প্রযুক্তি ডেস্ক : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছে এ খাতের সাত শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি। এই অঙ্গীকারের মধ্যে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা করা, এবং এর ফলাফল পরবর্তীতে জনসম্মুখে প্রকাশ করা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ঘোষণা দেওয়ার সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অ্যামাজন, অ্যানথ্রপিক, গুগল, ইনফ্লেকশন, মেটা, মাইক্রোসফট এবং ওপেনএআইয়ের মুখপাত্ররা। এআই প্রযুক্তির সক্ষমতা নিয়ে বেশ কয়েকবার সতর্কবার্তা আসার পরপরই এমন একটি ঘোষণা এল। বিভিন্ন কোম্পানি যে গতিতে এআইয়ের বিকাশ ঘটাচ্ছে, তার ফলে ভুল তথ্য ছড়ানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা বিবেচনায় নিলে।
“আমাদের গণতন্ত্র ও মূল্যবোধের জন্য উদীয়মান প্রযুক্তিগুলোর সম্ভাব্য হুমকির ওপর পরিষ্কার দৃষ্টি রাখার পাশাপাশি সেটি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।” –শুক্রবার নিজের বক্তব্যে বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার ‘লামা ২’ নামে নিজস্ব এআই টুল উন্মোচন করেছে ফেইসবুকের মালিক কোম্পানি মেটা। মেটার বৈশ্বিক গণসংযোগ বিভাগের প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ বলেন, ‘এই প্রযুক্তি নিয়ে একটু বেশিই উন্মাদনা ছড়িয়েছে’। শুক্রবার স্বাক্ষরিত চুক্তির অংশ হিসেবে কোম্পানিগুলো যেসব শর্তে একমত হয়েছে, সেগুলো হল: কোনো এআই ব্যবস্থা উন্মোচনের আগে কোম্পানির ভেতরের ও বাইরের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এর নিরাপত্তা পরীক্ষা করা। লোকজন যেন জলছাপ দেখে এআই’র তৈরি কনটেন্ট চিহ্নিত করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করা। এআইয়ের সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা। পক্ষপাত, বৈষম্য ও প্রাইভেসি লঙ্ঘনের মতো ঝুঁকি নিয়ে গবেষণা করা। হোয়াইট হাউজ বলছে, তাদের লক্ষ্যমাত্রা হল মানুষ যেন সহজেই বুঝতে পারে যে কোন অনলাইন কনটেন্টগুলো এআই’র মাধ্যমে তৈরি। “এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আর সেটা আমাদের সঠিকভাবে পালন করতে হবে।” –বলেন বাইডেন।
“আবার এর উল্টোটাও ঘটার ব্যপক সম্ভাবনা রয়েছে।” জুনে স্যান ফ্রান্সিসকো সফরের সময় এআই’র মাধ্যমে তৈরি কনটেন্টে জলছাপ যুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যানের সঙ্গে আলোচনা করেন ইইউ কমিশনার থিয়েরি ব্রেটন। “আমাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, বিশেষ করে জলছাপের বিষয়টি।” –অল্টম্যানের সঙ্গে নিজের ভিডিওযুক্ত এক টুইটে লিখেন ব্রেটন। শুক্রবার স্বাক্ষরিত এই ঐচ্ছিক সুরক্ষা ব্যবস্থার চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আনার’ পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়েছে বিবিসি। পাশাপাশি, একটি নির্বাহী আদেশ নিয়ে কাজ করার কথাও বিবৃতিতে জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। হোয়াইট হাউজ বলছে, এআই প্রযুক্তির বিকাশ ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা মিত্র দেশগুলোর সঙ্গেও কাজ করবে। এই প্রযুক্তি নিয়ে তৈরি শংকাগুলোর মধ্যে ভুল তথ্য তৈরি করে সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করার ঝুঁকি রয়েছে। এমনকি এটি মানবতার অস্তিত্বের জন্যেও ঝুকিপূর্ণ বলে শংকা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। তবে, কয়েকজন শীর্ষ কম্পিউটার বিজ্ঞানী বলেছেন, এর ‘মানবতা ধ্বংস করে ফেলার’ দাবিটি একটু বাড়াবাড়িই বটে।