ঢাকা ০৯:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

যক্ষ্মা কীভাবে ছড়ায়? প্রতিরোধে করণীয়

  • আপডেট সময় : ১১:১৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ ২০২২
  • ৮৬ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি হিসেবে এবার বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস ২০২২ এর স্লোগান ‘বিনিয়োগ করি যক্ষ্মা নির্মূলে, জীবন বাঁচাই সবাই মিলে’। ১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ ডা. রবার্ট কক মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস যক্ষ্মা রোগের এই জীবাণু আবিষ্কার করেন। আবিষ্কারের ১০০ বছর পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ দিনটিকে স্মরণীয় করা ও যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ঢাকার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস ২০২২ উপলক্ষে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানান, সচেতন না হলে তরুণদের মাঝেও হতে পারে যক্ষ্মা। তবে পরিবারে কারো যক্ষ্মার লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসার আওতায় আসতে হবে ও সচেতন থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যক্ষ্মা সচেতনতায় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারণা অব্যাহত আছে, সরকার থেকে অনেক প্রচারণা চালানো হয়। এতে করে মানুষের মাঝে যক্ষ্মা নিয়ে ভীতি যেমন কমে যাচ্ছে তেমনি সাধারণ মানুষের মাঝে তৈরি হচ্ছে সচেতনতাবোধ। যক্ষ্মা হলে গ্রামের প্রান্তিক মানুষরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছে কি না, গ্রাম অঞ্চলে চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে কি না জানতে চাইলে ডা. আয়শা আক্তার বলেন, প্রান্তিক মানুষদের জন্য যক্ষ্মার চিকিৎসায় বক্ষবিধি ক্লিনিক আছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে। সেখান থেকে সাধারণ মানুষ যক্ষ্মার চিকিৎসা নিতে পারেন। বিনামূল্যে কফ পরীক্ষা, রোগ নির্ণয়সহ যক্ষ্মার চিকিৎসা করা হয় ও ওষুধ দেওয়া হয়।
যক্ষ্মা প্রতিরোধে কী করণীয়?
যক্ষ্মা শব্দটি এসেছে ‘রাজক্ষয়’ থেকে। ক্ষয় বলার কারণ এতে রোগীরা খুব শীর্ণ (রোগা) হয়ে পড়েন। যক্ষ্মা প্রায় যে কোনো অঙ্গে হতে পারে (কেবল হৃৎপি-, অগ্ন্যাশয়, ঐচ্ছিক পেশি ও থাইরয়েড গ্রন্থি ছাড়া)। তব যক্ষ্মা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ফুসফুসে। যক্ষ্মা প্রতিরোধে জন্মের পরপরই প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করা। যেখানে সেখানে থুথু না ফেলা। রোগীর কফ থুথু নির্দিষ্ট পাত্রে ফেলে তা মাটিতে পুঁতে ফেলা, যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসা কতে হবে।
যক্ষ্মা হচ্ছে একটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি। যেটা মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে। আর এই জীবাণু যে কোনো অঙ্গেই সংক্রমিত হতে পারে। ২০১৮ সালে সারা বিশ্বে এই রোগে আক্রান্ত হয় এক কোটি মানুষ ও মারা যায় ১৫ লাখ মানুষ৷
যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ
টিউবারকুলোসিস (টিবি) বা যক্ষ্মা রোগটি মূলত মাইকোব্যাকটেরিয়াল, টিউবারকিউলোসিসের মাধ্যমে ছড়ায়। এটি ফুসফুসের সাহায্যে রক্তে প্রবেশ করে। এরপর দেহের সব কোষে ছড়িয়ে পড়ে। মস্তিষ্কের উপরের ঝিল্লি, অন্ত্র, মূত্র, প্রজনন অঙ্গ, জয়েন্টের হাড়ের, লসিকা গ্রন্থিসহ বিভিন্ন কোষে প্রভাব ফেলে এটি। এই ব্যাকটেরিয়া দূষিত পানি ও মাটি পাওয়া যায়। টিউবারকুলোসিস একটি বড় সমস্যা। ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, মাদকাসক্তি, বার্ধক্য, অপুষ্টির কারণে এই রোগের ঝুঁকি আরও বাড়ে। এছাড়া যাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম বা দীর্ঘমেয়াদি স্টেরয়েড বা ইমিউনোথেরাপি ওষুধ খাচ্ছেন এমন ব্যক্তিদেরও টিবি রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। যক্ষ্মা ফুসফুসে হয়। আবার এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যারা দেখাশোনা করেন যেমন- পরিবারের সদস্য, চিকিৎসক, নার্স বা সেবা-শুশ্রূষাকারীদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। হাঁচি, কাশি ও কফের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তাঘাটে হাঁচি-কাশি হলে মুখে রুমাল চাপা দেওয়া উচিত। যেখানে সেখানে থুতু ফেলবেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এই রোগের অন্যতম কারণ।
যক্ষ্মা হলে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়, যা অনেকেই সাধারণ ভেবে অবহেলা করেন। পরে কিন্তু এই সমস্যাই বাড়তে শুরু করে। তখন রোগীর অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। তাই এই রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। বিশেষজ্ঞদের কাছে জেনে নিন কোন
কোন উপসর্গ দেখা দিলে সচেতন হয়ে উঠবেন-

  • রাতে ঘেমে গেলে সাবধান হোন। অনেকেই আবহাওয়ার কারণে গরম লাগছে ভেবে এড়িয়ে যান। তবে নিয়মিত রাতে ঘুমনোর সময় ঘাম হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • ক্ষুধামন্দাও কিন্তু টিবি রোগের লক্ষণ। নিয়মিত এ সমস্যায় ভুগলে সাবধান হতে হবে।
  • এক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে বুকে ব্যথাও হতে পারে। কখনো এ সমস্যাটি উপেক্ষা করবেন না। এর থেকে কিন্তু হার্ট অ্যাটাক পর্যন্তও হতে পারে।
  • বিশেষজ্ঞদের মতে, যক্ষ্মার অন্যতম লক্ষণ হলো কাশি, যা অনেকেই সাধারণ কাশি ভেবে ভুল করেন। অনবরত কাশি হলেও কেউই সেভাবে গুরুত্ব দেয় না। ধরে নেওয়া হয়, ঠান্ডা লেগেছে। তবে অনবরত কাশির সঙ্গে হালকা কিংবা গাড় রক্ত বের হওয়াও কিন্তু টিবির অন্যতম উপসর্গ।
  • এমনকি যক্ষ্মা রোগীর প্রস্রাবের সঙ্গেও রক্ত বের হতে পারে। যক্ষ্মা ধীরে ধীরে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ওপরও প্রভাব ফেলতে থাকে। যেমন পিঠে ও কোমরে ব্যথা।
  • ফুসফুসে যক্ষ্মা হলে হালকা জ্বর ও কাশি হতে পারে। কাশির সঙ্গে রক্তও বের হতে পারে। মুখ না ঢেকে হাঁচি-কাশি দিলে যক্ষ্মার ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। বদ্ধ পরিবেশে মাইকোব্যাকটেরিয়াম অনেকক্ষণ বেঁচে থাকে।
  • বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট হিসেবে ৫-৬ মাস জ্বর থাকার মূল কারণ এই যক্ষ্মা। সাধারণত তিন সপ্তাহের বেশি কাশি, জ্বর, কাশির সঙ্গে কফ ও মাঝে মধ্যে রক্ত বের হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি দেখা দেয়।
  • যক্ষ্মা ফুসফুস থেকে অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পরতে পারে। বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের ও শিশুদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে। তখন একে অ-শ্বাসতন্ত্রীয় যক্ষ্মা’ বলা হয়।
    যেমন প্লুরাতে প্লুরিসি, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে মেনিনজাইটিস, লসিকাতন্ত্রে স্ক্রফুলা, প্রজননতন্ত্রে প্রজনন তন্ত্রীয় যক্ষ্মা, পরিপাকতন্ত্রে পরিপাক তন্ত্রীয় যক্ষ্মা ও অস্থিকলায় পটস ডিজিস।
    বিশেষ ধরনের ছড়িয়ে যাওয়া যক্ষ্মাকে বলা হয় মিলিয়ারী যক্ষ্মা। অনেক ক্ষেত্রে ফুসফুসীয় ও অ-ফুসফুসীয় যক্ষ্মা একসঙ্গে বিদ্যমান থাকতে পারে। পৃথিবীর যক্ষ্মা রোগীদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি (প্রায় অর্ধেক) ভারতীয় উপমহাদেশবাসী। জীবাণু শরীরে ঢুকলেই সবার যক্ষ্মা হয় না। যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে যক্ষ্মা বেশি হয়। বাতাসের মাধ্যমেও যক্ষ্মা রোগের জীবাণু ছড়ায়। যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে রোগের জীবাণু বাতাসে গিয়ে মিশে রোগের সংক্রমণ ঘটায়।
ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

