ঢাকা ০৭:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫

ম্যাপিং পদ্ধতিতে এইচএসসির ফল প্রকাশ কমেছে পাসের হার, বেড়েছে জিপিএ-৫

  • আপডেট সময় : ০৮:১৭:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
  • ১০১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : এবার পরীক্ষার্থীদের একাংশের চাপের মুখে মাঝপথে বাতিল করা হয়েছিল এইচএসসিতে স্থগিত হয়ে পড়া কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা। এ অবস্থায় ইতিমধ্যে যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ফলাফল তৈরি হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে।
এই প্রক্রিয়ায় প্রকাশিত ফলাফলে অনেকের ধারণা ও আশা ছিল পাসের হার অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। উল্টো নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার গতবারের চেয়ে কমে গেছে। তবে ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে গড় ফলাফলেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। অর্থাৎ পাসের হার কমেছে। কিন্তু জিপিএ-৫ বেড়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ভিন্ন ব্যবস্থায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যান্য সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করতেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য জানানো হতো। কিন্তু এবার বেলা ১১টায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে প্রকাশিত হয়। তবে সাংবাদিকেরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গেলে বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের কাছে ফলাফলের তথ্য তুলে ধরেন। তপন কুমার সরকার সব কটি বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটিরও সভাপতি।
এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১১ লাখ ৩১ হাজার ১১৮ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৪ জন। গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬। গতবার গড় পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ৯। এবার ৯টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন, যা গতবার ছিল ৭৮ হাজার ৫২১ জন।
পাসের হার কমে যাওয়া ও জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ জানালেন অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। বলেন, যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলোর ফলাফল উচ্চমাধ্যমিকে গড় পাসের হারে বড় রকমের প্রভাব পড়ে না। উচ্চমাধ্যমিক পাসের হারটি মূলত নির্ভর করে ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ওপর। কিন্তু এবার এই দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল। ফলে গড় পাসের হারটি স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়েছে। জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রভাব হিসেবে বিষয় ম্যাপিং কাজ করেছে বলে মনে করেন তপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে যে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন, তিনি হয়তো উচ্চমাধ্যমিকে মানবিকে পড়েছেন। ফলে এসএসসির বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নম্বর এইচএসসিতে এসে মানবিকের বিষয়গুলোর বিপরীতে যোগ হয়েছে। এভাবে বিভাগ পরিবর্তনের কারণে জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
যেভাবে বিষয় ম্যাপিং হয়েছে: বিষয় ম্যাপিং নতুন নয়। এর আগে করোনাকালে পরীক্ষা নিতে না পারায় কিংবা কম বিষয়ে পরীক্ষা নিতে গিয়ে এই বিষয় ম্যাপিং করে ফলাফল প্রকাশ করা হতো। এ জন্য কোনো পরীক্ষার কোন বিষয়ের নম্বর যুক্ত হবে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালাও আছে। এবার যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ফলাফল প্রকাশ করা হয় এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে। এ প্রক্রিয়ায় একজন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে একটি বিষয়ে যত নম্বর পেয়েছিলেন, এইচএসসিতে সেই বিষয় থাকলে তাতে এসএসসিতে প্রাপ্ত পুরো নম্বর বিবেচনায় নেওয়া হবে। আর এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বিষয়ে ভিন্নতা থাকলে বিষয় ম্যাপিংয়ের নীতিমালা অনুযায়ী নম্বর বিবেচনা করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
যেমন এসএসসিতে যে পরীক্ষার্থী বিজ্ঞানে পড়েছিলেন, এইচএসসিতে হয়তো তিনি ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিক শাখায় পড়েছেন। সে ক্ষেত্রে এসএসসিতে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর প্রাপ্ত নম্বর পরীক্ষার্থীর এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিকের নৈর্বাচনিক বিষয়ের নম্বর হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
এবার এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। মোট অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখন পর্যন্ত ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি ছিল। এ ছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষাও বাকি। একপর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনের এক দফায় রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় যে ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে; যদিও তা হয়নি। কারণ হিসেবে শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির দিন বিভিন্ন এলাকার থানায় হামলা হয়েছিল। এতে থানায় রাখা প্রশ্নপত্রের ট্রাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় ১১ আগস্টের পরিবর্তে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সচিবালয়ে আন্দোলনের মুখে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়।
