ঢাকা ০৭:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫

মোগলদের সবকিছু খারাপ হলে তাজমহল ভেঙে ফেলুন : নাসিরউদ্দিন শাহ

  • আপডেট সময় : ১০:০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৮৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : হিন্দুত্ববাদীদের কটাক্ষ করে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত ভারতের বিশিষ্ট অভিনেতা নাসিরউদ্দিন শাহর প্রশ্ন, ‘মোগলদের সবকিছুই যদি এত খারাপ, তাহলে তাজমহল, লাল কেল্লা বা কুতুব মিনার সাজিয়ে রাখা হয়েছে কেন? ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হোক।’
ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্যের পাশাপাশি প্রবীণ অভিনেতা কটাক্ষ করে বলেছেন, লাল কেল্লাকে এত পবিত্র কেন মনে করা হয়? কেন ওই স্থাপত্যের এত গুরুত্ব? ওটা তো একজন মোগলের তৈরি। তিনি বলেন, এটা ঠিক, এ দেশের ইতিহাসে মোগলদের গৌরবান্বিত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের মাথায় তুলে নাচার যেমন প্রয়োজন নেই, তেমনি তাদের খলনায়ক বানানোরও দরকার নেই।
বেসরকারি টেলিভিশন সংস্থা জি-৫-এর জন্য তৈরি ‘তাজ’ নামের একটি ওয়েব সিরিজে নাসিরউদ্দিন শাহ মোগল সম্রাট আকবরের চরিত্রে অভিনয় করছেন, তা নিয়ে কথা বলার সময় তিনি নতুন করে ভারতের ইতিহাস রচনার উদ্যোগ প্রসঙ্গে একাধিক মন্তব্য করেন। মোগলদের নামে রাখা দেশের বিভিন্ন শহর, নগর, জনপদ, রাস্তার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি তাঁর কাছে বিনোদনের খোরাক জানিয়ে বলেন, ‘ভারতের ইতিহাসে মোগল ও ব্রিটিশদের গৌরবান্বিত করা হয়েছে, এটা ঠিক। এর একটা কারণ, এই ইতিহাস প্রধানত ইংরেজদের লেখা। স্কুলের ইতিহাস বলতে আমরা প্রধানত মোগল ও ব্রিটিশদের কাহিনিই পড়ে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা লর্ড হার্ডিঞ্জ, লর্ড কর্নওয়ালিসদের কথা জেনেছি। মোগল সম্রাটদের কথা পড়েছি। কিন্তু সেইভাবে গুপ্ত, মৌর্য, বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কাহিনি পড়িনি। অজন্তা গুহাচিত্র বা উত্তর–পূর্বাঞ্চলকেও জানিনি। এটা অন্যায়।’ ইতিহাস নতুনভাবে দেশীয় দৃষ্টিতে লেখার অবশ্যই প্রয়োজন আছে জানিয়ে প্রবীণ এই অভিনেতা বলেন, কিন্তু তাই বলে এটা মনে করারও কোনো কারণ নেই যে মোগলরা এ দেশে এসেছিল স্রেফ লুট করতে। পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ সম্মানপ্রাপ্ত প্রবীণ এই অভিনেতা বলেন, মোগলরা লুটেরা নয়। তারা এ দেশকে নিজেদের বলে ভেবেছিল। এ দেশে তাদের অবদানও তাই প্রচুর। তিনি বলেন, ‘এটা ভেবে আমার খুব অবাক লাগে, হাস্যকরও লাগে, যখন দেখি লোকে আকবর ও জঘন্য খুনি নাদির শাহর তফাত বোঝে না! অথবা আকবরের সঙ্গে বাবরের প্রপিতামহ তৈমুরের পার্থক্য জানে না!’
নাসিরউদ্দিন বলেন, স্মরণাতীতকাল ধরে ইতিহাস বইয়ে মোগলদের মহিমান্বিত করা হয়েছে। সেই ইতিহাস নতুন করে রচনা অবশ্যই দরকার। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে ইতিহাস থেকে মোগলদের নাম সম্পূর্ণভাবে ধুয়েমুছে সাফ করে দিতে হবে। নাসিরউদ্দিন বলেন, আজ জনতা কোনো কিছু শুনতে চায় না। প্রশ্ন করতে চায় না। তারা শুধু অন্ধভাবে অনুসরণ করতে চায়। অতীতের দুর্দশা, বিদ্বেষকে দোষারোপ করতে চায়। ভালোর সঙ্গে মন্দের তফাত বোঝে না। বুঝতে চায় না। সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা নাসিরউদ্দিন স্পষ্টভাবেই করেন। সে জন্য হিন্দুত্ববাদীদের প্রবল আক্রমণের মোকাবিলাও তাঁকে করতে হয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মোগলদের সবকিছু খারাপ হলে তাজমহল ভেঙে ফেলুন : নাসিরউদ্দিন শাহ

