স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক : প্রচলিত খাদ্যাভ্যাস থেকে শরীরের ক্ষতি হলেও সে বিষয়ে খেয়াল হয়ত অনেকেরই নেই। আঁশ সমৃদ্ধ খাবার হজমে সহায়তা করে। ওমেগা-থ্রি নির্ভর মাছ খাওয়া হৃদ-স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে। তবে দৈনিক খাদ্য তালিকায় আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুখরোচক খাবারের দিকে নজর দেই। আবার অনেক সময় বেশি খেয়ে ফেলি। কিংবা দেরি করে খাই। এই ধরনের অভ্যাসগুলো দেহে বাজে প্রভাব ফেলে। ইটদিসনটদ্যট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্ক’য়ের পুষ্টিবিদ মেলিসা রিফকিন বলেন, “কোনো একটি খাদ্যাভ্যাস সঠিক হতে পারে না। আবার মাঝে মধ্যে যেসব খাবার খাওয়া উচিত সেগুলো প্রতিদিন খাওয়া ঠিক না। যেমন- ক্যান্ডি, মিষ্টান্ন, ভাজা খাবার, মিষ্টি পানীয় ইত্যাদি।” ফল ও সবজি বেশি খাওয়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার কমানো – শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি কীভাবে খাচ্ছেন, কখন খাওয়া হচ্ছে- এই ধরনের বিষয়গুলো দেহের ওপর প্রভাব রাখে।
অতিরিক্ত চিনি খাওয়া
চিনি দুই রকমের। একটা হল প্রাকৃতিক যা ফল ও দুগ্ধজাত খাবার থেকে আসে। আরেকটি হল খাবারে চিনি যুক্ত করা; যা মিষ্টি স্বাদ বাড়ায়। এরকম খাবারের মধ্যে রয়েছে কোমল পানীয় ও চিনি যুক্ত শরবত বা জুস। এগুলো ওজন বাড়াতে, টাইপ টু ডায়াবেটিস, হৃদসংক্রান্ত রোগ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যান্সার তৈরিতে ভূমিকা রাখে। ‘দি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ সুপারিশ করে, পুরুষের দৈনিক ৩৬ গ্রামের কম মিষ্টি করা উচিত; অন্যদিকে নারীদের উচিত ২৫ গ্রামের কম গ্রহণ করা। এর অতিরিক্ত হলে খাদ্যাভ্যাস থেকে চিনি গ্রহণের পরিমাণ কমাতে হবে।
একেবারে বেশি খাওয়া
পেট ব্যথা বা ফোলাভাব, গ্যাস হওয়া- এসবের কারণ হতে পারে বেশি খাওয়া। তাছাড়া বিভিন্ন খাবারও এই ধরনের সমস্যা তৈরি করে। একবারে বেশি খাওয়া পাশাপাশি সারাদিনে অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে ক্যালরি গ্রহণ বেশি হয়। দেখা দেয় স্থূলতা। এই সমস্যা সমাধানের উপায় হল, দ্রুত না খেয়ে অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় নিয়ে ধীরে সুস্থ্যে খাওয়া। এরফলে মস্তিষ্কে পেটভরা অনুভূতি পৌঁছাবে সঠিক সময়ে, ফলে খাওয়া হবে পরিমিতি।
বেশি দেরি করে খাওয়া
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার কাছাকাছি সময়ে খাওয়ার মানেই হল দেহের ক্ষতি করা। তাই পরামর্শ দেওয়া হয় ৭টা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে রাতের খাবার সেরে ফেলা। তবে ব্যস্ত জীবনযাত্রায় সেটা সম্ভব হয় না। যে পরামর্শ দেওয়া হয়, ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টার মধ্যে কিছু না খাওয়া। এই সময়ের মধ্যে যদি খিদা লাগে তবে বুঝতে হবে সারাদিনে পর্যাপ্ত খাওয়া হয়নি। তাই দিনে সঠিক পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া শুরু করতে হবে।
যথেষ্ট আঁশ গ্রহণ করা হচ্ছে না
পরিপূর্ণ শষ্য, শুঁটি-ধরনের খাবার, সবজি ও ফল যদি খাওয়া কম হয় তবে স্বাভাবিকভাবেই আঁশ কম গ্রহণ করা হবে। এই উপাদান শুধু উদ্ভিজ্জ খাবারেই থাকে। আঁশ অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়ার ওপর স্বাস্থ্যকর প্রভাব রাখে। ফলে ওজম কম রাখতে ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বিপদ সীমার নিচে রাখতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ গ্রহণ না করলে দেখা দেবে হজমে গ-গোল, স্বাভাবিক ওজন ধরে রাখতে সমস্যা হবে, বাড়বে কোলেস্টেরল। তাই প্রতিবেলার খাবারে সবজি ও ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
অতিরিক্ত প্রাণিজ চর্বি গ্রহণ করা
উদ্ভিজ্জ চর্বি পাওয়া যায় উদ্ভিজ্জ তেল, বাদাম ও বীজ ধরনের খাবার থেকে; যা কি-না স্বাস্থ্যকর প্রভাব ফেলে দেহে। অন্যদিকে প্রাণিজ চর্বি বেশি গ্রহণ করলে দেহের নানান ক্ষতি হয়। স্যাচুরেইটেড ফ্যাট বেশিরভাগ সময় পাওয়া যায় লাল মাংস, দুগ্ধজাত খাবার, ডিমে। এসব খাবার বেশি খেলে হৃদস্বাস্থ্যে বাজে প্রভাব পড়ে। খাদ্যাভ্যাস থেকে স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’য়ের মাত্রা কমাতে বেছে নিতে হবে চর্বিহীন মাংস। এমনকি রান্না করার করার আগে কোনো মাংসে চর্বি থাকলে সেটা কেটে বাদ দিতে হবে। সেই সাথে কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার বেছে নেওয়ার পাশাপাশি বাড়াতে হবে মাছ খাওয়ার পরিমাণ।
বেশিরভাগ সময় অ্যাসিডিক খাবার ও পানীয় বেছে নেওয়া
এই ধরনের খাবারের মধ্যে রয়েছে কোমল পানীয় ও কফি। এসব খাবারের অ্যাসিডিক উপাদান দাঁতের ক্ষয় বৃদ্ধি করে। ডায়েট সোডাও এর বাইরে নয়। তবে কোমল পানীয়তে থাকা ও কফিতে ব্যবহার করা চিনি দাঁতের আরও বেশি ক্ষতি করে। এমনকি কিছু অ্যাসিডিক ফল ও শুকনা ফল মুখের স্বাস্থ্য খারাপ করে দিতে পারে। তাই ঝুঁকি কমাতে এই ধরনের খাবার কমাতে হবে। পাশাপাশি এসব খাবার খাওয়ার পর সুযোগ থাকলে দাঁত মাজা উপকারী।
পুষ্টি উপাদানের সমন্বয় না ঘটানো
সকালের নাস্তায় শুধু যদি এক বাটি সিরিয়াল খাওয়া হয় তবে সেটা স্বাস্থ্যকর হল না। পুষ্টি উপাদানের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রোটিন, কার্ব ও স্বাস্থ্যকর চর্বির সমন্বয় ঘটানো জরুরি। কার্বোহাইড্রেইট এমন একটি ক্ষুদ্র পুষ্টি উপাদান, যা তাড়াতাড়ি হজম হয়। অন্যদিকে প্রোটিন ও চর্বি হজম হয় ধীরে। এই তিন উপাদানের সমন্বয়ে খাবার খেতে পারলে পেটভরা অনুভূতি থাকে অনেকক্ষণ। পাশাপাশি খিদা কম লাগে, খাওয়া হয় পরিমিত। এছাড়া বড় অর্থে পুষ্টিকর খাবারের সমন্বয় বলতে বোঝায়- প্রয়োজনীয় পুষ্টি, খনিজ ও ভিটামিন। তাই সব ধরনের খাবারের সঠিক সমন্বয় ঘটিয়ে খাদ্যাভ্যাস গড়তে পারলে দেহ থাকবে সুস্থ।