প্রত্যাশা ডেস্ক : শুরু হয়েছে ঈদুল আজহার আমেজ। ঈদের কোরবানির হাটে পশুর চাহিদা মেটাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাকে করে ঢাকায় প্রবেশ করছে গরু। আর অতিরিক্ত বাসভাড়ার হাত থেকে বাঁচতে সেই ট্রাকে করেই শেকড়ের টানে গ্রামে ফিরছেন মানুষ।
গতকাল সোমবার বিকেলে সাভারের চন্দ্রা-নবীনগর, ঢাকা-আরিচা ও বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়কের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, বাজারে গরু নামিয়ে ফেরার সময় ওই একই ট্রাকে উঠে বাড়ি ফিরছেন মানুষ। অন্য দিকে একের পর এক গরু ভর্তি ট্রাক প্রবেশ করছে ঢাকায়। বেশ ঝুঁকি নিয়ে ঈদ উদযাপনের জন্য গ্রামে ফিরছে মানুষ। ট্রাকে করে রাজশাহী যাবেন পোশাক শ্রমিক আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, আমরা আগে সকালেই বের হয়েছি গ্রামে ফেরার জন্য। বাসের তো টিকিটই পাওয়া যায় না। টিকিট ছাড়া যেসব বাস ছাড়ে সেসব বাসের ভাড়া ডাবল। এজন্য গ্রামে যেতে ট্রাকে করে ঝুঁকি হলেও বাধ্য হচ্ছি। আমি এই নিয়ে দুই বার ট্রাকে যাত্রা করছি। এর আগে ট্রাকে কম ভাড়ায় বাড়ি পৌঁছাতে পেরেছি। ঝুঁকি থাকলেও কিছু করার নেই। কারণ আমাদের তো আয় সীমিত।
অপর যাত্রী আসমা বলেন, আমরা ঈদে ট্রাকেই বেশি যাতায়াত করি। আমি মেয়ে মানুষ, তাই ট্রাকে উঠতে আর নামে একটু সমস্যা হয়। এছাড়া আর কোন সমস্যা হয়। একটু কষ্ট হয়, তবুও তো কম ভাড়ায় বাড়ি যেতে পারি। আমাদে পরিবারের সদস্য ৫ জন। বাসে যেতে গেলে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা লাগে। কিন্তু ট্রাকে গেলে খরচ হয় অর্ধেক। ঝুঁকি আছে জানি, কিন্তু রোদ আর বৃষ্টি ছাড়া আর কোন সমস্যা দেখি না।
ট্রাক ভর্তি গরু নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করছেন ট্রাকচালক লিটন। তিনি বলেন, ঈদে আমরা শুধু গরু নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করি। ফিরে যেতে হয় খালি। তেলের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের তেমন লাভ হয় না। ঈদ তো আমাদেরও আছে। এজন্য আমরা ফেরার সময় যা পাই তাই নিয়ে ফিরে যাই। এতে আমাদের বাড়তি কিছু টাকা আসে। যা নিয়ে আমরা ছেলেমেয়েদের নতুন জামা কিনতে পারি। ট্রাকে ভর্তি মানুষ নিয়ে উত্তর বঙ্গে যাচ্ছেন চালক মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ট্রাকে মানুষ তো জোর করেই ওঠে। আমরা তো ডেকে তুলি না। তাদের ট্রাকে না তুললে উল্টো বকাবকি করেন। আমাদের কি দোষ। লোক গাড়িতে উঠলে অনেক সময় আমাদের জরিমানা দিতে হয়। আমরা নিজেরাই কষ্টে আছি। গাড়িতে লোক উঠালেও দোষ না উঠালেও দোষ। আমাদের ভাড়া তারা বেশি দেয় এমনটাও না। স্বল্প ভাড়ায় আমরা তাদের পৌঁছে দেই।
ঢাকা জেলা উত্তরের ট্রাফিক বিভাগের অ্যাডমিন চৌধুরী শহীদ বলেন, পণ্যবাহী যানবাহনে মানুষ পরিবহন করা অবৈধ। আমরা এসব যানবাহন পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। গত ঈদেও আমরা এমন পরিবহনকে ড্যাম্পিং করেছি বেশ কিছু মামলাও হয়েছিল। এবারও আমরা ব্যবস্থা নেব।
