ঢাকা ১০:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

যাত্রীদের বাঁচানোর চেষ্টায় ডাকাতের হাতে প্রাণ যায় বাস চালক মনজুরের

  • আপডেট সময় : ০১:০২:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ডাকাতদের কথা শুনলে হয়ত প্রাণটা বেঁচে যেত, কিন্তু বাস চালক মনজুর হোসেন নিজের কথা না ভেবে যাত্রীদের সুরক্ষার কথা ভেবেছিলেন। মহামারীর কারণে টানা লকডাউনের পুরোটা সময় বেকার বসে ছিলেন হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাস চালক মনজুর। ঘর ভাড়া বাকি পড়েছিল কয়েক মাস। স্ত্রী অসুস্থ, চিকিৎসার জন্যও টাকা দরকার ছিল। তাই টানা নয় দিন বাসায় না গিয়ে বাস চালাচ্ছিলেন তিনি।
গত ৩১ আগস্ট রাতে পঞ্চগড়গামী মনজুরের বাসটি রংপুরের পীরগঞ্জ থানা এলাকার মহাসড়কে যাত্রীবেশী ডাকাতের কবলে পড়ে। যাত্রীদের নিরাপদ করতে রাস্তার ওপর গাড়িটি আড়াআড়ি করে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন মনজুর। তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তার কাঁধ বরাবর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয় ডাকাতরা। সেই আঘাতেই পরে মৃত্যু হয় ৫৫ বছর বয়সী মনজুরের। ওই ডাকাতি ও হত্যার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর রোববার সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “চালক মনজুর এলোমেলো গাড়ি চালিয়ে ডাকাতদের কবল থেকে যাত্রীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। ডাকাতেরা বিষয়টি বুঝতে পেরে তার কাঁধে কোপ দিয়ে বসে।”
ওই রাতে মনজুরের সঙ্গে সুপারভাইজারের দায়িত্বে ছিলেন পইমুল ইসলাম। ডাকাতি ও হত্যার ঘটনায় রংপুরের পীরগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলাটির বাদী তিনি। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর মনজুরকে বাসের পেছনে নিয়ে শুইয়ে রাখে ডাকাতেরা। পাশে পইমুলকেও শুইয়ে রাখা হয়। ডাকাতদের অস্ত্রের ভয়ে সহকর্মীর চরম নাজুক অবস্থাতেও কোনো রকম সাহায্য করতে না পারার আফসোস এখনো যায়নি পইমুলের। ওই রাতের ঘটনা যেন তাড়া করে ফিরছে তাকে। সহকর্মীর শরীর থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে, অথচ তিনি কিছুই করতে পারেননি। পইমুল বলেন, ৩১ অগাস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাদের বাস ঢাকার গাবতলী ছাড়ে। সাভার থেকে তিনজন এবং নবীনগর থেকে দুইজন যাত্রী বাসে ওঠে। তারা যে ডাকাত ছিল, সেটা বোঝা গেছে পরে। ডাকাতির ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পইমুল বলেন, তখন রাত ২টা বা আড়াইটা। তিনি চালকের পাশে ইঞ্জিন কভারের ওপর বসে ছিলেন। বাসের হেলপার একটি আসনে ঘুমাচ্ছিলেন।
বাসটি গাইবান্ধার ধাপেরহাট মোড় অতিক্রম করার পরপরই যাত্রীবেশী ডাকাতদের একজন এসে প্রথমে তার গলায় ছুরি ধরে বলে, “কোনো চিল্লা-হল্লা হবে না।”
একই সময়ে আরও দুজন দুপাশ থেকে চালকের গলায় ছুরি ধরে। আরেকজন (র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার রিয়াজুল ইসলাম লালু) চালকের কাছ থেকে স্টিয়ারিংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিতে টানা-হেঁচড়া শুরু করে।
সেই ডাকাত চালককে গালি দিয়ে বলে, ‘….ছোল গাড়ি সাইড কর’। কিন্তু চালক মনজুর গাড়ি না থামিয়ে ’বাউলি মেরে’ (এঁকেবেকে চালনা) রাস্তার ওপর গাড়িটি আড়াআড়ি করে রাখার চেষ্টা করেন।
