ঢাকা ০৮:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫

যেখান থেকেই পারুক সরকার টিকা আনুক

  • আপডেট সময় : ১০:০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুন ২০২১
  • ১০৪ বার পড়া হয়েছে

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা : বাজেটের আলোচনা মিইয়ে এসেছে। কী পেলাম, আর কী পেলাম না এমন টুকটাক খাতভিত্তিক আলোচনা হচ্ছে ঠিকই, তবে তা জোরালো নয়। জাতীয় সংসদের আলোচনায় বাজেটের বিষয়কে ছাড়িয়ে গেছে দেশ থেকে টাকা পাচারের প্রসঙ্গ। সরকারি দল ও বিরোধী দলের একাধিক এমপি বিষয়টি তুলেছেন, গরম বক্তৃতা করেছেন। তবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তার কাছে অর্থ পাচারকারীদের কোনও তথ্য নেই, কারও কাছে থাকলে যেন দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী চাইলেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কারা টাকার পাচার করছে এমন কিছু নাম গণমাধ্যমে এসেছে, জনগণও জানে, দুদকও জানে। প্রশ্ন জানা অজানার নয়, প্রশ্ন হলো উদ্যম আছে কিনা উদ্যোগ নেওয়ার।
যে আলোচনায়ই হোক, বড় আলোচনা অবশ্যই করোনা রোগের অতিমারি। বাজেটে অনেক কিছু ইতিবাচক পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলছেন, তার বাজেট ব্যবসাবান্ধব। কিন্তু মানুষকে না বাঁচালে ব্যবসা হবে কী করে? অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারই বা হবে কী করে? প্রতি মাসে ২৫ লাখ করে আগামী চার বছরে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার যে পরিকল্পনা বাজেটে তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী, সেটা বাস্তবসম্মত নয়। আগামী বছরের বাজেটের আগেই, অর্থাৎ এক বছরের মধ্যেই টিকা প্রদান কার্যক্রম শেষ করতে হবে। টিকা দিতে দেরি হলে করোনার সংক্রমণ ও আক্রান্তের হার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না, যা প্রকারান্তরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বা কৌশলকে ব্যর্থ করে দেবে।
করোনাযুদ্ধে সরকারের টিকা নীতিটা আরও পরিষ্কার হওয়া উচিত, আরও আগ্রাসী হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীরা বলছেন টিকা সংগ্রহের সব চেষ্টা চলছে। কিন্তু পুরো বিষয়টি কেমন অস্বচ্ছ। টিকা প্রদানে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল তাক লাগানো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই চিরাচরিত অনিশ্চয়তাই ভর করলো আমাদের ওপর। টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, সেটাই ছিল এই প্রত্যাশার ভিত্তি। কিন্তু সেরাম প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারায় ভারত থেকে বাংলাদেশে টিকা আসা শুধু বন্ধুই হয়নি, সঙ্গে বিভ্রান্তিও তৈরি হয়েছে। প্রথম ডোজ টিকা নিয়ে যারা দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারলো না, এমন ১৪/১৫ লাখ লোক আসলে কী করবে সেটা এক বিভ্রান্তি। আমরা কি পারবো নির্ধারিত সময়ে এদের জন্য অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যবস্থা করতে? এরা কি দ্বিতীয় ডোজ তাহলে চীনের সিনোভ্যাক বা রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি নিতে পারবে? এই প্রশ্নগুলো উঠছে।
