ঢাকা ১২:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

যততত্র ইফতারির পসরা, খাদ্য নিরাপত্তা কোথায়?

  • আপডেট সময় : ০৭:৫৭:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
  • ৬৯ বার পড়া হয়েছে

রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ ইফতারির দোকানই খোলামেলা স্থানেই বসানো হয়। অনেকে বিভিন্ন কাপড় বা পিপি দিয়ে অস্থায়ীভাবে ঘিরে রাখে। ছবিটি মোহাম্মদপুর বাবর রোড থেকে তুলেছেন এস কে সানা

বিশেষ সংবাদদাতা: রমজান মাসজুড়ে প্রায় প্রতি বছরই একটি পরিচিত দৃশ্য সবার সামনে আসে; তা হলো-রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব শহর ও মফস্বল এলাকার বাজারে যততত্র ইফতারের দোকান।

এসব দোকানে বাহারি ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। মুখরোচক নানা পদ থাকে অস্থায়ী দোকানগুলোতে। স্থায়ী হোটেলগুলোতেও থাকে বাড়তি আয়োজন। তবে তারাও হোটেলের সামনে খোলা স্থানে সাজিয়ে বসেন মুখরোচক সব ইফতার।

রোজাদারদের কথা ভেবে অনেক দোকানে পরিবেশ নিয়ে বাড়তি সতর্কতাও দেখা যায়। এই মাসের জন্য এটি স্বাভাবিক। তবে সচেতনভাবে ইফতার তৈরি ও বিক্রির বিষয়টি অধিকাংশ ব্যবসায়ীর চিন্তা-ভাবনায় যে থাকেনা, ইফতারের দোকানগুলোর সংখ্যা ও স্বাস্থ্যবিধি পর্যালোচনা করলে তা অনায়াসেই প্রতীয়মান হবে।
বিশেষ করে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার বেশিরভাগ দোকানেই একেবারেই খোলামেলাভাবে ইফতার বিক্রি করা হয়।

ঢাকার অনেক এলাকায় একই চিত্র দেখা গেছে। এরমধ্যে সুনির্দিষ্ট দুটি এলাকা ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, ইফতার বাজারের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা-ভাবনা সাধারণ মানুষেরও না; সরকারের সংশ্লিষ্টদেরও না।

মোহাম্মেদপুর বেড়িবাঁধ ও যাত্রাবাড়ীতে ইফতার বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানই খোলামেলা। এতে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ক্রেতাদের মনে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জ মোড় থেকে শহীদ ফারুক সড়কের পুরোটাই ইফতারি বিক্রেতাদের দখলে। অপরদিকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, পার্ক মোড় ও জুরাইন রোডেও একটার সঙ্গে লাগোয়া আরেকটা ইফতারির দোকান। অলিগলিতেও একই অবস্থা। দুপুর ২টার পর থেকে ইফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠে পুরো যাত্রাবাড়ী এলাকা। ভ্রাম্যমাণ ছোট ছোট দোকানগুলোতে রয়েছে নিয়মিত আইটেম ছোলা, মুড়ি, আলু চপ, পেঁয়াজু ও বেগুনি। বড় হোটেলগুলোতে নিয়মিত আইটেম ছাড়াও রয়েছে খাসির লেগ রোস্ট, আস্ত মুরগির লেগ রোস্ট, কোয়েলের রোস্ট, মোরগ মুসাল্লাম, বটি কাবাব, টিকা কাবাব, জিলাপি ও হালিম। এর বাইরেও রয়েছে তন্দুরি চিকেন ও নানা রকম শরবত। যদিও রাস্তার পশের দোকানগুলোর পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ ক্রেতা। রাজধানীর প্রবেশদ্বার হওয়ায় যাত্রাবাড়ী এলাকায় এমনিতেই যানবাহনের চাপ থাকে। এতে ধুলাবালির আধিক্য দেখা যায়। কিন্তু সে তুলনায় ইফতারির দোকানগুলোতে তেমন সতর্কতা দেখা যায়নি।
প্রায় অভিন্ন চিত্র দেখা গেছে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার প্রায় সব দোকানসহ মোহাম্মাদীয়া হাউজিং লিমিটেড, সোসাইটি, ঢাকা উদ্যান, শেখেরটেক, মনসুরাবাদ, আদাবর থেকে শুরু করে এমনকি তাজমহল ও সলিমুল্লাহ রোড, বাবর রোড, বিজলী মহল্লা, জহুরি মহল্লা ও শ্যামলীতেও।

