লিওনোরা ক্যারিংটন
বেশ আতঙ্ক নিয়েই আমি পিকনিকের জন্য জায়গাটা বাছাই করেছিলাম। আমার জন্য উপলক্ষটা একটু গম্ভীর ছিল কারণ আমন্ত্রিত অতিথিদের সবাই ছিলেন বিশিষ্টজন: মেক্সিকোর সবচেয়ে অভিজাত সমাজের সুপরিচিত মহাশয়, লর্ড পোপোকাতেপেতল, এবং তার নিকটতম বন্ধু, ফেডারেল ডিসট্রিক্টের ভিস্কাউন্ট। এই দুই ভদ্রলোকের সঙ্গ উপভোগ করার জন্য আমি সবচেয়ে ভালো জায়গা নির্বাচন করতে গিয়ে বিরাট চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। এমনকি সাধারণ রেস্তোঁরাগুলোতেও অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হতো, আর তাই আমি লাতিন আমেরিকান টাওয়ারের ধ্বংসাবশেষের কাছাকাছি সুন্দর পুরোনো কবরস্থান বেছে নিয়েছিলাম।
কোনো একবার মেক্সিকোতে বেশ ভালোভাবে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, রাজা দ্বিতীয় চ্যাপুলতেপেক ভন স্মিথ (আতজকাপোতজালকোর পুত্র গুগেনহেইম) আইন জারি করেন যেন প্রাণী না এমন কোনো কিছুর বক্তৃতা সব ধরনের যন্ত্রে (রেডিও, টেলিফোন, টেলিভিশন, ওয়াকি-টকি, মাইক্রোফোন ইত্যাদি) প্রচার না করে। তারপরে আমাদের সভ্যতা দ্রুত একটা সোনালী যুগের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল যে সময়টাতে আনন্দদায়ক নীরবতা প্রতিা রাস্তাকে বাগানে পরিণত করেছিল আর প্রতিা বাড়ি চিন্তাচর্চার জায়গা না হলেও শান্তিপূর্ণ চিন্তার একটা কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।
শহরের একেবারে কেন্দ্রে পিকনিক করা তখন সমাজের সবচেয়ে বিশিষ্ট সদস্যদের জন্য প্রায় একটা প্রথা হয়ে গিয়েছিল। দাবা, সাপ-মই, আর লুডুর মতো প্রশান্ত খেলা তখন জাতীয় বিনোদন হয়ে উঠেছিল। কথিত আছে যে, আগের যুগে জনগণ নাকি ষাঁড় হত্যা করে আনন্দ করত। তারা এটা ঠিক কীভাবে করেছে তা আমার জানা নেই, তবে এটা অনুমান করা যায় যে বর্বর ও অন্ধকার যুগে যে আগ্নেয়াস্ত্র বা এই জাতীয় কিছু জিনিস ব্যবহার করা হতো তখন যেতাই ব্যবহার করা হতো।
নিউ ইয়র্ক দ্য ফার্স্ট, দ্য ল অব ডি-ইলেকট্রিফিকেশন অফ দ্য আমেরিকা শিরোনামের একটা আদেশের পর থেকে, যা উত্তরের কালো রাজার জারি করেছিলেন, এটা অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে কীভাবে সেই শক্তিশালী বৈদ্যুতিক শক্তি একসময় ব্যবহৃত হতো, যে শক্তি আমরা এখন শুধু আমাদের আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি যে আমি আমার গল্প থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এটা ছিল মে মাসের একটা ঝাপসা দিন, যেদিন এক খচ্চরের স্লেডে চড়ে আমি সেইন্ট জর্জ লাইট অ্যান্ড পাওয়ার সিমেট্রির দিকে যাচ্ছিলাম, আমার সেøড পছন্দের খাবার দিয়ে ভরা ছিল: জাপান থেকে নরওয়েজিয়ান এনশিলাদার (মেক্সিক্যান একটা খাবার। টরটিয়া, সস, আলু, সবজি আর মাংস দিয়ে বানানো হয়) একটা টিন, সাথে ছয় বোতল কোকাকোলা নামক পুরনো বিরল ইন্ডিয়ান পানীয়।
