ঢাকা ০৪:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫

মেয়েদের খেলা বন্ধে সমালোচনার ঝড়

  • আপডেট সময় : ০৭:৩০:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : জয়পুরহাটে মেয়েদের ফুটবল খেলার মাঠে ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় বইছে। ‘এলাকার মুসল্লি’ ও ‘মাদ্রাসার শিক্ষার্থী’ নামধারী কিছু মানুষ খেলা শুরুর আগে সমাবেশ করে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাঙচুরের আগের সমাবেশ ও ভাঙচুরের ঘটনা ফেসবুকে লাইভও করা হয়। ‘নতুন বাংলাদেশ’ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মতো ঘটনার পরে মেয়েদের খেলার অধিকার নিশ্চিত করতে পারা যাবে না এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অধিকারকর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। একইসঙ্গে তারা বলছেন, আরও বেশি বেশি করে এসব আয়োজন করতে হবে। আওয়াজ না বাড়ালে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানিয়ে বার্তা দিতে হবে। জানা গেছে, ঘটনাটি গত মঙ্গলবারের (২৮ জানুয়ারি)। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নারীদের ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করা হয়। এদিন আসরের নামাজের পর মাঠে দেওয়া টিনের বেড়া ভাঙচুর করা হয়। এর আগে স্বাধীনতা চত্বরে সমবেত হয়ে সমাবেশ করেন তারা।

খেলার মাঠের বেড়া ভাঙচুরের ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভও করা হয়। এতে দেখা যায়, তিলকপুর রেল স্টেশনের সামনে স্বাধীনতা চত্বরে মুসল্লি ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সমাবেশ করছেন। সেখানে কয়েকজন বক্তব্য দেন। তারা নারীদের পর্দার কথা উল্লেখ করে ফুটবল ম্যাচ বন্ধ রাখার দাবি জানান। একজন বক্তাকে বলতে শোনা যায়, ‘যারা মেয়েদের লেলিয়ে দিয়ে অর্থ উপার্জন করতে চান, আমি তাদের সতর্ক করতে চাই, আপনারা সাবধান হন। আগামী দিনে মেয়েদের খেলা বন্ধ করুন। যদি আপনারা বন্ধ না করেন, তাহলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।’

এই আয়োজনে বাধাদানকারীদের একজন তিলকপুর মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের বাজারে এটা করা যাবে না। আন্তর্জাতিকভাবে স্টেডিয়ামে খেলা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু এই ছোট বাজারে এই জিনিস নিয়ে এসে অশ্লীল পরিবেশ সৃষ্টি করা যাবে না। এলাকার মুসল্লিরা এক মাস ধরেই এর বিরোধিতা করে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে আসছে। ২৫ ডিসেম্বরেও তাদের কর্মসূচি ছিল।’ তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার হঠাৎ আবার যখন খেলার ঘোষণা আসে, তখন মাদ্রাসাগুলোর হুজুররাসহ দলমত নির্বিশেষে সবাই সমবেত হন। আমরা টিনে ঘেরা এই জায়গায় এ ধরনের কাজ যেন না হয়, সে কারণে টিনগুলো খুলে মাঠ পরিষ্কার করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’ ভিডিওতে টিন খোলা না, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ভেঙে ফেলছে দেখা গেছে- জানানো হলে তিনি বলেন, ‘সাধারণ জনগণ যখন এক হয়ে কোনও কাজে যায়, তখন পুরোটা আয়ত্তে থাকে না।’

তিন মাস ধরে চলা টুর্নামেন্টে কেবল মেয়েদের খেলার দিনই কেন অশ্লীলতা হবে প্রশ্ন তুলে আয়োজক কমিটির সভাপতি ও থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল হাসান বলেন, ‘এই খেলা নভেম্বরের ২ তারিখ থেকে চলছে। জেলা পর্যায়ের টুর্নামেন্ট। সবাই সময় দিতে পারে না বলে সপ্তাহে একটা-দুইটা খেলা হয়। গত ডিসেম্বরের ২৬ তারিখ মেয়েদের খেলাটা হওয়ার কথা ছিল। সে সময় বিরোধিতা করেছে। খেলা বন্ধ করে দিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে আবারও তারিখ দিয়েছি। ২৯ জানুয়ারি খেলা হওয়ার কথা। ২৮ তারিখ একটা বিশেষ মহল মাঠে ভাঙচুর চালায়।

’ এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) প্রশাসনের সঙ্গে দুইপক্ষের বসার কথা ছিল কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘খেলাই বন্ধ হয়ে গেছে, আর বসে কী হবে।’
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির আহ্বায়ক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘দেশজুড়ে আরও বেশি বেশি মেয়েদের খেলার আয়োজন করতে হবে। আরও বেশি বেশি বাউলসহ বিভিন্ন ঘরানার গানের/নাচের/পালার/নাটকের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে। বেশি বেশি মেলার আয়োজন করতে হবে। গলার আওয়াজ বাড়াতে হবে।’ ‘উই ক্যান’ সংগঠনের সমন্বয়ক জিনাত আরা হক বলেন, ‘আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে পেছনের দিকে যাওয়ার সুযোগ নাই।

যেখানে আছি সেখান থেকে সামনে যেতে হবে। স্কুলগুলোতে মেয়েদের ফুটবল খেলার সুযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। ফিফা উইমেন ফুটবলের একটি কর্মসূচি ছিল। সরকার সেসময় স্কুলগুলোতে মেয়েদের ফুটবল খেলার ব্যবস্থা করে দিতে চিঠিও দিয়েছিল। কলমাকান্দার মেয়েরা যে উঠে এসেছে, সেটি এমনি এমনি উঠে আসেনি। যে আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, সরকার যদি এর বিচার না করে, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে যাবে। তাদের স্টেটমেন্টে যেতে হবে যে তারা নারীর খেলা চায়। সরকারের ভয়েস শুনতে চাই, সে বলুক। ফুটবল খেলতে দেবে না, দোকান উদ্বোধন করতে দেবেন না, নারী বলে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা পেতে হবে, এর বিরুদ্ধে সরকারের অফিসিয়াল বার্তা দিতে হবে। তারা যে এটার (ভাঙচুরের) পক্ষে না, সেটা জানান দিতে হবে। আমরা দীর্ঘদিন আওয়াজ তুলে আসছি, সরকারের আওয়াজও শুনতে চাই।’

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মেয়েদের খেলা বন্ধে সমালোচনার ঝড়

আপডেট সময় : ০৭:৩০:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫

বিশেষ সংবাদদাতা : জয়পুরহাটে মেয়েদের ফুটবল খেলার মাঠে ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় বইছে। ‘এলাকার মুসল্লি’ ও ‘মাদ্রাসার শিক্ষার্থী’ নামধারী কিছু মানুষ খেলা শুরুর আগে সমাবেশ করে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাঙচুরের আগের সমাবেশ ও ভাঙচুরের ঘটনা ফেসবুকে লাইভও করা হয়। ‘নতুন বাংলাদেশ’ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মতো ঘটনার পরে মেয়েদের খেলার অধিকার নিশ্চিত করতে পারা যাবে না এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অধিকারকর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। একইসঙ্গে তারা বলছেন, আরও বেশি বেশি করে এসব আয়োজন করতে হবে। আওয়াজ না বাড়ালে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানিয়ে বার্তা দিতে হবে। জানা গেছে, ঘটনাটি গত মঙ্গলবারের (২৮ জানুয়ারি)। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নারীদের ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করা হয়। এদিন আসরের নামাজের পর মাঠে দেওয়া টিনের বেড়া ভাঙচুর করা হয়। এর আগে স্বাধীনতা চত্বরে সমবেত হয়ে সমাবেশ করেন তারা।

খেলার মাঠের বেড়া ভাঙচুরের ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভও করা হয়। এতে দেখা যায়, তিলকপুর রেল স্টেশনের সামনে স্বাধীনতা চত্বরে মুসল্লি ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সমাবেশ করছেন। সেখানে কয়েকজন বক্তব্য দেন। তারা নারীদের পর্দার কথা উল্লেখ করে ফুটবল ম্যাচ বন্ধ রাখার দাবি জানান। একজন বক্তাকে বলতে শোনা যায়, ‘যারা মেয়েদের লেলিয়ে দিয়ে অর্থ উপার্জন করতে চান, আমি তাদের সতর্ক করতে চাই, আপনারা সাবধান হন। আগামী দিনে মেয়েদের খেলা বন্ধ করুন। যদি আপনারা বন্ধ না করেন, তাহলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।’

