ক্যাম্পাস ক্যারিয়ার ডেস্ক : বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিতে টিকতে কি করণীয় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ৩৭তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার দিদার নূর।
*ইংরেজির বেসিক বৃদ্ধির উপর জোর না দিয়ে শুধু গাইড বই পড়া।
ফাউন্ডেশন শক্তিশালী না হলে বিল্ডিং যেমন খুব বেশি উঁচুতে তোলা যায় না তেমনি গ্রামারের ভিত শক্তিশালী না করে শুধু বিসিএস কেন কোন চাকরির পরীক্ষাতেই খুব বেশিদূর এগোনো সম্ভব নয়।
*কম্পিটিটিভ এক্সাম টাইপ গাইড বই অবশ্যই পড়বেন তবে তার পাশাপাশি গ্রামারের কিছু বেসিক বিষয়
যেমন- চধৎঃং ড়ভ ংঢ়ববপয, ঈধংব, উবঃবৎসরহবৎ, এবহফবৎ, ঘঁসনবৎ, অৎঃরপষব,ঞবহংব, ঠড়রপব, ঘধৎৎধঃরড়হ,
ঈড়সঢ়ধৎরংড়হ ড়ভ অফলবপঃরাবং, ঈড়হফরঃরড়হধষ ংবহঃবহপব, ঝঁনলবপঃ-ঠবৎন অমৎববসবহঃ, জরমযঃ ভড়ৎস ড়ভ ঠবৎনং, এবৎঁহফ, চধৎঃরপরঢ়ষব, ওহভরহরঃরাব, চযৎধংব, ঈষধঁংব এগুলো ভাল করে আয়ত্ত করে নিন। গ্রামারের এই বেসিক বিষয়গুলো নখদর্পনে থাকলে ইংরেজির যে গাইড বইটি আপনি ৬ মাসেও শেষ করতে পারেননি সেই বইটিই খুব সহজেই মাত্র ১৫ দিনে শেষ করে ফেলতে পারবেন।
*ইংরেজি সাহিত্যের যুগবিভাগ ভালভাবে না বুঝে শুধু এমসিকিউ আকারে পড়া।
ইংরেজি যেহেতু আমাদের মাতৃভাষা নয় তাই সেই ভাষার কবি সাহিত্যিক ও তাদের রচিত গ্রন্থসমূহের নাম মনে রাখাটা একটু কঠিন। এ সাহিত্যের প্রতিটি পিরিয়ডের ই একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে। বেশিরভাগ কবি সাহিত্যিকই সেই প্রেক্ষাপট দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কবিতা,গল্প,উপন্যাস,নাটক রচনা করেছেন। তাই সংশ্লিষ্ট কবি সাহিত্যিক ও তাদের রচিত গ্রন্থসমূহের নাম যখন পড়বেন তখন যুগবিভাগটাও ভালো করে পড়ুন। তাহলে ইংরেজি সাহিত্যের বিবর্তন ধারা সম্পর্কে আপনার একটা মোটামুটি আইডিয়া তৈরি হয়ে যাবে।
*অংকের গোরপ্যাচ মাথায় লাগে দ্বন্দ্ব হিসাবের পুঁটুলিটা একেবারে বন্ধ।
হিসাবের বন্ধ পুঁটুলিটাকে উন্মুক্ত করতে হলে আপনাকে প্রতিদিন অংক চর্চা করতেই হবে। চাকরির পরীক্ষায় ভাল করতে চাইলে এর কোনো বিকল্প নাই। প্রতিদিন অন্তত ২ ঘণ্টা ম্যাথ প্র্যাকটিস করুন। কোন অংক বুঝতে সমস্যা হলে নিজে নিজে আগে কয়েকবার চেষ্টা করুন। তাও না পারলে বন্ধুমহলে যারা ম্যাথে ভাল তাদের হেল্প নিন। সেরকম কেউ না থাকলে বাংলাতে অংকের টপিক লিখে ইউটিউবে সার্চ দিন। আশা করি কোন না কোনভাবে আপনি এর সমাধান পেয়ে যাবেনই।
*সাধারণ জ্ঞানে অসাধারণ হওয়ার চেষ্টা।
১। এরকম কোন প্রচেষ্টা মনের মধ্যে থাকলে তা আজই দমন করার চেষ্টা করুন। বিসিএস দিতে এসে এই সাধারণ জ্ঞানের মহাসমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে বহু রথী মহারথী র সলিল সমাধি হয়েছে। আপনি সব বাদ দিয়ে রাতদিন শুধু সাধারণ জ্ঞান পড়তে থাকলে আপনার মেদিনী আরেকজন এসে জয় করে নিয়ে যাবে।
২। তথ্যের ভারে চাপা পড়তে না চাইলে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী পড়ার সময় অবশ্যই বাহুল্য বর্জন করুন।সৌদি আরবের বাদশাহ’র কতজন বেগম আছেন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোন ব্র্যান্ডের সিগারেট পান করেন!!সেটাতো আপনার জানার কোন দরকার নেই।
৩। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর জন্য আমি শুধু এমপিথ্রি সিরিজের বই ও পরীক্ষার আগে সাম্প্রতিক তথ্যের জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিশেষ সংখ্যাটি খুব ভাল করে পড়েছিলাম।আর এই তিনটি বই থেকেই পরীক্ষায় সিংহভাগ কমন পেয়েছি।অন্য কোন বই পড়া লাগেনি।যে বইটি পড়বেন তার আদ্যোপান্ত ভাল করে পড়ার চেষ্টা করুন।ইনশাল্লাহ আপনার চেষ্টা বিফলে যাবে না।
*বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির বেসিক বিষয়গুলো না বুঝেই জোরজবরদস্তি করে মুখস্থ করার চেষ্টা।
বিজ্ঞান বুঝলে সহজ না বুঝলে অনেক কঠিন। বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার সুবাধে আমাকে অবশ্য বিজ্ঞান নিয়ে খুব একটা চিন্তা করা লাগেনি। তবে যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড বিজ্ঞান না তারা নবম-দশম শ্রেণির মানবিক শাখার বিজ্ঞান টেক্সট বইটি ভাল করে পড়ুন। বইটিতে খুব সহজে বিজ্ঞানের বেসিক বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়েছে।তাছাড়া কোন জিনিষ বুঝতে সমস্যা হলে ইউটিউবে সার্চ দিন। বর্তমানে ইউটিউবে বিজ্ঞানের বিভিন্ন টপিকের উপর বাংলাভাষায় তৈরি অসংখ্য টিউটোরিয়াল ভিডিও আছে। আশা করছি এগুলো আপনার বেসিক বৃদ্ধিতে বেশ কাজে দিবে।
*চারটি অপশনই ভরসা এই পদ্ধতিতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পড়ার চেষ্টা।
১। বাংলা সাহিত্য অংশটুকু বুঝে পড়লে বেশ মজা পাবেন।প্রাচীন যুগের চর্যাপদ থেকে আধুনিক যুগের গদ্যের সূচনা এই বিবর্তন ধারাটা ভাল করে বুঝার চেষ্টা করুন।চর্যাপদ থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন হয়ে বাংলাসাহিত্যে কিভাবে গদ্যের সূচনা হলো এই ধারাটা বুঝতে পারলে সাহিত্য অংশটুকু আপনার কাছে অনেক সহজ মনে হবে।পিএসসি নির্ধারিত ১১ জন কবি সাহিত্যিকের সম্পর্কে আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করুন।অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কবি সাহিত্যিকদের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের নাম,সাহিত্যে বিশেষ অবদান,বিখ্যাত উক্তি এগুলো পড়লেই হবে বলে আমি মনে করি।আর গ্রন্থের নাম পড়ার সময় অবশ্যই ছন্দ করে পড়ুন তাহলে এগুলো সহজে মনেও থাকবে আর পরীক্ষার হলেও কনফিউশন সৃষ্টি হবে না।
২। বাংলা ব্যাকরণে ধ্বনি, শব্দ, পদ, সন্ধি, সমাস, প্রকৃতি-প্রত্যয়, শুদ্ধি-অশুদ্ধি, উপসর্গ, অনুসর্গ, বাগধারা এই বিষয়গুলো বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন। না বুঝে পড়লে এগুলো মনেও থাকবে না উপরন্তু পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখবেন সব তালগোল পাকিয়ে গেছে।
৩। ভূগোল,পরিবেশ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে খুব একটা গলদঘর্ম হওয়ার কথা না। এই বিষয়ের বেসিক ক্লিয়ার করার জন্য নবম দশম শ্রেণির ভূগোল বইটি ভাল করে পড়ুন।আর সুশাসন,নৈতিকতা ও মূল্যবোধ এই টপিকের উপর প্রস্তুতি নিবেন ঠিকই কিন্তু কোন জিনিস বুঝতে সমস্যা হলে অযথা এর পিছনে সময় ব্যয় না করে আল্লাহর ওয়াস্তে ছেড়ে দিবেন। বুঝে পড়ে যেটুকু কমন পাবেন সেটুকুই যথেষ্ট।কারন অন্যান্য বিষয়ে ভাল করতে পারলে এই অংশ না দাগালেও আপনি ঠিকই পাস করে যাবেন।
পরিশেষে বলবো বিগত বিসিএসে যে ভুলগুলো আপনি করেছেন তা বারবার ব্যবচ্ছেদ করার চেষ্টা করুন। কৃত ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে যেভাবে প্রস্তুতি নেয়া দরকার ঠিক সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন কিনা প্রতিদিন তা একবার হলেও ভাবুন।পূর্ববর্তী ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি হতে না দিলে প্রিলির বাধা আপনি খুব সহজেই উতড়ে যাবেন আশা রাখি।ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।সবাই ভাল থাকবেন।আল্লাহ হাফেজ। সকলের শুভকামনায়-
লেখক: দিদার নূর, সহকারী পুলিশ সুপার(৩৭ তম বিসিএস)। মেধাক্রম-৮
যে কারণে বারবার প্রিলিতেই আটকে যাচ্ছেন
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