আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফ্রান্সকে অন্ধকারে রেখে বিশেষ নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর ও সাবমেরিন ইস্যুতে টানাপোড়েনের কারণে প্যারিসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়। এমনকি দেশগুলোকে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাতেই যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া থেকে রাষ্ট্রদূত ফিরিয়ে আনেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। কিছুদিন পর অবশ্য রাষ্ট্রদূতেরা আবার ফিরে যায়।
কিন্তু সাবমেরিন ইস্যুতে সৃষ্ট টানাপোড়েনের জেরে ওয়াশিংটন-প্যারিসের মধ্যকার দূরত্বটা যেন কাটছিল না। তবে এবার স্বয়ং বাইডেন মাঠে নেমেছেন ফ্রান্সের মান ভাঙাতে। এমনকি মিত্র দেশকে খুশি করতে ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট এটিও বলছেন যে, বিশেষ নিরাপত্তা চুক্তি ও সাবমেরিন ইস্যুতে তাদের অবস্থান ছিল আনাড়ির মতো।
গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ইতালির রোমে অবস্থিত ফ্রান্সের ভ্যাটিকান দূতাবাসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে একথা বলেন জো বাইডেন।
বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁকে বাইডেন বলেন, বিশেষ নিরাপত্তা চুক্তি ও সাবমেরিন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল আনাড়ির মতো। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার এই নিরাপত্তা চুক্তির কারণে ফ্রান্স ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চীনকে মোকাবিলা করতে গত সেপ্টেম্বরে প্রভাবশালী পশ্চিমা তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে অকাস নামের একটি নিরাপত্তা চুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়। এর কয়েকদিন পরেই এই সমঝোতা বড় ধরনের সমালোচনার মুখে পড়ে। ঐতিহাসিক এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণের জন্য উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সরবরাহের কথা বলা হয়।
তবে পরমাণু শক্তিধর দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের শক্তিধর সদস্য ফ্রান্স এই চুক্তির কঠোর সমালোচনা করে। অকাসের তীব্র নিন্দা করে দেশটি সেসময় জানায়, এর মাধ্যমে তাদের ‘পিঠে ছুরি মারা হয়েছে।’
অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণেই প্যারিস এতটা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার মূল্যের সেই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। ওই চুক্তির আওতায় অস্ট্রেলিয়ার জন্য ১২টি সাবমেরিন নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু অকাস চুক্তির পর আগের চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায় এবং ফ্রান্স বিপুল পরিমাণ ওই হারায়।
এই ঘটনার পর গত শুক্রবারই প্রথম মুখোমুখি বৈঠকে বসেন বাইডেন-ম্যাক্রোঁ। বৈঠকে বাইডেন আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাননি। তবে তিনি বলেছেন, সাবমেরিনের ইস্যুতে দীর্ঘকালীন মিত্র হিসেবে ফ্রান্সকে পাশে রাখা না খুব আনাড়ি পদক্ষেপ।
এসময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, আস্থা পুনস্থাপন করতে হলে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। তার মতে, এই ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তব পদক্ষেপ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ম্যাক্রোঁ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ফ্রান্সের আস্থা পুনর্র্নিমাণের জন্য ভাষা নয়, বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আগামীতে দু’দেশের কীভাবে একসঙ্গে কাজ করবে তা নির্ধারণ করা।
বৈঠকের পর প্রকাশিত এক যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, বাইডেন ও ম্যাক্রোঁ মহামারি প্রতিরোধ, প্রতিরক্ষা, সন্ত্রাস দমন এবং জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিনিময় করেছেন।
ম্যাক্রোঁর মন জয়ে নিজেদের আনাড়ি বললেন বাইডেন
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