ঢাকা ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

মেরুদণ্ডের বারোটা বাজছে যে ৬ অভ্যাসে

  • আপডেট সময় : ০৭:৪২:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: দেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মেরুদ-। অথচ প্রতিদিনের ব্যস্ততায় এর যতœ নিতে ভুলে যাওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মেরুদ- বিশেষজ্ঞ ডা. রবার্ট মানকুসো ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “প্রতিদিনকার কিছু সাধারণ অভ্যাসই আমাদের পিঠের ক্ষতি করছে।”
ডেস্কে কুঁজো হয়ে বসা
দীর্ঘ সময় কুঁজো হয়ে বসা মানেই কোমর ও পিঠের ওপর বাড়তি চাপ। ‘নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিন সেন্টার ফর পেইন অ্যান্ড স্পাইন হেল্থ, ব্লুমিংডেল’-এর চিকিৎসক ডা. অ্যামার ডিভান বলেন, “এতে কোমরের পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, ‘হিপ ফ্লেক্সর’ শক্ত হয়ে যায় এবং মেরুদ-ের ডিস্কে চাপ পড়ে।”
সমাধান: চেয়ারে বসার সময় পায়ের পাতা যেন মাটিতে সোজা থাকে, মনিটর চোখের সমান উচ্চতায় থাকে এবং পিঠ সোজা থাকে- সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
নিউ হ্যাম্পশায়ার-এর লিটলটন ভিত্তিক ফিজিওথেরাপিস্ট ডা. লিন্ডসি জ্যাকসন বলেন, “মাথার মুকুট থেকে একটি সুতা আপনাকে ওপরের দিকে টেনে তুলছে, এমন কল্পনা করুন।” প্রয়োজনে লাম্বার বালিশ ব্যবহার করা উচিত এবং প্রতি ৩০ মিনিট পর পর উঠে দাঁড়িয়ে একটু হাঁটুন বা স্ট্রেচ করুন।
ভুলভাবে ভার তোলা
ব্যায়ামাগার বা বাসায়, ভুলভাবে ভার তুললে পিঠে মারাত্মক ব্যথা হতে পারে। এক হাতে কাপড় ধোয়ার ঝুড়ি, আরেক হাতে বাচ্চা। এই ধরনের টানাপোড়েন মেরুদ-ের জন্য ভয়ংকর।
সমাধান: ভার তুলতে গেলে কোমর নয়, হাঁটু ভাঁজ করুন। বসে গিয়ে বস্তুটি শরীরের কাছে টেনে তুলুন। ডা. ডিভান বলেন, “আপনার ভারকেন্দ্র নিচে নামিয়ে, পায়ের শক্তি ব্যবহার করুন, পিঠের নয়।”
মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস
মোবাইলের স্ক্রিনে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে ঘাড় ও পিঠে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ডা. ডিভানের ভাষায়, “এটি এমন, যেন সারাদিন গলায় বোলিং বল ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।”
সমাধান: মোবাইল ব্যবহার করার সময় সেটিকে চোখের সমান উচ্চতায় রাখুন। মাঝে মাঝে বিরতি নিন এবং দিন শেষে গলায় হালকা স্ট্রেচিং ও ‘চিন টাক’ অনুশীলন করুন। ডা. জ্যাকসন বলেন, “চিন টাক মানে চিবুককে পেছনের দিকে টেনে নেওয়া— দেখতে অদ্ভুত লাগলেও কার্যকরী।”
একদিকে ভারী ব্যাগ বহন
