ঢাকা ০৭:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫

মেহেদি পাতার গ্রামে কৃষকদের আয় দেড় কোটি টাকা

  • আপডেট সময় : ০৫:০০:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
  • ৫৫ বার পড়া হয়েছে

সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা: মেহেদির নাম শুনলেই যেন একটা উৎসব উৎসব আমেজ চোখে-মুখে ফুটে ওঠে। মেহেদিতে হাত রাঙানো ছাড়া বাঙালি নারীদের কোনো উৎসব উদযাপনই যেন শতভাগ পরিপূর্ণতা পায় না। তাই বহুকাল থেকে যে কোনো ধর্মীয় উৎসব বিয়ে-শাদিসহ বিভিন্ন পালা-পার্বণে মেহেদির ব্যবহার হয়ে আসছে। আর সেই মেহেদির বাণিজ্যিক চাষ করে ভাগ্য বদলেছে ঢাকার অদূরে সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের শ্যামলাসী বাহেরচর গ্রামের অর্ধশত কৃষকের। এতে বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা আয় করছেন তারা।
গ্রামটিতে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সবুজ মেহেদি পাতার খেত। সেসব খেতে ভোর থেকেই পাতা ও জমির পরিচর্যা কেন্দ্র করে কৃষকদের ব্যস্ততা শুরু হয়। আর এ কারণে বর্তমানে গ্রামটি মেহেদি নগর নামে পরিচিত।
মেহেদি চাষ ঘিরে গ্রামটিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেকার যুবকের। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি মেহেদি জমিতে কাজ করে বাড়তি আয় করে খুশি শ্রমিকরা। চাষিরা বলছেন, দিন দিন বাজারে এই মেহেদির কদর বাড়ছে, বাড়ছে গ্রাহকের চাহিদাও। তবে তাদের সরকারিভাবে সঠিক প্রচার-প্রচারণা ও সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে মেহেদির উৎপাদন বাড়ানো গেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
১৯৯৬ সাল থেকে মেহেদি চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী কৃষক মো. মেহেদী হাসানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমিতে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার মেহেদির চারা রোপণ করতে হয়। রোগ বালাই কম বলে রোপণের পর সামান্য পরিচর্যাতেই একটি গাছ থেকে ফলন পাওয়া যায় বছরের পর বছর। শীতের সময় মেহেদি পাতার উৎপাদন কিছুটা কম হয়। তবে বছরে অন্তত ৫ বার মেহেদি পাতা বিক্রি করা যায় এসব জমি থেকে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের এই পাতার অনেক কদর কিন্তু আমরা বাজারে ঠিকমতো সাপ্লাই দিতে পারি না। এছাড়া সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা এটি বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবো।’ পেয়ার আলী নামে আরেক মেহেদিচাষি জানান, তিনি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে মেহেদি চাষ করেন। জমি ভাড়া বাবদ বছরে ৭৫ হাজার টাকা দেন। গত বছর মেহেদি পাতার দাম ভালো ছিল। সার-কীটনাশকের খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় করেছিলেন। ১০ বিঘা জমিতে মেহেদি চাষ করেছেন কৃষক স্বপন আলী। গত ১২-১৩ বছর ধরে মেহেদি চাষ করছি। এর ওপর নির্ভর করে সংসার চলে। আমাদের বাজারে নিয়ে মেহেদি পাতা বিক্রি করতে হয় না।পাইকাররা বাগান থেকেই পাতা কিনে নিয়ে যান।
এদিকে মেহেদি চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা ও বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়ার কথা জানিয়ে সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলভীর রহমান বলেন, ‘সাভারের ভাকুর্তা অঞ্চলের মাটি মেহেদি চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী হওয়ায় এখানকার জমিতে মেহেদি চাষ করে বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা আয় করছে স্থানীয় কৃষকরা। এতে এই এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে মেহেদি চাষে লাভবান হচ্ছেন। আমরা তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি এবং জমিতে পোকার আক্রমণ হলে পরামর্শ দিই।’

