ঢাকা ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

মোকাবেলার প্রতিশ্রুতির পরও বাড়ছে অ্যামাজনের পরিবেশ দূষণ

  • আপডেট সময় : ১১:২৯:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ অগাস্ট ২০২২
  • ৭৩ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক : ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন নিজেদের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার অগ্রদূত হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলেও কোম্পানির নিজস্ব প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভিন্ন এক বাস্তবতা; এক বছরে কোম্পানির কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ বেড়েছে ১৮ শতাংশ। অ্যামাজন বেশ ঘটা করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তৎপরতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে কার্বন নিঃসরণের প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু করেছিল ২০১৯ সালে। কিন্তু ঠিক পরের দুই বছরে কোম্পানির কার্বন নিংঃসরণের হার বেড়েছে লক্ষ্যণীয় হারে।
২০২১ সালে সাত কোটি ১৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করেছে অ্যামাজন; প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট ভার্জ বলছে, যা ১৮০টি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্টের বার্ষিক নিঃসরণের সমান। ২০১৯ সালের সঙ্গে তুলনায় ২০২১ সালে অ্যামাজনের কার্বন-ডাই-অক্সাইড দূষণের হার বেড়েছে ৪০ শতাংশ। অ্যামাজনের সাবেক প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস ২০১৯ সালে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে তার কোম্পানি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের হার শূন্যের ঘরে নামিয়ে আনবে।
ভার্জ বলছে, এমন প্রতিশ্রুতি জোরেই কার্বন নিঃসরণ সঙ্গে বিভ্রান্তিকর হিসাব দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। পরিবেশ-বান্ধব প্রকল্পে অর্থায়নের মাধ্যমে ‘নেট-জিরো’ বা ‘কার্বন নিউট্রাল’ তকমা অর্জনের পেছনে ছোটে কোম্পানিগুলো।
ওই প্রকল্পগুলোর অধীনে সাধারণত গাছ লাগানো, বনের নিরাপত্তা দেওয়া অথবা পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদন খাত নিয়ে প্রচারণা চালানোর মতো কর্মকা- থাকে। কোম্পানিগুলো দাবি করে, পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপগুলো দিয়ে নিজেদের পরিবেশ দূষণের বিরূপ প্রভাবকে শূন্যে নামিয়ে আনছে তারা।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওই পরিবেশবান্ধব প্রকল্পগুলো শিল্প খাতের দূষণের বিপরীতে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব কর্মকা-ের মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের অনিয়ন্ত্রিত উৎপাদন ও নিঃসরণ চালু রাখায় বায়ুম-লে বেড়ে চলছে এই গ্যাসের উপস্থিতি, বাড়ছে গ্রহের তাপমাত্রা।
২০১৯ সালে ‘ক্লাইমেট প্লেজ’ নামের একটি উদ্যোগ নিয়েছিল অ্যামাজন। ওই উদ্যোগে যোগ দিতে আরও বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তারা। ই-কমার্স জায়ান্টের মতোই পরিবেশবান্ধব ‘অফসেট’ প্রকল্প দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কৌশলে যোগ দিয়েছিল ওই কোম্পানিগুলো।
কিন্তু বায়ুম-লে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমানোর জন্য প্রথমে শিল্পখাতের কোম্পানিগুলো পরিবেশ দূষণে নিজেদের সরাসরি ভূমিকা না কমিয়ে বরং প্রচারণামুখী প্রকল্পে জোর দেওয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে কোম্পানিগুলোর আন্তরিকতা।
