নিজস্ব প্রতিবেদক : র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। গতকাল বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে ‘ইআরএফ ডায়ালগ’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সংলাপটি আয়োজন করে ইআরএফ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম সঞ্চালনায় ইআরএফের সহ-সভাপতি এম শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে বড় মার্কেট উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবশ্যই এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমরা ব্যবসায়ীরা চিন্তিত। তবে এখনো এ ইস্যুতে বায়ারদের কোনো অর্ডার স্থগিত কিংবা বাতিল হয়নি। তিনি বলেন, আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। তাদের সঙ্গে কীভাবে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারি সে চেষ্টা করছি। আমরা কোনো বাজার হারাতে চাই না। তিনি আরও বলেন, করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে কিছু ইউরোপীয় বায়ার ডেলিভারি এক সপ্তাহ কিংবা ১০ দিন পেছাতে বলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বায়ারের অর্ডার বাতিল হয়নি। যুক্তরাষ্টের বাজারে জিএসপি বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৃহত্তম এই বাজারে তৈরি পোশাক জিএসপি সুবিধা পেতো না। এখনও পাচ্ছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র যেসব শর্ত দিয়েছিলো সেগুলো পোশাক মালিকরা ও সরকার বাস্তবায়ন করেছে। কমপ্লায়েন্স বা নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে এদেশের উদ্যোক্তারা প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন। বিশ্বের নিরাপদ কারখানা এখন বাংলাদেশে। ১৫৩টি গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে দেশে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা তাদের কাজটি করেছেন। এখন জিএসপি দেওয়া না দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়। তিনি বলেন, দেশটির জিএসপি সুবিধা দেওয়ার সঙ্গে শুধু শর্ত বাস্তবায়ন নয়, রাজনীতিও জড়িত। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে। আগামীতে আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। পোশাক মালিকদের উদ্দেশে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন বিস্তার লাভ করছে। দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে যেন এ ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার না হয় সেজন্য আগেই সবাইকে সতর্ক হতে হবে। আমরা চাই না করোনার শুরুর দিকের মতো অবস্থা আবার সৃষ্টি হোক। সম্প্রতি আমাদের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলেছি তারা যেন নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় সব ধরনের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। তিনি বলেন, মহামারি করোনার প্রাাদুর্ভাব আমরা ভালোভাবে মোকাবিলা করেছি; যে কারণে এখন আমরা নতুন অর্ডার পাচ্ছি। এই অবস্থা থেকে আমরা যেন পেছনে না যাই এ জন্য আগেই পদক্ষেপ নিতে হবে। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, করোনায় সময় যে স্বাস্থ্য বিধি মানা হয়েছিল সেটা যেনো আরো কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয় এমন নির্দেশনা এরই মধ্যে কারখানা মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পোশাক খাতে ভালো কর্মপরিবেশ এবং নিরাপদ কারখানায় বাংলাদেশ এখন বিশ্ব সেরা, তাই রানা প্লাজা বা অন্য কোন দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেই বিষয়ে বিজিএমইএ সতর্ক, তাই ক্রেতার অনুমোদন ছাড়া বাহিরের কোন কারখানায় সাব কন্টাক্টিংয়ের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে বিজিএমইএ।
ডায়ালগে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের বের হয়ে যাওয়া নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন নন। কারণ এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইতিমধ্যে বিজিএমইএ সরকার ও ক্রেতা দেশগুলোর সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। দক্ষতা উন্নয়ন, বিনিয়োগ বাড়ানো, পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ফলে কোটা ও শুল্ক মুক্ত সুবিধাহীন বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের টিকে থাকা নিয়ে আপাতত কোনো সংশয় দেখা যাচ্ছে না। ফারুক হাসান বলেন, বর্তমানে তাদের কৌশল হচ্ছে এলডিসি থেকে উত্তরনের প্রস্তুতিকাল অর্থাৎ ২০২৬ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারের সুবিধা নেওয়া। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২০২৬ সালের পরে যে বাড়তি তিন বছর শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধায় রফতানির সুযোগ দেবে, আলোচনার মাধ্যমে তা বাড়ানো। বিজিএমইএ ইইউর কাছে ১০ বছরের জন্য এই সুবিধা চায়। এরপরে বিজিএমইএ ইইউর সঙ্গে জিএসপি প্লাস নিয়ে আলোচনা করবে। তবে পোশাক মালিকরা চান এই সময়ের মধ্যে সরকার অন্যান্য দেশের সঙ্গে মুক্ত ও অগ্রাধিকারমুলক বাণিজ্য চুক্তি করবে। করোনার প্রভাব মোকাবেলার প্রণোদনার ঋণ পরিশোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক কারখানা ইতিমধ্যে ঋণের কিস্তি দেওয়া শুরু করেছে। আর কিছু প্রতিষ্ঠান পারছে না। কারণ ওইসব প্রতিষ্ঠানের ক্রেতারা মূল্য পরিশোধ করেনি। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ বিবেচনায় সময় দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। সাম্প্রতিক সময়ের রফতানি বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমত বেড়েছে আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে। এছাড়া করোনার সময়ে ক্রেতাদের অনেক দাবি দেশের রপ্তানিকারকরা রেখেছেন। বিশেষকরে পরে ডেলিভারি, দেরিতে মূল্য পরিশোধ, ডিসকাউন্ট ইত্যাদি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যেকারণে ক্রেতাদের সঙ্গে রপ্তানিকারকদের একটি সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ফলে এখন ক্রেতারা তাদের বাড়তি চাহিদার পণ্য বাংলাদেশ থেকেই নিচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা: বিজিএমইএ সভাপতি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