এক কাঁধে বড় ব্যাগ বা ল্যাপটপ রাখলে মেরুদ-ে অসম চাপ পড়ে। ডা. ডিভান বলেন, “এটি মেরুদ-কে কাত করে দেয় এবং পেশিগুলোকে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করে।”
সমাধান: ব্যাকপ্যাক হলে দুটি স্ট্র্যাপই ব্যবহার করুন। একদিকে ঝোলানো ভারী ব্যাগ প্রতিদিনের প্রয়োজন নয়, তাই নিয়মিত ব্যাগ হালকা করুন এবং কাঁধ পরিবর্তন করে ব্যবহার করুন।
ভুল ধরনের জুতা পরা
খারাপ মানের বা অতিরিক্ত হাই হিল জুতা শুধু পা নয়, পিঠেও প্রভাব ফেলে। ডা. মানকুসো বলেন, “হাই হিল পরলে শরীরের ভঙ্গি বদলে যায় এবং পিঠে ব্যথা সৃষ্টি হয়।”
সমাধান: হালকা ‘আর্চ সাপোর্ট’যুক্ত অর্থাৎ পায়ের পাতার বাঁকানো অংশের ভর নেয় এবং ‘নিউট্রাল রাইজ’—অর্থাৎ পায়ের আঙুল ও গোড়ালির উচ্চতার পার্থক্য কম এমন জুতা বেছে নিতে হবে।
গবেষণা বলছে, দুই ঘণ্টা হাই হিল পরার পর ব্যথার মাত্রা এক পয়েন্ট (০ থেকে ১০ স্কেলে) বেড়ে যায়। তাই প্রয়োজন ছাড়া হাই হিল না পরাই ভালো।
পেটের ওপর শুয়ে ঘুমানো
যদিও অনেকেই এই ভঙ্গিতে ঘুমাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তবে এটি মেরুদ-ের জন্য উপযুক্ত নয়। ডা. জ্যাকসন বলেন, “পেটের ওপর শুয়ে ঘুমালে বা অনুপযুক্ত বালিশ ব্যবহার করলে পিঠে ব্যথা হতে পারে।”
সমাধান: পাশ হয়ে ঘুমানো বা পিঠের ওপর শোয়া মেরুদ-ের জন্য ভালো। পাশ হয়ে শুলে হাঁটুর মাঝখানে বালিশ দিতে হবে। আর পিঠে শুলে হাঁটুর নিচে বালিশ রাখতে হবে। ঘাড় ঠিক রাখতে আরামদায়ক বালিশ ব্যবহার করুন।
অতিরিক্ত যত্ন নিতে যা করা উচিত
চলাফেরা করা: দীর্ঘ সময় বসে থাকলে কোমরে চাপ পড়ে। প্রতি ঘণ্টায় উঠে দাঁড়িয়ে একটু হাঁটতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করা, যেমন- হাঁটা, সাঁতার, নাচ বা যোগব্যায়াম করা উপকারী।
‘কোর’ শক্তি বাড়ান: প্ল্যাংক, গ্লুট ব্রিজ, বার্ড-ডগ— এসব হালকা ব্যায়াম প্রতিদিন ১৫ মিনিট করলেই পিঠের শক্তি বাড়বে।
নিয়মিত স্ট্রেচ করা: সকাল শুরু করুন ‘ক্যাট-কাও’, কোমর মোচড়ানো এবং ‘হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ’ দিয়ে।
সঠিক ভঙ্গিমায় থাকা: দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায় মাথা উঁচু, ঘাড় লম্বা এবং কাঁধ ঢিলা রাখতে হবে।
অ্যাগোনোমিক গিয়ার ব্যবহার করা: কাজের ডেস্কে আরামদায়ক চেয়ার বা ‘সাপোর্ট গিয়ার’ ব্যবহার করা উপকারী।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে যখন
ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে গরম সেঁক, বরফ বা স্ট্রেচেও না কমলে, ব্যথা হাত বা পায়ে ছড়িয়ে পড়লে, ঝিমঝিম, অসাড়তা বা দুর্বলতা হচ্ছে, দৈনন্দিন কাজ বা ঘুম ব্যাহত হচ্ছে, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, জ্বর বা রাতের বেলায় বেশি ব্যথা- এমন ক্ষেত্রে পরামর্শ নিতে হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ইইউ ও মেক্সিকোর ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

