নিজস্ব প্রতিবেদক : ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনায় জাতির কলঙ্ক বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাককে শ্রদ্ধা জানানো অনিচ্ছাকৃত ভুল দাবি করে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমতুল্লাহ।
গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. রহমতুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় আমি মুজিবনগর সরকার গঠনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা, ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন এ সরকারের কর্মপরিকল্পনা এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ বিষয়ে আলোচনা করি। আলোচনাকালে মুজিবনগর সরকারে কে কোন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তা উল্লেখ করি এবং মুজিবনগর সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। আমার বক্তব্যের এক পর্যায়ে মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কুলাঙ্গার এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন ও পরবর্তীকালে জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারী বঙ্গবন্ধুর খুনী মোস্তাক আহমেদের প্রতি আমি আমার ব্যক্তিগত ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করি।
অধ্যাপক রহমতুল্লাহ আরো বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষক সমিতির নেতৃত্ব প্রদানকালে সর্বদা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ব্যানারে নিকট অতীতে সুনামগঞ্জের শাল্লা, কুমিল্লা ও নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালন এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণকে কেন্দ্র করে মৌলবাদী চক্র ও ঘোলাজলে মাছ শিকারি তথাকথিত রাজনৈতিক অপশক্তির অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচিসহ জনমত গঠনে আমার ভূমিকা গণমাধ্যমে বহুল প্রচারিত হয়েছে।’
শিক্ষক নেতা ড.রহমতুল্লাহ আরও বলেন, ‘গতকালের আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদানকালে আমি যদি অজ্ঞতাবশত কোনো শব্দ/বাক্য উচ্চারণ করে থাকি তা নিতান্তই আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল। এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি। একই সঙ্গে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে যেন কোনো ধরনের ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে সচেতন থাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী সকলের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের(টিএসসি) অডিটোরিয়ামে মুজিবনগর দিবসের এক আলোচনা সভায় অধ্যাপক মো. রহমতুল্লাহ খন্দকার মোশতাককে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এমন অভিযোগ ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানান এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অনুষ্ঠানেই বক্তব্যকে এক্সপাঞ্জ করেন। এ ঘটনায় উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। সেখানে তারা অধ্যাপক ড. মো. রহমতুল্লাহর শাস্তির দাবি জানান।
মোশতাককে ‘শ্রদ্ধা’ জানিয়ে ক্ষমা চাইলেন অধ্যাপক রহমতুল্লাহ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