প্রত্যাশা ডেস্ক: শুল্কযুদ্ধ মোকাবিলায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের প্রথম পদক্ষেপ ঘিরে শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক। আম আদমি পার্টির (আপ) আহ্বায়ক ও দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল মোদিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেশের তুলাচাষিদের পেছন থেকে ছুরি মেরেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে কেজরিওয়াল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের মুখে মোদি তুলার ওপর ১১ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এর ফলে দেশে উৎপাদিত তুলার দামের চেয়ে আমদানি করা তুলা সস্তা হবে। ফলে দেশের তুলাচাষিদের আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না।
কেন্দ্রীয় সরকার তুলার ওপর যে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে, প্রথমে তার মেয়াদ ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার তা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে কেজরিওয়াল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা তুলার দাম কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ রুপি কম হবে। ফলে ভারতের তুলাচাষিদের উৎপাদিত তুলা অবিক্রীত থেকে যাবে।
কেজরিওয়াল বলেন, ভারতের যেসব চাষি আত্মহত্যা করছেন, তাঁদের মধ্যে তুলাচাষিই সবচেয়ে বেশি। এই চাষিরা বুঝতেই পারলেন না, ট্রাম্পকে খুশি করতে মোদি সরকার কীভাবে তাঁদের পিঠে ছুরি মারলেন। কাউকে কিছু না জানিয়ে, বুঝতে না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী যা করলেন, তাতে গুজরাট, তেলেঙ্গানা, পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ অঞ্চলের লাখ লাখ তুলাচাষির জীবন বিপন্ন হবে।
দিল্লির সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে উৎপাদিত তুলা বাজারে আসতে শুরু করবে চলতি বছরের অক্টোবর থেকে। তার আগে বস্ত্র কারবারিরা যুক্তরাষ্ট্রের সস্তা তুলা কিনে গুদামজাত করে ফেলবে। অক্টোবরে দেশের তুলা বাজারে এলে কৃষকেরা তা বিক্রি করতে পারবেন না।
কেজরিওয়াল বলেন, গত বছর তুলার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সরকার কুইন্টাল প্রতি ৭ হাজার রুপি ধার্য করলেও কৃষকেরা ৬ হাজার রুপিতে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এবার কেন্দ্র সরকারের শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের ফলে সেই দামও চাষিরা পাবেন না। মাঠের তুলা মাঠেই নষ্ট হবে।
ট্রাম্পের চাপের কাছে মোদি কেন মাথা ঝোঁকাচ্ছেন সেই প্রশ্নও কেজরিওয়াল তোলেন। তিনি বলেন, আত্মসম্মান যাদের আছে, তারা মাথা নোয়াচ্ছে না। চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, মেক্সিকোর মতো দেশ পাল্টা শুল্ক চাপিয়েছে। ট্রাম্পও সুর নরম করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর জবাবে ভারতেরও উচিত সে দেশের রপ্তানির ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপানো।
কেন মোদি এমন আচরণ করছেন, সেই প্রশ্ন তুলে কেজরিওয়াল বলেন, ‘মানুষ নানা রকম কথা বলছে। নানা ব্যাখ্যা দিচ্ছে। সে দেশে (যুক্তরাষ্ট্রে) শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মামলা চলছে। মামলার হাত থেকে প্রিয় শিল্পপতিকে বাঁচাতে মোদি এভাবে ঝুঁকে গেছেন। আমেরিকার চাপ মেনে নিচ্ছেন। আদানিকে বাঁচাতে গিয়ে মোদি দেশকে বাজি ধরেছেন।’
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, মিসর ও চীন থেকে ভারত তুলা আমদানি করে। কেজরিওয়াল বলেন, সরকারের উচিত প্রত্যাহার করা ১১ শতাংশ আমদানি শুল্ক অবিলম্বে আবার জারি করা এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলার ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা। সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আম আদমি পার্টি ৭ সেপ্টেম্বর গুজরাটের সুরেন্দ্রনগর জেলায় কৃষক সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সানা/আপ্র/২৯/০৮/২০২৫