বাবর রোডের ক্রেতা ব্যবসায়ী মোশাররফ জানান, প্রায় পঁচিশ বছর ধরে এই এলাকায় আছেন। ভোজনপ্রিয় হওয়ায় তিনি বাইরে থেকে ইফতার কিনতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। তাজমহল ও সলিমুল্লাহ রোড এলাকায় এলাকায় পুরান ঢাকার মতো ঐতিহ্যবাহী সব আইটেম পাওয়া না গেলেও মোটামুটি মানের পদ পাওয়া যায়। তাই প্রতি রমজানেই এখান থেকে ইফতার কেনেন। তবে তিনি মনে করেন, সেখানে অধিকাংশ ইফতারির দোকানই ধুলাবালিতে একাকার। কেউ কেউ এ বিষয়ে কিছুটা সচেতন, তবে বেশিরভাগ দোকানিই উদাসীন।

এদিকে জুরাইন রোডের এক ক্রেতা সাকিনা বেগম বলেন, ‘মাঝে মাঝে রমজানে যাত্রাবাড়িতে ইফতার কিনতে আসি।’ তবে ধুলাবালিপ্রবণ এলাকা হওয়ায় খাবারগুলো যতটা সম্ভব ঢেকে রাখতে বিক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শহীদ ফারুক রোডের আল ইসলাম হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের বিক্রেতা হাবিব বলেন, ‘এলাকাটিতে ধুলাবালি একটু বেশি। তাই আমরা সেভাবেই ঢেকে রাখার চেষ্টা করি। তারপরও ক্রেতাদের চাপে অনেক সময় ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (অভিযোগ বিভাগ) মো. মাসুম আরেফিন বলেছেন, ভোক্তাদের নিরাপদ খাবার নিশ্চিতের বিষয়ে আমরা সব সময়ই বদ্ধপরিকর। এবারের রমজানের শুরুতেই মোহাম্মদপুর বসিলা এলাকা ও যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ইফতারির খোলাবাজারে আমাদের ভ্রাম্যমাণ টিম কাজ করছে। পুরো রমজানে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সচেতন মহল বলছে, শুধু রমজানেই নয়, ঢাকার স্ট্রিটফুডের স্বাস্থ্যসম্মত মান নিশ্চিতে দোকানিদের সুনির্দিষ্ট আইনের আওতায় আনা জরুরি। আর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি শুধু নামসর্বস্ব ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল মহলের আরো জোরালো উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

যততত্র ইফতারির পসরা, খাদ্য নিরাপত্তা কোথায়?

আপডেট সময় : ০৭:৫৭:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

বিশেষ সংবাদদাতা: রমজান মাসজুড়ে প্রায় প্রতি বছরই একটি পরিচিত দৃশ্য সবার সামনে আসে; তা হলো-রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব শহর ও মফস্বল এলাকার বাজারে যততত্র ইফতারের দোকান।

এসব দোকানে বাহারি ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। মুখরোচক নানা পদ থাকে অস্থায়ী দোকানগুলোতে। স্থায়ী হোটেলগুলোতেও থাকে বাড়তি আয়োজন। তবে তারাও হোটেলের সামনে খোলা স্থানে সাজিয়ে বসেন মুখরোচক সব ইফতার।

রোজাদারদের কথা ভেবে অনেক দোকানে পরিবেশ নিয়ে বাড়তি সতর্কতাও দেখা যায়। এই মাসের জন্য এটি স্বাভাবিক। তবে সচেতনভাবে ইফতার তৈরি ও বিক্রির বিষয়টি অধিকাংশ ব্যবসায়ীর চিন্তা-ভাবনায় যে থাকেনা, ইফতারের দোকানগুলোর সংখ্যা ও স্বাস্থ্যবিধি পর্যালোচনা করলে তা অনায়াসেই প্রতীয়মান হবে।
বিশেষ করে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার বেশিরভাগ দোকানেই একেবারেই খোলামেলাভাবে ইফতার বিক্রি করা হয়।

ঢাকার অনেক এলাকায় একই চিত্র দেখা গেছে। এরমধ্যে সুনির্দিষ্ট দুটি এলাকা ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, ইফতার বাজারের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা-ভাবনা সাধারণ মানুষেরও না; সরকারের সংশ্লিষ্টদেরও না।

