প্রযুক্তি ডেস্ক : মেয়াদকালের মধ্যে যেকোনও প্যাকেজ গ্রহণ করলেই নতুন প্যাকেজে অব্যবহৃত ডাটা যুক্ত হওয়া উচিত। ডাটার মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে নজর দেওয়ার পাশাপাশি মানসম্পন্ন ডাটা সেবার নিশ্চয়তা দিতে হবে। দেশে ১৮ কোটির অধিক মোবাইল সংযোগ রয়েছে, তাই গ্রাহকরা যাতে উপৃকত হয়, সে লক্ষ্যেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার (৩০ মে) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সম্মেলনকক্ষে মানসম্মত টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে মোবাইল অপারেটরদের প্যাকেজ ও ডাটার (ইন্টারনেট) মূল্য নিয়ে মতবিনিময় সভা হয়েছে।
সভায় কমিশনের স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ। সভায় টেলিকম সেবাগ্রহীতা, মোবাইল অপারেটরের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও টেলিকম বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ প্যাকেজ সংখ্যা ও ডাটার মূল্যের ওপর অনলাইনে গ্রাহক জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন। জরিপে অংশ নেন ৫৪৯ জন। অব্যবহৃত ডাটা পরবর্তী প্যাকেজে যুক্ত হওয়ার পদ্ধতি কেমন হওয়া উচিত, এমন প্রশ্নের উত্তরে ৮৭ দশমিক ৮ ভাগ বলেছেন, মেয়াদকালের মধ্যে যেকোনও প্যাকেজ গ্রহণ করলেই নতুন প্যাকেজে অব্যবহৃত ডাটা যুক্ত হওয়া উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাইনুল ইসলাম বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ডাটার মূল্য নির্ধারণে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন হয় না। মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে নজর দেওয়ার পাশাপাশি মানসম্পন্ন ডাটা সেবার নিশ্চয়তা দিতে হবে। অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব.) বলেন, প্রতেক গ্রাহকের ডাটা প্যাকেজের চাহিদা আলাদা। সাধারণ গ্রাহকের জন্য অপারেটররা ৫০টি নিয়মিত প্যাকেজ চালু করেছে, যা গ্রাহক চাহিদা বিবেচনায় বেশি বলে প্রতীয়মান নয়। টেলিকম বিশেষজ্ঞ আবু সাঈদ খান বলেন, গ্রাহকদের জন্য মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিতে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানে সাপ্লাই লাইনে (সরবরাহ লাইন) যেসব অসংগতি রয়েছে, সেগুলো সমাধান করতে হবে, যাতে গ্রাহক কোনোভাবে প্রতারিত না হয়। টেলিটকের অ্যাডিশনাল জেনারেল ম্যানেজার সাইফুর রহমান খান বলেন, গ্রাহকের মতামতের ওপর গুরুত্ব দিয়ে টেলিটক ডাটা প্যাকেজের পরবর্তী মূল্য ও সংখ্যা নির্ধারণ করবে। রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদুল আলম বলেন, গ্রাহক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অপারেটরদের প্যাকেজ নির্ধারণ করতে হয় বলেই ডাটা প্যাকেজের সংখ্যা বেশি মনে হয়। কর কমানো হলে ডাটার দাম কমানো সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি। বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, বছরখানেক আগে ডাটা মূল্য নিয়ে বেশি আলোচনা হলেও বর্তমানে সেবার মান নিয়ে গ্রাহকরা প্রশ্ন তুলছেন বেশি। বিভিন্ন পর্যায়ে অপারেটরদের পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ডাটার দাম চাইলেই কমানো সম্ভব হয় না। গ্রামীণফোনের সিনিয়র ডিরেক্টর (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) হোসেইন সাদাত বলেন, অপারেটর ও গ্রাহকদের মতামত নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিটিআরসির পক্ষে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব-উল-আলম বলেন, বিটিআরসির দায়িত্ব হলো নিরপেক্ষ ভূমিকায় থেকে অপারেটর ও গ্রাহক উভয়ের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ‘এক দেশ এক রেট’ যেভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে, তেমনিভাবে মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় ‘এক দেশ এক রেট’ চালু করা দরকার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রাহকের মতামত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে আমরা একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবো। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘরে ঘরে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে ১৮ কোটির অধিক মোবাইল সংযোগ রয়েছে, তাই গ্রাহকরা যাতে উপৃকত হয়, সে লক্ষ্যেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।