ঢাকা ১১:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

যমুনা অভিমুখে জবির লংমার্চে পুলিশের লাঠিপেটা, টিয়ার শেল, শিক্ষকসহ আহত অর্ধশত

  • আপডেট সময় : ০৪:৩৯:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
  • ৩৪ বার পড়া হয়েছে

ক্যাপশন: বুধবার যমুনা অভিমুখী লংমার্চে পুলিশের হামলায় অন্তত ৫০ জন আহত -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের মিছিল কাকরাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েছে।

লাঠিপেটা করে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে এবং জলকামান থেকে পানি ছিটিয়ে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার পর আন্দোলনকারীরা কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।

আহত অন্তত ২৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে মেডিকেল ফাঁড়ি পুলিশ জানিয়েছে।

৭০ শতাংশ আবাসন ভাতা, বাজেটে বৃদ্ধি এবং সব প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়ার তিন দফা দাবি নিয়ে বুধবার (১৪ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ টু যমুনা’কর্মসূচি। পদযাত্রা সংক্ষিপ্ত করতে পুলিশ তাঁতীবাজার ও গুলিস্থান, জিপিও মোড়, মৎস্য ভবনে ব্যারিকেড দিলে শিক্ষার্থীরা সেগুলো ভেঙে সামনের দিকের অগ্রসর হয়। তাদের মিছিল কাকরাইল এলাকায় পৌঁছালে সেখানে তাদের পুলিশ বাধা দেয়।
একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। পরে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। তাতে ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্দোলনকারীরা মৎস্য ভবন মোড়ের দিকে চলে যান। পরে তারা আবারও ফিরে এসে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে রাস্তার ওপর বসে পড়েন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, যতক্ষণ তাদের দাবি না মেনে নেওয়া হবে, ততক্ষণ তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ল বিভাগের সাদিয়া আক্তার নেলি, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের রীতি আক্তার, ইংরেজি বিভাগের রাতুল, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের আবদুল্লাহ আল ফারুক, দর্শন বিভাগের আসিফ আদনান।

এছাড়া পুলিশের লাঠিপেটায় তিন সংবাদকর্মীও আহত হয়েছেন। তারা হলেন বাংলা ট্রিবিউনের সুবর্ণ আসসাইফ, দৈনিক সংবাদের মেহেদী হাসান এবং ঢাকা পোস্টের মাহতাব লিমন।

আবাসন সমস্যায় থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। সোমবার তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে নিয়ে ‘জবি ঐক্য’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন। সেদিন তাদের সমাবেশে দাবি আদায়ে যমুনা ঘেরাওয়ের কথা বলেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনেকে।

পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল ইউজিসিতে যায়। কিন্তু ইউজিসি থেকে আশানুরূপ কোনো ঘোষণা না আসায় ওই রাতে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

পুলিশের বাধার পর বৃষ্টি, কাকরাইল ছাড়েননি শিক্ষার্থীরা: শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধায় পিছু হটে এখন কাকরাইলে অবস্থান করার পর সেখানে তারা বৃষ্টির কবলে পড়েন। বিকেল পৌনে ৩টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। তার আগে থেকেই কাকরাইলের প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা বৃষ্টির মধ্যেও তাদের দাবির পক্ষে টানা স্লোগান দিতে থাকেন।

আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি: ১. আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে।

২. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে।

৩. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, আমার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আমার সহকারী প্রক্টরের ওপর পুলিশ আঘাত করেছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ অমানবিক আচরণ করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত এখন থেকে যাওয়া হবে না।

রমনা জোনের ডিসি মাসুদুল আলম বলেন, পুলিশের ২০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। যমুনার সামনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

যমুনা অভিমুখে জবির লংমার্চে পুলিশের লাঠিপেটা, টিয়ার শেল, শিক্ষকসহ আহত অর্ধশত

আপডেট সময় : ০৪:৩৯:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের মিছিল কাকরাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েছে।

লাঠিপেটা করে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে এবং জলকামান থেকে পানি ছিটিয়ে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার পর আন্দোলনকারীরা কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।

আহত অন্তত ২৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে মেডিকেল ফাঁড়ি পুলিশ জানিয়েছে।

৭০ শতাংশ আবাসন ভাতা, বাজেটে বৃদ্ধি এবং সব প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়ার তিন দফা দাবি নিয়ে বুধবার (১৪ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ টু যমুনা’কর্মসূচি। পদযাত্রা সংক্ষিপ্ত করতে পুলিশ তাঁতীবাজার ও গুলিস্থান, জিপিও মোড়, মৎস্য ভবনে ব্যারিকেড দিলে শিক্ষার্থীরা সেগুলো ভেঙে সামনের দিকের অগ্রসর হয়। তাদের মিছিল কাকরাইল এলাকায় পৌঁছালে সেখানে তাদের পুলিশ বাধা দেয়।
একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। পরে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। তাতে ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্দোলনকারীরা মৎস্য ভবন মোড়ের দিকে চলে যান। পরে তারা আবারও ফিরে এসে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে রাস্তার ওপর বসে পড়েন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, যতক্ষণ তাদের দাবি না মেনে নেওয়া হবে, ততক্ষণ তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ল বিভাগের সাদিয়া আক্তার নেলি, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের রীতি আক্তার, ইংরেজি বিভাগের রাতুল, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের আবদুল্লাহ আল ফারুক, দর্শন বিভাগের আসিফ আদনান।

এছাড়া পুলিশের লাঠিপেটায় তিন সংবাদকর্মীও আহত হয়েছেন। তারা হলেন বাংলা ট্রিবিউনের সুবর্ণ আসসাইফ, দৈনিক সংবাদের মেহেদী হাসান এবং ঢাকা পোস্টের মাহতাব লিমন।

আবাসন সমস্যায় থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। সোমবার তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে নিয়ে ‘জবি ঐক্য’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন। সেদিন তাদের সমাবেশে দাবি আদায়ে যমুনা ঘেরাওয়ের কথা বলেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনেকে।

পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল ইউজিসিতে যায়। কিন্তু ইউজিসি থেকে আশানুরূপ কোনো ঘোষণা না আসায় ওই রাতে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

পুলিশের বাধার পর বৃষ্টি, কাকরাইল ছাড়েননি শিক্ষার্থীরা: শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধায় পিছু হটে এখন কাকরাইলে অবস্থান করার পর সেখানে তারা বৃষ্টির কবলে পড়েন। বিকেল পৌনে ৩টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। তার আগে থেকেই কাকরাইলের প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা বৃষ্টির মধ্যেও তাদের দাবির পক্ষে টানা স্লোগান দিতে থাকেন।

আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি: ১. আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে।

২. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে।

৩. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, আমার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আমার সহকারী প্রক্টরের ওপর পুলিশ আঘাত করেছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ অমানবিক আচরণ করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত এখন থেকে যাওয়া হবে না।

রমনা জোনের ডিসি মাসুদুল আলম বলেন, পুলিশের ২০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। যমুনার সামনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।