পইমুল বলেন, মনজুরের পরিকল্পনা ছিল, গাড়ি রাস্তার ওপর আড়াআড়ি করে রাখতে পারলে রাস্তা বন্ধ হয়ে যানজট লেগে হইচই পড়ে যাবে, তখন লোকজনের সাহায্য পাওয়া যাবে।
“কিন্তু প্রথম বাউলি মারার সঙ্গে সঙ্গে এক ডাকাত দা দিয়ে তার কাঁধে কোপ মারে। কোপ খেয়েই দুর্বল হয়ে পড়ে মনজুর। ডাকাতদের একজন (লালু) তখন স্টিয়ারিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয়। বাস তখনও ষাট থেকে সত্তুর কিলোমিটার বেগে ছুটছিল।”
পইমুল বলেন, আহত চালককে দুজন ডাকাত ধরে বাসের পেছনে শুইয়ে দেয়, পইমুলের হাতে একটি কোপ দিয়ে তাকেও পেছনে নিয়ে যায় ডাকাতেরা। সেখানে এক ডাকাত দুজনের পাহারায় থাকে।
বাকি তিন ডাকাত যাত্রীদের কাছ থেকে মালামাল লুটপাট শুরু করে। যাত্রীদের কেউ তেমন চীৎকার করেননি। বয়স্ক এক ব্যক্তির সাত হাজার টাকা ডাকাতরা নিয়ে নেয়। এসময় তিনি কথা বলার চেষ্টা করলে তাকেও মারধর করে তিন-চারটি কোপ দেয় ডাকাতরা। পইমুল বলেন, আহত চালককে পেছনে নেওয়ার সময়ই তিনি নিথর হয়ে যাচ্ছিলেন। মিনিট দশেক পর একবার পানি চেয়েছিলেন। তখন এক যাত্রী তাকে পানি দেন। পানি খেয়ে তিনি সংজ্ঞা হারান। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল মনজুর আর তার বাস। হাসপাতালে নেওয়ার পরে ডাক্তারেরা জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
বাসাভাড়া বাকি, স্ত্রী অসুস্থ : টানা পনেরো বছর হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাস চালিয়ে আসছিলেন মনজুর। ঢাকার লালবাগের নবাবগঞ্জে স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ছিল তার সংসার। বড় ছেলে মারুফ হোসেন সোহরাওয়ার্দী কলেজে রসায়নে অনার্স পড়ছেন। আর ছোট ছেলে উচ্চ মাধ্যমিকের গ-ি পেরিয়েছে।
মারুফ হোসেন বলেন, লকডাউনে সময় তার বাবার কাজ না থাকায় সংসারে খুবই টানাটানি চলছিল। ঘর ভাড়া বাকি পড়েছিল প্রায় ছাব্বিশ হাজার টাকা। এর মধ্যে তার মা অসুস্থ। টাকার কারণে তার চিকিৎসাও হচ্ছিল না। পরিবারের বাড়তি টাকা যোগাতে টানা নয়দিন ধরে বাস চালানোর কাজ করছিলেন মনজুর। এমনিতে দূরপাল্লার পরিবহনে একদিন পরপর চালক বদল হয়। কিন্তু শুধু সংসারের দায়ে মনজুর বাড়তি কাজ করছিলেন। ১ সেপ্টেম্বর ভোরবেলায় পুলিশ মনজুরের বাসায় যায় তার মৃত্যুর খবর নিয়ে।
মারুফ বলেন, “আমার বাবা চাইতেন আমরা পড়ালেখা করে চাকরি করি। কোনদিন তিনি আমাদের দুই ভাইকে পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোনো কাজ করতে দেননি। এখন বাবা নেই, কী করে সংসার চলবে তা জানি না। মায়ের চিকিৎসা, ঘর ভাড়া এসব কে যোগাবে।”
গ্রেপ্তার ৬ জন : র‌্যাব জানিয়েছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আশুলিয়া ও গাইবান্ধায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির সাথে সরাসরি জড়িত নয়ন চন্দ্র রায় (২২), রিয়াজুল ইসলাম লালু (২২), ওমর ফারুক (১৯), ফিরোজ কবির (২০), আবু সাঈদ মোল্লা (২৫) এবং শাকিল মিয়াকে (২৬) আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ছুরিসহ পাঁচটি ছুরি, লুট হওয়া একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। গত সাত মাসে এই চক্রটি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থেকে রংপুরের পীরগঞ্জ পর্যন্ত এলাকার ৪৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সাতবার ডাকাতি করেছে বলে জানানো হয় র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

