ঢাকা ০১:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

যুদ্ধবিরতিতে কঠিন পরীক্ষার মুখে ভারতের কূটনীতি

  • আপডেট সময় : ০৭:২০:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক: ভারত ও পাকিস্তান পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার খুব কাছাকাছি অবস্থানে চলে গিয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলী হস্তক্ষেপে দুই দেশই সেই অবস্থান থেকে পিছিয়ে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মির নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবের পর বৈশ্বিক কূটনৈতিক শক্তি হিসেবে ভারতের উচ্চাকাক্সক্ষা এখন কঠিন এক পরীক্ষার মুখে পড়েছে।

বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার কারণে ভারতের আত্মবিশ্বাস ও আন্তর্জাতিক প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এমন অবস্থানের কারণে ভারত আঞ্চলিক সংকট (যেমন- শ্রীলঙ্কার ভেঙে পড়া অর্থনীতি কিংবা মিয়ানমারের ভূমিকম্প পরিস্থিতি) মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু কাশ্মির ইস্যু নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও বিমান হামলায় সংঘাত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। এই সংঘাতে দুই দেশের অন্তত ৬৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অতি সংবেদনশীল জায়গায় স্পর্শ করেছে।

কাশ্মির সংকটে ভারতের স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন আদায়ের যে কূটনৈতিক সূক্ষ্ম হিসাব-নিকাশ, তা অনেকটাই নির্ভর করবে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর। এই ভারসাম্য কতটা সফলভাবে রক্ষা করা যায়, এর ওপরই নির্ভর করবে কাশ্মির ইস্যুতে ভবিষ্যৎ সংঘাতের গতিপথ।

ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতির আওতায় যে বিস্তৃত আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে; ভারত সম্ভবত এতে আগ্রহী নয়। ফলে এই যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’ তিনি উল্লেখ করেন, উত্তেজনা যখন চরমে পৌঁছে গিয়েছিল; তখন ‘অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে জোড়াতালি দিয়ে’ এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়।

দুই দেশের এই যুদ্ধবিরতি কতটা ভঙ্গুর, তা বোঝা যায় গত শনিবার রাতে দুই দেশ যখন পরস্পরের বিরুদ্ধে গুরুতর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে।

গত রোববার যুদ্ধবিরতির পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি এই দুই মহান দেশের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে বাণিজ্য বাড়াতে যাচ্ছি।’

ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রহ্ম চেলানি মন্তব্য করেন, ‘মার্কিন চাপের মুখে মাত্র তিন দিনের মধ্যে সামরিক অভিযান বন্ধ করে ভারত আসলে আন্তর্জাতিক মনোযোগ টেনে নিচ্ছে কাশ্মির বিতর্কের দিকে- সীমান্তপাড়ের সেই সন্ত্রাসবাদের দিকে নয়; যার কারণে এই সংকটের সূচনা হয়েছিল।’

কাশ্মির সমস্যার সমাধানে ট্রাম্পের প্রস্তাব এবং ভারত ও পাকিস্তানের বৃহত্তর বিরোধ নিয়ে নিরপেক্ষ স্থানে আলোচনা শুরু করতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর ঘোষণা অনেক ভারতীয়কে ক্ষুব্ধ করেছে।
কাশ্মির নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবের জন্য পাকিস্তান একাধিকবার প্রকাশ্যে ধন্যবাদ জানালেও ভারত এ যুদ্ধবিরতিতে তৃতীয় কোনো পক্ষের ভূমিকা স্বীকার করেনি। বরং ভারত বলেছে, এই সমঝোতা সম্পূর্ণভাবে দুই দেশের পারস্পরিক আলোচনার ফল।

বিশ্লেষকরা ও ভারতের বিরোধী দলগুলো ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলছে, কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর গত মাসে হওয়া হামলার প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তানে ৭ মে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ভারত তার কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করেছে কি না। হামলায় ২৬ জন নিহত হন এবং ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, ইসলামাবাদ যা অস্বীকার করেছে।

কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তারা মনে করেন, পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে সিন্ধু পানি চুক্তি। ভারত গত মাসে এই চুক্তি স্থগিত করেছে। অথচ পাকিস্তানের বহু কৃষিজমি ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পানির উৎস এটি।

পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমানে সরকারের শরিক পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে একটি বিস্তৃত সংলাপের নিশ্চয়তা না পেলে পাকিস্তান কখনোই (যুদ্ধবিরতিতে) রাজি হতো না।’

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

যুদ্ধবিরতিতে কঠিন পরীক্ষার মুখে ভারতের কূটনীতি

আপডেট সময় : ০৭:২০:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক: ভারত ও পাকিস্তান পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার খুব কাছাকাছি অবস্থানে চলে গিয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলী হস্তক্ষেপে দুই দেশই সেই অবস্থান থেকে পিছিয়ে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মির নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবের পর বৈশ্বিক কূটনৈতিক শক্তি হিসেবে ভারতের উচ্চাকাক্সক্ষা এখন কঠিন এক পরীক্ষার মুখে পড়েছে।

বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার কারণে ভারতের আত্মবিশ্বাস ও আন্তর্জাতিক প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এমন অবস্থানের কারণে ভারত আঞ্চলিক সংকট (যেমন- শ্রীলঙ্কার ভেঙে পড়া অর্থনীতি কিংবা মিয়ানমারের ভূমিকম্প পরিস্থিতি) মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু কাশ্মির ইস্যু নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও বিমান হামলায় সংঘাত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। এই সংঘাতে দুই দেশের অন্তত ৬৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অতি সংবেদনশীল জায়গায় স্পর্শ করেছে।

কাশ্মির সংকটে ভারতের স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন আদায়ের যে কূটনৈতিক সূক্ষ্ম হিসাব-নিকাশ, তা অনেকটাই নির্ভর করবে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর। এই ভারসাম্য কতটা সফলভাবে রক্ষা করা যায়, এর ওপরই নির্ভর করবে কাশ্মির ইস্যুতে ভবিষ্যৎ সংঘাতের গতিপথ।

ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতির আওতায় যে বিস্তৃত আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে; ভারত সম্ভবত এতে আগ্রহী নয়। ফলে এই যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’ তিনি উল্লেখ করেন, উত্তেজনা যখন চরমে পৌঁছে গিয়েছিল; তখন ‘অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে জোড়াতালি দিয়ে’ এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়।

দুই দেশের এই যুদ্ধবিরতি কতটা ভঙ্গুর, তা বোঝা যায় গত শনিবার রাতে দুই দেশ যখন পরস্পরের বিরুদ্ধে গুরুতর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে।

গত রোববার যুদ্ধবিরতির পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি এই দুই মহান দেশের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে বাণিজ্য বাড়াতে যাচ্ছি।’

ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রহ্ম চেলানি মন্তব্য করেন, ‘মার্কিন চাপের মুখে মাত্র তিন দিনের মধ্যে সামরিক অভিযান বন্ধ করে ভারত আসলে আন্তর্জাতিক মনোযোগ টেনে নিচ্ছে কাশ্মির বিতর্কের দিকে- সীমান্তপাড়ের সেই সন্ত্রাসবাদের দিকে নয়; যার কারণে এই সংকটের সূচনা হয়েছিল।’

কাশ্মির সমস্যার সমাধানে ট্রাম্পের প্রস্তাব এবং ভারত ও পাকিস্তানের বৃহত্তর বিরোধ নিয়ে নিরপেক্ষ স্থানে আলোচনা শুরু করতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর ঘোষণা অনেক ভারতীয়কে ক্ষুব্ধ করেছে।
কাশ্মির নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবের জন্য পাকিস্তান একাধিকবার প্রকাশ্যে ধন্যবাদ জানালেও ভারত এ যুদ্ধবিরতিতে তৃতীয় কোনো পক্ষের ভূমিকা স্বীকার করেনি। বরং ভারত বলেছে, এই সমঝোতা সম্পূর্ণভাবে দুই দেশের পারস্পরিক আলোচনার ফল।

বিশ্লেষকরা ও ভারতের বিরোধী দলগুলো ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলছে, কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর গত মাসে হওয়া হামলার প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তানে ৭ মে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ভারত তার কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করেছে কি না। হামলায় ২৬ জন নিহত হন এবং ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, ইসলামাবাদ যা অস্বীকার করেছে।

কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তারা মনে করেন, পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে সিন্ধু পানি চুক্তি। ভারত গত মাসে এই চুক্তি স্থগিত করেছে। অথচ পাকিস্তানের বহু কৃষিজমি ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পানির উৎস এটি।

পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমানে সরকারের শরিক পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে একটি বিস্তৃত সংলাপের নিশ্চয়তা না পেলে পাকিস্তান কখনোই (যুদ্ধবিরতিতে) রাজি হতো না।’

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