ঢাকা ০৮:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

যেভাবে ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে চুরি হয়ে গেলো ৮ রত্ন

  • আপডেট সময় : ০৫:৫১:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • ২৪ বার পড়া হয়েছে

ল্যুভর জাদুঘরের অ্যাপোলো গ্যালারিতে প্রদর্শিত অলংকার- ছবি এএফপি

প্রত্যাশা ডেস্ক: অন্য স্বাভাবিক দিনের মতোই রোববার সকালে দর্শনার্থীদের জন্য ল্যুভর জাদুঘরের দরজা খোলা হয়। এর ঠিক আধা ঘণ্টা পর ভবনের দক্ষিণ পাশের বারান্দায় ওঠে দুই চোর।

দ্বিতীয় তলায় উঠতে চোরেরা ব্যবহার করে ট্রাকের ওপর বসানো বৈদ্যুতিক মই। প্যারিসের রাস্তায় এ ধরনের মই ও ট্রাক প্রায়ই দেখা যায়। সাধারণত আসবাবপত্র ওপরে তোলার জন্য এই মই ব্যবহার হয়। ফলে পথচারীদের কাছে জাদুঘরের পাশে মই রাখাটা অস্বাভাবিক মনে হয়নি।

চোরেরা দ্বিতীয় তলায় উঠে গ্রাইন্ডার দিয়ে একটি জানালা ভেঙে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা অ্যালার্ম বাজে। এর মধ্যেই ঢোকে জাদুঘরের ঝলমলে গ্যালাহি দা’পোলোতে (অ্যাপোলো গ্যালারি)। যেখানে রাখা ছিল রাজকীয় গয়না, মুকুট ও প্রদর্শনীর জন্য কাচের তাকে রাখা হীরার সংগ্রহ।

চোরেরা ভেতরে ঢুকে প্রথমে দুটি কাচের তাক ভেঙে ফেলে। এতে আরেকটি অ্যালার্ম বেজে ওঠে। তড়িঘড়ি করে চোরেরা আটটি মূল্যবান বস্তু নিয়ে নেয়। এর মধ্যে ছিল রাজকীয় নীলা নেকলেস, পান্না নেকলেস ও কানের দুল। আরও নেয় উনিশ শতকের ফ্রান্সের শাসক তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রীর ব্যবহার করা মুকুট।

ল্যুভর জাদুঘরের চুরি নিয়ে এমন বর্ণনা দিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। গতকাল রোববার ঘটনার পর বার্তা সংস্থা এএফপিসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে এটিকে ডাকাতি হিসেবে উল্লেখ করেছিল। আজ সোমবারের প্রতিবেদনে চুরি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ৬০ জনের একটি দল তদন্ত শুরু করেছে। তারা ধারণা করছেন, ঘটনাটি পরিকল্পিত। এর সঙ্গে সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত।

টাইমস জানিয়েছে, জাদুঘরের দক্ষিণ পাশটি সেইন নদীর ধারে। রাস্তায় চোর দলের আরও দুই সদস্য স্কুটার নিয়ে অপেক্ষা করছিল। কর্তৃপক্ষ অ্যাপোলো গ্যালারিতে আসার আগেই চোরেরা নিচে নেমে স্কুটারে করে সটকে পড়ে। পুরো ঘটনা ঘটে মাত্র সাত মিনিটে।

এটি ছিল জাদুঘরে সংঘটিত সবচেয়ে সাহসী চুরির ঘটনা। ফ্রান্সের রাজনীবিদরা এই ক্ষতি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পৃথিবী বিখ্যাত একটি জাদুঘরে কীভাবে দিনের আলোয় এমন ঘটনা ঘটতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্যারিসের মেয়র এরিয়েল ওয়েইল বলেছেন, এটা কোনও সিনেমা বা টিভি সিরিজের দৃশ্য ছিল না। দিনের আলোয় চোরেরা রাজমুকুটের রত্ন নিয়ে পালিয়েছে। শুধু আর্থিক মূল্য নয়, এটি ফ্রান্সের ঐতিহ্য চুরি হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা।

