ঢাকা ০১:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫

যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ওয়াসা

  • আপডেট সময় : ০১:১৮:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৯৫ বার পড়া হয়েছে

মহানগর প্রতিবেদন : ২০০৯ সালে পানির সংকট, পানিতে ময়লা-দুর্গন্ধ, বিল বকেয়া, সিস্টেম লস, একমাত্র ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা এবং আয়ের বিপরীতে বেশি ব্যয়ের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছিল ঢাকা ওয়াসা। তবে ২০০৯ সালের পর থেকে এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে শুরু করে রাজধানীবাসীর সেবায় নিয়োজিত সরকারি সংস্থাটি। বর্তমানে সেসব সমস্যার বেশির ভাগই সমাধান হয়েছে।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব নেন তাকসিম এ খান। ওই সময় তিনি ‘ঘুরে দাড়াও ঢাকা ওয়াসা’ নামে একটি কার্যক্রম শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে ওয়াসাকে ডিজিটালাইজড এবং কার্যক্রমে নতুনত্ব নিয়ে আসেন তিনি। এ প্রক্রিয়ায় শুরু হয় ‘ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা’ থেকে সরে এসে নদীর পানিকে পরিশোধন করে পানযোগ্য করে তোলা।
এক যুগের কর্মযজ্ঞে তাকসিম ঢাকার পানির সংকট মোকাবেলায় যেমন সক্ষম হয়েছেন, তেমনি বকেয়া বিল আদায় এবং আয়ের বিপরীতে ব্যয়ের যে হিসাব সে জায়গায় আন্তর্জাতিক মাপকাঠি স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানি চুরি করতে গিয়ে ওয়াসার পাইপ ফাটিয়ে ঢাকার বস্তিগুলোতে পানি নেওয়া হতো। ওই ফুটো দিয়ে ময়লা ঢুকে নোংরা পানি পৌঁছাত আবাসিক গ্রাহকদের বাসায় ।
অন্যদিকে বস্তিতে অবৈধভাবে পানি দিয়ে টাকা তুলত স্থানীয় মাস্তানরা। সে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়েছে ওয়াসা। এখন বস্তিতেও দেওয়া হয়েছে বৈধ সংযোগ। বিলও বকেয়া থাকছে না।
ওয়াসা বলছে, প্রতি ১০০ টাকা আয়ের বিপরীতে সংস্থাটির খরচ হয় ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, যা আন্তর্জাতিক অনুশীলন। যদিও তাকসিম এ খান দায়িত্ব পাওয়ার আগে এ খরচের পরিমাণ ছিল ৯০ এর ঘরে।
বর্তমান এমডির হাত ধরে ঢাকা ওয়াসা বর্তমানে একটি মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করছে, যার মধ্যে রয়েছে ১১টি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে পাঁচটি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ছয়টি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করার কথা রয়েছে। প্রথম ধাপে পাগলা, দাশেরকান্দি, উত্তরা, মিরপুর ও রায়েরবাজারে পাঁচটি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে টঙ্গী, সাভার, রূপগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, ডেমরা এবং নারায়ণগঞ্জে ছয়টি পয়ঃশোধনাধার নির্মাণ করবে ঢাকা ওয়াসা। এরই মধ্যে দাশেরকান্দি শোধনাগারের কাজ শেষ হওয়ার পথে।
একটি সংবাদসংস্থার সঙ্গে আলাপকালে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, চলতি বছরের মাঝামাঝি চালু হচ্ছে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার।
ভূগর্ভস্থ পানি লাগাতার উত্তোলনের ফলে রাজধানীতে ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এ বিষয়ে নজর দিয়েছে ওয়াসা। ভূগর্ভস্থ পানি না তুলে নদীর পানিকে পরিশোধন করে ব্যবহার উপযোগী করতে কাজ করছে সংস্থাটি। বর্তমানে ৩৪ শতাংশ পানি আসছে নদী থেকে, যা ৭০ শতাংশে নিয়ে যেতে চায় ঢাকা ওয়াসা।