মেরুদণ্ডের বারোটা বাজছে যে ৬ অভ্যাসে

আপডেট সময় : ০৭:৪২:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: দেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মেরুদ-। অথচ প্রতিদিনের ব্যস্ততায় এর যতœ নিতে ভুলে যাওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মেরুদ- বিশেষজ্ঞ ডা. রবার্ট মানকুসো ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “প্রতিদিনকার কিছু সাধারণ অভ্যাসই আমাদের পিঠের ক্ষতি করছে।”
ডেস্কে কুঁজো হয়ে বসা
দীর্ঘ সময় কুঁজো হয়ে বসা মানেই কোমর ও পিঠের ওপর বাড়তি চাপ। ‘নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিন সেন্টার ফর পেইন অ্যান্ড স্পাইন হেল্থ, ব্লুমিংডেল’-এর চিকিৎসক ডা. অ্যামার ডিভান বলেন, “এতে কোমরের পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, ‘হিপ ফ্লেক্সর’ শক্ত হয়ে যায় এবং মেরুদ-ের ডিস্কে চাপ পড়ে।”
সমাধান: চেয়ারে বসার সময় পায়ের পাতা যেন মাটিতে সোজা থাকে, মনিটর চোখের সমান উচ্চতায় থাকে এবং পিঠ সোজা থাকে- সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
নিউ হ্যাম্পশায়ার-এর লিটলটন ভিত্তিক ফিজিওথেরাপিস্ট ডা. লিন্ডসি জ্যাকসন বলেন, “মাথার মুকুট থেকে একটি সুতা আপনাকে ওপরের দিকে টেনে তুলছে, এমন কল্পনা করুন।” প্রয়োজনে লাম্বার বালিশ ব্যবহার করা উচিত এবং প্রতি ৩০ মিনিট পর পর উঠে দাঁড়িয়ে একটু হাঁটুন বা স্ট্রেচ করুন।
ভুলভাবে ভার তোলা
ব্যায়ামাগার বা বাসায়, ভুলভাবে ভার তুললে পিঠে মারাত্মক ব্যথা হতে পারে। এক হাতে কাপড় ধোয়ার ঝুড়ি, আরেক হাতে বাচ্চা। এই ধরনের টানাপোড়েন মেরুদ-ের জন্য ভয়ংকর।
সমাধান: ভার তুলতে গেলে কোমর নয়, হাঁটু ভাঁজ করুন। বসে গিয়ে বস্তুটি শরীরের কাছে টেনে তুলুন। ডা. ডিভান বলেন, “আপনার ভারকেন্দ্র নিচে নামিয়ে, পায়ের শক্তি ব্যবহার করুন, পিঠের নয়।”
মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস
মোবাইলের স্ক্রিনে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে ঘাড় ও পিঠে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ডা. ডিভানের ভাষায়, “এটি এমন, যেন সারাদিন গলায় বোলিং বল ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।”
সমাধান: মোবাইল ব্যবহার করার সময় সেটিকে চোখের সমান উচ্চতায় রাখুন। মাঝে মাঝে বিরতি নিন এবং দিন শেষে গলায় হালকা স্ট্রেচিং ও ‘চিন টাক’ অনুশীলন করুন। ডা. জ্যাকসন বলেন, “চিন টাক মানে চিবুককে পেছনের দিকে টেনে নেওয়া— দেখতে অদ্ভুত লাগলেও কার্যকরী।”
একদিকে ভারী ব্যাগ বহন