এই আয়োজনে বাধাদানকারীদের একজন তিলকপুর মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের বাজারে এটা করা যাবে না। আন্তর্জাতিকভাবে স্টেডিয়ামে খেলা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু এই ছোট বাজারে এই জিনিস নিয়ে এসে অশ্লীল পরিবেশ সৃষ্টি করা যাবে না। এলাকার মুসল্লিরা এক মাস ধরেই এর বিরোধিতা করে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে আসছে। ২৫ ডিসেম্বরেও তাদের কর্মসূচি ছিল।’ তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার হঠাৎ আবার যখন খেলার ঘোষণা আসে, তখন মাদ্রাসাগুলোর হুজুররাসহ দলমত নির্বিশেষে সবাই সমবেত হন। আমরা টিনে ঘেরা এই জায়গায় এ ধরনের কাজ যেন না হয়, সে কারণে টিনগুলো খুলে মাঠ পরিষ্কার করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’ ভিডিওতে টিন খোলা না, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ভেঙে ফেলছে দেখা গেছে- জানানো হলে তিনি বলেন, ‘সাধারণ জনগণ যখন এক হয়ে কোনও কাজে যায়, তখন পুরোটা আয়ত্তে থাকে না।’

তিন মাস ধরে চলা টুর্নামেন্টে কেবল মেয়েদের খেলার দিনই কেন অশ্লীলতা হবে প্রশ্ন তুলে আয়োজক কমিটির সভাপতি ও থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল হাসান বলেন, ‘এই খেলা নভেম্বরের ২ তারিখ থেকে চলছে। জেলা পর্যায়ের টুর্নামেন্ট। সবাই সময় দিতে পারে না বলে সপ্তাহে একটা-দুইটা খেলা হয়। গত ডিসেম্বরের ২৬ তারিখ মেয়েদের খেলাটা হওয়ার কথা ছিল। সে সময় বিরোধিতা করেছে। খেলা বন্ধ করে দিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে আবারও তারিখ দিয়েছি। ২৯ জানুয়ারি খেলা হওয়ার কথা। ২৮ তারিখ একটা বিশেষ মহল মাঠে ভাঙচুর চালায়।

’ এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) প্রশাসনের সঙ্গে দুইপক্ষের বসার কথা ছিল কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘খেলাই বন্ধ হয়ে গেছে, আর বসে কী হবে।’
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির আহ্বায়ক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘দেশজুড়ে আরও বেশি বেশি মেয়েদের খেলার আয়োজন করতে হবে। আরও বেশি বেশি বাউলসহ বিভিন্ন ঘরানার গানের/নাচের/পালার/নাটকের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে। বেশি বেশি মেলার আয়োজন করতে হবে। গলার আওয়াজ বাড়াতে হবে।’ ‘উই ক্যান’ সংগঠনের সমন্বয়ক জিনাত আরা হক বলেন, ‘আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে পেছনের দিকে যাওয়ার সুযোগ নাই।

যেখানে আছি সেখান থেকে সামনে যেতে হবে। স্কুলগুলোতে মেয়েদের ফুটবল খেলার সুযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। ফিফা উইমেন ফুটবলের একটি কর্মসূচি ছিল। সরকার সেসময় স্কুলগুলোতে মেয়েদের ফুটবল খেলার ব্যবস্থা করে দিতে চিঠিও দিয়েছিল। কলমাকান্দার মেয়েরা যে উঠে এসেছে, সেটি এমনি এমনি উঠে আসেনি। যে আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, সরকার যদি এর বিচার না করে, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে যাবে। তাদের স্টেটমেন্টে যেতে হবে যে তারা নারীর খেলা চায়। সরকারের ভয়েস শুনতে চাই, সে বলুক। ফুটবল খেলতে দেবে না, দোকান উদ্বোধন করতে দেবেন না, নারী বলে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা পেতে হবে, এর বিরুদ্ধে সরকারের অফিসিয়াল বার্তা দিতে হবে। তারা যে এটার (ভাঙচুরের) পক্ষে না, সেটা জানান দিতে হবে। আমরা দীর্ঘদিন আওয়াজ তুলে আসছি, সরকারের আওয়াজও শুনতে চাই।’