ঢাকা ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

মেয়র তাপসের মাঠ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হামলা

  • আপডেট সময় : ০২:১৭:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২২
  • ৫২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের উপস্থিতিতে একটি মাঠ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে পুরান ঢাকার বকশীবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ। হামলার ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মাদ্রাসার দক্ষিণ পাশের একটি মাঠ উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনাটি ঘটে। মাঠ উদ্বোধনের সময় ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। এতে স্থানীয় কাউন্সিলরের কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। স্থানীয় ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওমর বিন আবদুুল আজিজ ও ডিএসসিসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠটির মালিকানা দাবি করে আসছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, মাঠটির মালিক তারা। তারা মাঠটি প্যারেড গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। মাঠের মালিকানা নিয়ে মাদ্রাসা ও কারা কর্তৃপক্ষের মধ্যে আদালতে মামলা চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে ডিএসসিসি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা মাঠটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। কারণ, আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন এলাকার মাঠ দেখার দায়িত্ব ডিএসসিসির। মাঠটির সংস্কার কার্যক্রম শুরু করতে গিয়েও বাধার মুখে পড়েন ডিএসসিসির প্রকৌশলীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির দায়িত্বশীল এক প্রকৌশলী বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা চাচ্ছেন, মাঠটির নাম হোক ‘ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ’। কিন্তু ডিএসসিসি নাম দিয়েছে ‘বকশীবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ’। মাঠের নামকরণ নিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আপত্তি ছিল। এ কারণেই আজ তাঁরা হামলা চালিয়েছেন। সংস্কারকাজ শেষে মাস দেড়েক আগে মাঠের মূল ফটকে নামফলক বসাতে গিয়েছিলেন ডিএসসিসির কর্মকর্তারা। তখন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ডিএসসিসির কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। তখন অবশ্য হামলার ঘটনা ঘটেনি।
ডিএসসিসির এই প্রকৌশলী বলেন, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার দুপুরে মাঠটি উদ্বোধনের সময়সূচি নির্ধারিত ছিল। খবর পেয়ে সকাল থেকে মাদ্রাসার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মাঠ এলাকায় অবস্থান নেন। তাঁরা ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক অ্যাকশন’ বলেও তাঁরা স্লোগান দেন। বকশীবাজার এলাকায় মেয়র পৌঁছার পরও তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন। নামফলকের সামনে লাগানো কাপড়টি যখন মেয়র সরিয়ে উদ্বোধন করতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানে আসা লোকজনের ওপর হামলা চালান। এ ঘটনার পরই সেখান থেকে চলে যান মেয়র। ডিএসসিসির মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাসের বলেন, ‘এ ঘটনায় মেয়রের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তিনি নামফলক উদ্বোধন শেষে নিরাপদে নগর ভবন এসেছেন।’
কাউন্সিলর ওমর বিন আবদুল আজিজ বলেন, হামলার ঘটনায় তাঁর এক কর্মীর চোখের ওপর ইটের অংশ এসে পড়ে। এতে তাঁর চোখ জখম হয়েছে।

ঢাকায় আলিয়া মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জোবায়ের খান বলেন, ‘১৯৮৬ সাল থেকে মাঠটির মালিকানা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বিরোধ চলছে। এখন এই মাঠের মালিকানা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মামলা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে ডিএসসিসি বলে, তারা মাঠের সংস্কারকাজ করবে। আমরা প্রথমে আপত্তি জানিয়েছিলাম। পরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে ডেকে ডিএসসিসি বলে, শিক্ষার্থীরা যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই করা হবে। কিন্তু হঠাৎ বুধবার নামফলকে বকশীবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ নামকরণ করে মাঠের উদ্বোধন করা হচ্ছে শুনে শিক্ষার্থীরা সেখানে জড়ো হন। তাঁরা এই নামকরণের প্রতিবাদ জানান। একপর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিপেটা করে। কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এই ঘটনায় অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।’
হামলার বিষয় জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, আন্দোলনকারীদের মধ্যে জামাত-বিএনপির লোকজন থাকতে পারেন। পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য অতি উৎসাহী হয়ে তাঁরা হামলা চালাতে পারেন। কিন্তু এই ঘটনার পর ছাত্রলীগ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র বলছে, মাঠটিতে আগে অপরাধমূলক কাজ হতো। এ জন্য তারা মাঠের চারপাশের দেয়াল ভেঙে এমনভাবে সীমানা প্রাচীর করেছে, যাতে বাইরে থেকে ভেতরের অংশ দেখা যায়। মাঠে বালু ফেলে খেলার উপযোগী করেছে ডিএসসিসি। এ জন্য ডিএসসিসির এখন পর্যন্ত ৫৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন বকশিবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের আয়তন ২.৯১ একর। এর মধ্যে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার মালিকানা রয়েছে মাত্র ০.৫১ একরের। তারা কিভাবে পুরো মাঠের মালিকানা দাবি করে ঘৃন্য এই কাজ করছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মেয়র তাপসের মাঠ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হামলা

