম্পিউটার) টিপতে থাকো, টিপতে টিপতে পেরে যাবা। আর মোবাইল ফোনের পিন নম্বরটা, শুনলে অবাক হবেন, তারা গেম খেলবে এ কারণে আমি তাদেরকে পিন দেব না। আমি লুকিয়ে পিন দিচ্ছি, আর আমার চশমার রিফ্লেকশন থেকে আমার নাতি সে নম্বর নিয়ে নিয়েছে। আমাকে বলে, ‘আমি জেনে গেছি তুমি কী করো।’ তো এরা এত স্মার্ট।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের এই ছোট্ট সোনামনিরা আমার স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সৈনিক হবে। এটাই তো আমি চাই।” ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর জন্ম হয়েছিল শেখ রাসেলের। বেঁচে থাকলে বুধবার তার ৫৯ বছর পূর্ণ হত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার করে যে ঘাতক চক্র, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রাসেলকেও সেদিন তারা রেহাই দেয়নি। তখন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধুকে জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় দাফন করা হলেও রাসেলসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। শেখ রাসেলের জন্মদিবস এ বছর তৃতীয়বারের মত ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে। ‘শেখ রাসেল দীপ্তিময়, নির্ভীক নির্মল দুর্জয়’ প্রতিপাদ্যে সারা দেশে পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি।
রক্তাক্ত হচ্ছে শিশুরা, যুদ্ধ বন্ধ করুন: প্রধানমন্ত্রী
রক্তাক্ত হচ্ছে শিশুরা, যুদ্ধ বন্ধ করুন: প্রধানমন্ত্রী
জনপ্রিয় সংবাদ