রাজধানীতে প্রতিদিনের পানির চাহিদা ২৫০-২৫৫ কোটি লিটার। পানি সরবরাহ সংস্থাটির উৎপাদন সক্ষমতা ২৬৫ কোটি লিটার। এরই মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় পানি শোধনাগারের নির্মাণ কাজ শেষ করেছে ওয়াসা। পদ্মা (যশোলদিয়া) পানি শোধনাগার নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে মুন্সিগঞ্জে, যেখানে পদ্মা নদীর পানি পরিশোধন করে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।

তাকসিম এ খানের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার যশোলদিয়ায় পানি শোধনাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীন সরকারের তিন হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তায় ১০৪ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় যশোলদিয়া পানি শোধনাগার। দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পরিশোধিত পানি সরবরাহ করা সম্ভব সেখান থেকে, যা বর্তমানে পুরোদমে চালু রয়েছে।
ওয়াসার তথ্যমতে, যশোলদিয়া থেকে পরিশোধিত পানি পঞ্চাশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যুক্ত হচ্ছে রাজধানীর পানি সরবরাহ নেটওয়ার্কে। সংস্থাটির মোট পানি সরবরাহের ১৩ শতাংশ জোগান দিচ্ছে যশোলদিয়া। এই পানি পাচ্ছে রাজধানীর বাবুবাজার, চকবাজার, লালবাগ, বংশাল, তাঁতীবাজার, নবাবপুর, নর্থসাউথ রোড ও ফুলবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দারা। একই সঙ্গে সায়েদাবাদ ফেস-১, সায়েদাবাদ ফেস-২ এর মাধ্যমে মেঘনা নদীর পানিকে পরিশোধন করে রাজধানীবাসীর চাহিদা মেটানো হচ্ছে। সায়েদাবাদ ফেস-৩ নিয়েও কাজ করছে সংস্থাটি। এ বড় প্রকল্প ছাড়াও ভাকুর্তা পানি শোধনাগার তৈরি হয়েছে তাকসিম এ খানের সময়কালে। এর মাধ্যমে ওয়াসার পানির সুবিধা পাচ্ছেন রাজধানীর মিরপুরবাসী।
তাকসিম এ খানের ভাষ্য, ঢাকা ওয়াসার সিস্টেমলস ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। পরিসংখ্যান মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সিস্টেম লস ৩৫ শতাংশ। কোনো কোনো দেশে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে ‘সিঙ্গেল ডিজিটে সিস্টেম লস’ নেই।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার সিস্টেম লস ছিল ৩৫ শতাংশ। ডিএমএ করার পর ৫ শতাংশ, ৬ শতাংশ এমনকি কোথাও ১ শতাংশে নেমেছে। আন্তর্জাতিক মানদ-ে ২৫ শতাংশটা সন্তোষজনক। তবে তাকসিম তা অনেক আগেই এর নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।
নগরবাসীর অভিযোগের সমাপ্তি ঘটাতে চায় ঢাকা ওয়াসা। পানযোগ্য পানি নগরবাসীর ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে ওয়াসা হাতে নিয়েছে ডিসট্রিক মিটার এরিয়া (ডিএমএ) নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ। তাকসিম এ খান বলছেন, এই নেটওয়ার্ক তৈরি হলে ওয়াসার গ্রাহকরা পরিষ্কার পানি পাবে। পাশাপাশি কোথাও পানির সংকট দেখা দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা সক্ষম হবে। এই পুরো ব্যবস্থাপনা হবে কম্পিটারাইজড। এ জন্য ঢাকা শহরকে ১৪৪টি ভাগে ভাগ করে নতুন পাইপলাইন তৈরির কাজ করছে ঢাকা ওয়াসা। এরই মধ্যে ৭১টি ডিএমএ তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তাকসিম এ খানের হাত ধরে চলা সংস্থাটি তাদের কাজের স্বীকৃতিও পেয়েছে। গেল বছর (২০২০-২১ অর্থবছর) বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে ঢাকা ওয়াসার সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০টি দপ্তর, সংস্থা ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করে। বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তির প্রতিবেদন ও প্রমাণকসমূহ মূল্যায়নে ১০০ নম্বরের বিপরীতে ঢাকা ওয়াসা ৯৮.২৭ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে। গত অর্থবছরে ঢাকা ওয়াসা তৃতীয় স্থান লাভ করেছিল এবং তার আগের বছর প্রথম হয়েছিল। এ মূল্যায়ন ঢাকা ওয়াসা’র সার্বিক কাজের অগ্রগতির একটি বড় সূচক।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ওয়াসা