মোহাম্মেদপুর বেড়িবাঁধ ও যাত্রাবাড়ীতে ইফতার বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানই খোলামেলা। এতে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ক্রেতাদের মনে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জ মোড় থেকে শহীদ ফারুক সড়কের পুরোটাই ইফতারি বিক্রেতাদের দখলে। অপরদিকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, পার্ক মোড় ও জুরাইন রোডেও একটার সঙ্গে লাগোয়া আরেকটা ইফতারির দোকান। অলিগলিতেও একই অবস্থা। দুপুর ২টার পর থেকে ইফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠে পুরো যাত্রাবাড়ী এলাকা। ভ্রাম্যমাণ ছোট ছোট দোকানগুলোতে রয়েছে নিয়মিত আইটেম ছোলা, মুড়ি, আলু চপ, পেঁয়াজু ও বেগুনি। বড় হোটেলগুলোতে নিয়মিত আইটেম ছাড়াও রয়েছে খাসির লেগ রোস্ট, আস্ত মুরগির লেগ রোস্ট, কোয়েলের রোস্ট, মোরগ মুসাল্লাম, বটি কাবাব, টিকা কাবাব, জিলাপি ও হালিম। এর বাইরেও রয়েছে তন্দুরি চিকেন ও নানা রকম শরবত। যদিও রাস্তার পশের দোকানগুলোর পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ ক্রেতা। রাজধানীর প্রবেশদ্বার হওয়ায় যাত্রাবাড়ী এলাকায় এমনিতেই যানবাহনের চাপ থাকে। এতে ধুলাবালির আধিক্য দেখা যায়। কিন্তু সে তুলনায় ইফতারির দোকানগুলোতে তেমন সতর্কতা দেখা যায়নি।
প্রায় অভিন্ন চিত্র দেখা গেছে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার প্রায় সব দোকানসহ মোহাম্মাদীয়া হাউজিং লিমিটেড, সোসাইটি, ঢাকা উদ্যান, শেখেরটেক, মনসুরাবাদ, আদাবর থেকে শুরু করে এমনকি তাজমহল ও সলিমুল্লাহ রোড, বাবর রোড, বিজলী মহল্লা, জহুরি মহল্লা ও শ্যামলীতেও।

বাবর রোডের ক্রেতা ব্যবসায়ী মোশাররফ জানান, প্রায় পঁচিশ বছর ধরে এই এলাকায় আছেন। ভোজনপ্রিয় হওয়ায় তিনি বাইরে থেকে ইফতার কিনতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। তাজমহল ও সলিমুল্লাহ রোড এলাকায় এলাকায় পুরান ঢাকার মতো ঐতিহ্যবাহী সব আইটেম পাওয়া না গেলেও মোটামুটি মানের পদ পাওয়া যায়। তাই প্রতি রমজানেই এখান থেকে ইফতার কেনেন। তবে তিনি মনে করেন, সেখানে অধিকাংশ ইফতারির দোকানই ধুলাবালিতে একাকার। কেউ কেউ এ বিষয়ে কিছুটা সচেতন, তবে বেশিরভাগ দোকানিই উদাসীন।

এদিকে জুরাইন রোডের এক ক্রেতা সাকিনা বেগম বলেন, ‘মাঝে মাঝে রমজানে যাত্রাবাড়িতে ইফতার কিনতে আসি।’ তবে ধুলাবালিপ্রবণ এলাকা হওয়ায় খাবারগুলো যতটা সম্ভব ঢেকে রাখতে বিক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শহীদ ফারুক রোডের আল ইসলাম হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের বিক্রেতা হাবিব বলেন, ‘এলাকাটিতে ধুলাবালি একটু বেশি। তাই আমরা সেভাবেই ঢেকে রাখার চেষ্টা করি। তারপরও ক্রেতাদের চাপে অনেক সময় ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (অভিযোগ বিভাগ) মো. মাসুম আরেফিন বলেছেন, ভোক্তাদের নিরাপদ খাবার নিশ্চিতের বিষয়ে আমরা সব সময়ই বদ্ধপরিকর। এবারের রমজানের শুরুতেই মোহাম্মদপুর বসিলা এলাকা ও যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ইফতারির খোলাবাজারে আমাদের ভ্রাম্যমাণ টিম কাজ করছে। পুরো রমজানে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সচেতন মহল বলছে, শুধু রমজানেই নয়, ঢাকার স্ট্রিটফুডের স্বাস্থ্যসম্মত মান নিশ্চিতে দোকানিদের সুনির্দিষ্ট আইনের আওতায় আনা জরুরি। আর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি শুধু নামসর্বস্ব ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল মহলের আরো জোরালো উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।