আপডেট সময় : ১০:০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক : হিন্দুত্ববাদীদের কটাক্ষ করে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত ভারতের বিশিষ্ট অভিনেতা নাসিরউদ্দিন শাহর প্রশ্ন, ‘মোগলদের সবকিছুই যদি এত খারাপ, তাহলে তাজমহল, লাল কেল্লা বা কুতুব মিনার সাজিয়ে রাখা হয়েছে কেন? ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হোক।’
ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্যের পাশাপাশি প্রবীণ অভিনেতা কটাক্ষ করে বলেছেন, লাল কেল্লাকে এত পবিত্র কেন মনে করা হয়? কেন ওই স্থাপত্যের এত গুরুত্ব? ওটা তো একজন মোগলের তৈরি। তিনি বলেন, এটা ঠিক, এ দেশের ইতিহাসে মোগলদের গৌরবান্বিত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের মাথায় তুলে নাচার যেমন প্রয়োজন নেই, তেমনি তাদের খলনায়ক বানানোরও দরকার নেই।
বেসরকারি টেলিভিশন সংস্থা জি-৫-এর জন্য তৈরি ‘তাজ’ নামের একটি ওয়েব সিরিজে নাসিরউদ্দিন শাহ মোগল সম্রাট আকবরের চরিত্রে অভিনয় করছেন, তা নিয়ে কথা বলার সময় তিনি নতুন করে ভারতের ইতিহাস রচনার উদ্যোগ প্রসঙ্গে একাধিক মন্তব্য করেন। মোগলদের নামে রাখা দেশের বিভিন্ন শহর, নগর, জনপদ, রাস্তার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি তাঁর কাছে বিনোদনের খোরাক জানিয়ে বলেন, ‘ভারতের ইতিহাসে মোগল ও ব্রিটিশদের গৌরবান্বিত করা হয়েছে, এটা ঠিক। এর একটা কারণ, এই ইতিহাস প্রধানত ইংরেজদের লেখা। স্কুলের ইতিহাস বলতে আমরা প্রধানত মোগল ও ব্রিটিশদের কাহিনিই পড়ে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা লর্ড হার্ডিঞ্জ, লর্ড কর্নওয়ালিসদের কথা জেনেছি। মোগল সম্রাটদের কথা পড়েছি। কিন্তু সেইভাবে গুপ্ত, মৌর্য, বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কাহিনি পড়িনি। অজন্তা গুহাচিত্র বা উত্তর–পূর্বাঞ্চলকেও জানিনি। এটা অন্যায়।’ ইতিহাস নতুনভাবে দেশীয় দৃষ্টিতে লেখার অবশ্যই প্রয়োজন আছে জানিয়ে প্রবীণ এই অভিনেতা বলেন, কিন্তু তাই বলে এটা মনে করারও কোনো কারণ নেই যে মোগলরা এ দেশে এসেছিল স্রেফ লুট করতে। পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ সম্মানপ্রাপ্ত প্রবীণ এই অভিনেতা বলেন, মোগলরা লুটেরা নয়। তারা এ দেশকে নিজেদের বলে ভেবেছিল। এ দেশে তাদের অবদানও তাই প্রচুর। তিনি বলেন, ‘এটা ভেবে আমার খুব অবাক লাগে, হাস্যকরও লাগে, যখন দেখি লোকে আকবর ও জঘন্য খুনি নাদির শাহর তফাত বোঝে না! অথবা আকবরের সঙ্গে বাবরের প্রপিতামহ তৈমুরের পার্থক্য জানে না!’
নাসিরউদ্দিন বলেন, স্মরণাতীতকাল ধরে ইতিহাস বইয়ে মোগলদের মহিমান্বিত করা হয়েছে। সেই ইতিহাস নতুন করে রচনা অবশ্যই দরকার। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে ইতিহাস থেকে মোগলদের নাম সম্পূর্ণভাবে ধুয়েমুছে সাফ করে দিতে হবে। নাসিরউদ্দিন বলেন, আজ জনতা কোনো কিছু শুনতে চায় না। প্রশ্ন করতে চায় না। তারা শুধু অন্ধভাবে অনুসরণ করতে চায়। অতীতের দুর্দশা, বিদ্বেষকে দোষারোপ করতে চায়। ভালোর সঙ্গে মন্দের তফাত বোঝে না। বুঝতে চায় না। সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা নাসিরউদ্দিন স্পষ্টভাবেই করেন। সে জন্য হিন্দুত্ববাদীদের প্রবল আক্রমণের মোকাবিলাও তাঁকে করতে হয়।