চার বছর ধরে জিপিএ-৫ ও পাসের হারে এগিয়ে ছাত্রীরা: ২০২৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, এ বছর পাসের হার ৭৭.৭৮ শতাংশ। এছাড়া জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন শিক্ষার্থী। গত তিন বছরের মতো এবারও অসাধারণ ফলাফল করেছে নারী শিক্ষার্থীরা। এবারও এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও পাসের হারে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন তারা। গত তিন বছর ও চলতি বছরের ফলাফল পর্যালোচনা করে এ চিত্র দেখা গেছে। মঙ্গলবার এইচএসসি ও সমমানের প্রকাশিত পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, এ বছর ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীরা ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি পাস করেছে এবং ১৫ হাজার ৯৫৫ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। চলতি বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডের দুই হাজার ৬৯৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। সেখানে পাস করেছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৯৫ জন এবং মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লাখ ৩১ হাজার ৭১৪ জন। এছাড়া ১১টি শিক্ষাবোর্ডে মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে, মোট ৮০ হাজার ৯৩৩ জন মেয়ে শিক্ষার্থী ও ৬৪ হাজার ৯৭৮ জন ছেলে শিক্ষার্থী। গত বছর ১১টি বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সাল থেকে পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে আছেন মেয়ে শিক্ষার্থীরা।
৬৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি: এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় দেশের ৬৫ প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি। আর শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে ১ হাজার ৩৮৮টি প্রতিষ্ঠানে। অধ্যাপক তপন কুমার সরকার, ‘এবারের পরীক্ষায় ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কোনও শিক্ষার্থী পাস করেনি। আর শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে ১ হাজার ৩৮৮ প্রতিষ্ঠান থেকে। ২০২৩ সালে শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪০টি, এবার বেড়েছে। তবে গত বছর আমরা চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কোনও শিক্ষার্থী পাস করবে না, তাদের বিরুদ্ধে এবারও ব্যবস্থা নেবো।’ কেউ পাস না করা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অধ্যাপক স্থাপন কুমার সরকার বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করে না, এমন প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থী থাকে কম দুই-একজন। এসব প্রতিষ্ঠান নন-এমপিও।’
পাসের হার বেশি সিলেটে, কম ময়মনসিংহে: এবার পাসের হারে এগিয়ে আছে সিলেট বোর্ড এবং সবচেয়ে কম পাস করেছে ময়মনসিংহ বোর্ডে। সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯ এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। অপর দিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ২১, রাজশাহী ৮১ দশমিক ২৪, কুমিল্লা ৭১ দশমিক ১৫, যশোর ৬৪ দশমিক ২৯, চট্টগ্রাম ৭০ দশমিক ৩২, বরিশাল ৮১ দশমিক ৮৫, দিনাজপুর ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সিলেট শিক্ষা বোর্ড পাসের হারে সর্বোচ্চ বেশি ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর সব চেয়ে কম ময়মনসিংহ ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৪৮ হাজার ৫৪৮, রাজশাহী বোর্ডে ২৪ হাজার ৯০২, কুমিল্লা বোর্ডে ৭ হাজার ৯২২, যশোর বোর্ডে ৯ হাজার ৭৪৯, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১০ হাজার ২৬৯, বরিশাল বোর্ডে ৪ হাজার ১৬৭, সিলেট বোর্ডে ৬ হাজার ৬৯৮, দিনাজপুর বোর্ডে ১৪ হাজার ২৯৫, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৪ হাজার ৮২৬। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৯ হাজার ৬১৩, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৪ হাজার ৯২২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এবার সব চেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ৪৮ হাজার ৫৪৮, আর সব চেয়ে কম জিপিএ-৫ পেয়েছে বরিশাল ৪ হাজার ১৬৭ জন।
চট্টগ্রাম বোর্ডের ফলাফলে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের’ প্রভাব: বিগত বছরগুলোর তুলনায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হার কমলেও বেড়েছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সাত বিষয়ে পরীক্ষা এবং বাকি বিষয়গুলোতে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন হওয়ায় উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে প্রভাব পড়েছে। আবার মানবিকে পাসের হার কম হওয়ায় বিষয়টিও সার্বিক ফলাফলে প্রভাব রেখেছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাসের হার ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ, গতবার ছিল ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, “সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের একটা প্রভাবতো এখানে পড়েছে। কারণ এসএসসিতে কোনো কোনো শিক্ষার্থী খুব ভালো করলেও এইচএসসিতে খারাপ করতে পারে। আবার এসএসসিতে খারাপ করে এইচএসসিতে ভালো করারও অনেকের সম্ভাবনা থাকে।” আর পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে প্রতিবারের মত এবারও সামগ্রিক ফলাফলে একটা প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন বোর্ড চেয়ারম্যান।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এবছর চট্টগ্রাম বোর্ডে এক লাখ ছয় হাজার ২৯৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে এক লাখ পাঁচ হাজার ৪১৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তার মধ্যে পাস করেছে ৭৪ হাজার ১২৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ২৬৯ জন শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম বোর্ডে এবার বিজ্ঞান বিভাগে সর্বোচ্চ ৯১ দশমিক ৩৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে; ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং মানবিক বিভাগে পাসের হার ৫৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
