প্রত্যাশা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ গ্রহণের পর থেকে আতঙ্কে আছেন নথিপত্রহীন অবৈধ অভিবাসীরা। নথিপত্রহীন বাংলাদেশিরাও একইভাবে দুশ্চিন্তায়। কারণ, ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প শপথ গ্রহণের পর থেকে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ধারপাকড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। নিউইয়র্কের ব্রুকলিন বরোর ফুলটন এলাকা থেকে চার বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্ট (আইস)।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘সংবেদনশীল স্থাপনা’ থেকে অভিবাসীদের আটকের বিষয়ে সমস্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) জারি হওয়া এই নির্দেশনার কারণে এখন থেকে শিক্ষাঙ্গণ, গির্জা ও হাসপাতাল থেকেও অভিবাসীদের আটক করতে পারবে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
শপথ গ্রহণের পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) পর্যন্ত অভিবাসন-সংক্রান্ত শতাধিক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। জো বাইডেন আমলের ৭৮টি নির্বাহী আদেশ বাতিলসহ নতুন ৪৭টিতে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। অবৈধ অভিবাসীদের শক্ত হাতে দমন করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ধরপাকড় শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নানা অঙ্গরাজ্যে। নথিপত্রহীন সন্দেহভাজন অভিবাসীদের ব্যাপক মাত্রায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নিউইয়র্কে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা আইন কর্মকর্তা খাদিজা মুনতাহা রুবা বলেন, নিউইয়র্কের ব্রুকলিন বরোর ফুলটন এলাকা থেকে আড্ডা দেওয়া অবস্থায় নথিপত্রহীন চার বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে আইস। এ সময় তারা সাদা পোশাকে ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী এক বাংলাদেশি বলেন, ‘ফুলটন এলাকায় আমরা আড্ডা দিচ্ছিলাম। অতর্কিতে সাদাপোশাকে কয়েকজন কর্মকর্তা এসে আমাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বলেন।’
একজন প্রতিবাদী হয়ে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম সংশোধনী অনুযায়ী তিনি তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য নন। তিনি এ কথা বলায় তাকে গ্রেফতার করে অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিছতা দূরে একই এলাকায় আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
৭৮ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে শপথ অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত অতিক্রম করে লাখ লাখ অনুপ্রবেশকারী নির্দ্বিধায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সীমান্তে প্রবেশ প্রথমেই বন্ধ করা হবে। তারপর বের করে দেওয়া হবে অপরাধীদের।
ইতিমধ্যে মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। রাখা হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। এই আদেশের আওতায় অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার একটি প্রকল্পও বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অ্যাটর্নি রাজু মহাজন বাংলাদেশি শীর্ষ এক সংবাদমাধ্যকে বলেন, ট্রাম্পের বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশিরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। যারা ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাসহ দক্ষিণ আমেরিকার পথ ধরে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে ঢুকতেন, সেই পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। আগে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দেওয়া হতো। সে হিসাবে অভিবাসীরা বিভিন্ন জায়গায় চাকরির ব্যাপক সুযোগ পেয়েছেন। এখন থেকে মেধার ভিত্তিতে সেসব নিয়োগ নির্ধারিত হবে। ফলে ছাটাই হতে পারেন অসংখ্য বাংলাদেশি।
সংবিধানের তোয়াক্কা না করে নির্বাহী আদেশ জারি করে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের একটি বিধানও বাতিল করেছেন ট্রাম্প। এতে এখন থেকে ৩০ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানেরা দেশটির নাগরিকত্ব পাবে না। তবে ইতিমধ্যে এই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে ২৪টি রাজ্য ও শহরে মামলা হয়েছে। যেহেতু এটা মার্কিন সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনের বিরুদ্ধে যায়, সে কারণে হাইকোর্ট এটি বাতিল করে দিতে পারে।
খাদিজা মুনতাহা বাংলাদেশিদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আইন প্রয়োগকারী কোনো সংস্থার সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের সহযোগিতা করতে হবে। অন্যের ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। এই কঠিন সময়ে অহেতুক পুলিশি অথবা অন্য কোনো বিবাদ অথবা ঝামেলায় জড়ানো যাবে না।
দেখা গেছে, বাঙালি-অধ্যুষিত এলাকার সড়ক ও রেস্তোরাঁয় যেখানে অসংখ্য মানুষের ভিড় দেখা যেত, এখন সেখানে লোকজনের ভিড় নেই বললেই চলে। ইতিমধ্যে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে গির্জা-হাসপাতালেও গ্রেফতার আতঙ্ক: যুক্তরাষ্ট্রের জননিরাপত্তা সংক্রান্ত অধিদফতর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গ্রেফতার এড়াতে অপরাধীরা আর গির্জা ও বিদ্যালয়ে লুকিয়ে থাকার সুযোগ পাবে না। ট্রাম্প প্রশাসন আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত বেঁধে না রেখে তাদের বিবেকের ওপর আস্থা রাখবে।
এক দশকের বেশি সময় ধরে এসব স্থান থেকে কোনো অভিবাসীকে আটক করতে পারত না ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এবং কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এদুটি সংস্থার তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
মঙ্গলবার দুটি নির্দেশনা জারি করেছেন হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান বেনজামিন হাফম্যান। একটি হচ্ছে সংবেদনশীল স্থাপনা থেকে গ্রেফতার সংক্রান্ত। আর দ্বিতীয় নির্দেশনার ক্ষমতাবলে, বৈধ কাগজপত্র বিহীন আটককৃত ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে দুবছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে তাকে দ্রুত দেশ থেকে বের করে দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ।
প্রেসিডেন্টের ‘ব্যাপক অভিবাসী নির্বাসন’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের তাৎক্ষণিকভাবে আটকের জন্য মাঠে নামার অঙ্গীকার করেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। অবশ্য সংবেদনশীল স্থাপনা থেকে আটকের অনুমতি প্রদানের ফল ক্ষতিকর হবে বলে ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা দ্য সেন্টার ফর ল অ্যান্ড সোশ্যাল পলিসি তাদের এক বিবৃতিতে বলেছে, এই পদক্ষেপের কারণে অভিবাসীদের পরিবার ও তাদের সন্তানের পাশাপাশি মার্কিন শিশুরাও মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। স্বাস্থ্যসেবা, ত্রাণ সহায়তা, স্কুলে যাওয়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের কাজে তারা বাধার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে।