প্রত্যাশা ডেস্ক : ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা নিয়ে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৈঠক হয় মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি)। এই বৈঠকে ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়টি ‘অপ্রত্যাশিত’ বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনের এমন মন্তব্যের জন্য দেশটির সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের এই প্রতিক্রিয়ায় ‘হতাশা’ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না হওয়ার জন্য তিনি ইউক্রেনকে দায়ী করে বলেছেন, “দেশটি আগেই ‘একটি চুক্তি করতে পারত’।” প্রায় তিন বছর আগে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আক্রমণের ফলে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।
গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সৌদি আরবের রিয়াদে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনা করতে বৈঠকে বসেন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশ দুটির মধ্যে এটিই প্রথম উচ্চ-স্তরের বৈঠক। রিয়াদের বৈঠকের পর রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার জন্য তারা দল গঠন করতে রাজি হয়েছে। তবে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, কোনো শান্তি চুক্তির আওতায় ইউক্রেনে ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশের সেনা মোতায়েন মেনে নেবে না রাশিয়া। বিবিসির খবর বলছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ন্যাটো সামরিক জোট ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দূরে সরিয়ে রেখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একক উদ্যোগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সমঝোতার পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
যা তার পূর্বসূরী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইউক্রেনপন্থি নীতির বিপরীত। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার-এ-লাগোর বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়, বিবিসির সাংবাদিক ট্রাম্পের কাছে জানতে চান- ইউক্রেনের কোনো প্রতিনিধি রিয়াদের আলোচনায় না থাকা নিয়ে ইউক্রেনীয়রা ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বোধ করতে পারে, তাদের প্রতি আপনি কোনো বার্তা দিতে চান কিনা। জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমি শুনেছি, আলোচনায় ডাক না পেয়ে ইউক্রেন ক্ষুব্ধ। তিন বছর ধরে যুদ্ধ চলেছে। তারা আলোচনার জন্য এতখানি সময় পেয়েছে। তারা তো অনেক আগেই বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে পারতো। আরো আগেই তাদের একটি চুক্তি করা উচিত ছিল।” সৌদি আরবে মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি এখন ‘আরো আত্মবিশ্বাসী’।“বৈঠক ফলপ্রসূ ছিল। রাশিয়া কিছু করতে চায়। তারা এই ভয়ংকর বর্বরতা বন্ধ করতে চায়।” ট্রাম্প আরো বলেন, “আমি মনে করি, এই যুদ্ধ শেষ করার ক্ষমতা আমার আছে।”
চলতি বছরেই যুদ্ধের অবসান চান জেলেনস্কি
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি কিয়েভের পশ্চিমা অংশীদারদের কাছ থেকে নিরেট নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেতে চান; যা চলতি বছরেই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অবসানকে সক্ষম করে তুলবে। মঙ্গলবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এই বিষয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘‘আমাদের পেছনে রেখে কেউ কিছু সিদ্ধান্ত নেবে, তা আমরা চাই না…কীভাবে ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করা যায় সে সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্ত ইউক্রেনকে ছাড়া নেওয়া যায় না।’’ যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার বৈঠকের বিষয়ে গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘আমরা চলতি বছরেই নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাই। কারণ আমরা এই বছর যুদ্ধ শেষ করতে চাই।’’ এর আগে, মঙ্গলবার ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার আলোচনায় আমন্ত্রণ না পাওয়া নিয়ে ইউক্রেনের উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র নিয়ে কথা বলেছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় তাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কাজ করবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার তৈরি করা অপতথ্যের বুদবুদে আটকা পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে পাওয়া ইউক্রেনীয় খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও ভাগাভাগি করার বিষয়েও কথা বলেছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে লিথিয়াম এবং টাইটানিয়ামসহ ইউক্রেনের ভূগর্ভস্থ বিরল খনিজ পদার্থের মালিকানা দিতে হবে। তিনি বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। কারণ প্রথম খসড়ায় বলা হয়েছিল, ইউক্রেনকে তার ভূগর্ভস্থ খনিজ সম্পদের অন্তত ৫০ শতাংশ মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে হবে। তবে ইউক্রেনের নিরাপত্তার বিষয়ে জেলেনস্কির চাওয়া নিয়ে কোনও কিছুই সেই প্রস্তাবে ছিল না বলে জানিয়েছেন তিনি। সূত্র: এএফপি, রয়টার্স।