কোভিড মহামারির পর গতবছরই প্রথমবার পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হয়েছিল। আর এ বছর সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার পর বাকিগুলো আর নেওয়া সম্ভব হয়নি ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং সরকার পতনের পরের ঘটনাপ্রবাহের কারণে। যে পরীক্ষাগুলো হয়নি, সেগুলোর ক্ষেত্রে এসএসসির নম্বর বিবেচনায় নিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে করা হয়েছে মূল্যায়ন। ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষা কোভিড মহামারি আর বন্যার কারণে বিলম্বিত হয়েছিল। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়া সেই পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ। ওই বছর এ শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ ১২ হাজার ৬৭০ জন। মহামারির কারণে বিলম্বিত হয়েছিল ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষাও। কম বিষয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের পরীক্ষায় এই বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ; আর ১৩ হাজার ৭২০ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল। আর ২০২০ সালে মহামারির কারণে পরীক্ষা হয়নি। জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নে সবাই পাস করে, চট্টগ্রাম বোর্ডে জিপিএ-৫ পায় এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ছিল ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছিল দুই হাজার ৮৬০ জন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ এম এম মুজিবুর রহমান বলেন, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের পাশাপাশি মানবিক বিভাগের কারণে সার্বিক ফলাফলে একটা প্রভাব পড়েছে। “মাধ্যমিকের বিজ্ঞান শাখার বিভাগভিত্তিক বিষয়গুলোর চেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের বিষয়গুলোর সিলেবাসের আকার বড়। এবার বিভাগভিত্তিক সব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এসএসসির বিষয়গুলোর ভিত্তিতে নম্বর দেওয়া হয়েছে। এটার কারণে জিপিএ-৫ বেড়েছে। “আবার ইংরেজিতে অনেকে ফেল করেছে যার কারণে এবারের ফলাফলে প্রভাব পড়েছে।”

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ম্যাপিং পদ্ধতিতে এইচএসসির ফল প্রকাশ কমেছে পাসের হার, বেড়েছে জিপিএ-৫

আপডেট সময় : ০৮:১৭:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : এবার পরীক্ষার্থীদের একাংশের চাপের মুখে মাঝপথে বাতিল করা হয়েছিল এইচএসসিতে স্থগিত হয়ে পড়া কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা। এ অবস্থায় ইতিমধ্যে যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ফলাফল তৈরি হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে।
এই প্রক্রিয়ায় প্রকাশিত ফলাফলে অনেকের ধারণা ও আশা ছিল পাসের হার অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। উল্টো নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার গতবারের চেয়ে কমে গেছে। তবে ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে গড় ফলাফলেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। অর্থাৎ পাসের হার কমেছে। কিন্তু জিপিএ-৫ বেড়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ভিন্ন ব্যবস্থায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যান্য সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করতেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য জানানো হতো। কিন্তু এবার বেলা ১১টায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে প্রকাশিত হয়। তবে সাংবাদিকেরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গেলে বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের কাছে ফলাফলের তথ্য তুলে ধরেন। তপন কুমার সরকার সব কটি বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটিরও সভাপতি।
এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১১ লাখ ৩১ হাজার ১১৮ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৪ জন। গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬। গতবার গড় পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ৯। এবার ৯টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন, যা গতবার ছিল ৭৮ হাজার ৫২১ জন।
পাসের হার কমে যাওয়া ও জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ জানালেন অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। বলেন, যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলোর ফলাফল উচ্চমাধ্যমিকে গড় পাসের হারে বড় রকমের প্রভাব পড়ে না। উচ্চমাধ্যমিক পাসের হারটি মূলত নির্ভর করে ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ওপর। কিন্তু এবার এই দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল। ফলে গড় পাসের হারটি স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়েছে। জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রভাব হিসেবে বিষয় ম্যাপিং কাজ করেছে বলে মনে করেন তপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে যে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন, তিনি হয়তো উচ্চমাধ্যমিকে মানবিকে পড়েছেন। ফলে এসএসসির বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নম্বর এইচএসসিতে এসে মানবিকের বিষয়গুলোর বিপরীতে যোগ হয়েছে। এভাবে বিভাগ পরিবর্তনের কারণে জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
যেভাবে বিষয় ম্যাপিং হয়েছে: বিষয় ম্যাপিং নতুন নয়। এর আগে করোনাকালে পরীক্ষা নিতে না পারায় কিংবা কম বিষয়ে পরীক্ষা নিতে গিয়ে এই বিষয় ম্যাপিং করে ফলাফল প্রকাশ করা হতো। এ জন্য কোনো পরীক্ষার কোন বিষয়ের নম্বর যুক্ত হবে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালাও আছে। এবার যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ফলাফল প্রকাশ করা হয় এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে। এ প্রক্রিয়ায় একজন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে একটি বিষয়ে যত নম্বর পেয়েছিলেন, এইচএসসিতে সেই বিষয় থাকলে তাতে এসএসসিতে প্রাপ্ত পুরো নম্বর বিবেচনায় নেওয়া হবে। আর এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বিষয়ে ভিন্নতা থাকলে বিষয় ম্যাপিংয়ের নীতিমালা অনুযায়ী নম্বর বিবেচনা করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
যেমন এসএসসিতে যে পরীক্ষার্থী বিজ্ঞানে পড়েছিলেন, এইচএসসিতে হয়তো তিনি ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিক শাখায় পড়েছেন। সে ক্ষেত্রে এসএসসিতে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর প্রাপ্ত নম্বর পরীক্ষার্থীর এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিকের নৈর্বাচনিক বিষয়ের নম্বর হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
এবার এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। মোট অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখন পর্যন্ত ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি ছিল। এ ছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষাও বাকি। একপর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনের এক দফায় রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় যে ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে; যদিও তা হয়নি। কারণ হিসেবে শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির দিন বিভিন্ন এলাকার থানায় হামলা হয়েছিল। এতে থানায় রাখা প্রশ্নপত্রের ট্রাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় ১১ আগস্টের পরিবর্তে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সচিবালয়ে আন্দোলনের মুখে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়।
চার বছর ধরে জিপিএ-৫ ও পাসের হারে এগিয়ে ছাত্রীরা: ২০২৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, এ বছর পাসের হার ৭৭.৭৮ শতাংশ। এছাড়া জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন শিক্ষার্থী। গত তিন বছরের মতো এবারও অসাধারণ ফলাফল করেছে নারী শিক্ষার্থীরা। এবারও এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও পাসের হারে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন তারা। গত তিন বছর ও চলতি বছরের ফলাফল পর্যালোচনা করে এ চিত্র দেখা গেছে। মঙ্গলবার এইচএসসি ও সমমানের প্রকাশিত পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, এ বছর ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীরা ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি পাস করেছে এবং ১৫ হাজার ৯৫৫ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। চলতি বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডের দুই হাজার ৬৯৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। সেখানে পাস করেছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৯৫ জন এবং মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লাখ ৩১ হাজার ৭১৪ জন। এছাড়া ১১টি শিক্ষাবোর্ডে মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে, মোট ৮০ হাজার ৯৩৩ জন মেয়ে শিক্ষার্থী ও ৬৪ হাজার ৯৭৮ জন ছেলে শিক্ষার্থী। গত বছর ১১টি বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সাল থেকে পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে আছেন মেয়ে শিক্ষার্থীরা।
৬৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি: এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় দেশের ৬৫ প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি। আর শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে ১ হাজার ৩৮৮টি প্রতিষ্ঠানে। অধ্যাপক তপন কুমার সরকার, ‘এবারের পরীক্ষায় ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কোনও শিক্ষার্থী পাস করেনি। আর শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে ১ হাজার ৩৮৮ প্রতিষ্ঠান থেকে। ২০২৩ সালে শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪০টি, এবার বেড়েছে। তবে গত বছর আমরা চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কোনও শিক্ষার্থী পাস করবে না, তাদের বিরুদ্ধে এবারও ব্যবস্থা নেবো।’ কেউ পাস না করা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অধ্যাপক স্থাপন কুমার সরকার বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করে না, এমন প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থী থাকে কম দুই-একজন। এসব প্রতিষ্ঠান নন-এমপিও।’