ভোরের আলোয় কবরস্থানটা রহস্যের আবরণে আবৃত ছিল: যেদিকে বৃষ্টি হয়েছিল সেদিকে নিবিড়ভাবে থাকা সমাধিপ্রস্তরগুলো সাদা আলোয় জ্বলজ্বল করছিল, সেগুলোর ছায়াময় দিক অবশ্য কালো। মাঝখানে মাকড়সার জালের মতো সরু এই গলিগুলোর মাঝখানে দ্য ফ্যাট সোয়ালো নামের একটা সরাইখানা ছিল। মৃতদের এই শহরে যারা ঘুরতে আসত তাদের আরামের জন্য কড়া পানীয়র দরকার ছিল। জায়গাটা খ্রিস্টীয় যুগের শেষের দিকের পুরানো দিনগুলোর একটা গির্জার মতো ছিল অর্থাৎ একটা জায়গা যেখানে বিষণ্ন রকমের আচার, রীতি-নীতি পালন করা হতো এবং বিশ্বাসীরা একজন পুরোহিতের বক্তৃতা শুনতে জড়ো হতো। কিন্তু তাদের ঈশ্বর (এখন মৃত) ছিল বেচারা একজন মানুষ যাকে ভয়ংকরভাবে একটা কাঠের গুড়ির মধ্যে পেরেক দিয়ে গেঁথে রাখা হয়েছিল আর তার চেহারায় যন্ত্রণার চিহ্ন ছিল স্পষ্ট। আমাদের পূর্বপুরুষদের মনস্তত্ত্বের এটা একটা আকর্ষণীয় উদাহরণ, যে তাদের এমন একটা অশুভ ছবি পূজা করা-ই উচিত ছিল!
আমাদের পিকনিকের জন্য একটা জায়গা খুঁজতে গিয়ে আমি ধীরে ধীরে এমন একটা জায়গায় গিয়ে পৌঁছালাম যেখানে দুজন লোক একটা গর্ত খুঁড়ছিল। তারা আমাকে বলেছিল যে তারা হটি কর্নার নামে বিশিষ্ট একজন ভদ্রমহিলার দেহাবশেষ খুঁড়ে বের করছে, যিনি সম্প্রতি তার ভূগর্ভস্থ “হোম অফিস” অথবা মিনিস্ট্রি অব ইন্টেরিয়রে অধ্যয়নরত অবস্থায় মারা গিয়েছিলেন। তার ব্যাপক পরিচিত থিসিস প্রেয়ারস অব দ্য টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি রহস্যময় আবিষ্কার নিয়ে লেখা হয়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিখ্যাত হোম অফিসের দরজা খুলে ফেলার পর রহস্যময় কিছু আবিষ্কার করেছিল সেটা নিয়ে সেই থিসিস লেখা হয়েছিল।
‘কবরস্থানটা মহিলাদের একচেটিয়া ব্যবহারের জন্য’- দুজন গোরখোদকের মধ্যে লম্বা লোকটা বলল। তারা আমাকে জিজ্ঞেস করল এর মাপ নিতে সাহায্য করার জন্য আমি গর্তে শুয়ে থাকতে পারব কিনা।
আমি মনে করেছিলাম আর্দ্র মাটি খুব একটা অতিথিপরায়ণ হবে না, কিন্তু সেটা আসলে সেরকম ছিল না। লেডি হটি কর্নারের আরামদায়ক কবরে শুয়ে আমি এমনকি অলসতা আর তন্দ্রাও অনুভব করলাম। লোকগুলো খুব যত্ন নিয়ে এর মাপ নিতে থাকল। তাদের কাজ শেষ হলে তারা আমাকে ওপরে উঠে আসতে সাহায্য করল এবং যখন আমি তাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছিলাম, তখন আমি আমার দুই অতিথিকে কুয়াশার মধ্য দিয়ে আসতে দেখলাম: লর্ড পোপোকাতেপেতল আর ফেডারেল ডিসট্রিক্টের ভিস্কাউন্ট।