কিন্তু চীন বা রাশিয়ার কাছ থেকেও যে খুব দ্রুততম সময়ে টিকা আনা হবে সেই ভরসাও উচ্চারিত হচ্ছে না। যেখান থেকেই পারুক, সরকার টিকা আনুক-এমন একটা মনোভাব মানুষের। সরকার একটা টাইমফ্রেম দিক। বলুক, এই বছরের এই মাসের মধ্যে দেশের মানুষের টিকা দেওয়ার জন্য এই পরিমাণ টিকা আনা হবে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আগ্রাসন মাথায় রেখে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে যতটা নজর দেওয়া উচিত ছিল, ততটা দেওয়া হয়নি। বাজেটে সবার টিকার প্রাপ্তির বিষয়েও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন টিকা দেওয়া হয় ২০ লাখ মানুষকে। পরে সেটি বাড়িয়ে দৈনিক ৪০ লাখ করা হচ্ছে। আর বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা বলেছেন। এই ধীরগতিতে না করোনা দূর হবে, না অর্থনীতি তার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাবে।
টিকা নিয়ে রাজনীতি আছে। টিকা নিয়ে বাণিজ্য আছে। করোনা রাজনীতির কেন্দ্রে আছে টিকা আর তার বাজারজাতকরণ নিয়ে আছে ওষুধ ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা। টিকা নিয়ে ১৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভ্যাকসিন-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা বলেন, ‘আমরা মনে করি, ভ্যাকসিন আমদানির আলোচনা ও সিদ্ধান্ত এবং জনগণকে টিকাদানের সমগ্র দায়দায়িত্ব যেহেতু সরকার পালন করছে, তাই ভ্যাকসিন আমদানিতে কোনও মধ্যস্বত্বভোগীর ভূমিকা গ্রহণের সুযোগ নেই। সরকার এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে, সেটা আমাদের প্রত্যাশা।’ কোনও বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে যেন মানুষের ভাগ্য আবার ছেড়ে দেওয়া না হয়।
একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, টানা দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত। তাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করে যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে হবে।
অতিমারির পরবর্তী ঢেউ থেকে বাঁচতে একমাত্র উপায় টিকা। নীতিনির্ধারণী মহলের প্রত্যেককে এই বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। দেশে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যে আঘাত হেনেছে, সীমান্ত অঞ্চল থেকে যেভাবে নগর ও কেন্দ্রে চলে আসছে, তাতে একটা ভয় এমনিতেই কাজ করছে। এরমধ্যে যদি টিকার চাহিদা ও জোগানে অনিশ্চয়তা থাকে তাহলে জনমানসে আতঙ্ক তৈরি হবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদেশ থেকে টিকা আমদানি করে সব জেলা উপজেলায় সরবরাহ করা দরকার।
লেখক : সাংবাদিক