পাসের হার বেশি সিলেটে, কম ময়মনসিংহে: এবার পাসের হারে এগিয়ে আছে সিলেট বোর্ড এবং সবচেয়ে কম পাস করেছে ময়মনসিংহ বোর্ডে। সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯ এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। অপর দিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ২১, রাজশাহী ৮১ দশমিক ২৪, কুমিল্লা ৭১ দশমিক ১৫, যশোর ৬৪ দশমিক ২৯, চট্টগ্রাম ৭০ দশমিক ৩২, বরিশাল ৮১ দশমিক ৮৫, দিনাজপুর ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সিলেট শিক্ষা বোর্ড পাসের হারে সর্বোচ্চ বেশি ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর সব চেয়ে কম ময়মনসিংহ ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৪৮ হাজার ৫৪৮, রাজশাহী বোর্ডে ২৪ হাজার ৯০২, কুমিল্লা বোর্ডে ৭ হাজার ৯২২, যশোর বোর্ডে ৯ হাজার ৭৪৯, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১০ হাজার ২৬৯, বরিশাল বোর্ডে ৪ হাজার ১৬৭, সিলেট বোর্ডে ৬ হাজার ৬৯৮, দিনাজপুর বোর্ডে ১৪ হাজার ২৯৫, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৪ হাজার ৮২৬। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৯ হাজার ৬১৩, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৪ হাজার ৯২২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এবার সব চেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ৪৮ হাজার ৫৪৮, আর সব চেয়ে কম জিপিএ-৫ পেয়েছে বরিশাল ৪ হাজার ১৬৭ জন।
চট্টগ্রাম বোর্ডের ফলাফলে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের’ প্রভাব: বিগত বছরগুলোর তুলনায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হার কমলেও বেড়েছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সাত বিষয়ে পরীক্ষা এবং বাকি বিষয়গুলোতে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন হওয়ায় উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে প্রভাব পড়েছে। আবার মানবিকে পাসের হার কম হওয়ায় বিষয়টিও সার্বিক ফলাফলে প্রভাব রেখেছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাসের হার ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ, গতবার ছিল ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, “সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের একটা প্রভাবতো এখানে পড়েছে। কারণ এসএসসিতে কোনো কোনো শিক্ষার্থী খুব ভালো করলেও এইচএসসিতে খারাপ করতে পারে। আবার এসএসসিতে খারাপ করে এইচএসসিতে ভালো করারও অনেকের সম্ভাবনা থাকে।” আর পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে প্রতিবারের মত এবারও সামগ্রিক ফলাফলে একটা প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন বোর্ড চেয়ারম্যান।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এবছর চট্টগ্রাম বোর্ডে এক লাখ ছয় হাজার ২৯৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে এক লাখ পাঁচ হাজার ৪১৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তার মধ্যে পাস করেছে ৭৪ হাজার ১২৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ২৬৯ জন শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম বোর্ডে এবার বিজ্ঞান বিভাগে সর্বোচ্চ ৯১ দশমিক ৩৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে; ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং মানবিক বিভাগে পাসের হার ৫৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
কোভিড মহামারির পর গতবছরই প্রথমবার পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হয়েছিল। আর এ বছর সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার পর বাকিগুলো আর নেওয়া সম্ভব হয়নি ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং সরকার পতনের পরের ঘটনাপ্রবাহের কারণে। যে পরীক্ষাগুলো হয়নি, সেগুলোর ক্ষেত্রে এসএসসির নম্বর বিবেচনায় নিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে করা হয়েছে মূল্যায়ন। ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষা কোভিড মহামারি আর বন্যার কারণে বিলম্বিত হয়েছিল। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়া সেই পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ। ওই বছর এ শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ ১২ হাজার ৬৭০ জন। মহামারির কারণে বিলম্বিত হয়েছিল ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষাও। কম বিষয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের পরীক্ষায় এই বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ; আর ১৩ হাজার ৭২০ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল। আর ২০২০ সালে মহামারির কারণে পরীক্ষা হয়নি। জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নে সবাই পাস করে, চট্টগ্রাম বোর্ডে জিপিএ-৫ পায় এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ছিল ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছিল দুই হাজার ৮৬০ জন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ এম এম মুজিবুর রহমান বলেন, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের পাশাপাশি মানবিক বিভাগের কারণে সার্বিক ফলাফলে একটা প্রভাব পড়েছে। “মাধ্যমিকের বিজ্ঞান শাখার বিভাগভিত্তিক বিষয়গুলোর চেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের বিষয়গুলোর সিলেবাসের আকার বড়। এবার বিভাগভিত্তিক সব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এসএসসির বিষয়গুলোর ভিত্তিতে নম্বর দেওয়া হয়েছে। এটার কারণে জিপিএ-৫ বেড়েছে। “আবার ইংরেজিতে অনেকে ফেল করেছে যার কারণে এবারের ফলাফলে প্রভাব পড়েছে।”