স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: প্রতিরাতে পর্যাপ্ত ঘুম সার্বিক স্বা্স্েথ্যর জন্য উপকারী। ঘুমের মধ্যে দেহের নানান ক্ষতি পূষিয়ে নেয়। তবে বর্তমানের অস্থির সময়ে, মানসিক চাপে, মোবাইল-টেলিভিশন ইত্যাদি যন্ত্রের বৈদ্যুতিক পর্দার দিকে তাকিয়ে অতিরিক্ত সময় কাটানো-সহ নানান কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ঘুমের সমস্যা কাটাতে নানান পন্থা অবলম্বন করা যায়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে বিভিন্ন ভিটামিনও ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক।
ভিটামিন এ: প্রায় সবাই জানেন দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে ভিটামিন এ প্রয়োজন। তবে ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন নিউট্রিশন’ সাময়িকীতে প্রকাশিত চীনের ‘টং ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের গবেষণা পত্রে দাবি করা হয়, ভিটামিন এ জৈবিক ঘড়ির ওপর প্রভাব রেখে ঘুমচক্র নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সময় মতো ঘুম আসতে সহায়তা করে। ডিম, গাঢ় সবুজ শাকসবজি যেমন- পালংশাক, কমলা ও লাল রংয়ের খাবার যেমন- গাজর, কুমড়া, আম, পেঁপে ভিটামিন এ’র উৎস।
ভিটামিন বি-ওয়ান: ‘থায়ামিন’ নামে পরিচিত এই ভিটামিনের অভাব ঘুমে ব্যাঘাত তৈরি করে। তবে মজার বিষয় হল- ২০২২ সালে কোরিয়া’র সিউল’য়ে অবস্থিত ‘ইয়সেই ইউনিভার্সিটি কলেজ’ ও ২০২৪ সালে ইতালির ‘ইউনিভার্সিটি অফ সালের্নো’র গবেষকদের করা- দুই গবেষণাতেই দাবি করা হয় থায়ামিনের অপর্যাপ্ততার কারণে অতিরিক্ত ঘুম হয়। অনেকে এই বেশিমাত্রার ঘুমের আশায় থাকলেও, বিষয়টা মানব শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব রাখে। অতিরিক্ত ঘুমালে মাথা ভার হয়ে থাকে, ব্যস্ত সময়ে ঘুম ঘুম-ভাব বেশি হয়, যা কাজের ক্ষতি করে। পর্যাপ্ত ভিটামিন বি-ওয়ান পেতে খাওয়া যেতে পারে চর্বিহীন মাংস, সামুদ্রিক খাবার, মটরশুঁটি ও ভিটামিন বি-ওয়ান সমৃদ্ধ বাদামি চাল, বাদামি পাস্তা ইত্যাদি।
ভিটামিন বি-সিক্স: শান্তিপূর্ণ ঘুমের জন্য এই ভিটামিন প্রয়োজন হয়। এই বিষয়ে মার্কিন পুষ্টিবিদ অ্যামি ডেভিস রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “ভিটামিন বি-সিক্স আসলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে কাজ করে। ফলে ভালো ঘুমের সহায়ক হয়।”
ভিটামিন বি-নাইন: সাধারণভাবে ‘ফোলেইট’ নামে পরিচিতি ভিটামিন বি-নাইন ঘুমের সময় চোখ বন্ধ রাখতে সাহায্য করে। কারণ প্রাথমিকভাবে এই ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ‘নিউরোট্রান্সমিটার’গুলোর পাশাপাশি সেরোটনিন ও মেলাটনিন সংশ্লেষণ ঘটায়। এগুলো ঘুম-জাগরণের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ ফোলেইট’য়ের অভাবে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। অভাব পূরণ করতে খাওয়া যেতে পারে পালংশাক, মটর, ছোলা, পূর্ণ শষ্য, লেটুস ব্রকলি, সামুদ্রিক খাবার ও ডিম।
ভিটামিন বি-টুয়েল্ভ: “ঘুম নিয়ন্ত্রণের হরমোন মেলাটোনিন উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট এই ভিটামিন”- বলেন ডেভিস। গ্রিসের ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্রিট’য়ের গবেষকদের করা গবেষণায় বলা হয় ‘ইনসমনিয়া’সহ সারাদিন অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণ হতে পারে বি-টুয়েল্ভ’য়ের অপর্যাপ্ততা। দুগ্ধজাত ও সামুদ্রিক খাবার, চর্বিহীন মাংস ও ডিম হল এই ভিটামিনের চমৎকার উৎস।
ভিটামিন সি: যদিও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে ডেভিন বলেন, “পর্যবেক্ষণ ভিত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে এই ভিটামিন পর্যাপ্ত আরামদায়ক ঘুমের ভূমিকা রাখে। সিট্রাস বা টক ফল, বেরি, ক্যাপ্সিকাম, ব্রকলি, টমেটো, ফুলকপি, আলু ও তরমুজ থেকে মিলবে ভিটামিন সি।
ভিটামিন ডি: ডেভিস বলেন, “এই ভিটামিনের অপর্যাপ্ততার কারণে ঘুমের নানান সমস্যা তৈরি করে।” গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন ডি ‘সাপ্লিমেন্ট’ বা ট্যাবলেট গ্রহণের মাধ্যমে ঘুমের মান যেমন উন্নত হয় তেমনি দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তেও সাহায্য করে। ডেভিস ব্যাখ্যা করেন, “কারণ এই ভিটামিন ঘুম-জাগরণের চক্রতে ভূমিকা রাখে।” গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ভিটামিন ডি’র অভাবে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’সহ ঘুমের মানও পড়ে যায়। সূর্যের আলোতে পাঁচ থেকে ৩০ মিনিট থাকা ছাড়াও সামুদ্রিক খাবার, মাছের তেল থেকে মিলবে ভিটামিন ডি।
ভিটামিন ই: চর্বিতে দ্রবণীয় একটা ভিটামিন যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এছাড়া আরামদায়ক ঘুম নিশ্চিত করতে পারে। থাইল্যান্ডের ‘মাহিডোল ইউনিভার্সিটি’র গবেষকদের করা পর্যবেক্ষণ অনুসারে এই তথ্য জানান, পুষ্টিবিদ ডেভিস। পালংশাক, বাদাম, বীজ, ব্রকলি, ক্যাপ্সিকাম, ডেম- এই ভিটামিনের উৎস।
ভিটামিন কে: ২০১৯ সালে ‘নিউট্রিয়েন্টস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ‘সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ফার্মাভিট এলএলসি’র করা পর্যবেক্ষণ ও ২০২৩ সালে চীনের ‘সোঝু মেডিকেল কলেজ অফ সুচো ইউনিভার্সিটি’র গবেষকদের করা গবেষণায় দাবি করা হয়- ভিটামিন কে ঘুমের মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।
এছাড়া পর্যাপ্ত ভিটামিন কে গ্রহণ করতে পারলে- স্বাস্থ্যকরভাবে রক্ত জমাট বাঁধতে ও হাড় গঠনেও কাজ করে।
লেটুস, পালংশাক, ব্রকলি, রঙিন সবজি, ডিম থেকে মিলবে এই ভিটামিন।
এসব ভিটামিন কী পরিমাণ খাওয়া উচিত?
ভালো ঘুমের জন্য ভিটামিনগুলোর নাম না হয় জানা হল; তবে পরিমাণটা কী হবে? এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ ডেভিস বলেন, “আসলে বয়স, লিঙ্গ, কাজের পরিমাণ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিটামিন গ্রহণের পরিমাণ নির্ভর করে। তবে আমার পরামর্শ হল- একটি বা দুটি খাবার থেকে যেন প্রায় সব ভিটামিনের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায়। তাহলে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পূরণ করা সম্ভব।” তবে যারা ‘ডায়েট’ করছেন বা কোনো শারীরিক কারণে খাদ্য-নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শে ‘মাল্টিভিটামিন’ গ্রহণ করতে পারেন বলে পরামর্শ দেন, ডেভিস।
ভালো ঘুমের ব্যঘাত ঘটায় যেসব উপাদান
পয়সার উল্টো পিঠের মতো কিছু উপাদান ঘুমে সমস্যাও তৈরি করে। যে কারণে ঘুমাবার সময়ের আগে এসব উপাদান সমৃদ্ধ খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে অ্যালকোহল, ক্যাফেইন ও চিনি। ডেভিস বলেন, “এসব মস্তিষ্ক উত্তেজিত রাখে। তাই ভালো ঘুমের জন্য দুপুরের পর কফির পরিবর্তে ভেষজ চা পান উপকারী। এছাড়া চকলেট্, চিনিযুক্ত খাবারও এড়াতে হবে।” আর ঘুমের অন্তত দুতিন ঘণ্টা আগে অ্যালকোহল ও চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ এড়াতে হবে।
যেসব ভিটামিন ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