যক্ষ্মা কীভাবে ছড়ায়? প্রতিরোধে করণীয়

আপডেট সময় : ১১:১৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ ২০২২

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি হিসেবে এবার বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস ২০২২ এর স্লোগান ‘বিনিয়োগ করি যক্ষ্মা নির্মূলে, জীবন বাঁচাই সবাই মিলে’। ১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ ডা. রবার্ট কক মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস যক্ষ্মা রোগের এই জীবাণু আবিষ্কার করেন। আবিষ্কারের ১০০ বছর পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ দিনটিকে স্মরণীয় করা ও যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ঢাকার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস ২০২২ উপলক্ষে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানান, সচেতন না হলে তরুণদের মাঝেও হতে পারে যক্ষ্মা। তবে পরিবারে কারো যক্ষ্মার লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসার আওতায় আসতে হবে ও সচেতন থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যক্ষ্মা সচেতনতায় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারণা অব্যাহত আছে, সরকার থেকে অনেক প্রচারণা চালানো হয়। এতে করে মানুষের মাঝে যক্ষ্মা নিয়ে ভীতি যেমন কমে যাচ্ছে তেমনি সাধারণ মানুষের মাঝে তৈরি হচ্ছে সচেতনতাবোধ। যক্ষ্মা হলে গ্রামের প্রান্তিক মানুষরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছে কি না, গ্রাম অঞ্চলে চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে কি না জানতে চাইলে ডা. আয়শা আক্তার বলেন, প্রান্তিক মানুষদের জন্য যক্ষ্মার চিকিৎসায় বক্ষবিধি ক্লিনিক আছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে। সেখান থেকে সাধারণ মানুষ যক্ষ্মার চিকিৎসা নিতে পারেন। বিনামূল্যে কফ পরীক্ষা, রোগ নির্ণয়সহ যক্ষ্মার চিকিৎসা করা হয় ও ওষুধ দেওয়া হয়।
যক্ষ্মা প্রতিরোধে কী করণীয়?
যক্ষ্মা শব্দটি এসেছে ‘রাজক্ষয়’ থেকে। ক্ষয় বলার কারণ এতে রোগীরা খুব শীর্ণ (রোগা) হয়ে পড়েন। যক্ষ্মা প্রায় যে কোনো অঙ্গে হতে পারে (কেবল হৃৎপি-, অগ্ন্যাশয়, ঐচ্ছিক পেশি ও থাইরয়েড গ্রন্থি ছাড়া)। তব যক্ষ্মা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ফুসফুসে। যক্ষ্মা প্রতিরোধে জন্মের পরপরই প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করা। যেখানে সেখানে থুথু না ফেলা। রোগীর কফ থুথু নির্দিষ্ট পাত্রে ফেলে তা মাটিতে পুঁতে ফেলা, যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসা কতে হবে।
যক্ষ্মা হচ্ছে একটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি। যেটা মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে। আর এই জীবাণু যে কোনো অঙ্গেই সংক্রমিত হতে পারে। ২০১৮ সালে সারা বিশ্বে এই রোগে আক্রান্ত হয় এক কোটি মানুষ ও মারা যায় ১৫ লাখ মানুষ৷
যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ
টিউবারকুলোসিস (টিবি) বা যক্ষ্মা রোগটি মূলত মাইকোব্যাকটেরিয়াল, টিউবারকিউলোসিসের মাধ্যমে ছড়ায়। এটি ফুসফুসের সাহায্যে রক্তে প্রবেশ করে। এরপর দেহের সব কোষে ছড়িয়ে পড়ে। মস্তিষ্কের উপরের ঝিল্লি, অন্ত্র, মূত্র, প্রজনন অঙ্গ, জয়েন্টের হাড়ের, লসিকা গ্রন্থিসহ বিভিন্ন কোষে প্রভাব ফেলে এটি। এই ব্যাকটেরিয়া দূষিত পানি ও মাটি পাওয়া যায়। টিউবারকুলোসিস একটি বড় সমস্যা। ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, মাদকাসক্তি, বার্ধক্য, অপুষ্টির কারণে এই রোগের ঝুঁকি আরও বাড়ে। এছাড়া যাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম বা দীর্ঘমেয়াদি স্টেরয়েড বা ইমিউনোথেরাপি ওষুধ খাচ্ছেন এমন ব্যক্তিদেরও টিবি রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। যক্ষ্মা ফুসফুসে হয়। আবার এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যারা দেখাশোনা করেন যেমন- পরিবারের সদস্য, চিকিৎসক, নার্স বা সেবা-শুশ্রূষাকারীদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। হাঁচি, কাশি ও কফের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তাঘাটে হাঁচি-কাশি হলে মুখে রুমাল চাপা দেওয়া উচিত। যেখানে সেখানে থুতু ফেলবেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এই রোগের অন্যতম কারণ।
যক্ষ্মা হলে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়, যা অনেকেই সাধারণ ভেবে অবহেলা করেন। পরে কিন্তু এই সমস্যাই বাড়তে শুরু করে। তখন রোগীর অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। তাই এই রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। বিশেষজ্ঞদের কাছে জেনে নিন কোন
কোন উপসর্গ দেখা দিলে সচেতন হয়ে উঠবেন-

