নারী ও শিশু ডেস্ক: মেয়েটাকে অতাও চিনতাম না যে, আজ স্মরণ করতে হবে! তবে মেয়েটা যা করেছেথÑ আজ, কাল, পরশু কেন; সারাজীবন তাকে মনে রাখব। যতদিন গহনা নিয়ে মেয়েদের দর উঠবে-নামবে, ততদিন স্মৃতি মেয়েটিকে ভুলতে দেবে না।
ঘটনা ছোট। এক নিঃশ্বাসে বলার চেষ্টা করি! বিয়ের আগে বরপক্ষ টাকা পয়সার সঙ্গে পাঁচ ভরি গহনাও চেয়েছিল। না, বর পরবে, এ কারণে নয়; মেয়ের শরীরে জড়িয়ে দিতে হবে।
মেয়ের দুই ভাই ওমান দেশে থাকে বহুদিন ধরে। সামর্থ্য কম, এমনটা নয়। কিন্তু যেহেতু হারজিতের প্রশ্ন আছে গহনার সঙ্গে, মেয়ের ভাইয়েরা বিষয়টা ঝুলিয়ে দিলো। তারা বললো, বিয়ের সময় নগদ এক লাখ টাকা দেয়া হবে। তবে গহনাটা কিছুদিন পরে!
বিয়ের মাস পার না হতেই মেয়ে পৃথিবীতে আরেকজনকে আনতে চলেছে। এবার ভাইয়েরা গহনা দিল। বরপক্ষ খুশি।
তারপর মেয়ের সন্তান বাবার বাড়িতেই হবে, সিদ্ধান্ত হলো। সন্তান হবার আগে মেয়ের অবস্থা ভয়ানক নাজুক হয়ে গেল। এই মরে, সেই মরে! তখন মেয়ের বাবা, তার চিকিৎসার জন্য মেয়ের গহনাগুলোই বিক্রি করলেন! নতুন সদস্য এলো! সকলে সব ভুলে গেল। তারপর বরপক্ষ গহনা ফেরত চাইলো।
কনেপক্ষ বললো, ও তো তোমার ছেলে হতে গিয়েই খরচ হয়েছে। বরপক্ষের যুক্তি, এ হবে না। এসব খরচ করলেন কেন? একদিন রাগের বশে বর, শ্বশুর, ননদ মিলে আচ্ছাসে ধোলাই দিল মেয়েটিকে।
বোকা মেয়ের সব রাগ গিয়ে পড়লো মা-বাবার ওপর। সে তখনই রওনা দিল বাবার বাড়িতে। এবং বাবার বাড়ির দালান-বাড়ির ফ্যানে ঝুলিয়ে দিল তার শরীর! কাহিনি খতম! খাল্লাশ!
অপর্ণা সেনের গহনার বাক্স সিনেমাটা দেখেছেন? এক বৃদ্ধার গহনার বাক্সে তাল তাল গহনা। আর এই গহনার জোরেই বৃদ্ধা সংসারে ঠাঁই পায়, পায় মর্যাদা!
বিয়ের আগে গহনার দোকানে ভিড় করছে ছেলেরা। চোখে মুখে খুশি উপচে পড়ছে। পছন্দসই কানের দুল, কানফুল, সীতাহার, বাজুবন্ধ, নূপুর কিনছে। না, অন্য কারো জন্য নয়। কিনছে নিজে পরবে বলে।
বিয়েতে এখন তো যৌতুকের চল নেই। খবর পেলে পুলিশ ধরবে বলে! এখন উপহারের চল। তা সেই উপহারের মধ্যে ছেলেদের গহনা দেয়া প্রচলিত আইন হয়েছে। মেয়ের মা ছেলেকে আশীর্বাদ করতে এসে পাঁচ-ছ’ ভরি গহনা পরিয়ে গেলেন ছেলেকে। অথবা বাসর রাতে কনে, তার প্রিয় বরকে উপহার দিল একটা নেকলেস!
আচ্ছা, এবার আরেকটু কষ্ট করুন। যে মেয়েটার গল্প বললাম, মেয়েটার জায়গায় একটা ছেলেকে বসিয়ে দিন। ছেলেটাকে বিয়েতে গহনা দেয়নি বলে সে ফ্যানে দেহটা ঝুলিয়ে দিল।
উৎসবে মেয়েরা নয়, ছেলেরা নতুন নতুন গহনা পরে অন্যদের দেখাচ্ছে! কল্পনা করা যাচ্ছে?
যদি এসব কল্পনা কঠিন হয়, তাহলে অন্য কল্পনা করুন। যেমনÑ একটি পরিবার। সেখানে একটা মেয়ে সম্পত্তির বেশি অংশ পাবে। আর যে ধর্মে মেয়েটি কিছুই পাচ্ছে না, সেখানে মেয়েরাই সব পাচ্ছে, ছেলেরা আমের আঁটি!
তখন কি হবে, জানেন? গহনার প্রতি ছেলেদের আগ্রহ যাবে বেড়ে! ঘরে ঘরে গহনার রাজনীতিতে তখন মেয়েরা নয়, ছেলেরা যুক্ত হবে। সম্পত্তিতে সমান অধিকার নেই যে! তারা সোনা, হিরে, জহরত পেলে- গোলাম হয়ে যাবে অন্যের! ভবিষ্যতের চিন্তায় একটু একটু করে গহনা জমাবে। আর স্ত্রীর কাছে বায়না করবে, এই শুনছো, এ মাসে আমাকে একটা টিকলি গড়িয়ে দাও না গো’!
যদি পড়তে পড়তে হাসি চলে আসে, তাহলে অন্য একটা দৃশ্য কল্পনা করুন। পৃথিবীর সকল স্থানে, সব ধর্মে, সকল আইনে মেয়েদের যতা সম্পত্তি দেয়া হচ্ছে, পুরুষদেরও ততাই। এক চুল কম নয়, বেশিও নয়।
তখন গহনা মানেই স্ত্রীধন, কথাটা জাদুঘরে ঠাঁই পাবে। লোকে পড়বে, তবে ফ্যাশন বা স্টাইল অর্থে! গৌরব বা বিপদের কান্ডারী হিসেবে নয়! মর্যাদার অলংকার হিসেবে নয়।
দিন নাকি এতো পাল্টেছে! মানুষ রোবটের হাতে খাবার খাচ্ছে। মঙ্গলে জল পাওয়া যাচ্ছে! তো এবার মেয়েদের শেকল পড়ানোর ছলটা ভাঙুন না! গহনার নামে মেয়েদের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে চলা ভাঁওতাবাজি বন্ধ করুন। গহনা নয়, মেয়েদের মর্যাদা দিতে শিখুন। সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকার দিন! দয়া করে গহনার রাজনীতি থেকে মেয়েদের বেরোতে দিন। তাহলে গহনার বাক্সের গল্পটার অন্তত ইতি ঘটবে!