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মেহেদি পাতার গ্রামে কৃষকদের আয় দেড় কোটি টাকা

আপডেট সময় : ০৫:০০:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা: মেহেদির নাম শুনলেই যেন একটা উৎসব উৎসব আমেজ চোখে-মুখে ফুটে ওঠে। মেহেদিতে হাত রাঙানো ছাড়া বাঙালি নারীদের কোনো উৎসব উদযাপনই যেন শতভাগ পরিপূর্ণতা পায় না। তাই বহুকাল থেকে যে কোনো ধর্মীয় উৎসব বিয়ে-শাদিসহ বিভিন্ন পালা-পার্বণে মেহেদির ব্যবহার হয়ে আসছে। আর সেই মেহেদির বাণিজ্যিক চাষ করে ভাগ্য বদলেছে ঢাকার অদূরে সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের শ্যামলাসী বাহেরচর গ্রামের অর্ধশত কৃষকের। এতে বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা আয় করছেন তারা।
গ্রামটিতে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সবুজ মেহেদি পাতার খেত। সেসব খেতে ভোর থেকেই পাতা ও জমির পরিচর্যা কেন্দ্র করে কৃষকদের ব্যস্ততা শুরু হয়। আর এ কারণে বর্তমানে গ্রামটি মেহেদি নগর নামে পরিচিত।
মেহেদি চাষ ঘিরে গ্রামটিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেকার যুবকের। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি মেহেদি জমিতে কাজ করে বাড়তি আয় করে খুশি শ্রমিকরা। চাষিরা বলছেন, দিন দিন বাজারে এই মেহেদির কদর বাড়ছে, বাড়ছে গ্রাহকের চাহিদাও। তবে তাদের সরকারিভাবে সঠিক প্রচার-প্রচারণা ও সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে মেহেদির উৎপাদন বাড়ানো গেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
১৯৯৬ সাল থেকে মেহেদি চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী কৃষক মো. মেহেদী হাসানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমিতে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার মেহেদির চারা রোপণ করতে হয়। রোগ বালাই কম বলে রোপণের পর সামান্য পরিচর্যাতেই একটি গাছ থেকে ফলন পাওয়া যায় বছরের পর বছর। শীতের সময় মেহেদি পাতার উৎপাদন কিছুটা কম হয়। তবে বছরে অন্তত ৫ বার মেহেদি পাতা বিক্রি করা যায় এসব জমি থেকে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের এই পাতার অনেক কদর কিন্তু আমরা বাজারে ঠিকমতো সাপ্লাই দিতে পারি না। এছাড়া সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা এটি বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবো।’ পেয়ার আলী নামে আরেক মেহেদিচাষি জানান, তিনি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে মেহেদি চাষ করেন। জমি ভাড়া বাবদ বছরে ৭৫ হাজার টাকা দেন। গত বছর মেহেদি পাতার দাম ভালো ছিল। সার-কীটনাশকের খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় করেছিলেন। ১০ বিঘা জমিতে মেহেদি চাষ করেছেন কৃষক স্বপন আলী। গত ১২-১৩ বছর ধরে মেহেদি চাষ করছি। এর ওপর নির্ভর করে সংসার চলে। আমাদের বাজারে নিয়ে মেহেদি পাতা বিক্রি করতে হয় না।পাইকাররা বাগান থেকেই পাতা কিনে নিয়ে যান।
এদিকে মেহেদি চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা ও বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়ার কথা জানিয়ে সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলভীর রহমান বলেন, ‘সাভারের ভাকুর্তা অঞ্চলের মাটি মেহেদি চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী হওয়ায় এখানকার জমিতে মেহেদি চাষ করে বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা আয় করছে স্থানীয় কৃষকরা। এতে এই এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে মেহেদি চাষে লাভবান হচ্ছেন। আমরা তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি এবং জমিতে পোকার আক্রমণ হলে পরামর্শ দিই।’