যা চুরি গেল
চুরি হওয়া রত্নগুলোর বর্ণনা প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। এর মধ্যে আছে তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইউজেনির টিয়ারা। এতে ছিল ২১২টি মুক্তা, ১ হাজার ৯৯৮টি হীরক এবং ৯৯২টি রোজ-কাট হীরা।

সম্রাজ্ঞী ইউজেনি বেল্ট বা কোমরবন্ধনী ব্যবহার করতেন। এটির কেন্দ্রে ছিল অলঙ্কৃত ফিতা। এতে ছিল ২,৪৩৮টি হীরা ও ১৯৬টি রোজ-কাট হীরা।

জাদুঘরে সম্রাজ্ঞীর কিছু হীরাখচিত ব্রোচের একটি ছিল ১৮৫৫ সালের। এটিকে ‘রেলিকুয়ারি ব্রোচ’ বলা হয়। চুরি হওয়া অন্য অলংকারের মধ্যে আছে উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে লুই বোনাপার্টের স্ত্রী রানি হরটেন্স এবং লুই ফিলিপ প্রথমের স্ত্রী রানি মেরি অ্যামেলির ব্যবহার করা কানের দুল।

১৮১০ সালে দ্বিতীয় স্ত্রী মেরি লুইসকে বিয়ের সময় নেপোলিয়নের দেওয়া পান্নার গয়নার সেটে ছিল ৩২টি পান্না ও ১ হাজার ১৩৮টি হীরা। গয়নার সেটটি জাদুঘরে সংরক্ষিত হয় ২০০৪ সালে। ল্যুভর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিয়ে উপলক্ষে নেপোলিয়ন দুটি বিলাসবহুল গয়নার সেট তৈরি করতে বলেছিলেন। আরেকটি ছিল ওপাল ও হীরা দিয়ে তৈরি। এই সেটের মধ্যে পান্না ও হীরার এক জোড়া কানের দুল নিয়ে গেছে চোরেরা।

ওআ/আপ্র/২০/১০/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

মেঘনা আলমের তত্ত্বাবধানে ফিলিপাইনে সুমাইয়া হারুনের বিশ্বমঞ্চে পদার্পণ

যেভাবে ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে চুরি হয়ে গেলো ৮ রত্ন

আপডেট সময় : ০৫:৫১:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: অন্য স্বাভাবিক দিনের মতোই রোববার সকালে দর্শনার্থীদের জন্য ল্যুভর জাদুঘরের দরজা খোলা হয়। এর ঠিক আধা ঘণ্টা পর ভবনের দক্ষিণ পাশের বারান্দায় ওঠে দুই চোর।

দ্বিতীয় তলায় উঠতে চোরেরা ব্যবহার করে ট্রাকের ওপর বসানো বৈদ্যুতিক মই। প্যারিসের রাস্তায় এ ধরনের মই ও ট্রাক প্রায়ই দেখা যায়। সাধারণত আসবাবপত্র ওপরে তোলার জন্য এই মই ব্যবহার হয়। ফলে পথচারীদের কাছে জাদুঘরের পাশে মই রাখাটা অস্বাভাবিক মনে হয়নি।

চোরেরা দ্বিতীয় তলায় উঠে গ্রাইন্ডার দিয়ে একটি জানালা ভেঙে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা অ্যালার্ম বাজে। এর মধ্যেই ঢোকে জাদুঘরের ঝলমলে গ্যালাহি দা’পোলোতে (অ্যাপোলো গ্যালারি)। যেখানে রাখা ছিল রাজকীয় গয়না, মুকুট ও প্রদর্শনীর জন্য কাচের তাকে রাখা হীরার সংগ্রহ।

চোরেরা ভেতরে ঢুকে প্রথমে দুটি কাচের তাক ভেঙে ফেলে। এতে আরেকটি অ্যালার্ম বেজে ওঠে। তড়িঘড়ি করে চোরেরা আটটি মূল্যবান বস্তু নিয়ে নেয়। এর মধ্যে ছিল রাজকীয় নীলা নেকলেস, পান্না নেকলেস ও কানের দুল। আরও নেয় উনিশ শতকের ফ্রান্সের শাসক তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রীর ব্যবহার করা মুকুট।