আমি আমার ঝুড়ি নিয়ে আমার গণ্যমান্য বন্ধুদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমরা তাড়াতাড়ি শান্ত একট জায়গা খুঁজে পেলাম। ফেডারেল ডিসট্রিক্টের ভিস্কাউন্ট তার বাতের ব্যথার সর্বশেষ পরিস্থিতির কথা জানালেন। “বছরের শুরু থেকে আর্দ্রতার কারণে আমার মেরুদণ্ডের নিচের অর্ধেক অংশে খিঁচুনি হওয়া শুরু করল। আমি ডা. মেজর ম্যাজিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করেছি- যিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে এই ব্যথা আর যন্ত্রণা সম্পূর্ণরূপে মনস্তাত্ত্বিক, এবং তিনি আমাকে বানরের চামড়া দিয়ে বানান রেখাযুক্ত প্যান্ট পরার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত আমি কোনো স্বস্তি পাইনি।’
‘কুয়্যাক!’ ফেডারেল ডিসট্রিক্টের ভিস্কাউন্ট জবাব দিলেন, ‘বিষুবরেখায় ব্যাঘাত হলে বাতের ব্যাথা দেখা দেয়। সেফিলোকক্কাসের মধ্যে দিয়ে ধূসর তরল প্রবাহিত হতে থাকে তখন।’
‘আপনি তো জানেন যে এন্টিরিউমাটয়েড কলারের মতো জিনিসও তো আছে’- আমি বললাম। ‘সম্প্রতি আমি একটা ব্যবহার করছি, খুব ভালো। আমি নিজেই সেটা বানিয়ে ব্যবহার করেছিলাম। সেগুলোর দাম পড়েছে মাত্র দুটো ফার্মেন্টেড পনির। আপনার জন্য সেটা একদম প্রস্তুতকারকের দামের সমান।’
আমরা এভাবে যখন আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন সাদা স্যুট পরা একজন লোক আমাদের কাছে এলো। আমাকে সম্বোধন করার আগে তিনি এক মুহূর্ত ইতস্তত বোধ করে বললেন, ‘সেনিয়রা ক্যারিংটন?’
‘হ্যাঁ।’ আমি উত্তর দিলাম, কিছুটা অবাক হয়েছিলাম যে একজন অপরিচিত লোক কীভাবে জানল আমি কে। লোকটা আমার হাতে দশ বাই ত্রিশ ইঞ্চির একটা প্যাকেট দিল। ‘এটা জাতীয় লটারির পুরস্কার। আপনার নম্বর এক্সএক্সএক্সসিসিসি এই পুরস্কারটা জিতে নিয়েছে। আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাই, সেনিয়রা ক্যারিংটন।’ তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাবধানে প্যাকেটটা খুললাম। ছোট্ট পাখির হাসির সাথে ছায়ার মধ্যে সে অদৃশ্য হয়ে গেল। ছোট পাখির এই হাসি আমার খুব একটা পছন্দ না।
শিগগিরই আমরা আবিষ্কার করলাম যে, প্যাকেটটায় একটা ইন্ডিয়ান রাবারের কৌটা রয়েছে, খুব ছোট বাচ্চার খেলার জন্য সেটা উপযুক্ত।
