নওগাঁ সংবাদদাতা: কৃষিতে রাসায়নিকের ব্যবহার কমাতে প্রাকৃতিক জৈব সারের পরীক্ষা করতে তৈরি করেন কুঁড়েঘর। যেন জৈব সার প্রস্তুতিতে শিক্ষার্থীরা এখানে এসে তার প্রস্তুত প্রণালি ও ব্যবহার বিধি শিখে তা কৃষি কাজে ব্যবহার করতে পারে। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে আম ও ধান চাষে রাসায়নিক ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার প্রচেষ্টা থেকে নওগাঁয় তৈরি হয়েছে কুঁড়েঘর ম্যাংগো রিসোর্ট। যা বর্তমানে দেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে পর্যটনের একটি অন্যতম স্থান। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ ২০২১ সালে পোরশা উপজেলার নোনাহার গ্রামে এসে আম বাগান তৈরি করার জন্য স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে থেকে ৬০ বিঘা জমি লিজ নেন। ২২ শতাংশ জমির উপর কুঁড়েঘর ম্যাংগো রিসোর্ট নির্মাণ করেন তিনি। বাকি জমিতে বিভিন্ন জাতের আম, কফি, ফিলিপাইন ব্লাক জাতের আখ, ড্রাগন ফলের বাগানের পাশাপাশি তৈরি করেছেন গরুর খামার। প্রথম দিকে বাগান এবং খামার দেখা শোনার জন্য দুটি মাটির কুঁড়ে ঘর তৈরি করেন। ঘরের দুটি ছবি ও ভিডিও তিনি তার ফেসবুক এবং নিজস্ব ওয়েবসাইটে পোস্ট করেন। প্রথমদিকে তার বিভিন্ন এলাকার বন্ধু ও আত্মীয়রা এখানে ঘুরতে আসেন। তার ওই দুটি ঘরে বেশি মানুষ থাকতে সমস্যা হলে তিনি পরবর্তীতে আরও কিছু ঘর তৈরি করেন। প্রতিদিন এখানে দেখার জন্য আসতে থাকেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। এখানে যারা বেড়াতে আসেন তারা এই ঘরগুলো দেখে বিমোহিত হোন। গ্রামীণ পরিবেশ, নির্মল বাতাস, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলা নিকেতন, নানা বৈচিত্র্য আর সবুজের সমাহার উপভোগ করার জন্য দর্শনার্থীরা এখানে রাত্রি যাপনের ইচ্ছে পোষণ করতেন। প্রতিদিন দর্শনার্থীদের আবদার শুনতে শুনতে বাধ্য হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এটিকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ। আর এর নাম দেন ‘কুঁড়েঘর ম্যাংগো রিসোর্ট’। দর্শনার্থী ও ভ্রমণপ্রেমীদের চাহিদা মেটাতে বর্তমানে এ রিসোর্টে তৈরি করা হয়েছে ৭টি রুম। এর মধ্যে রয়েছে ২টি ফ্যামিলি রুম, ৪টি সিঙ্গেল রুম ও ১টি কমন রুম। মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ জানান- পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমে এটি চালু করা হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানে এটাতে সবসময় দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। দেশের মানুষের বর্তমান সময়েও মাটির প্রতি টান থেকে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে আসেন রিসোর্টটিতে রাত্রি যাপন করতে। তিনি জানান- তার উদ্দেশ্য হচ্ছে কুঁড়েঘর টি রিসোর্ট হিসেবে ব্যবহার না করে যারা কৃষি বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করতে ইচ্ছুক তারা স্বল্প খরচে এখানে থেকে তার উদ্দেশ্য সফল করতে তৈরি করা। কিন্তু দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ এখানে আসে। এখানে একসাথে ৭ রুমে ২০ জন থাকতে পারে। ১ রাত ফ্যামিলি ও কমন রুমের ভাড়া ৬শ টাকা। সিঙ্গেল রুমের ভাড়া ১জন ২শ ও ২জন ৩শ টাকা। এখানে রয়েছে এটাস্ট ও কমন বাথরুম, বিদ্যুৎ, পানি এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থা। এদিকে দর্শনার্থীদের কাছে খুবই পছন্দনীয় স্থান কুঁড়েঘর ম্যাংগো রিসোর্ট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরা প্রতিদিন আসছেন এখানে। রাজশাহী থেকে কুঁড়েঘরে ঘুরতে আসা নাভানা মুসতারিণ জানান- প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিসোর্টের ছবি দেখে তারা মুগ্ধ হয়ে তা নিজ চোখে দেখতে আসেন। এখানে এসে তারা ছবিতে যেমন সুন্দর ভেবেছিলেন তার থেকে অনেক বেশি ভালো তাদের কাছে লেগেছে। এমন গ্রামীণ পরিবেশে সময় কাটাতে পেরে তারা অনেক আনন্দিত। অপরদিকে রিসোর্টিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষিত বেকার যুবকের হয়েছে কর্মসংস্থান। যারা পড়াশুনার পাশাপাশি রিসোর্টটিতে নানান বিভাগে কাজ করে নিজে ও পরিবারকে করছেন স্বচ্ছল। দৈনন্দিন জীবনে কৃষি কাজের সুফলভোগের অবস্থান থেকে তৈরি হওয়া কুঁড়েঘর যা বর্তমানে কুঁড়েঘর ম্যাংগো রিসোর্ট যা সাড়া ফেলেছে দেশের মানুষের কাছে।























