ক্রীড়া ডেস্ক : যখন শেষ হওয়ার কথা তখন শুরু হলো ম্যাচ। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগের জন্য নয়, এই ভোগান্তি ত্রিনিদাদ থেকে যথা সময়ে লাগেজ না আসায়। তিন ঘণ্টা দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে আলো ছড়ালেন ওবেড ম্যাককয়। টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে লক্ষ্যটা রাখলেন নাগালে। ব্র্যান্ডন কিংয়ের ফিফটির পরও সেই রান হয়ে গেল কঠিন। শেষ পর্যন্ত ঝড়ো ইনিংসে দলকে উদ্ধার করলেন ডেভন টমাস। সেন্ট কিটসে সোমবার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেটে জিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে সমতা ফেরাল নিকোলাস পুরানের দল। সফরকারীদের ১৩৮ ছাড়িয়ে গেল ৪ বল বাকি থাকতে। এই সংস্করণে ভারতের বিপক্ষে সবশেষ ছয় ম্যাচে এটাই তাদের প্রথম জয়, সবশেষ ১৪ ম্যাচে কেবল দ্বিতীয়। ১৭ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ক্যারিবিয়ানদের জয়ের নায়ক পেসার ম্যাককয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে কোনো ম্যাচে ছয় উইকেট নিলেন তিনি। সব মিলিয়ে দশম বোলার হিসেবে গড়লেন এই কীর্তি। একমাত্র শ্রীলঙ্কার রহস্য বোলার অজন্তা মেন্ডিস দুইবার নিতে পেরেছেন ছয় উইকেট। ওয়ার্নার পার্কে স্থানীয় সময় বেলা ১টায় শুরু হওয়া ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারায় ভারত। ম্যাককয়ের বাড়তি লাফানো বলে শর্ট থার্ড ম্যানে ধরা পড়েন রোহিত শর্মা। আলজারি জোসেফের করা পরের ওভারে ১৭ রান নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দেন সূর্যকুমার যাদব ও শ্রেয়াস আইয়ার। তবে এই দুই ব্যাটসম্যানের কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি।
পরের ওভারে ফিরে প্রথম বলেই সূর্যকুমারকে কট বিহাইন্ড করে দেন ম্যাককয়। শ্রেয়াসকে থামান জোসেফ। ঝড় তোলার আভাস দেওয়া রিশাভ পান্তকে বেশি দূর যেতে দেননি আকিল হোসেন। সপ্তম ওভারে ৬১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে ভারত কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে হার্দিক পান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজার ব্যাটে। তবে দুই জনের কেউই দ্রুত রান তুলতে পারেননি। জেসন হোল্ডারকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় ক্যাচ দিয়ে পান্ডিয়ার বিদায়ে ভাঙে ৪৩ রানের জুটি। দুই ছক্কা ও এক চারের পরও ৩১ বলে ভারতীয় অলরাউন্ডার করতে পারেন কেবল ৩১। সপ্তদশ ওভারে আক্রমণে ফিরে জাদেজাকে বিদায় করেন ম্যাককয়। পরের ওভারে ফিরে দিনেশ কার্তিক, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও ভুবনেশ্বর কুমারকে বিদায় করে পান অনির্বচনীয় স্বাদ। টি-টোয়েন্টিতে এর আগে কখনও চার উইকেটের বেশি পাননি। এবার পেলেন ছয় উইকেট। নিজের প্রথম ও শেষ বলে উইকেট পাওয়া ম্যাককয় সব আলো কেড়ে নেন। তবে খারাপ করেননি অন্য বোলাররাও। প্রথম ওভারে ১৭ দেওয়ার পরও ২৯ রান দিয়ে এক উইকেট নেন জোসেফ। আঁটসাঁট বোলিং করেন বাঁহাতি স্পিনার আকিল। অলরাউন্ডার হোল্ডার ২ উইকেট নেন ২৩ রানে।
রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভালো শুরু এনে দেন ব্র্যান্ডন কিং। পাওয়ার প্লেতে স্বাগতিকরা কোনো উইকেট না হারিয়ে তুলে ৪৬ রানে। এতে আরেক ওপেনার কাইল মেয়ার্সের অবদান সামান্যই। সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই মেয়ার্সের ভোগান্তির ইতি টানেন পান্ডিয়া। একটি করে ছক্কা ও চার মেরেই থেমে যান পুরান। জাদেজাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে দলকে চাপে ফেলে দেন শিমরন হেটমায়ার। ৩৯ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন কিং। চমৎকার এক ইয়র্কারে তার প্রতিরোধ ভাঙেন আভেশ খান। ৫২ বলে দুই ছক্কা ও আট চারে ৬৮ রান করেন ক্যারিবিয়ান ওপেনার। তার বিদায়ের পর ক্রমেই কঠিন হতে থাকে সমীকরণ। শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২৭ রান। পান্ডিয়াকে ছক্কা মেরে কাজ কিছুটা সহজ করেন টমাস। পরের ওভারে রভম্যান পাওয়েলকে বোল্ড করে ভারতকে ম্যাচে রাখেন আর্শদিপ সিং। শেষ ওভারে প্রয়োজন ১০ রান। ভুবনেশ্বর কুমারের ওভার থাকলেও আভেশের হাতে বল তুলে দেন রোহিত। তরুণ পেসার প্রথম বল করে বসেন ‘নো।’ ফ্রি হিটে ছক্কা মেের সব উত্তেজনায় জল ঢেলে দেন টমাস। পরের বলে বাউন্ডারিতে ফেরেন দলের জয়কে সঙ্গে নিয়ে। একই মাঠে মঙ্গলবার হবে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ১৯.৪ ওভারে ১৩৮ (রোহিত ০, সূর্যকুমার ১১, শ্রেয়াস ১০, পান্ত ২৪, পান্ডিয়া ৩১, জাদেজা ২৭, কার্তিক ৭, অশ্বিন ১০, ভুবনেশ্বর ১, আভেশ ৮, আর্শদিপ ১; ম্যাককয় ৪-১-১৭-৬, জোসেফ ৪-০-২৯-১, স্মিথ ৪-০-৪৩-০, আকিল ৪-০-২২-১, হোল্ডার ৩.৪-০-২৩-২) ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৯.২ ওভারে ১৪১/৫ (কিং ৬৮, মেয়ার্স ৮, পুরান ১৪, হেটমায়ার ৬, টমাস ৩১, পাওয়ালে ৫, স্মিথ ৪*; ভুবনেশ্বর ২-০-১২-০, আর্শদিপ ৪-০-২৬-১, জাদেজা ৩-০-১৬-১, অশ্বিন ৪-০-৩২-১, পান্ডিয়া ৪-০-২২-১, আভেশ ২.২-০-৩১-১)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ: ওবেড ম্যাককয়
ম্যাককয়ের ৬ উইকেট, ভারতকে হারিয়ে সমতায় উইন্ডিজ
ট্যাগস :
ম্যাককয়ের ৬ উইকেট
জনপ্রিয় সংবাদ