‘এই পুরস্কার দিয়ে কী কাজটা হবে, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না’- ফেডারেল ডিসট্রিক্টের ভিস্কাউন্ট বললেন। পোপোকাতেপেতল হাতে চশমা নিয়েই সেটা সাবধানে পরীক্ষা করলেন আর ঘোষণা দিলেন, ‘আমাদের পিকনিকে লাঞ্চের সময় একটা টেবিল হিসাবে এটা আমরা খুব ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারব।’ ভালো যুক্তি। কবরস্থানের আর্দ্র মাটির ওপর খাবার না রেখে এর ওপর রাখাটাই ভালো হবে।
যাহোক, আমরা খাওয়ার সময় কৌটা থেকে আসা অস্বস্তিকর একটা গন্ধের জন্য খুব ঝামেলায় পড়লাম। আমাদের খুব কমই খেতে পেরেছিলাম। আমার সঙ্গীরা প্রায় কিছু না খেয়েই অজুহাত দিয়ে উঠে চলে গেলেন। পিকনিকের খাবারের অবশিষ্টাংশ আর ইন্ডিয়ান রাবারের কৌটা সেখানে পড়ে রইল। আমাদের বিমর্ষ বর্বর শহরের উপকণ্ঠে আমি গভীর বিষণ্নতায় পরাস্ত হয়ে পড়েছিলাম, যদিও আমি এই গন্ধের সাথে লড়াই চালিয়ে নিচ্ছিলাম আর আমার নাকের নিচে প্রচুর পরিমাণে জেসমিন এসেন্স লাগিয়ে নিয়েছিলাম। ভয় আমাকে আমার পুরস্কারের প্যাকেট খুলতে বাধা দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে আমি এটার দিকে শুধু অপলক চেয়ে গিয়েছিলাম। একটা অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগ আমার মধ্যে কাজ করছিল এই ভেবে যে এই গন্ধটা সম্ভবত কবরস্থানের প্রাচীন কবর থেকে আসছিল। এটা এমন এক যন্ত্রণা যা সঠিকভাবে আমার ছিল না। কিন্তু সেটি সেই দূরবর্তী বিংশ শতাব্দীর ভয়ংকর খ্যাতির বাইরে থেকে যেন আসছিল।
জানি না কতক্ষণ ধরে গন্ধটা আমি পাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে আবার সেই একই ছোট্ট পাখির হাসির শব্দ শুনতে পেলাম এবং চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম। আমার পাশে আমি সেই ব্যক্তির সাদা ছায়া দেখতে পেলাম যে আমাকে আমাকে ইন্ডিয়ান রাবারের কৌটা দিয়েছিল। তার মুখ কুয়াশায় এতাই ঢাকা ছিল যে আমি তার চেহারার বৈশিষ্ট্যগুলো ধরতে পারিনি, তবে আমার কানের পাশে ঠিক তার কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছিলাম, ‘খুলে দেখুন এর মধ্যে কী আছে। আপনাকে তো কেউ এটা খুলে দেখতে আটকে রাখেনি।’
আমার হাত আর কাজ করছিল না। কিছুক্ষণ পর আমি রাবারের আবরণ তুলে ফেললাম যেতার ওপর লিলি অফ দ্য ভ্যালি ডিজাইন অলংকৃত করা ছিল। সেটা তুলে ফেলার পর এক প্রাচীন পদার্থের আবরণ দিয়ে তৈরি আবার আরেকটা বাক্স খুঁজে পেলাম যাকে একসময় প্লাস্টিক বলা হতো। আমি আমার কাজ থেকে বিরত থাকতে পারলে খুশি হতাম। কিন্তু সাদা ছায়ার কণ্ঠস্বর যা বলছিল দক্ষতার সাথে আমি তাই করে যাচ্ছিলাম। আমার হাত গোলাপ রঙের বাক্সটা খুলতে সক্ষম হয়েছে। সেখানে যা দেখলাম, তাতে আমি বিস্মিত আর ভয় পেয়ে গেলাম। এটা ছিলো একটা মানুষের মৃতদেহ। খুব বেশি হলে একটা টুথব্রাশের আকারের। এই মিনিয়েচার মৃতদেহের মুখে একটা বিশাল গর্বিত গোঁফ। বিস্ময়করভাবে এটা সংরক্ষণ করা ছিল, সম্ভবত এমন কোনো পদ্ধতিতে যা এক সময় আমাজন জঙ্গলের বাসিন্দারা জানত। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এই ছোট্ট শরীর বাস্তব জীবনে আরও বড় ছিল। কিন্তু এখনকার গড় মানুষের হিসাবে বড় না। আবরণের ভেতরের দিকে একটা লেখার দিকে আমার চোখ গেল, ‘জোসেফ স্ট্যালিন। ১৯৪৮ সাল। ইংল্যান্ডের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মদিন উপলক্ষে তাকে দেওয়া উপহার- যিনি এটাকে বড়দিনের উপহার হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোয়াইট আইজেনহাওয়ারের কাছে পাঠিয়েছিলেন; যিনি আবার এটা মেক্সিকোর জাতীয় জাদুঘরে পাঠিয়েছিলেন, সেইন্ট লাইট অ্যান্ড পাওয়ারের স্মরণে যাকে ভ্যাটিকান ১৯৫৮ সালে ক্যানোনিাইজড করেছিল।’ ছঁরধ ঘড়নরং ঝড়ষরং অৎঃবস ঢ়বৎ হড়ং ংড়ষড় রহাবংঃরমধঃধস ঃৎধফরসঁং বঃ হড়হ ধষররং (ল্যাটিন এই বাক্যের অর্থ হচ্ছে। কারণ শুধু আমরাই নিজেদের শেখা শিল্প অন্যদের মাঝে সঞ্চারিত করি। আর কেউ এটা করে না)। এই পুতুল সম্ভবত সেইন্ট রাসপুটিনের সমসাময়িক ছিল, জারের দরবারে সম্ভ্রান্ত কোনো রুশ? বাড়তে থাকা উত্তেজনায় আমি চিঠিতে আইজেনহাওয়ারের নামের আগের লেখাটা পরীক্ষা করতে থাকলাম। আরেকজন রুশ সম্ভবত? নিঃসন্দেহে হটি কর্নার তার থিসিসে ‘ইউনাইটেড সেলফ-এনহিলেশন’ (ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকার বদলে ক্যারিংটন ইউনাইটেড সেলফ-এনহিলেশন পান হিসেবে ব্যবহার করেছেন। আবার সোভিয়েত ইউনিয়নের সংক্ষিপ্ত রূপ ইউএসএসআরের পূর্ণরূপ ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোশালিস্ট রিপাবলিকসের বদলে পান হিসেবে ‘ইউনাইটেড সোলো সেপুলচার রিগ্রেশন’ ব্যবহার করেছেন) হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অক্ষরগুলো সঠিকভাবে অনুবাদ করা করেছে। যেভাবে ‘ইউনাইটেড সোলো সেপুলচার রিগ্রেশন’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ ইউএসএসআর লেখা হয় (একই কর্তৃপক্ষের মতে)। সম্ভবত এটা ক্যাথলিক চার্চের একটা রীতির একটা বাক্যের অংশ অথবা এমন কিছু? এটা সত্যি যে আমি ল্যাটিন বাক্য খুব একটা ভালো বুঝতে পারি না, কিন্তু আমি অনুমান করতে পারছি যে এই লেখাটা সেই মিনিয়েচার মৃতদেহের সাথে সম্পর্কিত ছিল। কে আর বলতে পারবে যে এই লোকটা কোনো বামন ছিল কিনা যে জারের দরবারে ভাঁড় হিসেবে কাজ করত?
