ঢাকা ১২:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

ম্যাজিস্ট্রেট ও সাংবাদিক পরিচয়ে মাদরাসা অডিট

  • আপডেট সময় : ০১:১০:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২২
  • ১১২ বার পড়া হয়েছে

ফরিদপুর সংবাদদাতা : ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ওই সাতজনের মধ্যে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া দুই নারীও রয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় আলফাডাঙ্গা পৌর এলাকায় বাকাইল মাদরাসা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় উপজেলার বুরাইচ ইউনিয়নের ইউসুফেরবাগ গোরস্তান মাদরাসা ও এতিমখানার মুহতামিম মাওলানা মো. শরফুদ্দিন মোল্লা (৪৯) বাদী হয়ে সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজীর অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়দানকারী গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি হলেন- নোয়াখালীর সুধারাম উপজেলার সোনাপুর গ্রামের রাকিবুল হায়দার (৩০)। এছাড়া সাংবাদিক পরিচয়দানকারীরা হলেন- জামালপুর সদর উপজেলার খরখড়িয়া গ্রামের রেজাউল করিম খান (২৫), গাজীপুরের বাসন থানার মোঘরখাল গ্রামের আরাফাত হোসেন (২৩), একই থানার মধ্য চান্দড়া গ্রামের শামীম হোসেন (৪০), শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের জীবনী (১৮) ও জামালপুর সদর উপজেলার জুয়াইলপাড়া (সুলটিয়া বাজার) গ্রামের সোমা (১৮)। প্রতারক চক্রটি একটি মাইক্রোবাসে করে এসেছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়া ওই মাইক্রোবাসের চালক হলেন- বাসন থানার দিঘীরচালা গ্রামের আতাউর রহমান(৪৫)। মামলার বাদী উপজেলার ইউসুফেরবাগ গোরস্তান মাদরাসা ও এতিমখানার মুহতামিম মো. শরফুদ্দিন মোল্লা (৪৯) জানান, তিনি তখন বাড়িতে ছিলেন। বুধবার বিকেলের দিকে মাদরাসার শিক্ষক হাসমত তাকে মুঠোফোনে জানায় যে, মাদরাসায় অডিট করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট ও সাংবাদিক এসেছে। এ সংবাদ শুনে তিনি দ্রুত মাদরাসায় আসেন। তিনি আসার পর আগত ব্যক্তিরা ম্যাজিস্ট্রেট ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলেন, সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি স্বাপেক্ষে তারা মাদরাসায় অডিট করতে এসেছেন। মাদরাসা ও এতিমখানায় অনেক দুর্নীতি হচ্ছে। মুহতামিম মো. শরফুদ্দিন মোল্লা আরও বলেন, এক পর্যায় তারা অডিট করার খরচের টিএ ও ডিএ বিল বাবদ তার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা দাবি করেন এবং অডিট খরচ বাবদ আরও ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। বাকি টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠানোর জন্য বলেন। এরপর তারা সন্ধ্যার দিকে পৌর এলাকায় বাকাইল মাদরাসায় ঢুকে একই কায়দায় মাদরাসার মুহতামিমের কাছ থেকে টাকা হাতানোর চেষ্টা করে। বাকাইল মাদরাসার মুহতামিম মো. ইদ্রিস আলী (৫০) জানান, কথিত অডিটের জন্য আগত লোকদের কথাবার্তা ও আচরণ দেখে তার সন্দেহ হলে তিনি বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান। আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম জানান, বাকাইল মাদরাসা থেকে খবর পেয়ে তিনি তার কয়েকজন সহকর্মী নিয়ে ওই মাদরাসায় যান। তিনি আগত ব্যক্তিদের কাছে থাকা আইডি কার্ড যাচাই করে তাদের স্ব-স্ব অফিসে কথা বলে জানতে পারেন ওই নামে তাদের কোনো সংবাদিক নেই। পরে আলফাডাঙ্গা পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইউনুচ আলী বিশ্বাস বলেন, ওই ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি মাইক্রোবাস, একটি ক্যামেরা, পাঁচটি মুঠোফোন, চার্জার এবং দৈনিক প্রথম বেলা, দৈনিক বিজয় বাংলা, দৈনিক নাগরিক ভাবনাসহ বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার একাধিক ভুয়া আইডি কার্ড ও কিছু ভুয়া কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ওই ব্যক্তিরা মূলত একটি প্রতারক চক্র। দুই নারীসহ ওই সাত ব্যক্তিকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ম্যাজিস্ট্রেট ও সাংবাদিক পরিচয়ে মাদরাসা অডিট

