ঢাকা ০৫:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

যানবাহনের আওয়াজ থেকে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি

  • আপডেট সময় : ০৮:৪০:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩
  • ৭৮ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক : যানজটের কারণে শুধু সময় নষ্ট হয় না, স্বাস্থ্যের ওপরেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে। রাস্তায় গাড়ির শব্দ, হর্নের আওয়াজ, লেগে থাকা যানজটে বসে বিরক্ত হওয়া, মেজাজ খারাপ করার মতো ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে। এসবের প্রভাব পড়ছে দেহে। বিভিন্ন গবেষণায়, রাস্তার গাড়ির আওয়াজের সঙ্গে ‘হাইপারটেনশন’ বা উচ্চ রক্তচাপে ভোগার সম্পর্ক বিষয়ক তথ্য উঠে আসলেও, এর কারণ শব্দ দূষণ না-কি অন্য কিছু- সে বিষয়ে গবেষকরা নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে এবার গবেষকরা বলছেন, তাদের হাতে এখন প্রমাণ রয়েছে। সিএনএন ডটকম জানাচ্ছে, এই পর্যালোচনার জন্য ‘আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি’র গবেষকরা ‘ইউকে বায়োব্যাংক’ থেকে স্বাস্থ্যগত ফলাফল বেছে নেয়। যেখানে যুক্তরাজ্যের প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের বংশগত ও স্বাস্থ্যগত বিষয়ক তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৬৯ বয়সি, ২ লক্ষ ৪০ হাজার অংশগ্রহণকারীর প্রাথমিক অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ ছিল না। ৮.১ বছরের মাঝামাঝি সময় ধরে গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের আবাসিক ঠিকানার সঙ্গে ‘ইউরোপিয়ান মডেলিং টুল, দি কমন নয়েজ অ্যাসেসমেন্ট মেথড’য়ের সমন্বয়ে পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখার চেষ্টা করেন কাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
মার্চে ‘জেএসিসি: অ্যাডভান্সেস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, যারা রাস্তার পাশে থাকেন গাড়ির শব্দের কারণে তাদের যে শুধু উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিয়েছে তাই নয়, বরং প্রতিটা শব্দের ‘ডোজ’য়ের সঙ্গে এই ঝুঁকি বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি বাতাসের ‘ফাইন পার্টিকেল’ ও ‘নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড’য়ের মাত্রা সমন্বয় করেও ঝুঁকি পরিমাণ একই দেখা গেছে।
উচ্চ মাত্রার শব্দ দুষণ থেকে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র ‘কার্ডিওভাস্কুলার মেডিসিন অ্যান্ড পপুলেইশন হেল্থ’য়ের অধ্যাপক ও জ্যেষ্ঠ গবেষক কাজেম রাহিমি এই বিষয়ে সিএনএন’কে বলেন, “যেহেতু কোলাহলপূর্ণ স্থানগুলোতে উচ্চ মাত্রার বায়ু দূষণের সম্ভাবনাও থাকে, সেহেতু প্রশ্ন জাগতেই পারে শুধু একটি কারণ নাকি একাধিক কারণে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। বিষয় হল কোলাহলপূর্ণ দূষিত এলাকায় বসবাসের কারণে উচ্চ রক্তচাপে ভোগার ঝুঁকি বাড়ে।”
তারমানে এই নয়, বায়ু দূষণ কোনো প্রভাব ফেলে না। যারা রাস্তার অধিক আওয়াজ ও বায়ু দূষণ এলাকার সংস্পর্শে বেশি যান তাদের ‘হাইপারটেনশ’য়ে ভোগার ঝুঁকি বেশি। রাহিমি বলেন, “সর্বনি¤œ সহ্যকর শব্দের মাত্রা হল ১০ ডেসিবেল। গবেষণায় এই মাত্রাই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই মাত্রা যত বাড়বে ঝুঁকি তত বেশি হবে।” অর্থাৎ উচ্চ শব্দ দূষণের কারণে ভবিষ্যতে রক্তচাপে ভোগার ঝুঁকি বাড়তে থাকবে। রাহিমি পরামর্শ দেন, “রাস্তার শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক সামাজিক নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। সেটা হতে পারে শব্দের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য কড়াকড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা, রাস্তাঘাট উন্নত করা, যত্রতত্র হর্ন না বাজানোর বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন- ইলেক্ট্রিক যানবাহন।” বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে- বয়স বৃদ্ধি, বংশগতি, অতিরিক্ত ওজন, অলস জীবনযাপন, বেশি লবণ গ্রহণ, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে উচ্চ রক্তচাপে ভোগার সম্ভবনা থেকেই যায়। আর এই অবস্থার লক্ষণ যেহেতু সহজে প্রকাশ পায় না সেহেতু নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে এই উচ্চ রক্তচাপে ভোগার ঝুঁকি এড়ানোর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করিনি: সাইফুল হক