বাড়ি ফেরার হিড়িক: সাভারের সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। নবীনগর-চন্দ্রা, আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের প্রতিটি পয়েন্টেই রয়েছে যানবাহনের চাপ। সেইসঙ্গে বাস স্ট্যান্ডগুলোতে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ার সড়কগুলোতে দেখা গেছে এমন চিত্র।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার, হেমায়েতপুর, সাভার বাসস্ট্যান্ড, নবীনগর, নয়ারহাটসহ কয়েকটি পয়েন্টে রয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের আশুলিয়া, জিরাবো, জামগড়া ও বাইপাইলের সড়কগুলোতে রয়েছে একই চিত্র। এছাড়া নবীনগর-চন্দ্রা সড়কের পল্লীবিদ্যুৎ, ডিইপিজেড, শ্রীপুর ও জিরানীতেও রয়েছে যানবাহনের জটলা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সড়কগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সাভার পরিবহনের চালক মাসুদ মিয়া বলেন, সকাল থেকে যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করে। দুপুরের পর থেকে আরও বেশি যানবাহন সড়কে নেমে গেছে। গাবতলী থেকে বাইপাইল আসতে প্রতিটি স্ট্যান্ডেই ছিল যানবাহনের ধীরগতি। রাতে যানবাহনের চাপ আরও বাড়বে।
ঢাকা জেলা উত্তর ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই) জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা সড়কে আছি। সকাল থেকে পরিবহন বা যাত্রীর তেমন চাপ ছিল না। দুপুরের পর থেকে ধীরে ধীরে যাত্রীর চাপ ও যানবাহন বাড়তে শুরু করেছে। রাতে এই চাপ আরও বাড়বে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, যাত্রীদের নির্বিঘেœ গন্তব্যে পৌঁছে দিতে আমাদের ট্রাফিকসহ পুলিশ সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা সড়কে অবস্থান করছেন। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সব ধরনের কাজ করছেন তারা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পশুহাট, দুর্ভোগে যাত্রী-চালক: ফেনীর মোহাম্মদ আলী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর বসেছে কোরবানির পশুহাট। সড়কের ঢাকামুখী লেনে গরু-ছাগল বেঁধে দেদারসে চলছে বিকিকিনি। ইজারায় মহাসড়কের পাশে কিংবা মহাসড়কে পশুহাট না বসানোর বিষয়ে সুস্পষ্ট শর্ত উল্লেখ থাকলেও এখানে তা মানা হয়নি। এতে সড়কে তৈরি হচ্ছে যানজট। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও যানবাহন চালকদের।
স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে অবৈধভাবে হাট বসার কারণে মহাসড়কে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। হাটে পশু কিনতে আসা আফসার উদ্দিন নামের একজন বলেন, মহাসড়কের ওপর এভাবে হাট বসানো ঠিক হয়নি। এভাবে পশুর হাট বসানোর ফলে ভোগান্তি বেড়েছে মানুষের। হাটে আগত ক্রেতা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমাদের বিবেকের দুর্ভিক্ষ চলছে। না হলে মানুষ কেন জীবন ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কের পাশে হাঁট বসাবে। হাটে আগত এক ক্রেতা আবদুল গনি ভূঞা বলেন, ঈদের মৌসুম, শহর-বন্দর থেকে মানুষ বাড়ি ফিরছে। এমন সময়ে মহাসড়কের ওপর পশুর হাট। যানজট ও জন ভোগান্তি দেখার কেউ নেই।
এ বিষয়ে কথা হয় শর্শদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঁঞার সঙ্গে। তিনি মহাসড়কে হাট বসার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, মহাসড়কে নয়, মহাসড়কের পাশেও হাট বসানো হয়নি। মহাসড়ক পশুহাট মুক্ত। জানতে চাইলে ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, মহাসড়কে হাট বসানোর কথা শুনছি। খবর নিয়ে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।