যাত্রীদের বাঁচানোর চেষ্টায় ডাকাতের হাতে প্রাণ যায় বাস চালক মনজুরের

আপডেট সময় : ০১:০২:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : ডাকাতদের কথা শুনলে হয়ত প্রাণটা বেঁচে যেত, কিন্তু বাস চালক মনজুর হোসেন নিজের কথা না ভেবে যাত্রীদের সুরক্ষার কথা ভেবেছিলেন। মহামারীর কারণে টানা লকডাউনের পুরোটা সময় বেকার বসে ছিলেন হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাস চালক মনজুর। ঘর ভাড়া বাকি পড়েছিল কয়েক মাস। স্ত্রী অসুস্থ, চিকিৎসার জন্যও টাকা দরকার ছিল। তাই টানা নয় দিন বাসায় না গিয়ে বাস চালাচ্ছিলেন তিনি।
গত ৩১ আগস্ট রাতে পঞ্চগড়গামী মনজুরের বাসটি রংপুরের পীরগঞ্জ থানা এলাকার মহাসড়কে যাত্রীবেশী ডাকাতের কবলে পড়ে। যাত্রীদের নিরাপদ করতে রাস্তার ওপর গাড়িটি আড়াআড়ি করে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন মনজুর। তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তার কাঁধ বরাবর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয় ডাকাতরা। সেই আঘাতেই পরে মৃত্যু হয় ৫৫ বছর বয়সী মনজুরের। ওই ডাকাতি ও হত্যার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর রোববার সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “চালক মনজুর এলোমেলো গাড়ি চালিয়ে ডাকাতদের কবল থেকে যাত্রীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। ডাকাতেরা বিষয়টি বুঝতে পেরে তার কাঁধে কোপ দিয়ে বসে।”
ওই রাতে মনজুরের সঙ্গে সুপারভাইজারের দায়িত্বে ছিলেন পইমুল ইসলাম। ডাকাতি ও হত্যার ঘটনায় রংপুরের পীরগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলাটির বাদী তিনি। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর মনজুরকে বাসের পেছনে নিয়ে শুইয়ে রাখে ডাকাতেরা। পাশে পইমুলকেও শুইয়ে রাখা হয়। ডাকাতদের অস্ত্রের ভয়ে সহকর্মীর চরম নাজুক অবস্থাতেও কোনো রকম সাহায্য করতে না পারার আফসোস এখনো যায়নি পইমুলের। ওই রাতের ঘটনা যেন তাড়া করে ফিরছে তাকে। সহকর্মীর শরীর থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে, অথচ তিনি কিছুই করতে পারেননি। পইমুল বলেন, ৩১ অগাস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাদের বাস ঢাকার গাবতলী ছাড়ে। সাভার থেকে তিনজন এবং নবীনগর থেকে দুইজন যাত্রী বাসে ওঠে। তারা যে ডাকাত ছিল, সেটা বোঝা গেছে পরে। ডাকাতির ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পইমুল বলেন, তখন রাত ২টা বা আড়াইটা। তিনি চালকের পাশে ইঞ্জিন কভারের ওপর বসে ছিলেন। বাসের হেলপার একটি আসনে ঘুমাচ্ছিলেন।
বাসটি গাইবান্ধার ধাপেরহাট মোড় অতিক্রম করার পরপরই যাত্রীবেশী ডাকাতদের একজন এসে প্রথমে তার গলায় ছুরি ধরে বলে, “কোনো চিল্লা-হল্লা হবে না।”
একই সময়ে আরও দুজন দুপাশ থেকে চালকের গলায় ছুরি ধরে। আরেকজন (র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার রিয়াজুল ইসলাম লালু) চালকের কাছ থেকে স্টিয়ারিংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিতে টানা-হেঁচড়া শুরু করে।
সেই ডাকাত চালককে গালি দিয়ে বলে, ‘….ছোল গাড়ি সাইড কর’। কিন্তু চালক মনজুর গাড়ি না থামিয়ে ’বাউলি মেরে’ (এঁকেবেকে চালনা) রাস্তার ওপর গাড়িটি আড়াআড়ি করে রাখার চেষ্টা করেন।
