নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একাধিক ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ‘পানি রুবেল গ্যাং’-এর পাঁচ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
গত রোববার (১৩ জুলাই) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুরের জহুরি মহল্লা ও বাবর রোড এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-মো. লায়েছ (২৫), মো. শাহিন ওরফে ‘অটো শাহিন’ (২০), মো. শুভ (১৯), মো. আব্দুল আলিম (২৮) এবং মো. মিলন হোসেন (২৮)।
সোমবার (১৪ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘পানি রুবেল গ্যাংয়ের সদস্যরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে পথচারীদের জিম্মি করতো। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা ছিনতাইয়ের সময় চাপাতি ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করতো। টার্গেট করতো একা চলাফেরা করা সাধারণ পথচারী, বিশেষ করে রাতে। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তারা মোবাইল ফোন, টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী লুটে নিতো।’
পুলিশ আরো জানায়, ‘পানি রুবেল গ্যাং’ দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদপুর এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে আসছিল। অভিযানের সময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে কিছু ধারালো অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। ডিএমপি জানায়, গ্রেফতার পাঁচজনের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা দায়েরসহ আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গ্যাংটির মূল হোতা ‘পানি রুবেল’সহ পলাতক অন্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ সূত্র বলছে, ‘এই গ্যাং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের পাশাপাশি চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো অপরাধেও জড়িত। তাদের গ্রেফতারের মাধ্যমে মোহাম্মদপুরের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কিছুটা হলেও নিশ্চিত হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
ভূমি দখল করে বেড়াত ‘কব্জিকাটা গ্রুপ’: এদিকে মোহাম্মদপুরের আলোচিত ‘কব্জিকাটা গ্রুপে’র সহযোগী সন্ত্রাসী ‘আয়েশা গ্রুপে’র প্রধানসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতাররা হলেন আয়েশা গ্রুপের প্রধান মো. আসাদ ওরফে আরশাদ প্রকাশ ওরফে আয়েশা (৩৫) ও তার সহযোগী ইউসুফ (৪০)। গত রোববার (১৩ জুলাই) ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন ভাকুর্তা এলাকা থেকে তাদের দুইজনকে গ্রেফতার করে র্যাব-২। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬টি সামুরাই জব্দ করা হয়।
সোমবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খালিদুল হক হাওলাদার। মো. খালিদুল হক হাওলাদার জানান, আসাদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় সে ও তার সহযোগীরা মাদক কারবারি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এরইমধ্যে রাজধানীর আদাবর এলাকায় মো. আসাদ ও তার সহযোগীদের দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করতে দেখা যায়। এ সংক্রান্ত একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে গত ২৯ জুন আদাবর থানা এলাকায় মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মাদক কারবারি রাজুকে আয়েশা ও তার সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জুন আদাবর থানায় আয়েশা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় তাদের দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়।
অতিরিক্ত ডিআইজি জানান, আসাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর আদাবর থানায় হত্যাচেষ্টা, ডাকাতি, ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির প্রস্তুতিসহ ৭টি মামলা রয়েছে। সে জন্ম থেকে আদাবর এলাকায় বসবাস করে। ছোটবেলা থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। পরে মোহাম্মদপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতার আনোয়ার ওরফে কব্জিকাটা আনোয়ারের হাত ধরে ৫-৬ বছর ধরে এ কাজে আসে এবং আনোয়ারের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত হয়। সে ও তার সহযোগীরা কব্জিকাটা আনোয়ারের নির্দেশে মোহাম্মদপুর, আদাবর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক কারবার, ভূমি দখল, চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত। তিনি আরো জানান, তারা সাধারণত দিনের বেলায় ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় কম জনসমাগমপূর্ণ স্থানে পথচারীদের জিম্মি করে নগদ অর্থ, মোবাইল, ল্যাপটপ, ভ্যানিটি ব্যাগ ইত্যাদি মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে এবং রাত গভীর হলেই বাসা বাড়ি, ফ্লাটে ও গাড়ি থামিয়ে অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব লুটে নেয়।