যখন এই রোমান্টিক ধারণাগুলো আমার মনের মধ্য ঘুরপাক খাচ্ছিল, তখন সাদা পোশাকের লোকটা কাছে এসে বলল- ‘আজকের দিনের পথিকৃৎদের সবাই অন্ধকার যুগ সম্পর্কে সচেতন যখন পৃথিবী ছিল খালি আর দেবতাদের উপর নির্ভর করতে পারত না। ঐশ্বরিক আত্মা পৃথিবীতে নিজেদের উদ্ভাসিত করেছিল শুধু তখন যখন সারা পৃথিবী আতঙ্ক দিয়ে পরিপূর্ণ ছিল। সেই দুর্ভাগ্যজনক সময়ের এই ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ওষুধের গুণাগুণও আছে। কয়েক ফোঁটা গাঁদা তেল এই গুঁড়োর সাথে মিশিয়ে নিন, আর সাথে কিছু রাজকীয় পনিসিয়ানা বীজ। এটা ২০ নাম্বার বিষণ্নতার জন্য দারুণ একটা মলম হিসেবে কাজ করবে। এটা নির্দিষ্ট ব্যায়ামের ক্ষেত্রেও দারুণভাবে কার্যকর। আমরা সবাই জানি যে পশ্চিমা ওষুধের মধ্যে একটা সৌম্য বিষের শাখা রয়েছে, যেতা নির্দিষ্ট রোগ নিরাময়ের জন্য ভালো একটা শর্ত।’
মিমিয়েচার মৃতদেহের গোঁফ থেকে সে লম্বা একটা চুল ছিঁড়তে এগিয়ে গেল এবং সেটা নিয়ে আমার মুখের মধ্যে নিপুণভাবে রাখল। আমি একটা সার্ডিনের স্বাদ পেলাম যা আমাকে সাথে সাথে শিহরিত করল- বিংশ শতাব্দীর ড্রাগিস্টরা অদ্ভুত সব কাজের অনুশীলন করত। আমি হঠাৎ করে অনুভব করলাম যেন কোনো ঐশ্বরিক আলো এসে আমার ওপর পড়ল আর ফিসফিস করে বলল, ‘অ্যাসপিরিন ঠিক এরকমই।’ আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম।
আমি যখন এলাম, তখন সাদা পোশাকের লোকটা উধাও হয়ে গেল, আর আমার হাতে শুধু ইন্ডিয়ান রাবার কৌটার মধ্যে জারের ছোট মিনিয়েচার মৃতদেহ রয়ে গেল।
এটা বলার কোনো কারণ দেখি না যে, জারের এই ছোট মিনিয়েচার মৃতদেহ আমাকে এই শহরের সবচেয়ে বড় আর নেতৃস্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিল। স্বাভাবিকভাবেই অনুকরণ ও মিথ্যাচার তো প্রচুর হবেই, কিন্তু খাঁটি ‘অ্যাপোস্টালিন’ এখন দেশের শীর্ষস্থানীয় রফতানি পণ্য। নিচে দেওয়া রোগগুলোর চিকিৎসায় এটা উপকারী-
হুপিং কাশি, সিফিলিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সন্তান জন্মদানের সময় হওয়া সমস্যা এবং অন্যান্য খিঁচুনি।
ঠিক ধনী না হলেও আমি স্বাচ্ছন্দ্য, প্রশান্তি আর আমার যা প্রয়োজন এবং যা-ই হোক না কেন, একটা শোভন ও সম্মত বিশিষ্ট জীবনের জন্য যা দরকার, তার সবকিছুই উপভোগ করি (১৯৬০-এর দশকের প্রথম দিকে)।
লেখক পরিচিতি: লিওনোরা ক্যারিংটন (১৯১৭-২০১১) একজন ব্রিটিশ-মেক্সিকান পরাবাস্তববাদী চিত্রশিল্পী এবং ঔপন্যাসিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ইউরোপ থেকে পালিয়ে মেক্সিকো চলে যান এবং বাকি জীবন সেখানেই কাটান। রেমেদিওস ভারো এবং ফ্রিদা কাহলোর পাশাপাশি সারা বিশ্বের নারী পরাবাস্তববাদী চিত্রশিল্পীদের মধ্যে তাকে এখনও অগ্রগণ্য ধরা হয়। তার বিখ্যাত উপন্যাস: পাথরের দরজা (১৯৭৭); গল্পের বই: ভয়ের বাড়ি (১৯৮৮) এবং ডিম্বাকার মহিলা: পরাবাস্তববাদী গল্প (১৯৭৫)।
অনুবাদ: ওয়াহিদ কায়সার
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