ঢাকা ১০:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

যে কারণে মহাসাগর আগের চেয়ে দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে

  • আপডেট সময় : ০৭:৩৩:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

Beautiful tropical beach sea ocean with white cloud blue sky and copyspace for leisure travel in holiday vacation concept

প্রযুক্তি ডেস্ক: ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিক থেকে মহাসাগরের উষ্ণতার হার চারগুণেরও বেশি হয়েছে বলে উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়। এর মানে হচ্ছে, আগের চেয়ে অনেক দ্রুত উত্তপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন মহাসাগর, যা পৃথিবীর জন্য ডেকে আনছে ভয়াবহ পরিণতি।

কিন্তু কেন এমনটি ঘটছে? আর এর কেমন প্রভাব পড়তে পারে পৃথিবীর ওপর?

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটার্স’-এ। এতে গবেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের প্রথম দিকে মহাসাগরের তাপমাত্রা কেন ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম হয়েছিল।

কত দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে মহাসাগর: ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে মহাসাগরের তাপমাত্রা প্রতি দশকে ০.০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বাড়ছিল। কিন্তু এখন প্রতি দশকে ০.২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে উষ্ণ হচ্ছে, যা চার গুণ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

মহাসাগরের এই উষ্ণতা বেড়ে যাওয়াকে গরম পানি দিয়ে বাথটাব ভর্তি করার সঙ্গে তুলনা করেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘রিডিং ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক ক্রিস মার্চেন্ট।

তিনি বলেছেন, ১৯৮০-এর দশকে কল থেকে গরম পানি ধীরে ধীরে পড়ছিল, যা প্রতি দশকে খুব কম পরিমাণে মহাসাগরের পানিকে উষ্ণ করত। তবে এখন কল থেকে গরম পানি অনেক দ্রুত পড়ছে। ফলে বাড়ছে পানির উষ্ণতার গতি। এটি কমানোর উপায় হচ্ছে, গরম কল বন্ধ করার কাজটি শুরু করে দেওয়া অর্থাৎ পরিবেশে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা।

উষ্ণতার কারণ কী: গবেষকরা বলছেন, মহাসাগরের এই উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে পৃথিবীর শক্তির ভারসাম্যহীনতা। এমনটি ঘটলে-
১। সূর্য থেকে বেশি তাপ মহাকাশে ফিরে যাওয়ার চেয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলেই আটকা পড়ে যায়।

২। ফলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা আরও বেশি তাপ শোষণ করতে বাধ্য করছে পৃথিবীকে।

৩। এর ফলে সূর্যের আলোও কম প্রতিফলন করে পৃথিবী। আর এই তাপ বায়ুমণ্ডল ও মহাসাগরের মধ্যেই বেশি তাপ আটকে থাকছে।

২০১০ সাল থেকে দ্বিগুণ হয়েছে পৃথিবীর এই শক্তির ভারসাম্যহীনতা, যা দ্রুত পৃথিবীর মহাসাগরকে উষ্ণতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের শুরুর দিকে গোটা বিশ্বে মহাসাগরের তাপমাত্রা টানা ৪৫০ দিন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।

এজন্য খানিকটা দায়ী ছিল প্রশান্ত মহাসাগরের প্রাকৃতিক উষ্ণায়নের ঘটনা ‘এল নিনো’। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এল নিনোই একমাত্র কারণ নয়। রেকর্ড উষ্ণতার ৪৪ শতাংশের জন্য দায়ী ছিল মহাসাগরের দ্রত গতিতে তাপ শোষণের কারণ।

কেমন প্রভাব ফেলবে মহাসাগরের উষ্ণতা: আগামী ২০ বছরে মহাসাগরের উষ্ণতা গত ৪০ বছরের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে গবেষণায় সতর্ক করেছেন গবেষকরা। মহাসাগরগুলো পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করার ফলে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়বে পৃথিবী। যার মধ্যে রয়েছে-

১। শক্তিশালী মাত্রার ঝড় ও ঘূর্ণিঝড়

৩। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও উপকূলীয় বন্যা

৩। সামুদ্রিক জীবন ও প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি করবে এমন মাত্রার তাপপ্রবাহ।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাসাগরের উষ্ণতা কমিয়ে আনার সেরা উপায় হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো এবং এটিকে সৌর ও বায়ু শক্তির মতো পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন শক্তির উৎসে রূপান্তর করা। এজন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