পইমুল বলেন, মনজুরের পরিকল্পনা ছিল, গাড়ি রাস্তার ওপর আড়াআড়ি করে রাখতে পারলে রাস্তা বন্ধ হয়ে যানজট লেগে হইচই পড়ে যাবে, তখন লোকজনের সাহায্য পাওয়া যাবে।
“কিন্তু প্রথম বাউলি মারার সঙ্গে সঙ্গে এক ডাকাত দা দিয়ে তার কাঁধে কোপ মারে। কোপ খেয়েই দুর্বল হয়ে পড়ে মনজুর। ডাকাতদের একজন (লালু) তখন স্টিয়ারিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয়। বাস তখনও ষাট থেকে সত্তুর কিলোমিটার বেগে ছুটছিল।”
পইমুল বলেন, আহত চালককে দুজন ডাকাত ধরে বাসের পেছনে শুইয়ে দেয়, পইমুলের হাতে একটি কোপ দিয়ে তাকেও পেছনে নিয়ে যায় ডাকাতেরা। সেখানে এক ডাকাত দুজনের পাহারায় থাকে।
বাকি তিন ডাকাত যাত্রীদের কাছ থেকে মালামাল লুটপাট শুরু করে। যাত্রীদের কেউ তেমন চীৎকার করেননি। বয়স্ক এক ব্যক্তির সাত হাজার টাকা ডাকাতরা নিয়ে নেয়। এসময় তিনি কথা বলার চেষ্টা করলে তাকেও মারধর করে তিন-চারটি কোপ দেয় ডাকাতরা। পইমুল বলেন, আহত চালককে পেছনে নেওয়ার সময়ই তিনি নিথর হয়ে যাচ্ছিলেন। মিনিট দশেক পর একবার পানি চেয়েছিলেন। তখন এক যাত্রী তাকে পানি দেন। পানি খেয়ে তিনি সংজ্ঞা হারান। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল মনজুর আর তার বাস। হাসপাতালে নেওয়ার পরে ডাক্তারেরা জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
বাসাভাড়া বাকি, স্ত্রী অসুস্থ : টানা পনেরো বছর হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাস চালিয়ে আসছিলেন মনজুর। ঢাকার লালবাগের নবাবগঞ্জে স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ছিল তার সংসার। বড় ছেলে মারুফ হোসেন সোহরাওয়ার্দী কলেজে রসায়নে অনার্স পড়ছেন। আর ছোট ছেলে উচ্চ মাধ্যমিকের গ-ি পেরিয়েছে।
মারুফ হোসেন বলেন, লকডাউনে সময় তার বাবার কাজ না থাকায় সংসারে খুবই টানাটানি চলছিল। ঘর ভাড়া বাকি পড়েছিল প্রায় ছাব্বিশ হাজার টাকা। এর মধ্যে তার মা অসুস্থ। টাকার কারণে তার চিকিৎসাও হচ্ছিল না। পরিবারের বাড়তি টাকা যোগাতে টানা নয়দিন ধরে বাস চালানোর কাজ করছিলেন মনজুর। এমনিতে দূরপাল্লার পরিবহনে একদিন পরপর চালক বদল হয়। কিন্তু শুধু সংসারের দায়ে মনজুর বাড়তি কাজ করছিলেন। ১ সেপ্টেম্বর ভোরবেলায় পুলিশ মনজুরের বাসায় যায় তার মৃত্যুর খবর নিয়ে।
মারুফ বলেন, “আমার বাবা চাইতেন আমরা পড়ালেখা করে চাকরি করি। কোনদিন তিনি আমাদের দুই ভাইকে পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোনো কাজ করতে দেননি। এখন বাবা নেই, কী করে সংসার চলবে তা জানি না। মায়ের চিকিৎসা, ঘর ভাড়া এসব কে যোগাবে।”
গ্রেপ্তার ৬ জন : র‌্যাব জানিয়েছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আশুলিয়া ও গাইবান্ধায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির সাথে সরাসরি জড়িত নয়ন চন্দ্র রায় (২২), রিয়াজুল ইসলাম লালু (২২), ওমর ফারুক (১৯), ফিরোজ কবির (২০), আবু সাঈদ মোল্লা (২৫) এবং শাকিল মিয়াকে (২৬) আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ছুরিসহ পাঁচটি ছুরি, লুট হওয়া একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। গত সাত মাসে এই চক্রটি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থেকে রংপুরের পীরগঞ্জ পর্যন্ত এলাকার ৪৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সাতবার ডাকাতি করেছে বলে জানানো হয় র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে।