আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তিন বছর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত রাশিয়া যত ড্রোন হামলা চালিয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলায় কিইভ অঞ্চলে এক নারী নিহত ও অন্তত ৩ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (১৬ মে) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনা হওয়ার পর থেকে মস্কোর হামলার তীব্রতা বেড়েছে। তার মধ্যে রোববার (১৮ মে) স্থানীয় সময় সকাল ৮টা পর্যন্ত কিইভ অঞ্চলের মূল এলাকাগুলো এবং পূর্বাঞ্চলের দিনিপ্রোপেত্রভস্ক ও দোনেৎস্ক লক্ষ্য করে মস্কো ২৭৩টি ড্রোন ছুড়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেইনের বিমান বাহিনী।
তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা। এর আগে, যুদ্ধের তিন বছর পূর্তির প্রাক্কালে এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি মস্কো ইউক্রেইনে ২৬৭টি ড্রোন ছিল, রোববারের আগে সেটিই ছিল সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা, বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তিন বছর পর ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেইনের মধ্যে প্রথম সরাসরি শান্তি আলোচনায় বলার মতো কিছু অর্জিত হয়নি। কিইভ ও এর মিত্ররা রাশিয়াকে একটি যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। মস্কো বলেছে, যুদ্ধবিরতি হতে হলে ইউক্রেনকে আগে রাশিয়ার দাবি করা অঞ্চলগুলো থেকে সৈন্য চার অঞ্চল থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে।
শুক্রবারের ১০০ মিনিটের আলাপে দুই পক্ষ কেবল একে অপরের সঙ্গে এক হাজার যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে সম্মত হয়েছে। পরদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলবেন। রোববার দিবাগত রাতজুড়ে হওয়া ড্রোন হামলায় রাজধানী কিইভ অঞ্চলে ২৮ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে এবং ৪ বছর বয়সী এক শিশুসহ অন্তত তিনজন আহত হয়েছে, জানিয়েছে ইউক্রেইনীয় কর্তৃপক্ষ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, শত্রুর হামলার ফলে ওবুখিভ জেলায় এক নারী মারা গেছেন,’ টেলিগ্রামে দেওয়া পোস্টে বলেছেন কিইভ অঞ্চলের গভর্নর মাইকোলা কালাশনিক।
রাজধানী কিইভ ও এর আশপাশের অঞ্চল এবং ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলে মধ্যরাত থকে টানা ৯ ঘণ্টা হামলা নিয়ে সতর্ক থাকার সাইরেন বেজেছে, রোববার সকাল ৯টার দিকে এই সাইরেন থামে। হামলা প্রতিহতে আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলোকে বেশ কয়েকবার সক্রিয় হতে হয়েছিল, টেলিগ্রামে বলেছে ইউক্রেইনের সেনাবাহিনী। খুবই কঠিন রাত ছিল। রুশরা সবসময়ই আলোচনার সময় অন্যদের ভয় দেখানোর উপায় হিসেবে যুদ্ধ ও হামলাকে ব্যবহার করেছে, রোববার দিবাগত রাতের হামলা নিয়ে বলেছেন ইউক্রেনের সেন্টার ফর কাউন্টার ডিজইনফরমেশনের প্রধান আন্দ্রি কোভালেঙ্কো।
আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো রাতজুড়ে ৮৮টি ড্রোন ধ্বংস করেছে। হামলায় ১২৮টি নকল ড্রোনও ছিল, যেগুলো কোথাও আঘাত না করে পথেই নষ্ট হয়ে গেছে, টেলিগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে বলেছে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী। এর আগে শনিবার ইউক্রেইনের উত্তরপূর্বের সুমি অঞ্চলে একটি শাটল বাসে রাশিয়ার এক ড্রোন হাামলায় ৯ বেসামরিক নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে কিইভ। জেলেনস্কি এই হামলাকে ‘ইচ্ছাকৃত’ অ্যাখ্যা দিয়ে মস্কোকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে তাদের ওপর আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাশিয়া বেসামরিকদের নিশানা বানানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা সুমি অঞ্চলে একটি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। কিইভের দক্ষিণে ওবুখিভ জেলায় ‘যুদ্ধকালীন বড় ড্রোন হামলায়’ আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, ওই এলাকার বেশকিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বলেছেন গভর্নর কালাশনিক। ধ্বংস হওয়া একটি ড্রোনের টুকরোয় কিইভের একটি অনাবাসিক ভবনের ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ আহত হয়নি বলে টেলিগ্রামে জানিয়েছে শহরটির সামরিক প্রশাসন। রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় থাকা কয়েকজন রয়টার্সকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন, এগুলো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কাজের কারণে হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ড্রোন হামলা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে রাশিয়ার দিক থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। কিইভ ও মস্কো উভয় পক্ষই বেসামরিকদের নিশানা বানানোর অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। যদিও এই যুদ্ধ এরই মধ্যে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, এদের সিংহভাগই ইউক্রেনীয়।