এক্ষেত্রে, অ্যামাজন কোনো ভালো উদাহরণ তৈরি করছে না বলেই মন্তব্য করেছে ভার্জ। বায়ুম-লে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি বাড়াতে নিজেদের সরাসরি ভূমিকার ওপর জোর না দিয়ে নিজস্ব ‘সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্টে কার্বনের তীব্রতা কমাতে নিজেদের সাফল্যের দিকেই জোর দিয়েছে কোম্পানিটি। নিজস্ব প্রতিবেদনে অ্যামাজন বলেছে ‘কার্বনের তীব্রতা’ ১.৯ শতাংশ কমাতে পেরেছে তারা। অর্থাৎ, কোম্পানিটি যতো পণ্য বিক্রি করেছে তার প্রতিটির বেলায় কার্বন নিঃসরণের হার সামান্য কমাতে পেরেছে তারা। কিন্তু ব্যবসায়িক প্রসারের ক্ষেত্রে এই ‘অগ্রগতি’ সহজেই নেই হয়ে যাবে বলে উঠে এসেছে ভার্জের প্রতিবেদনে। গেল বছরে মহামারীর প্রেক্ষাপটে ঠিক ওই ঘটনাই ঘটেছে বলে জানিয়েছে সাইটটি। “আমরা কোম্পানি ডিকার্বোনাইজ করতে কাজ করছি, একই সঙ্গে ব্যবসার পরিধি বাড়ছে দ্রুত গতিতে। মহামারীর সময়ে আমাদের ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে আমরা অভূতপূর্ব গতিতে ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছি,” নিজস্ব প্রতিবেদনেই বলেছে অ্যামাজন।
অর্থাৎ, মহামারীর সময়ে ই-কমার্স ব্যবসায় ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে অ্যামাজন। একইসঙ্গে বেড়েছে কোম্পানির পরিবেশ দূষণ।
ভার্জ বলছে, বায়ুম-লে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ক্রমবর্ধমান হার মোকাবেলায় কোনো কোম্পানির ভূমিকা বিচার করতে গেলে এর সার্বিক কার্বন ফুটপ্রিন্ট বিবেচনায় নেওয়ার গুরুত্বের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে অ্যামাজনের সাস্টেইনিবিলিটি রিপোর্ট এবং আগের দুই বছরের কর্মকা-। অন্যদিকে, অ্যামাজন সম্ভবত দূষণের হার নিয়েও সঠিক তথ্য দিচ্ছে না বলে আশঙ্কা করছে ভার্জ। পণ্য উৎপাদনের সময় সৃষ্ট কার্বন-ডাই-অক্সাইডের হার নিজস্ব প্রতিবেদনের অন্তর্ভূক্ত করেনি অ্যামাজন। এ ছাড়াও, ব্যাঙের ছাতার মতো যেখানে সেখানে গড়ে ওঠা অ্যামাজনের গুদাম আর ডেলিভারি ট্রাক বহরের পরোক্ষ পরিবেশ দূষণের বিষয়গুলোর উল্লেখ নেই প্রতিবেদনে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মোকাবেলার প্রতিশ্রুতির পরও বাড়ছে অ্যামাজনের পরিবেশ দূষণ

আপডেট সময় : ১১:২৯:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ অগাস্ট ২০২২

প্রযুক্তি ডেস্ক : ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন নিজেদের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার অগ্রদূত হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলেও কোম্পানির নিজস্ব প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভিন্ন এক বাস্তবতা; এক বছরে কোম্পানির কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ বেড়েছে ১৮ শতাংশ। অ্যামাজন বেশ ঘটা করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তৎপরতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে কার্বন নিঃসরণের প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু করেছিল ২০১৯ সালে। কিন্তু ঠিক পরের দুই বছরে কোম্পানির কার্বন নিংঃসরণের হার বেড়েছে লক্ষ্যণীয় হারে।
২০২১ সালে সাত কোটি ১৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করেছে অ্যামাজন; প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট ভার্জ বলছে, যা ১৮০টি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্টের বার্ষিক নিঃসরণের সমান। ২০১৯ সালের সঙ্গে তুলনায় ২০২১ সালে অ্যামাজনের কার্বন-ডাই-অক্সাইড দূষণের হার বেড়েছে ৪০ শতাংশ। অ্যামাজনের সাবেক প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস ২০১৯ সালে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে তার কোম্পানি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের হার শূন্যের ঘরে নামিয়ে আনবে।