আপডেট সময় : ০১:১৮:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মহানগর প্রতিবেদন : ২০০৯ সালে পানির সংকট, পানিতে ময়লা-দুর্গন্ধ, বিল বকেয়া, সিস্টেম লস, একমাত্র ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা এবং আয়ের বিপরীতে বেশি ব্যয়ের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছিল ঢাকা ওয়াসা। তবে ২০০৯ সালের পর থেকে এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে শুরু করে রাজধানীবাসীর সেবায় নিয়োজিত সরকারি সংস্থাটি। বর্তমানে সেসব সমস্যার বেশির ভাগই সমাধান হয়েছে।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব নেন তাকসিম এ খান। ওই সময় তিনি ‘ঘুরে দাড়াও ঢাকা ওয়াসা’ নামে একটি কার্যক্রম শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে ওয়াসাকে ডিজিটালাইজড এবং কার্যক্রমে নতুনত্ব নিয়ে আসেন তিনি। এ প্রক্রিয়ায় শুরু হয় ‘ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা’ থেকে সরে এসে নদীর পানিকে পরিশোধন করে পানযোগ্য করে তোলা।
এক যুগের কর্মযজ্ঞে তাকসিম ঢাকার পানির সংকট মোকাবেলায় যেমন সক্ষম হয়েছেন, তেমনি বকেয়া বিল আদায় এবং আয়ের বিপরীতে ব্যয়ের যে হিসাব সে জায়গায় আন্তর্জাতিক মাপকাঠি স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানি চুরি করতে গিয়ে ওয়াসার পাইপ ফাটিয়ে ঢাকার বস্তিগুলোতে পানি নেওয়া হতো। ওই ফুটো দিয়ে ময়লা ঢুকে নোংরা পানি পৌঁছাত আবাসিক গ্রাহকদের বাসায় ।
অন্যদিকে বস্তিতে অবৈধভাবে পানি দিয়ে টাকা তুলত স্থানীয় মাস্তানরা। সে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়েছে ওয়াসা। এখন বস্তিতেও দেওয়া হয়েছে বৈধ সংযোগ। বিলও বকেয়া থাকছে না।
ওয়াসা বলছে, প্রতি ১০০ টাকা আয়ের বিপরীতে সংস্থাটির খরচ হয় ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, যা আন্তর্জাতিক অনুশীলন। যদিও তাকসিম এ খান দায়িত্ব পাওয়ার আগে এ খরচের পরিমাণ ছিল ৯০ এর ঘরে।
বর্তমান এমডির হাত ধরে ঢাকা ওয়াসা বর্তমানে একটি মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করছে, যার মধ্যে রয়েছে ১১টি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে পাঁচটি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ছয়টি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করার কথা রয়েছে। প্রথম ধাপে পাগলা, দাশেরকান্দি, উত্তরা, মিরপুর ও রায়েরবাজারে পাঁচটি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে টঙ্গী, সাভার, রূপগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, ডেমরা এবং নারায়ণগঞ্জে ছয়টি পয়ঃশোধনাধার নির্মাণ করবে ঢাকা ওয়াসা। এরই মধ্যে দাশেরকান্দি শোধনাগারের কাজ শেষ হওয়ার পথে।
একটি সংবাদসংস্থার সঙ্গে আলাপকালে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, চলতি বছরের মাঝামাঝি চালু হচ্ছে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার।
ভূগর্ভস্থ পানি লাগাতার উত্তোলনের ফলে রাজধানীতে ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এ বিষয়ে নজর দিয়েছে ওয়াসা। ভূগর্ভস্থ পানি না তুলে নদীর পানিকে পরিশোধন করে ব্যবহার উপযোগী করতে কাজ করছে সংস্থাটি। বর্তমানে ৩৪ শতাংশ পানি আসছে নদী থেকে, যা ৭০ শতাংশে নিয়ে যেতে চায় ঢাকা ওয়াসা।
রাজধানীতে প্রতিদিনের পানির চাহিদা ২৫০-২৫৫ কোটি লিটার। পানি সরবরাহ সংস্থাটির উৎপাদন সক্ষমতা ২৬৫ কোটি লিটার। এরই মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় পানি শোধনাগারের নির্মাণ কাজ শেষ করেছে ওয়াসা। পদ্মা (যশোলদিয়া) পানি শোধনাগার নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে মুন্সিগঞ্জে, যেখানে পদ্মা নদীর পানি পরিশোধন করে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।