ল্যুভর জাদুঘরের চুরি নিয়ে এমন বর্ণনা দিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। গতকাল রোববার ঘটনার পর বার্তা সংস্থা এএফপিসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে এটিকে ডাকাতি হিসেবে উল্লেখ করেছিল। আজ সোমবারের প্রতিবেদনে চুরি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ৬০ জনের একটি দল তদন্ত শুরু করেছে। তারা ধারণা করছেন, ঘটনাটি পরিকল্পিত। এর সঙ্গে সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত।

টাইমস জানিয়েছে, জাদুঘরের দক্ষিণ পাশটি সেইন নদীর ধারে। রাস্তায় চোর দলের আরও দুই সদস্য স্কুটার নিয়ে অপেক্ষা করছিল। কর্তৃপক্ষ অ্যাপোলো গ্যালারিতে আসার আগেই চোরেরা নিচে নেমে স্কুটারে করে সটকে পড়ে। পুরো ঘটনা ঘটে মাত্র সাত মিনিটে।

এটি ছিল জাদুঘরে সংঘটিত সবচেয়ে সাহসী চুরির ঘটনা। ফ্রান্সের রাজনীবিদরা এই ক্ষতি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পৃথিবী বিখ্যাত একটি জাদুঘরে কীভাবে দিনের আলোয় এমন ঘটনা ঘটতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্যারিসের মেয়র এরিয়েল ওয়েইল বলেছেন, এটা কোনও সিনেমা বা টিভি সিরিজের দৃশ্য ছিল না। দিনের আলোয় চোরেরা রাজমুকুটের রত্ন নিয়ে পালিয়েছে। শুধু আর্থিক মূল্য নয়, এটি ফ্রান্সের ঐতিহ্য চুরি হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা।

যা চুরি গেল
চুরি হওয়া রত্নগুলোর বর্ণনা প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। এর মধ্যে আছে তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইউজেনির টিয়ারা। এতে ছিল ২১২টি মুক্তা, ১ হাজার ৯৯৮টি হীরক এবং ৯৯২টি রোজ-কাট হীরা।

সম্রাজ্ঞী ইউজেনি বেল্ট বা কোমরবন্ধনী ব্যবহার করতেন। এটির কেন্দ্রে ছিল অলঙ্কৃত ফিতা। এতে ছিল ২,৪৩৮টি হীরা ও ১৯৬টি রোজ-কাট হীরা।

জাদুঘরে সম্রাজ্ঞীর কিছু হীরাখচিত ব্রোচের একটি ছিল ১৮৫৫ সালের। এটিকে ‘রেলিকুয়ারি ব্রোচ’ বলা হয়। চুরি হওয়া অন্য অলংকারের মধ্যে আছে উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে লুই বোনাপার্টের স্ত্রী রানি হরটেন্স এবং লুই ফিলিপ প্রথমের স্ত্রী রানি মেরি অ্যামেলির ব্যবহার করা কানের দুল।

১৮১০ সালে দ্বিতীয় স্ত্রী মেরি লুইসকে বিয়ের সময় নেপোলিয়নের দেওয়া পান্নার গয়নার সেটে ছিল ৩২টি পান্না ও ১ হাজার ১৩৮টি হীরা। গয়নার সেটটি জাদুঘরে সংরক্ষিত হয় ২০০৪ সালে। ল্যুভর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিয়ে উপলক্ষে নেপোলিয়ন দুটি বিলাসবহুল গয়নার সেট তৈরি করতে বলেছিলেন। আরেকটি ছিল ওপাল ও হীরা দিয়ে তৈরি। এই সেটের মধ্যে পান্না ও হীরার এক জোড়া কানের দুল নিয়ে গেছে চোরেরা।

ওআ/আপ্র/২০/১০/২০২৫