নিজস্ব প্রতিবেদক: যত প্রভাবশালীই হোক কোনো চাঁদাবাজকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার (২৮ জুলাই) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা জানান। চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়ে কী হচ্ছে আপনারা বড় করে রিপোর্ট দিচ্ছেন না? গুলশানে চাঁদাবাজদের আমরা ছাড় দেইনি। গুলশানে চাঁদাবাজদের ধরছি না? কোনো চাঁদাবাজকে ছাড় দেওয়া হবে না- সে যত বড় লোকই হোক, যত প্রভাবশালী হোক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। কেউ কেউ সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি তো বললাম কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যত পরিচয় দেওয়া হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
কারওয়ান বাজারে সেনাবাহিনীর অভিযান: রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে সেনাবাহিনী। সোমবার (২৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে এ অভিযান শুরু হয়।
সেনাবাহিনীর সদস্যরা কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেট, রেললাইনের দুই পাশের বস্তি ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়েছেন। তেজগাঁও সেনাক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুন্নুন নাহিদ জানান, কারওয়ান বাজারে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজবিরোধী অভিযান চলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ছাদে তল্লাশি করা হয়েছে। কিছু দোকানেও তল্লাশি করা হয়েছে। এদিকে তেজগাঁও রেললাইনের দুই পাশের বস্তি ঘরেও তল্লাশি করেন সেনাসদস্যরা। অভিযানে অংশ নেওয়া দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তারা অভিযান পরিচালনা করেছেন।
রাজশাহীতে ১২৩ ‘চাঁদাবাজের’ তালিকা নিয়ে ধূম্রজাল: রাজশাহী মহানগর বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের পরিচয়ধারী ১২৩ জন ‘চাঁদাবাজের’ নাম সম্বলিত একটি তালিকা রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। তবে এই তালিকা কে বা কারা করেছেন তা জানে না পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে এটির সত্যতা যাচাইয়ে কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
বিএনপি, ছাত্রদল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, ক্যাডার, সমর্থক থেকে শুরু করে ৪৪ জনের নাম-পরিচয় আছে ওই তালিকায়। একইভাবে পতিত আওয়ামী লীগের ২৫ জন ও জামায়াতের ছয়জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। বাকিগুলোর নাম-ঠিকানা দেওয়া আছে কিন্তু কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাদের ‘সুবিধাবাদী’ বলা হয়েছে। তবে এই তালিকা পুলিশের নাকি সরকারের অন্য কোনো সংস্থার তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফলে তালিকাটি নিয়ে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল।
তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. গাজিউর রহমান বলেন, ‘আমরা তালিকাটা দেখেছি। কে এই তালিকা করেছে সেটি নিশ্চিত নই। এতে কারও সই নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘পুলিশ ছাড়াও সরকারের অন্যান্য সংস্থা তালিকা করে। তবে সেই তালিকা দেখতে পাওয়ার কথা নয়। আমরা তালিকাটি দেখছি। এটি আমাদের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে ফেরিফিকেশন করবো।’
এদিকে ছড়িয়ে পড়া তালিকাটি ‘ভুয়া’ ও ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেছেন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আসল চাঁদাবাজদের তালিকা করতে হবে। আমার কাছে সাদা চোখে দেখে মনে হয়েছে, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে। এখানে লুকোচুরির কোনো বিষয় আছে। তবে সব যে নেই তা বলতে পারবো না। তালিকায় দুই চারটা আসল নাম থাকতেই পারে। তবে প্রশাসন কী করছে? প্রশাসন এত নড়বড়ে হয়ে গেছে যে, সেটা এই তালিকা দেখলেই বোঝা যায়।’
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা বলেন, ‘তালিকাটি সঠিক নয়। অনেক জনের নাম দিয়েছে। আমার জানামতে, তারা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত না। গণহারে চাঁদাবাজ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে সবাইকে।’ রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘আমি তালিকাটি দেখিনি। এটি সঠিক কি-না সেটিও বলতে পারবো না। যাদের নাম তালিকায় আছে, তাদের সংগঠন থেকে সম্পূর্ণ বয়কট করা হয়েছে। নেতাদেরও বলে দেওয়া হয়েছে, কারও কাছে যেন তারা ঘেঁষতে না পারেন।’ তিনি আরো বলেন, জামায়াতের সঙ্গে কোনো চাঁদাবাজের সম্পর্ক নেই। এই দলে কোনো চাঁদাবাজ নেই। থাকতেও পারবে না।