যানবাহনের আওয়াজ থেকে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি

আপডেট সময় : ০৮:৪০:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক : যানজটের কারণে শুধু সময় নষ্ট হয় না, স্বাস্থ্যের ওপরেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে। রাস্তায় গাড়ির শব্দ, হর্নের আওয়াজ, লেগে থাকা যানজটে বসে বিরক্ত হওয়া, মেজাজ খারাপ করার মতো ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে। এসবের প্রভাব পড়ছে দেহে। বিভিন্ন গবেষণায়, রাস্তার গাড়ির আওয়াজের সঙ্গে ‘হাইপারটেনশন’ বা উচ্চ রক্তচাপে ভোগার সম্পর্ক বিষয়ক তথ্য উঠে আসলেও, এর কারণ শব্দ দূষণ না-কি অন্য কিছু- সে বিষয়ে গবেষকরা নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে এবার গবেষকরা বলছেন, তাদের হাতে এখন প্রমাণ রয়েছে। সিএনএন ডটকম জানাচ্ছে, এই পর্যালোচনার জন্য ‘আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি’র গবেষকরা ‘ইউকে বায়োব্যাংক’ থেকে স্বাস্থ্যগত ফলাফল বেছে নেয়। যেখানে যুক্তরাজ্যের প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের বংশগত ও স্বাস্থ্যগত বিষয়ক তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৬৯ বয়সি, ২ লক্ষ ৪০ হাজার অংশগ্রহণকারীর প্রাথমিক অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ ছিল না। ৮.১ বছরের মাঝামাঝি সময় ধরে গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের আবাসিক ঠিকানার সঙ্গে ‘ইউরোপিয়ান মডেলিং টুল, দি কমন নয়েজ অ্যাসেসমেন্ট মেথড’য়ের সমন্বয়ে পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখার চেষ্টা করেন কাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
মার্চে ‘জেএসিসি: অ্যাডভান্সেস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, যারা রাস্তার পাশে থাকেন গাড়ির শব্দের কারণে তাদের যে শুধু উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিয়েছে তাই নয়, বরং প্রতিটা শব্দের ‘ডোজ’য়ের সঙ্গে এই ঝুঁকি বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি বাতাসের ‘ফাইন পার্টিকেল’ ও ‘নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড’য়ের মাত্রা সমন্বয় করেও ঝুঁকি পরিমাণ একই দেখা গেছে।
উচ্চ মাত্রার শব্দ দুষণ থেকে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র ‘কার্ডিওভাস্কুলার মেডিসিন অ্যান্ড পপুলেইশন হেল্থ’য়ের অধ্যাপক ও জ্যেষ্ঠ গবেষক কাজেম রাহিমি এই বিষয়ে সিএনএন’কে বলেন, “যেহেতু কোলাহলপূর্ণ স্থানগুলোতে উচ্চ মাত্রার বায়ু দূষণের সম্ভাবনাও থাকে, সেহেতু প্রশ্ন জাগতেই পারে শুধু একটি কারণ নাকি একাধিক কারণে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। বিষয় হল কোলাহলপূর্ণ দূষিত এলাকায় বসবাসের কারণে উচ্চ রক্তচাপে ভোগার ঝুঁকি বাড়ে।”
তারমানে এই নয়, বায়ু দূষণ কোনো প্রভাব ফেলে না। যারা রাস্তার অধিক আওয়াজ ও বায়ু দূষণ এলাকার সংস্পর্শে বেশি যান তাদের ‘হাইপারটেনশ’য়ে ভোগার ঝুঁকি বেশি। রাহিমি বলেন, “সর্বনি¤œ সহ্যকর শব্দের মাত্রা হল ১০ ডেসিবেল। গবেষণায় এই মাত্রাই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই মাত্রা যত বাড়বে ঝুঁকি তত বেশি হবে।” অর্থাৎ উচ্চ শব্দ দূষণের কারণে ভবিষ্যতে রক্তচাপে ভোগার ঝুঁকি বাড়তে থাকবে। রাহিমি পরামর্শ দেন, “রাস্তার শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক সামাজিক নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। সেটা হতে পারে শব্দের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য কড়াকড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা, রাস্তাঘাট উন্নত করা, যত্রতত্র হর্ন না বাজানোর বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন- ইলেক্ট্রিক যানবাহন।” বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে- বয়স বৃদ্ধি, বংশগতি, অতিরিক্ত ওজন, অলস জীবনযাপন, বেশি লবণ গ্রহণ, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে উচ্চ রক্তচাপে ভোগার সম্ভবনা থেকেই যায়। আর এই অবস্থার লক্ষণ যেহেতু সহজে প্রকাশ পায় না সেহেতু নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে এই উচ্চ রক্তচাপে ভোগার ঝুঁকি এড়ানোর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।