ঢাকা ০২:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর গাজায় ৫০০ শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

  • আপডেট সময় : ০৮:১৫:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
  • ৫৯ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক : গত মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল যখন পুনরায় গাজায় বিমান হামলা শুরু করে, তখন থেকে অন্তত ৫০০ ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যু হয়েছে—এ তথ্য জানিয়েছেন গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল। এছাড়া একজন জাতিসংঘ কর্মকর্তা চূড়ান্ত ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজাকে ‘হত্যাযজ্ঞের এলাকা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। গতকাল শনিবার গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হন, যার মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট নিহতের সংখ্যা ২০ ছাড়িয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলি হামলায় ১৫ শর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। শনিবার তুফ্ফাহ এলাকায় হামলায় দুজন নিহত হন ও দুই শিশু আহত হয়। উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ার আল-আতাত্রা এলাকায় আরও দুজন নিহত হন।

খান ইউনিসের দক্ষিণাঞ্চলের কিজান আন-নাজ্জার এলাকায় এক ফিলিস্তিনি ড্রোন হামলায় প্রাণ হারান। যেসব এলাকাকে ইসরায়েল ‘নিরাপদ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে, সেই আল-মাওয়াসি অঞ্চলেও বেসামরিক লোকদের তাঁবুতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে। আল-আকসা হাসপাতালে অবস্থানরত আল জাজিরার হিন্দ খুদারি জানান, একটি পরিবারের ওপর হামলার পর ‘শাম’ নামের এক নবজাতক গুরুতর আহত হয়ে মারা যায়। তার হাত কেটে ফেলতে হয়েছিল, কিন্তু অবস্থা এতটাই সংকটজনক ছিল যে ডাক্তাররা তাকে বাঁচাতে পারেননি। তিনি আরও জানান, শনিবার শুজাইয়া ও খান ইউনিস এলাকায় নতুন করে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

খুদারি বলেন, ফিলিস্তিনিরা জানে না কোথায় যাবে। তিনি জানান, প্রতিদিনই আমরা অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত নারী ও শিশুকে আসতে দেখি। ওষুধের অভাবে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রবিনা শামদাসানি বলেন, ১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত নথিভুক্ত ২২৪টি ইসরায়েলি হামলার মধ্যে ৩৬টি হামলায় কেবল নারী ও শিশু নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থা আল-হাক বলেছে, জাতিসংঘের তথ্য তাদের আগের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মিলে গেছে।

তারা এক বিবৃতিতে লিখেছে, নারী, শিশু, এমনকি নবজাতকদের নির্মূল করতে একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা চলছে— আধুনিক কোনো যুদ্ধের ইতিহাসে এমন নজির নেই। আল জাজিরার ‘আপফ্রন্ট’ অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি গাজাকে ‘চূড়ান্ত ধ্বংস পরবর্তী হত্যাযজ্ঞের ক্ষেত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও মানবিক সাহায্য প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল। ইউএনআরডব্লিউএ-র যোগাযোগ পরিচালক জুলিয়েট তৌমা জানান, গাজায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস শেষ হয়ে যাচ্ছে, এর মানে হচ্ছে—শিশুরা না খেয়ে ঘুমাতে যাচ্ছে। ইসরায়েল দক্ষিণ গাজায় নতুন এলাকা দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে এবং ধারাবাহিকভাবে জোরপূর্বক বাসিন্দাদের স্থানান্তরের নির্দেশ দিচ্ছে। ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে গাজা জুড়ে প্রায় ৪ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর গাজায় ৫০০ শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

আপডেট সময় : ০৮:১৫:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক : গত মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল যখন পুনরায় গাজায় বিমান হামলা শুরু করে, তখন থেকে অন্তত ৫০০ ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যু হয়েছে—এ তথ্য জানিয়েছেন গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল। এছাড়া একজন জাতিসংঘ কর্মকর্তা চূড়ান্ত ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজাকে ‘হত্যাযজ্ঞের এলাকা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। গতকাল শনিবার গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হন, যার মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট নিহতের সংখ্যা ২০ ছাড়িয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলি হামলায় ১৫ শর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। শনিবার তুফ্ফাহ এলাকায় হামলায় দুজন নিহত হন ও দুই শিশু আহত হয়। উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ার আল-আতাত্রা এলাকায় আরও দুজন নিহত হন।

খান ইউনিসের দক্ষিণাঞ্চলের কিজান আন-নাজ্জার এলাকায় এক ফিলিস্তিনি ড্রোন হামলায় প্রাণ হারান। যেসব এলাকাকে ইসরায়েল ‘নিরাপদ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে, সেই আল-মাওয়াসি অঞ্চলেও বেসামরিক লোকদের তাঁবুতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে। আল-আকসা হাসপাতালে অবস্থানরত আল জাজিরার হিন্দ খুদারি জানান, একটি পরিবারের ওপর হামলার পর ‘শাম’ নামের এক নবজাতক গুরুতর আহত হয়ে মারা যায়। তার হাত কেটে ফেলতে হয়েছিল, কিন্তু অবস্থা এতটাই সংকটজনক ছিল যে ডাক্তাররা তাকে বাঁচাতে পারেননি। তিনি আরও জানান, শনিবার শুজাইয়া ও খান ইউনিস এলাকায় নতুন করে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

খুদারি বলেন, ফিলিস্তিনিরা জানে না কোথায় যাবে। তিনি জানান, প্রতিদিনই আমরা অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত নারী ও শিশুকে আসতে দেখি। ওষুধের অভাবে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রবিনা শামদাসানি বলেন, ১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত নথিভুক্ত ২২৪টি ইসরায়েলি হামলার মধ্যে ৩৬টি হামলায় কেবল নারী ও শিশু নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থা আল-হাক বলেছে, জাতিসংঘের তথ্য তাদের আগের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মিলে গেছে।

তারা এক বিবৃতিতে লিখেছে, নারী, শিশু, এমনকি নবজাতকদের নির্মূল করতে একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা চলছে— আধুনিক কোনো যুদ্ধের ইতিহাসে এমন নজির নেই। আল জাজিরার ‘আপফ্রন্ট’ অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি গাজাকে ‘চূড়ান্ত ধ্বংস পরবর্তী হত্যাযজ্ঞের ক্ষেত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও মানবিক সাহায্য প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল। ইউএনআরডব্লিউএ-র যোগাযোগ পরিচালক জুলিয়েট তৌমা জানান, গাজায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস শেষ হয়ে যাচ্ছে, এর মানে হচ্ছে—শিশুরা না খেয়ে ঘুমাতে যাচ্ছে। ইসরায়েল দক্ষিণ গাজায় নতুন এলাকা দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে এবং ধারাবাহিকভাবে জোরপূর্বক বাসিন্দাদের স্থানান্তরের নির্দেশ দিচ্ছে। ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে গাজা জুড়ে প্রায় ৪ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। তথ্যসূত্র: আল জাজিরা