বিদেশের খবর ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে কারা ইতিহাস সৃষ্টি করলেন, কোন কোন প্রার্থী পালটে দিলেন রেকর্ডবুক, তাদের নাম জানাচ্ছে বিবিসি।
কেটি ব্রিট
মঙ্গলবারের ভোটে জিতে রিপাবলিকান প্রার্থী, ৪০ বছর বয়সী কেটি ব্রিট মার্কিন সেনেটে আলাবামার প্রথম নারী প্রতিনিধি হিসেবে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে সিবিএস নিউজ।
ব্রিট যার স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন সেই রিচার্ড শেলবি মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষে ৩৬ বছর রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করে এবার অবসর নিচ্ছেন।
ডেমোক্রেট উইল বয়েডের চেয়ে বিপুল ভোটে এগিয়ে থাকা ব্রিট এরই মধ্যে জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে সমর্থকদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।“আমি কৃতজ্ঞ, সম্মানিত,” বলেছেন তিনি।
১০০ সদস্যের মার্কিন সেনেট প্রথম নারী প্রতিনিধি পায় ১৯৩২ সালে; এরপর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫৮ নারী সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পেরেছে।
ব্রিট বলছেন, তিনি হতে যাচ্ছেন সেনেটের একমাত্র নারী রিপাবলিকান, যার স্কুলগামী সন্তান রয়েছে। ২০২২ সালকে ‘অভিভাবকদের বছর’ অ্যাখ্যা দেওয়া এ নারী তরুণদের জন্য সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন।
ম্যাক্সওয়েল ফ্রস্ট
২৫ বছর বয়সী ম্যাক্সওয়েল ফ্রস্ট ফ্লোরিডার দশম কংগ্রেসনাল আসন থেকে জিতে প্রতিনিধি পরিষদে যাচ্ছেন বলে ভোটের হারে দেখা যাচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষিত হলে তিনি হবেন মার্কিন কংগ্রেসে ‘জেনারেশন জেড’ এর প্রথম সদস্য।
১৯৯৭ সালে জন্ম নেওয়া এ তরুণের জয় অনুমিতই ছিল। তার নির্বাচনী প্রচারে বন্দুক সহিংসতা, জলবায়ূ পরিবর্তন, গর্ভপাতের অধিকার, স্বাস্থ্যসেবার আওতা বাড়ানোর মতো ইস্যুগুলো অনেক তরুণ ভোটারকে আকৃষ্ট করেছিল।
জেনারেশন জেডের প্রতিনিধি হিসেবে তার সঙ্গী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রিপাবলিকান ক্যারোলিন লিভিটেরও; তিনি লড়ছেন নিউ হ্যাম্পশায়ারের প্রথম কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টে। জিতলে তিনি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে প্রথম আফ্রিকান-কিউবানও হবেন। যদিও সর্বশেষ খবর অনুযায়ী প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট ক্রিস পাপাসের তুলনায় অনেকখানি পিছিয়েই আছেন।
মোরা হিলি
ম্যাসাচুসেটসের গভর্নর হওয়ার দৌড়ে বিজয়ী হওয়ার পথে রয়েছেন ৫১ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট মোরা হিলি; সব ভোট গণনার পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষিত হলে এ নারী হবেন প্রথম সমকামী গভর্নর। তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান গিওফ দিয়েল যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন পেয়েছিলেন।
হিলির জয় ম্যাসাচুসেটসের গভর্নর পদে ৮ বছরের রিপাবলিকান জমানারও অবসান ঘটাতে যাচ্ছে। চার্লি বেকার এ পদে ফের নির্বাচনে লড়তে রাজি না হওয়ায় হিলির বিরুদ্ধে রিপাবলিকানদের হয়ে লড়েন রাজ্যের সাবেক সাংসদ গিওফ।
জনসমক্ষে নিজেদের সমকামী নারী দাবি করা দুই প্রার্থী চলতি বছরের গভর্নর নির্বাচনে লড়েছেন। হিলি ছাড়া অন্য সমকামী নারী টিনা কোটেক লড়ছেন অরেগনে।
হিলিকে নিয়ে দ্বিতীয় নারী গভর্নর পেতে যাচ্ছে ম্যাসাচুসেটস; এর আগে ২০০১ সালে রিপাবলিকান জেন সুইফট এ রাজ্যের গভর্নর হয়েছিলেন।
নির্বাচনী প্রচারে হিলি শিশুসেবাকে আরও সাশ্রয়ী করা, চাকুরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে সম্প্রতি মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তার বিরুদ্ধেও গলা ফাটিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সারাহ হাকেবি স্যান্ডার্স
ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি থাকায় অনেকের কাছেই পরিচিত ৪০ বছর বয়সী সারাহ হাকেবি স্যান্ডার্স আরকানস’র প্রথম নারী গভর্নর হতে যাচ্ছেন বলে ভোটের হারে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন ডেমোক্র্যাট ক্রিস জোনসের সঙ্গে।
