নিজস্ব প্রতিবেদক : বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পরিধি। এই মাধ্যমে গড়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজার ৫৩৭কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। কিন্তু ১০ বছর আগেও নগদবিহীন লেনদেন কল্পনা করা যেত না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একই প্ল্যাটফরমে একাধিক সেবা, নিরাপত্তা, সময় সাশ্রয়ী সুবিধা থাকায় এবং মানুষের অভ্যাসগত পরিবর্তনের ফলে মোবাইল ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতেই এক লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
একক মাস হিসেবে এটাই সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড। আগের বছরের একই সময়ে লেনদেন হয়েছিল এক লাখ ২৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে গত জানুয়ারিতে ৩২ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি লেনদেন হয়েছে। তথ্য মতে, গত বছরের জুলাই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল এক লাখ ২২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। এর পর থেকেই ক্রমাগতভাবে বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে এবং তাৎক্ষণিক আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল আর্থিক সেবা। শুধু অর্থ পাঠানোই নয়, অনেক নতুন সেবাও মিলছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা বিতরণ, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোসহ (রেমিট্যান্স) বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে। সে কারণেই দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাধ্যমটি।
দেশে বর্তমানে বিকাশ, রকেট, নগদসহ ১৩টি এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধিত অ্যাকাউন্ট ২৩ কোটি ৯৩ লাখ দুই হাজার ৯৯১টি। কিন্তু এক মাস আগেও নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৮৬ লাখ। অর্থাৎ এক মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নতুন করে সাত লাখ গ্রাহক যুক্ত হয়েছে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় অর্থাৎ জুলাই মাসে গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৩১ লাখ ২৭ হাজার। জানুয়ারি মাসে অর্থ জমা হয়েছে ৪৮ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা এবং উত্তোলন হয়েছে ৫৫ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।
এ ছাড়া জানুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা হয়েছে দুই হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা, বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা, মার্চেন্ট পেমেন্ট বা পণ্য কেনাকাটায় আট হাজার ৭০৭ কোটি টাকা এবং রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ নানা নামে ১৩টি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা দিচ্ছে। এ ছাড়া গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেওয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবামাধ্যম ব্যবহার করে।