নিজস্ব প্রতিবেদক: যৌন হয়রানির অভিযোগ করায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক তাওহিদা কবিরকে। গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত ছাড়াই মুগদা শাখার একক সিদ্ধান্তে গত ৯ এপ্রিল তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফেরদৌস।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফেরদৌসের। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন মুগদা শাখার ইংরেজি শিক্ষক তাওহিদা কবির। মামলায় ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খানকে এক নম্বর এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফেরদৌসকে দুই নম্বর আসামি করা হয়।
অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তেলচুরি মামলাসহ আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে। এই পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ফেরদৌস গত ৩ আগস্ট চাকরি বাঁচাতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন।
জানতে চাইলে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ তো পুরোনো। মামলা করেছেন এক শিক্ষক। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। হিজাব পরে আসায় ছাত্রীদের দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন তিনি, সে কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।’
নারী নির্যাতন মামলা হলো কেন জানতে চাইলে মোহাম্মদ ফেরদৌস বিষয়টি এড়িয়ে যান। বলেন, ‘নারী নির্যাতন মামলা হয়েছে কিনা আমি জানি না।’
তবে ভিকটিম মুগদা শাখার ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক তাওহিদা কবির বলেন, ‘ছাত্রীদের বোরকা পরে আসা না আসার কোনও বিষয় নেই। আমি বোরকা পরে স্কুলে যাই। সে কারণে আমাকে আমার একজন সহকর্মী শিক্ষক বলেছিলেন, আমি যেন বোরকা না পরে আসি। অথচ তারা বিষয়টিকে ছাত্রীদের বোরকা পরার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, যৌন হয়রানির অভিযোগ ধামাচাপা দিতে।’
ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক তাওহিদা কবির জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান তাকে যৌন হয়রানি করেন। বিষয়টি অধ্যক্ষকে জানালে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
অভিযোগে জানা গেছে, এ ঘটনার পর গত ৯ এপ্রিল বেলা পৌনে ১২টায় সহকারী প্রধান শিক্ষকের রুমে মিটিং চলাকালে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান জোর করে রুমে ঢুকে পড়ে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক তাওহিদা কবিরকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে বের হয়ে যান। মিটিং শেষ হলে শফিকুল ইসলাম আবার রুমে ঢুকেন এবং তাওহিদা কবিরের পাশের চেয়ারে বসেন। ওইদিন দ্বিতীয় দফা যৌন হয়রানির করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। এর প্রতিবাদ জানালে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গত ৯ এপ্রিল তাওহিদা কবিরকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সাময়িক বরখাস্ত করে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠান ।
যৌন হয়রানির শিকার ইংরেজি শিক্ষক তাওহিদা কবির বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফেরদৌসসহ দুই জন যৌন হয়রানি করেছেন। আদালতে মামলা চলমান। এ নিয়ে আমি আর কী বলবো? যে ভয়ংকর সিচুয়েশনের মধ্য দিয়ে গেছি। মানসিকভাবে আমি ট্রমাটাইজড।’
বাদী তাওহিদা কবিরের অভিযোগ, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক যৌন হয়রানি করলেও অধ্যক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। গত ২৩ এপ্রিল উল্টো ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম মিলে যোগসাজশে তাকে যৌন হয়রানি করেছেন।
জানতে চাইলে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান যৌন হয়রানির বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে ইংরেজি ভার্সনে পড়ে। ৯ এপ্রিল বোরকা ও হিজাব পরে গেছে। ওই কারণে আমার মেয়েসহ ছয় মেয়েকে আধা ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন (তাওহিদা কবির)। বিষয়টি অধ্যক্ষকে জানালে তাকে শোকজ করেন। তবে তার পক্ষে বেশ কিছু শিক্ষক রয়েছেন।’
যৌন হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে এই শিক্ষক বলেন, ‘এমন জঘন্য মামলা করতে পারে এটি ভাবনার বাইরে।’
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ
২০২৫ সালের ডায়েরিতে সীমাহীন ভুল এবং মানহীন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে জানুয়ারি মাসের ডায়েরি জুলাই মাসে ছাপেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফেরদৌস। এতে ৫০ লাখের বেশি টাকার দুর্নীতি করেন সাজাপ্রাপ্ত সহকারী এক প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে।
প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ব্যবহার করে দেড় লাখ টাকার তেল চুরির অভিযোগ এনে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. সাইফুল ইসলাম। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কলেজ শাখায় নিজের আত্মীয়ের নামে বাস সার্ভিস চালু রাখা এবং প্রতিষ্ঠানের রঙ করার কাজে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফেরদৌস।
এসি/