আপডেট সময় : ০১:১০:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২২

ফরিদপুর সংবাদদাতা : ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ওই সাতজনের মধ্যে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া দুই নারীও রয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় আলফাডাঙ্গা পৌর এলাকায় বাকাইল মাদরাসা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় উপজেলার বুরাইচ ইউনিয়নের ইউসুফেরবাগ গোরস্তান মাদরাসা ও এতিমখানার মুহতামিম মাওলানা মো. শরফুদ্দিন মোল্লা (৪৯) বাদী হয়ে সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজীর অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়দানকারী গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি হলেন- নোয়াখালীর সুধারাম উপজেলার সোনাপুর গ্রামের রাকিবুল হায়দার (৩০)। এছাড়া সাংবাদিক পরিচয়দানকারীরা হলেন- জামালপুর সদর উপজেলার খরখড়িয়া গ্রামের রেজাউল করিম খান (২৫), গাজীপুরের বাসন থানার মোঘরখাল গ্রামের আরাফাত হোসেন (২৩), একই থানার মধ্য চান্দড়া গ্রামের শামীম হোসেন (৪০), শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের জীবনী (১৮) ও জামালপুর সদর উপজেলার জুয়াইলপাড়া (সুলটিয়া বাজার) গ্রামের সোমা (১৮)। প্রতারক চক্রটি একটি মাইক্রোবাসে করে এসেছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়া ওই মাইক্রোবাসের চালক হলেন- বাসন থানার দিঘীরচালা গ্রামের আতাউর রহমান(৪৫)। মামলার বাদী উপজেলার ইউসুফেরবাগ গোরস্তান মাদরাসা ও এতিমখানার মুহতামিম মো. শরফুদ্দিন মোল্লা (৪৯) জানান, তিনি তখন বাড়িতে ছিলেন। বুধবার বিকেলের দিকে মাদরাসার শিক্ষক হাসমত তাকে মুঠোফোনে জানায় যে, মাদরাসায় অডিট করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট ও সাংবাদিক এসেছে। এ সংবাদ শুনে তিনি দ্রুত মাদরাসায় আসেন। তিনি আসার পর আগত ব্যক্তিরা ম্যাজিস্ট্রেট ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলেন, সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি স্বাপেক্ষে তারা মাদরাসায় অডিট করতে এসেছেন। মাদরাসা ও এতিমখানায় অনেক দুর্নীতি হচ্ছে। মুহতামিম মো. শরফুদ্দিন মোল্লা আরও বলেন, এক পর্যায় তারা অডিট করার খরচের টিএ ও ডিএ বিল বাবদ তার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা দাবি করেন এবং অডিট খরচ বাবদ আরও ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। বাকি টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠানোর জন্য বলেন। এরপর তারা সন্ধ্যার দিকে পৌর এলাকায় বাকাইল মাদরাসায় ঢুকে একই কায়দায় মাদরাসার মুহতামিমের কাছ থেকে টাকা হাতানোর চেষ্টা করে। বাকাইল মাদরাসার মুহতামিম মো. ইদ্রিস আলী (৫০) জানান, কথিত অডিটের জন্য আগত লোকদের কথাবার্তা ও আচরণ দেখে তার সন্দেহ হলে তিনি বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান। আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম জানান, বাকাইল মাদরাসা থেকে খবর পেয়ে তিনি তার কয়েকজন সহকর্মী নিয়ে ওই মাদরাসায় যান। তিনি আগত ব্যক্তিদের কাছে থাকা আইডি কার্ড যাচাই করে তাদের স্ব-স্ব অফিসে কথা বলে জানতে পারেন ওই নামে তাদের কোনো সংবাদিক নেই। পরে আলফাডাঙ্গা পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইউনুচ আলী বিশ্বাস বলেন, ওই ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি মাইক্রোবাস, একটি ক্যামেরা, পাঁচটি মুঠোফোন, চার্জার এবং দৈনিক প্রথম বেলা, দৈনিক বিজয় বাংলা, দৈনিক নাগরিক ভাবনাসহ বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার একাধিক ভুয়া আইডি কার্ড ও কিছু ভুয়া কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ওই ব্যক্তিরা মূলত একটি প্রতারক চক্র। দুই নারীসহ ওই সাত ব্যক্তিকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।