স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: ছয় সপ্তাহ বয়সের অনেক শিশুর মা উদ্বিগ্ন হয়ে আমাদের কাছে ছুটে আসেন। টিকা দেওয়ার পর ব্যথায় কান্নাকাটি, জ্বর প্রায়ই পাওয়া যায়। তবে মায়েদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ, এত ছোট বাচ্চার চার হাতে-পায়ে চারটি সুই প্রবেশ করানো কতটা যৌক্তিক এবং মানবিক। তাহলে আমাদের প্রথমেই জানতে হবে শিশুকে কোন কোন রোগের জন্য টিকা দেওয়া হচ্ছে। এখানে ছয় সপ্তাহের টিকার কথা উল্লেখ করা হলো। ১. বাম বাহুতে বিসিজি টিকা দেওয়া হয়। এটি সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়া এবং মস্তিষ্কের পর্দায় হওয়া যক্ষ্মা প্রতিরোধ করে। দুটি রোগই প্রাণঘাতী হতে পারে। ২. ডান বাহুতে পোলিও টিকা ইনজেকশন দেওয়া হয়। পোলিও হলে অঙ্গ অবশ হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। এর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। ৩. ডান উরুতে নিউমোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়। এই জীবাণু নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিসসহ আরও কিছু জটিল রোগের জন্য দায়ী। ৪. বাম উরুতে পাঁচটি রোগের টিকা একসঙ্গে দেওয়া হয়। হেপাটাইটিস বি রক্ত, যৌন সম্পর্ক এবং মা থেকে সন্তানে ছড়াতে পারে এমন একটি ভাইরাস। এটি যকৃতের দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ এবং ক্যান্সার ঘটাতে পারে। হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া; যা নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিসসহ আরও কিছু মারাত্মক রোগ ঘটাতে পারে। ডিফথেরিয়া আরেকটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ- যা গলা, টনসিল আক্রান্ত করে। অনেক সময় টক্সিন রক্তে মিশে হৃৎপি-, স্নায়ুতন্ত্রে ছড়িয়ে মৃত্যু ঘটাতে পারে। হুপিং কাশি রোগটিও ব্যাকটেরিয়া ঘটিত। শিশুকে দীর্ঘদিন কাশিসহ প্রচ- যন্ত্রণা দিয়ে ভোগায় এই রোগ। টিটেনাস রোগটি হলে শিশুর ধনুকের মতো বেঁকে ভয়ংকর খিঁচুনি হয়। এই রোগেও মৃত্যুহার খুব বেশি। এতগুলো প্রাণঘাতী রোগ থেকে শিশুকে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে সম্পূর্ণ বিনা খরচে। টিকার ডোজ এবং মাত্রা ঠিক করে দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, যে কোনো টিকা দেওয়ার পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যে কিছু প্রতিক্রিয়া হতে পারে। ব্যথা, জ্বর থেকে শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনিও হতে পারে। তবে এই সংখ্যা খুবই কম। এই ভয়ে টিকা না দেওয়া অনুচিত। আপনার শিশু এবং দেশের সামগ্রিক সুরক্ষার জন্য তাই বলব, শিশুকে টিকা দিতে অবহেলা করবেন না।
লেখক : শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা।
যেসব কারণে শিশুকে টিকা দেওয়া জরুরি
ট্যাগস :
যেসব কারণে শিশুকে টিকা দেওয়া জরুরি
জনপ্রিয় সংবাদ