এক কাঁধে বড় ব্যাগ বা ল্যাপটপ রাখলে মেরুদ-ে অসম চাপ পড়ে। ডা. ডিভান বলেন, “এটি মেরুদ-কে কাত করে দেয় এবং পেশিগুলোকে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করে।”
সমাধান: ব্যাকপ্যাক হলে দুটি স্ট্র্যাপই ব্যবহার করুন। একদিকে ঝোলানো ভারী ব্যাগ প্রতিদিনের প্রয়োজন নয়, তাই নিয়মিত ব্যাগ হালকা করুন এবং কাঁধ পরিবর্তন করে ব্যবহার করুন।
ভুল ধরনের জুতা পরা
খারাপ মানের বা অতিরিক্ত হাই হিল জুতা শুধু পা নয়, পিঠেও প্রভাব ফেলে। ডা. মানকুসো বলেন, “হাই হিল পরলে শরীরের ভঙ্গি বদলে যায় এবং পিঠে ব্যথা সৃষ্টি হয়।”
সমাধান: হালকা ‘আর্চ সাপোর্ট’যুক্ত অর্থাৎ পায়ের পাতার বাঁকানো অংশের ভর নেয় এবং ‘নিউট্রাল রাইজ’—অর্থাৎ পায়ের আঙুল ও গোড়ালির উচ্চতার পার্থক্য কম এমন জুতা বেছে নিতে হবে।
গবেষণা বলছে, দুই ঘণ্টা হাই হিল পরার পর ব্যথার মাত্রা এক পয়েন্ট (০ থেকে ১০ স্কেলে) বেড়ে যায়। তাই প্রয়োজন ছাড়া হাই হিল না পরাই ভালো।
পেটের ওপর শুয়ে ঘুমানো
যদিও অনেকেই এই ভঙ্গিতে ঘুমাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তবে এটি মেরুদ-ের জন্য উপযুক্ত নয়। ডা. জ্যাকসন বলেন, “পেটের ওপর শুয়ে ঘুমালে বা অনুপযুক্ত বালিশ ব্যবহার করলে পিঠে ব্যথা হতে পারে।”
সমাধান: পাশ হয়ে ঘুমানো বা পিঠের ওপর শোয়া মেরুদ-ের জন্য ভালো। পাশ হয়ে শুলে হাঁটুর মাঝখানে বালিশ দিতে হবে। আর পিঠে শুলে হাঁটুর নিচে বালিশ রাখতে হবে। ঘাড় ঠিক রাখতে আরামদায়ক বালিশ ব্যবহার করুন।
অতিরিক্ত যত্ন নিতে যা করা উচিত
চলাফেরা করা: দীর্ঘ সময় বসে থাকলে কোমরে চাপ পড়ে। প্রতি ঘণ্টায় উঠে দাঁড়িয়ে একটু হাঁটতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করা, যেমন- হাঁটা, সাঁতার, নাচ বা যোগব্যায়াম করা উপকারী।
‘কোর’ শক্তি বাড়ান: প্ল্যাংক, গ্লুট ব্রিজ, বার্ড-ডগ— এসব হালকা ব্যায়াম প্রতিদিন ১৫ মিনিট করলেই পিঠের শক্তি বাড়বে।
নিয়মিত স্ট্রেচ করা: সকাল শুরু করুন ‘ক্যাট-কাও’, কোমর মোচড়ানো এবং ‘হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ’ দিয়ে।
সঠিক ভঙ্গিমায় থাকা: দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায় মাথা উঁচু, ঘাড় লম্বা এবং কাঁধ ঢিলা রাখতে হবে।
অ্যাগোনোমিক গিয়ার ব্যবহার করা: কাজের ডেস্কে আরামদায়ক চেয়ার বা ‘সাপোর্ট গিয়ার’ ব্যবহার করা উপকারী।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে যখন
ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে গরম সেঁক, বরফ বা স্ট্রেচেও না কমলে, ব্যথা হাত বা পায়ে ছড়িয়ে পড়লে, ঝিমঝিম, অসাড়তা বা দুর্বলতা হচ্ছে, দৈনন্দিন কাজ বা ঘুম ব্যাহত হচ্ছে, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, জ্বর বা রাতের বেলায় বেশি ব্যথা- এমন ক্ষেত্রে পরামর্শ নিতে হবে।