তাকসিম এ খানের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার যশোলদিয়ায় পানি শোধনাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীন সরকারের তিন হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তায় ১০৪ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় যশোলদিয়া পানি শোধনাগার। দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পরিশোধিত পানি সরবরাহ করা সম্ভব সেখান থেকে, যা বর্তমানে পুরোদমে চালু রয়েছে।
ওয়াসার তথ্যমতে, যশোলদিয়া থেকে পরিশোধিত পানি পঞ্চাশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যুক্ত হচ্ছে রাজধানীর পানি সরবরাহ নেটওয়ার্কে। সংস্থাটির মোট পানি সরবরাহের ১৩ শতাংশ জোগান দিচ্ছে যশোলদিয়া। এই পানি পাচ্ছে রাজধানীর বাবুবাজার, চকবাজার, লালবাগ, বংশাল, তাঁতীবাজার, নবাবপুর, নর্থসাউথ রোড ও ফুলবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দারা। একই সঙ্গে সায়েদাবাদ ফেস-১, সায়েদাবাদ ফেস-২ এর মাধ্যমে মেঘনা নদীর পানিকে পরিশোধন করে রাজধানীবাসীর চাহিদা মেটানো হচ্ছে। সায়েদাবাদ ফেস-৩ নিয়েও কাজ করছে সংস্থাটি। এ বড় প্রকল্প ছাড়াও ভাকুর্তা পানি শোধনাগার তৈরি হয়েছে তাকসিম এ খানের সময়কালে। এর মাধ্যমে ওয়াসার পানির সুবিধা পাচ্ছেন রাজধানীর মিরপুরবাসী।
তাকসিম এ খানের ভাষ্য, ঢাকা ওয়াসার সিস্টেমলস ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। পরিসংখ্যান মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সিস্টেম লস ৩৫ শতাংশ। কোনো কোনো দেশে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে ‘সিঙ্গেল ডিজিটে সিস্টেম লস’ নেই।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার সিস্টেম লস ছিল ৩৫ শতাংশ। ডিএমএ করার পর ৫ শতাংশ, ৬ শতাংশ এমনকি কোথাও ১ শতাংশে নেমেছে। আন্তর্জাতিক মানদ-ে ২৫ শতাংশটা সন্তোষজনক। তবে তাকসিম তা অনেক আগেই এর নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।
নগরবাসীর অভিযোগের সমাপ্তি ঘটাতে চায় ঢাকা ওয়াসা। পানযোগ্য পানি নগরবাসীর ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে ওয়াসা হাতে নিয়েছে ডিসট্রিক মিটার এরিয়া (ডিএমএ) নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ। তাকসিম এ খান বলছেন, এই নেটওয়ার্ক তৈরি হলে ওয়াসার গ্রাহকরা পরিষ্কার পানি পাবে। পাশাপাশি কোথাও পানির সংকট দেখা দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা সক্ষম হবে। এই পুরো ব্যবস্থাপনা হবে কম্পিটারাইজড। এ জন্য ঢাকা শহরকে ১৪৪টি ভাগে ভাগ করে নতুন পাইপলাইন তৈরির কাজ করছে ঢাকা ওয়াসা। এরই মধ্যে ৭১টি ডিএমএ তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তাকসিম এ খানের হাত ধরে চলা সংস্থাটি তাদের কাজের স্বীকৃতিও পেয়েছে। গেল বছর (২০২০-২১ অর্থবছর) বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে ঢাকা ওয়াসার সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০টি দপ্তর, সংস্থা ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করে। বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তির প্রতিবেদন ও প্রমাণকসমূহ মূল্যায়নে ১০০ নম্বরের বিপরীতে ঢাকা ওয়াসা ৯৮.২৭ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে। গত অর্থবছরে ঢাকা ওয়াসা তৃতীয় স্থান লাভ করেছিল এবং তার আগের বছর প্রথম হয়েছিল। এ মূল্যায়ন ঢাকা ওয়াসা’র সার্বিক কাজের অগ্রগতির একটি বড় সূচক।