আরকানস’ আগে থেকেই রিপাবলিকানদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, যে কারণে এখানে জিততে হাকেবি স্যান্ডার্সকে খুব একটা বেগ পেতে হবে না বলে আগে থেকেই অনুমান করা হচ্ছিল।
স্যান্ডার্স আরেক রিপাবলিকান আসা হাচিনসনের উত্তরসূরী হবেন; মেয়াদসীমার কারণে হাচিনসনকে জানুয়ারিতে গভর্নর পদ ছাড়তে হচ্ছে।
আরকানস’র গভর্নরের বাড়িটি অবশ্য সারাহ স্যান্ডার্সের খুব একটা অপরিচিত নয়। তার বাবা মাইক স্যান্ডার্সও ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত রাজ্যের গভর্নর ছিলেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় রেকর্ড ৯০ লাখ ডলার চাঁদা তুলে এমনিতেই ব্যাপক আলোচনায় আছেন সারাহ স্যান্ডান্স। গভর্নর পদে থেকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ‘চরমপন্থি বামদের’ বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারও আছে তার।
ওয়েস মুর
মেরিল্যান্ডের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ গভর্নর হয়ে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন ৪৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট ওয়েস মুর। ২৪৬ বছরের ইতিহাসে এ নিয়ে তৃতীয় কৃষ্ণাঙ্গ গভর্নর দেখতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মুরের আগে দেশটি আর যে দুই কৃষ্ণাঙ্গকে গভর্নর পেয়েছিল, তারা হলেন- ম্যাসাচুসেটসের ডেভাল প্যাট্রিক এবং ভার্জিনিয়ার ডগলাস উইল্ডার।
লেখক হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় মুর একসময় দারিদ্র্যবিরোধী সংগঠন রবিন হুডেরও প্রধান ছিলেন।
মার্কওয়েইন মুলিন
ওকলাহোমার সেনেট নির্বাচনে জিতে প্রায় একশ বছরের মধ্যে রাজ্যটির প্রথম আদিবাসী আমেরিকান হিসেবে সেনেটে যাচ্ছেন ৩৫ বছর বয়সী রিপাবলিকান মার্কওয়েইন মুলিন।
রিপাবলিকানরা সেনেটের এই আসনটি ১৯৮৭ সাল থেকেই ধরে রেখেছে।
চিরোকি জাতিগোষ্ঠীর সদস্য মুলিন এর আগে ২০১২ সালে প্রতিনিধি পরিষদের ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন; পরে তিনি কংগ্রেসনাল আদিবাসী আমেরিকান ককাসেরও সদস্য হন।
সেনেটে সর্বশেষ আদিবাসী আমেরিকান ছিলেন বেন ‘নাইটহর্স’ ক্যাম্পবেল, তিনি ছিলেন নর্দার্ন চেইয়েনি আদিবাসী গোষ্ঠীল সদস্য। তিন মেয়াদে প্রতিনিধি পরিষদে এবং দুই মেয়াদে সেনেটে থেকে ২০০৫ সালে অবসর নেন তিনি।
জেমস রোসেনার
২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট জেমস রোসেনার হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কোনো রাজ্যের আইনসভায় যাওয়া প্রথম প্রতিনিধি, যিনি প্রকাশ্যে নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার বলে আসছেন।
চলতি বছর রেকর্ড সংখ্যক ট্রান্সজেন্ডার বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে, রোসেনার তার মধ্যে একজন।
তিনি তার রাজ্য নিউ হ্যাম্পশায়ারে গর্ভপাতের অধিকার, নারীদের পুরুষদের সমান বেতনের অধিকার, সমকামী বিয়ের স্বীকৃতি ও তাদের অধিকারের সুরক্ষা নিয়ে লড়ছেন।
ক্যাথি হচুল
নিউ ইয়র্কের গভর্নর হতে চলেছেন ডেমোক্র্যাট ক্যাথি হচুল; শপথ নেওয়ার পর তিনিই হবেন রাজ্যের প্রথম নির্বাচিত নারী গভর্নর।
মঙ্গলবারের ভোটে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল রিপাবলিকান লি জেলডিনের সঙ্গে; দুইজনের এবারের লড়াইকে নিউ ইয়র্কের দুই দশকের ইতিহাসে গভর্নর নির্বাচনে সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বলা হচ্ছে।
যৌন হয়রানির অভিযোগে রাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো পদত্যাগ করলে হচুল গত বছরের অগাস্টে নিউ ইয়র্কের গভর্নরের দায়িত্ব নেন।
নির্বাচনী প্রচারে গৃহায়ন, বন্দুক সহিংসতা কমানো, অর্থনৈতিক সুযোগ বাড়ানো ও গর্ভপাতের অধিকার সুরক্ষিত রাখার দিকে নজর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
ডেলিয়া রামিরেজ
ইলিনয় রাজ্যের ডেমোক্র্যাট সাংসদ ডেলিয়া রামিরেজ প্রথম লাতিন নারী হিসেবে ইলিনয় থেকে কংগ্রেসে যাচ্ছেন বলে গণনাকৃত ভোট থেকে ধারণা পাওয়া গেছে।
এ দৌড়ে জয়ী হতে তাকে হারাতে হচ্ছে ইলিনয়ের তৃতীয় কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের রিপাবলিকান প্রার্থী জাস্টিন বুরাউকে।
“আজ রাতে আমরা ইতিহাস গড়লাম। আমরা কাঁচের দেয়াল ভাঙলাম,” নির্বাচনের রাতেই সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এমনটা বলেন ৩৯ বছর বয়সী ডেলিয়া।