ভার্জ বলছে, এমন প্রতিশ্রুতি জোরেই কার্বন নিঃসরণ সঙ্গে বিভ্রান্তিকর হিসাব দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। পরিবেশ-বান্ধব প্রকল্পে অর্থায়নের মাধ্যমে ‘নেট-জিরো’ বা ‘কার্বন নিউট্রাল’ তকমা অর্জনের পেছনে ছোটে কোম্পানিগুলো।
ওই প্রকল্পগুলোর অধীনে সাধারণত গাছ লাগানো, বনের নিরাপত্তা দেওয়া অথবা পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদন খাত নিয়ে প্রচারণা চালানোর মতো কর্মকা- থাকে। কোম্পানিগুলো দাবি করে, পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপগুলো দিয়ে নিজেদের পরিবেশ দূষণের বিরূপ প্রভাবকে শূন্যে নামিয়ে আনছে তারা।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওই পরিবেশবান্ধব প্রকল্পগুলো শিল্প খাতের দূষণের বিপরীতে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব কর্মকা-ের মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের অনিয়ন্ত্রিত উৎপাদন ও নিঃসরণ চালু রাখায় বায়ুম-লে বেড়ে চলছে এই গ্যাসের উপস্থিতি, বাড়ছে গ্রহের তাপমাত্রা।
২০১৯ সালে ‘ক্লাইমেট প্লেজ’ নামের একটি উদ্যোগ নিয়েছিল অ্যামাজন। ওই উদ্যোগে যোগ দিতে আরও বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তারা। ই-কমার্স জায়ান্টের মতোই পরিবেশবান্ধব ‘অফসেট’ প্রকল্প দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কৌশলে যোগ দিয়েছিল ওই কোম্পানিগুলো।
কিন্তু বায়ুম-লে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমানোর জন্য প্রথমে শিল্পখাতের কোম্পানিগুলো পরিবেশ দূষণে নিজেদের সরাসরি ভূমিকা না কমিয়ে বরং প্রচারণামুখী প্রকল্পে জোর দেওয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে কোম্পানিগুলোর আন্তরিকতা।
এক্ষেত্রে, অ্যামাজন কোনো ভালো উদাহরণ তৈরি করছে না বলেই মন্তব্য করেছে ভার্জ। বায়ুম-লে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি বাড়াতে নিজেদের সরাসরি ভূমিকার ওপর জোর না দিয়ে নিজস্ব ‘সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্টে কার্বনের তীব্রতা কমাতে নিজেদের সাফল্যের দিকেই জোর দিয়েছে কোম্পানিটি। নিজস্ব প্রতিবেদনে অ্যামাজন বলেছে ‘কার্বনের তীব্রতা’ ১.৯ শতাংশ কমাতে পেরেছে তারা। অর্থাৎ, কোম্পানিটি যতো পণ্য বিক্রি করেছে তার প্রতিটির বেলায় কার্বন নিঃসরণের হার সামান্য কমাতে পেরেছে তারা। কিন্তু ব্যবসায়িক প্রসারের ক্ষেত্রে এই ‘অগ্রগতি’ সহজেই নেই হয়ে যাবে বলে উঠে এসেছে ভার্জের প্রতিবেদনে। গেল বছরে মহামারীর প্রেক্ষাপটে ঠিক ওই ঘটনাই ঘটেছে বলে জানিয়েছে সাইটটি। “আমরা কোম্পানি ডিকার্বোনাইজ করতে কাজ করছি, একই সঙ্গে ব্যবসার পরিধি বাড়ছে দ্রুত গতিতে। মহামারীর সময়ে আমাদের ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে আমরা অভূতপূর্ব গতিতে ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছি,” নিজস্ব প্রতিবেদনেই বলেছে অ্যামাজন।
অর্থাৎ, মহামারীর সময়ে ই-কমার্স ব্যবসায় ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে অ্যামাজন। একইসঙ্গে বেড়েছে কোম্পানির পরিবেশ দূষণ।
ভার্জ বলছে, বায়ুম-লে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ক্রমবর্ধমান হার মোকাবেলায় কোনো কোম্পানির ভূমিকা বিচার করতে গেলে এর সার্বিক কার্বন ফুটপ্রিন্ট বিবেচনায় নেওয়ার গুরুত্বের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে অ্যামাজনের সাস্টেইনিবিলিটি রিপোর্ট এবং আগের দুই বছরের কর্মকা-। অন্যদিকে, অ্যামাজন সম্ভবত দূষণের হার নিয়েও সঠিক তথ্য দিচ্ছে না বলে আশঙ্কা করছে ভার্জ। পণ্য উৎপাদনের সময় সৃষ্ট কার্বন-ডাই-অক্সাইডের হার নিজস্ব প্রতিবেদনের অন্তর্ভূক্ত করেনি অ্যামাজন। এ ছাড়াও, ব্যাঙের ছাতার মতো যেখানে সেখানে গড়ে ওঠা অ্যামাজনের গুদাম আর ডেলিভারি ট্রাক বহরের পরোক্ষ পরিবেশ দূষণের বিষয়গুলোর উল্লেখ নেই প্রতিবেদনে।