নিজস্ব প্রতিবেদক : ভারত থেকে আসা ঢল আর ভারি বর্ষণে ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে; বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় অচল হয়ে পড়েছে প্রায় অর্ধেক টাওয়ার। তাতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বেশিরভাগ মানুষ। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিন দুপুরের পর জানান, মারাত্মক বন্যা পরিস্থিতিতে ফেনীর ৪২ দশমিক ২ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে। আর খাগড়াছড়িতে এই হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। মুহম্মদ জসীম বলেন, “বন্যা পরিস্থিতিতে সব থেকে বেশি খারাপ অবস্থা ফেনীর। এই এলাকার মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল করতে ইতোমধ্যেই ফেনীর জেলা প্রশাসকের কাছে ৫টি ভিস্যাট পাঠানো হয়েছে। “বন্যাপ্লাবিত বিভিন্ন এলাকার জনগণের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির সহায়তায় ১০টি ভিস্যাট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি চারটি মোবাইল অপারেটরের সহায়তায় বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য ৫০০ মেগাবাইট ডেটা ফ্রি করা হয়েছে।”
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত ১১টি জেলার ৬ হাজার ৯৮৬টি সাইট বা টাওয়ারের মধ্যে ৫ হাজার ৪৭৬টি সাইট সচল আছে। আর অচল হয়ে পড়েছে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ টাওয়ার। টাওয়ার সচল রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা জানিয়েছে বিটিআরসি। একইসঙ্গে ব্যাটারি ব্যাকআপ, ডিজেল জেনারেটর কিংবা পোর্টেবল জেনারেটরের মাধ্যমে টাওয়ার সচল রাখতে সংস্থাটি মোবাইল অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছে।
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু
এদিকে টেলিযোগাযোগ সেবা সচল রাখতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করার কথা জানিয়েছে বিটিআরসি। সংস্থাটি বলছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৫ জনের ইমার্জেন্সি রেসপন্স দল গঠন করা হয়েছে। তারা দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন। নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিতে ওই দল অপারেটরদের সঙ্গে সমন্বয় করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। বিটিআরসির ইমার্জেন্সি রেসপন্স দলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে +৮৮০২২২২২১৭১৫২ নম্বরে ফোন করতে হবে। বিটিআরসির কল সেন্টার ১০০ ব্যবহার করেও ওই দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।
পানিবন্দিদের উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ করছে বিজিবি
দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারের পাশাপাশি সব রকমের সহযোগিতার কাজ করে যাচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিজিবি সদর দপ্তর থেকে জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এ তথ্য জানান। বুধবার বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবন্দি অসহায় মানুষদের উদ্ধারের পাশাপাশি সব রকমের সহযোগিতা কাজ শুরু করে বিজিবি। বৃহস্পতিবার কুমিল্লা ব্যাটালিয়নের (১০ বিজিবি) বিবিরবাজার বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার গাজীপুর গ্রামে বন্যার পানিতে স্থানীয় জনসাধারণের ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। বিবিরবাজার বিওপি থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি সদস্যরা পানিবন্দি জনসাধারণকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। এদিকে খাগড়াছড়ির রামগড়ে বন্যাদুর্গত এলাকার অসহায় মানুষদের উদ্ধারকাজে সহায়তায় বিজিবি কাজ করে যাচ্ছে। রামগড় ব্যাটালিয়নের (৪৩ বিজিবি) দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষদের উদ্ধার কার্যক্রম ও তাদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছে বিজিবি। এ দিন সকালে বিজিবির রামগড় ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ আধারমানিক বিওপি দায়িত্বপূর্ণ এলাকা থেকে ৬৯টি পরিবারের ৩০৩ জনকে, নলুয়াটিলা বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার ১০৫টি পরিবারের ৬০০ জনকে (বর্তমানে উদ্ধারকৃত পরিবার প্রাইমারি স্কুলে অবস্থান করছে), লাচারীপাড়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার ৪১টি পরিবারের ২০৬ জনকে এবং লক্ষ্মীছড়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার ৮১টি পরিবারের ৪৪১ জনকে সর্বমোট ২৯৬টি পরিবারের ১৫৫০ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে বিজিবির উদ্ধারকারী দল। এছাড়া অত্র ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২০০টি অসহায় পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বন্যার পানিতে আটকে থাকা মানুষজনদের গৃহপালিত পশু যেমন ছাগল গরুসহ অন্যান্য প্রাণীদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায় বিজিবি।