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

যেখান থেকেই পারুক সরকার টিকা আনুক

আপডেট সময় : ১০:০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুন ২০২১

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা : বাজেটের আলোচনা মিইয়ে এসেছে। কী পেলাম, আর কী পেলাম না এমন টুকটাক খাতভিত্তিক আলোচনা হচ্ছে ঠিকই, তবে তা জোরালো নয়। জাতীয় সংসদের আলোচনায় বাজেটের বিষয়কে ছাড়িয়ে গেছে দেশ থেকে টাকা পাচারের প্রসঙ্গ। সরকারি দল ও বিরোধী দলের একাধিক এমপি বিষয়টি তুলেছেন, গরম বক্তৃতা করেছেন। তবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তার কাছে অর্থ পাচারকারীদের কোনও তথ্য নেই, কারও কাছে থাকলে যেন দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী চাইলেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কারা টাকার পাচার করছে এমন কিছু নাম গণমাধ্যমে এসেছে, জনগণও জানে, দুদকও জানে। প্রশ্ন জানা অজানার নয়, প্রশ্ন হলো উদ্যম আছে কিনা উদ্যোগ নেওয়ার।
যে আলোচনায়ই হোক, বড় আলোচনা অবশ্যই করোনা রোগের অতিমারি। বাজেটে অনেক কিছু ইতিবাচক পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলছেন, তার বাজেট ব্যবসাবান্ধব। কিন্তু মানুষকে না বাঁচালে ব্যবসা হবে কী করে? অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারই বা হবে কী করে? প্রতি মাসে ২৫ লাখ করে আগামী চার বছরে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার যে পরিকল্পনা বাজেটে তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী, সেটা বাস্তবসম্মত নয়। আগামী বছরের বাজেটের আগেই, অর্থাৎ এক বছরের মধ্যেই টিকা প্রদান কার্যক্রম শেষ করতে হবে। টিকা দিতে দেরি হলে করোনার সংক্রমণ ও আক্রান্তের হার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না, যা প্রকারান্তরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বা কৌশলকে ব্যর্থ করে দেবে।
করোনাযুদ্ধে সরকারের টিকা নীতিটা আরও পরিষ্কার হওয়া উচিত, আরও আগ্রাসী হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীরা বলছেন টিকা সংগ্রহের সব চেষ্টা চলছে। কিন্তু পুরো বিষয়টি কেমন অস্বচ্ছ। টিকা প্রদানে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল তাক লাগানো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই চিরাচরিত অনিশ্চয়তাই ভর করলো আমাদের ওপর। টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, সেটাই ছিল এই প্রত্যাশার ভিত্তি। কিন্তু সেরাম প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারায় ভারত থেকে বাংলাদেশে টিকা আসা শুধু বন্ধুই হয়নি, সঙ্গে বিভ্রান্তিও তৈরি হয়েছে। প্রথম ডোজ টিকা নিয়ে যারা দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারলো না, এমন ১৪/১৫ লাখ লোক আসলে কী করবে সেটা এক বিভ্রান্তি। আমরা কি পারবো নির্ধারিত সময়ে এদের জন্য অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যবস্থা করতে? এরা কি দ্বিতীয় ডোজ তাহলে চীনের সিনোভ্যাক বা রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি নিতে পারবে? এই প্রশ্নগুলো উঠছে।
কিন্তু চীন বা রাশিয়ার কাছ থেকেও যে খুব দ্রুততম সময়ে টিকা আনা হবে সেই ভরসাও উচ্চারিত হচ্ছে না। যেখান থেকেই পারুক, সরকার টিকা আনুক-এমন একটা মনোভাব মানুষের। সরকার একটা টাইমফ্রেম দিক। বলুক, এই বছরের এই মাসের মধ্যে দেশের মানুষের টিকা দেওয়ার জন্য এই পরিমাণ টিকা আনা হবে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আগ্রাসন মাথায় রেখে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে যতটা নজর দেওয়া উচিত ছিল, ততটা দেওয়া হয়নি। বাজেটে সবার টিকার প্রাপ্তির বিষয়েও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন টিকা দেওয়া হয় ২০ লাখ মানুষকে। পরে সেটি বাড়িয়ে দৈনিক ৪০ লাখ করা হচ্ছে। আর বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা বলেছেন। এই ধীরগতিতে না করোনা দূর হবে, না অর্থনীতি তার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাবে।
টিকা নিয়ে রাজনীতি আছে। টিকা নিয়ে বাণিজ্য আছে। করোনা রাজনীতির কেন্দ্রে আছে টিকা আর তার বাজারজাতকরণ নিয়ে আছে ওষুধ ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা। টিকা নিয়ে ১৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভ্যাকসিন-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা বলেন, ‘আমরা মনে করি, ভ্যাকসিন আমদানির আলোচনা ও সিদ্ধান্ত এবং জনগণকে টিকাদানের সমগ্র দায়দায়িত্ব যেহেতু সরকার পালন করছে, তাই ভ্যাকসিন আমদানিতে কোনও মধ্যস্বত্বভোগীর ভূমিকা গ্রহণের সুযোগ নেই। সরকার এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে, সেটা আমাদের প্রত্যাশা।’ কোনও বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে যেন মানুষের ভাগ্য আবার ছেড়ে দেওয়া না হয়।
একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, টানা দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত। তাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করে যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে হবে।
অতিমারির পরবর্তী ঢেউ থেকে বাঁচতে একমাত্র উপায় টিকা। নীতিনির্ধারণী মহলের প্রত্যেককে এই বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। দেশে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যে আঘাত হেনেছে, সীমান্ত অঞ্চল থেকে যেভাবে নগর ও কেন্দ্রে চলে আসছে, তাতে একটা ভয় এমনিতেই কাজ করছে। এরমধ্যে যদি টিকার চাহিদা ও জোগানে অনিশ্চয়তা থাকে তাহলে জনমানসে আতঙ্ক তৈরি হবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদেশ থেকে টিকা আমদানি করে সব জেলা উপজেলায় সরবরাহ করা দরকার।
লেখক : সাংবাদিক