  • রাতে ঘেমে গেলে সাবধান হোন। অনেকেই আবহাওয়ার কারণে গরম লাগছে ভেবে এড়িয়ে যান। তবে নিয়মিত রাতে ঘুমনোর সময় ঘাম হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • ক্ষুধামন্দাও কিন্তু টিবি রোগের লক্ষণ। নিয়মিত এ সমস্যায় ভুগলে সাবধান হতে হবে।
  • এক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে বুকে ব্যথাও হতে পারে। কখনো এ সমস্যাটি উপেক্ষা করবেন না। এর থেকে কিন্তু হার্ট অ্যাটাক পর্যন্তও হতে পারে।
  • বিশেষজ্ঞদের মতে, যক্ষ্মার অন্যতম লক্ষণ হলো কাশি, যা অনেকেই সাধারণ কাশি ভেবে ভুল করেন। অনবরত কাশি হলেও কেউই সেভাবে গুরুত্ব দেয় না। ধরে নেওয়া হয়, ঠান্ডা লেগেছে। তবে অনবরত কাশির সঙ্গে হালকা কিংবা গাড় রক্ত বের হওয়াও কিন্তু টিবির অন্যতম উপসর্গ।
  • এমনকি যক্ষ্মা রোগীর প্রস্রাবের সঙ্গেও রক্ত বের হতে পারে। যক্ষ্মা ধীরে ধীরে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ওপরও প্রভাব ফেলতে থাকে। যেমন পিঠে ও কোমরে ব্যথা।
  • ফুসফুসে যক্ষ্মা হলে হালকা জ্বর ও কাশি হতে পারে। কাশির সঙ্গে রক্তও বের হতে পারে। মুখ না ঢেকে হাঁচি-কাশি দিলে যক্ষ্মার ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। বদ্ধ পরিবেশে মাইকোব্যাকটেরিয়াম অনেকক্ষণ বেঁচে থাকে।
  • বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট হিসেবে ৫-৬ মাস জ্বর থাকার মূল কারণ এই যক্ষ্মা। সাধারণত তিন সপ্তাহের বেশি কাশি, জ্বর, কাশির সঙ্গে কফ ও মাঝে মধ্যে রক্ত বের হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি দেখা দেয়।
  • যক্ষ্মা ফুসফুস থেকে অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পরতে পারে। বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের ও শিশুদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে। তখন একে অ-শ্বাসতন্ত্রীয় যক্ষ্মা’ বলা হয়।
    যেমন প্লুরাতে প্লুরিসি, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে মেনিনজাইটিস, লসিকাতন্ত্রে স্ক্রফুলা, প্রজননতন্ত্রে প্রজনন তন্ত্রীয় যক্ষ্মা, পরিপাকতন্ত্রে পরিপাক তন্ত্রীয় যক্ষ্মা ও অস্থিকলায় পটস ডিজিস।
    বিশেষ ধরনের ছড়িয়ে যাওয়া যক্ষ্মাকে বলা হয় মিলিয়ারী যক্ষ্মা। অনেক ক্ষেত্রে ফুসফুসীয় ও অ-ফুসফুসীয় যক্ষ্মা একসঙ্গে বিদ্যমান থাকতে পারে। পৃথিবীর যক্ষ্মা রোগীদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি (প্রায় অর্ধেক) ভারতীয় উপমহাদেশবাসী। জীবাণু শরীরে ঢুকলেই সবার যক্ষ্মা হয় না। যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে যক্ষ্মা বেশি হয়। বাতাসের মাধ্যমেও যক্ষ্মা রোগের জীবাণু ছড়ায়। যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে রোগের জীবাণু বাতাসে গিয়ে মিশে রোগের সংক্রমণ ঘটায়।