ঢাকা ০৫:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত একপেশে ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: কাদের

  • আপডেট সময় : ১২:৩৬:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২১
  • ৬৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত একপেশে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন লগ্নে যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত এবং ব্যথিত হয়েছেন জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করবে।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন তিনি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশে খাদ্য সংকটের সময় ১৯৭৪ সালে কিউবার কাছে পাট বিক্রির অজুহাতে খাদ্যবাহী জাহাজ মাঝপথ থেকে ফিরিয়ে নিয়েছিলো আমেরিকা। ৭১ সালের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ এবং ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের বিষয়ে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন ঝুলে আছে। তবুও বন্ধুত্বের প্রশ্নে স্পর্শকাতর এ বিষয়গুলোকে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেইনি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক এবং অভিন্ন ইস্যুসহ বহুপাক্ষিক ইস্যুতে দুই দেশ নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করছে। র‌্যাব একটি এলিট ফোর্স হিসেবে কাজ করছে, সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদ দমনে এই বাহিনী অত্যন্ত পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে কাজ করছে বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। র‌্যাবের কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় এ বাহিনীর অন্তত সাত জন মৃত্যুদ-ে দ-িত হয়েছিল। কোন অভিযোগ থাকলে বাহিনী নিজে কিংবা মন্ত্রণালয় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, দুদক যেকোনো তদন্ত কাজ চালিয়ে যেতে স্বাধীন ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু ঢালাওভাবে অভিযোগ এনে একটি বাহিনীর প্রধান এবং সাবেক কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে নিষেধাজ্ঞা প্রদান অযৌক্তিক, মানবাধিকারের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের সিদ্ধান্তই এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আজ মানবাধিকার নিয়ে কথা বলছে, আমরা তাদের দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আগে পর্যবেক্ষণের অনুরোধ করছি। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে, যা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। বলেন, সেখানে দৃশ্যমান বর্ণবাদ বিরাজ করছে বলে অনেকেই মত প্রকাশ করেছিলেন। কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্য এবং নিপীড়ন প্রশ্নে খোদ জাতিসংঘের উদ্বেগ প্রকাশিত হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা প্রশ্ন রেখে বলেন, মেক্সিকো-ইউএসএ সীমান্তে কতজন মারা গেছে? যেখানে বন্দুক হামলায় প্রতি বছর লাখো মানুষ মারা যায়, নির্বাচনে হেরে যে দেশের ক্যাপিটাল হিল দখল করতে গিয়ে পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটনা বিশ্ববাসী লক্ষ্য করেছে। বিশ্ববাসী দেখেছে মার্কিন গণতন্ত্রের স্বরূপ ও তাদের মানবাধিকারের চেহেরা। অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার সূচকসমূহে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতার কথা অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বারবার উল্লেখ করেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, খোদ অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিকে আমেরিকা সফরে বাধা দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর কোনো কোনো খুনি এখনও আমেরিকায় লুকিয়ে আছে, যুদ্ধাপরাধীরাও সেদেশে পালিয়ে আছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সিনেটর অব লেবার রবার্ট রেইচ এক টুইট বার্তায় বিশ্বকে জানিয়েছিলেন শুধু ২০২০ সালে সেদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ঘটেছে ৯৮৪টি।
২০১৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ঘটেছে ৬ হাজার ৬০০টি। প্রতিবছর সেখানে প্রায় ১ হাজার মানুষ বিনা বিচারে মারা যায়, যা বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় বলে জানান ওবায়দুল কাদের। সেতুমন্ত্রী বলেন, যাদের দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- নিয়ে সাধারণ মানুষ দিনের পর দিন বিভিন্ন সিটিতে রাস্তায় নামে, তাদের অন্যদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের গভীরে বাংলাদেশবিরোধী কিছু ব্যক্তি ও অপশক্তির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত একপেশে ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: কাদের

আপডেট সময় : ১২:৩৬:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত একপেশে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন লগ্নে যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত এবং ব্যথিত হয়েছেন জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করবে।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন তিনি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশে খাদ্য সংকটের সময় ১৯৭৪ সালে কিউবার কাছে পাট বিক্রির অজুহাতে খাদ্যবাহী জাহাজ মাঝপথ থেকে ফিরিয়ে নিয়েছিলো আমেরিকা। ৭১ সালের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ এবং ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের বিষয়ে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন ঝুলে আছে। তবুও বন্ধুত্বের প্রশ্নে স্পর্শকাতর এ বিষয়গুলোকে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেইনি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক এবং অভিন্ন ইস্যুসহ বহুপাক্ষিক ইস্যুতে দুই দেশ নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করছে। র‌্যাব একটি এলিট ফোর্স হিসেবে কাজ করছে, সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদ দমনে এই বাহিনী অত্যন্ত পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে কাজ করছে বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। র‌্যাবের কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় এ বাহিনীর অন্তত সাত জন মৃত্যুদ-ে দ-িত হয়েছিল। কোন অভিযোগ থাকলে বাহিনী নিজে কিংবা মন্ত্রণালয় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, দুদক যেকোনো তদন্ত কাজ চালিয়ে যেতে স্বাধীন ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু ঢালাওভাবে অভিযোগ এনে একটি বাহিনীর প্রধান এবং সাবেক কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে নিষেধাজ্ঞা প্রদান অযৌক্তিক, মানবাধিকারের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের সিদ্ধান্তই এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আজ মানবাধিকার নিয়ে কথা বলছে, আমরা তাদের দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আগে পর্যবেক্ষণের অনুরোধ করছি। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে, যা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। বলেন, সেখানে দৃশ্যমান বর্ণবাদ বিরাজ করছে বলে অনেকেই মত প্রকাশ করেছিলেন। কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্য এবং নিপীড়ন প্রশ্নে খোদ জাতিসংঘের উদ্বেগ প্রকাশিত হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা প্রশ্ন রেখে বলেন, মেক্সিকো-ইউএসএ সীমান্তে কতজন মারা গেছে? যেখানে বন্দুক হামলায় প্রতি বছর লাখো মানুষ মারা যায়, নির্বাচনে হেরে যে দেশের ক্যাপিটাল হিল দখল করতে গিয়ে পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটনা বিশ্ববাসী লক্ষ্য করেছে। বিশ্ববাসী দেখেছে মার্কিন গণতন্ত্রের স্বরূপ ও তাদের মানবাধিকারের চেহেরা। অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার সূচকসমূহে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতার কথা অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বারবার উল্লেখ করেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, খোদ অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিকে আমেরিকা সফরে বাধা দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর কোনো কোনো খুনি এখনও আমেরিকায় লুকিয়ে আছে, যুদ্ধাপরাধীরাও সেদেশে পালিয়ে আছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সিনেটর অব লেবার রবার্ট রেইচ এক টুইট বার্তায় বিশ্বকে জানিয়েছিলেন শুধু ২০২০ সালে সেদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ঘটেছে ৯৮৪টি।
২০১৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ঘটেছে ৬ হাজার ৬০০টি। প্রতিবছর সেখানে প্রায় ১ হাজার মানুষ বিনা বিচারে মারা যায়, যা বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় বলে জানান ওবায়দুল কাদের। সেতুমন্ত্রী বলেন, যাদের দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- নিয়ে সাধারণ মানুষ দিনের পর দিন বিভিন্ন সিটিতে রাস্তায় নামে, তাদের অন্যদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের গভীরে বাংলাদেশবিরোধী কিছু ব্যক্তি ও অপশক্তির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।