যে কারণে মহাসাগর আগের চেয়ে দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে

আপডেট সময় : ০৭:৩৩:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিক থেকে মহাসাগরের উষ্ণতার হার চারগুণেরও বেশি হয়েছে বলে উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়। এর মানে হচ্ছে, আগের চেয়ে অনেক দ্রুত উত্তপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন মহাসাগর, যা পৃথিবীর জন্য ডেকে আনছে ভয়াবহ পরিণতি।

কিন্তু কেন এমনটি ঘটছে? আর এর কেমন প্রভাব পড়তে পারে পৃথিবীর ওপর?

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটার্স’-এ। এতে গবেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের প্রথম দিকে মহাসাগরের তাপমাত্রা কেন ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম হয়েছিল।

কত দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে মহাসাগর: ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে মহাসাগরের তাপমাত্রা প্রতি দশকে ০.০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বাড়ছিল। কিন্তু এখন প্রতি দশকে ০.২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে উষ্ণ হচ্ছে, যা চার গুণ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

মহাসাগরের এই উষ্ণতা বেড়ে যাওয়াকে গরম পানি দিয়ে বাথটাব ভর্তি করার সঙ্গে তুলনা করেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘রিডিং ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক ক্রিস মার্চেন্ট।

তিনি বলেছেন, ১৯৮০-এর দশকে কল থেকে গরম পানি ধীরে ধীরে পড়ছিল, যা প্রতি দশকে খুব কম পরিমাণে মহাসাগরের পানিকে উষ্ণ করত। তবে এখন কল থেকে গরম পানি অনেক দ্রুত পড়ছে। ফলে বাড়ছে পানির উষ্ণতার গতি। এটি কমানোর উপায় হচ্ছে, গরম কল বন্ধ করার কাজটি শুরু করে দেওয়া অর্থাৎ পরিবেশে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা।

উষ্ণতার কারণ কী: গবেষকরা বলছেন, মহাসাগরের এই উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে পৃথিবীর শক্তির ভারসাম্যহীনতা। এমনটি ঘটলে-
১। সূর্য থেকে বেশি তাপ মহাকাশে ফিরে যাওয়ার চেয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলেই আটকা পড়ে যায়।

২। ফলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা আরও বেশি তাপ শোষণ করতে বাধ্য করছে পৃথিবীকে।

৩। এর ফলে সূর্যের আলোও কম প্রতিফলন করে পৃথিবী। আর এই তাপ বায়ুমণ্ডল ও মহাসাগরের মধ্যেই বেশি তাপ আটকে থাকছে।

২০১০ সাল থেকে দ্বিগুণ হয়েছে পৃথিবীর এই শক্তির ভারসাম্যহীনতা, যা দ্রুত পৃথিবীর মহাসাগরকে উষ্ণতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের শুরুর দিকে গোটা বিশ্বে মহাসাগরের তাপমাত্রা টানা ৪৫০ দিন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।

এজন্য খানিকটা দায়ী ছিল প্রশান্ত মহাসাগরের প্রাকৃতিক উষ্ণায়নের ঘটনা ‘এল নিনো’। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এল নিনোই একমাত্র কারণ নয়। রেকর্ড উষ্ণতার ৪৪ শতাংশের জন্য দায়ী ছিল মহাসাগরের দ্রত গতিতে তাপ শোষণের কারণ।

কেমন প্রভাব ফেলবে মহাসাগরের উষ্ণতা: আগামী ২০ বছরে মহাসাগরের উষ্ণতা গত ৪০ বছরের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে গবেষণায় সতর্ক করেছেন গবেষকরা। মহাসাগরগুলো পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করার ফলে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়বে পৃথিবী। যার মধ্যে রয়েছে-

১। শক্তিশালী মাত্রার ঝড় ও ঘূর্ণিঝড়

৩। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও উপকূলীয় বন্যা

৩। সামুদ্রিক জীবন ও প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি করবে এমন মাত্রার তাপপ্রবাহ।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাসাগরের উষ্ণতা কমিয়ে আনার সেরা উপায় হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো এবং এটিকে সৌর ও বায়ু শক্তির মতো পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন শক্তির উৎসে রূপান্তর করা। এজন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।