বিদেশের খবর ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে অ্যালুমিনিয়ামে ও ইস্পাত আমদানির ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যে বাড়তি শুল্ক ধার্য করেছিলেন গতকাল বুধবার থেকে তা কার্যকর হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য পুনর্বিন্যাস করে যুক্তরাষ্ট্রের অনুকূলে নিয়ে আসতে তার দেওয়া এ শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
মার্কিন ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদকদের সুরক্ষা জোরদারে ট্রাম্প বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাত আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন এবং নাট-বল্টু থেকে শুরু করে বুলডোজারের ব্লেড ও সোডা ক্যান পর্যন্ত, ধাতু দুইটি দিয়ে বানানো শত শত পণ্যের শুল্ক বাড়িয়েছেন। জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর থেকে শুল্ক নিয়ে রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্টের নানান উথাল-পাতাল পদক্ষেপ বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের এমনভাবে অস্থির করে তুলেছে যে এর ধাক্কায় যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা দেখা দিতে পারে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি আরও পিছিয়ে পড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতে ট্রাম্পের শুল্ক কার্যকর হওয়ার দিনই ত্বরিৎ প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপিয়ান কমিশন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের পাল্টায় তারাও ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ মার্কিন আমদানি পণ্যে শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে। এই শুল্ক আগামী মাস থেকে কার্যকর হবে। ইইউর নির্বাহী শাখা ইউরোপিয়ান কমিশন জোটভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়াদি দেখভালের দায়িত্বে থাকে। তাদের এবারের পদক্ষেপকে অনেকটাই ‘প্রতীকী’ মনে করা হচ্ছে, কেননা এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে তেমন প্রভাব ফেলবে না। “আমরা অর্থবহ আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত,” সাংবাদিকদের বলেছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন দার লায়েন।
এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে বাণিজ্য কমিশনার মারোস সেভকোভিচকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।“ভূ-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় ভরা বিশ্বে এ ধরনের শুল্কের বোঝা অর্থনীতিতে চাপানো পারস্পরিক স্বার্থের সঙ্গে যায় না বলেই আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি,” বলেন উরসুলা। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের পাল্টায় নিজেদের অধিকার ও স্বার্থের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে বেইজিং। জাপানের মন্ত্রিপরিষদের মুখপাত্র ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেছেন, অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতে সবার ওপর যেভাবে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে, তা জাপান-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র কানাডা, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়াও ট্রাম্পের এই শুল্কের কড়া সমালোচনা করেছে।
কানাডা ভাবছে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। ব্রিটেনের বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস বলেছে জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষায় পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘সব বিকল্পই’ বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে দুই দেশের ‘স্থায়ী বন্ধুত্বের চেতনাবিরুদ্ধ’ বললেও পাল্টা কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন।
রয়টার্স লিখেছে, বুধবার থেকে কার্যকর হওয়া শুল্কে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে আছে কানাডা, ব্রাজিল, মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়া। এসব দেশ এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে নানান ছাড় ও কোটা সুবিধা পেতো। এ দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম সরবরাহ করে কানাডা। সে তুলনায় ২৭ দেশের জোট ইইউ-র ওপর প্রভাব পড়বে সামান্যই। যুক্তরাষ্ট্রের এবারের পদক্ষেপে যেসব পণ্যকে নিশানা করা হয়েছে, তার মধ্যে ইইউর রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ একেবারেই নগণ্য। এ কারণে ইইউ-র পদক্ষেপও হয়েছে প্রতীকী। তাদের পাল্টা শুল্ক ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের মোট বাণিজ্যে তেমন প্রভাবও ফেলবে না। তবে ফ্রান্সের ইউরোপ বিষয়ক মন্ত্রী বেনজামাঁ আদাদ যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বাণিজ্য যুদ্ধ কারও স্বার্থই রক্ষা করবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি এ ধরনের পদক্ষেপ নিতেই থাকে তবে ইইউ’ও অনেক দূর যেতে পারে।