আপডেট সময় : ০২:১৭:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের উপস্থিতিতে একটি মাঠ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে পুরান ঢাকার বকশীবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ। হামলার ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মাদ্রাসার দক্ষিণ পাশের একটি মাঠ উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনাটি ঘটে। মাঠ উদ্বোধনের সময় ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। এতে স্থানীয় কাউন্সিলরের কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। স্থানীয় ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওমর বিন আবদুুল আজিজ ও ডিএসসিসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠটির মালিকানা দাবি করে আসছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, মাঠটির মালিক তারা। তারা মাঠটি প্যারেড গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। মাঠের মালিকানা নিয়ে মাদ্রাসা ও কারা কর্তৃপক্ষের মধ্যে আদালতে মামলা চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে ডিএসসিসি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা মাঠটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। কারণ, আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন এলাকার মাঠ দেখার দায়িত্ব ডিএসসিসির। মাঠটির সংস্কার কার্যক্রম শুরু করতে গিয়েও বাধার মুখে পড়েন ডিএসসিসির প্রকৌশলীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির দায়িত্বশীল এক প্রকৌশলী বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা চাচ্ছেন, মাঠটির নাম হোক ‘ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ’। কিন্তু ডিএসসিসি নাম দিয়েছে ‘বকশীবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ’। মাঠের নামকরণ নিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আপত্তি ছিল। এ কারণেই আজ তাঁরা হামলা চালিয়েছেন। সংস্কারকাজ শেষে মাস দেড়েক আগে মাঠের মূল ফটকে নামফলক বসাতে গিয়েছিলেন ডিএসসিসির কর্মকর্তারা। তখন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ডিএসসিসির কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। তখন অবশ্য হামলার ঘটনা ঘটেনি।
ডিএসসিসির এই প্রকৌশলী বলেন, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার দুপুরে মাঠটি উদ্বোধনের সময়সূচি নির্ধারিত ছিল। খবর পেয়ে সকাল থেকে মাদ্রাসার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মাঠ এলাকায় অবস্থান নেন। তাঁরা ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক অ্যাকশন’ বলেও তাঁরা স্লোগান দেন। বকশীবাজার এলাকায় মেয়র পৌঁছার পরও তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন। নামফলকের সামনে লাগানো কাপড়টি যখন মেয়র সরিয়ে উদ্বোধন করতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানে আসা লোকজনের ওপর হামলা চালান। এ ঘটনার পরই সেখান থেকে চলে যান মেয়র। ডিএসসিসির মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাসের বলেন, ‘এ ঘটনায় মেয়রের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তিনি নামফলক উদ্বোধন শেষে নিরাপদে নগর ভবন এসেছেন।’
কাউন্সিলর ওমর বিন আবদুল আজিজ বলেন, হামলার ঘটনায় তাঁর এক কর্মীর চোখের ওপর ইটের অংশ এসে পড়ে। এতে তাঁর চোখ জখম হয়েছে।

ঢাকায় আলিয়া মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জোবায়ের খান বলেন, ‘১৯৮৬ সাল থেকে মাঠটির মালিকানা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বিরোধ চলছে। এখন এই মাঠের মালিকানা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মামলা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে ডিএসসিসি বলে, তারা মাঠের সংস্কারকাজ করবে। আমরা প্রথমে আপত্তি জানিয়েছিলাম। পরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে ডেকে ডিএসসিসি বলে, শিক্ষার্থীরা যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই করা হবে। কিন্তু হঠাৎ বুধবার নামফলকে বকশীবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ নামকরণ করে মাঠের উদ্বোধন করা হচ্ছে শুনে শিক্ষার্থীরা সেখানে জড়ো হন। তাঁরা এই নামকরণের প্রতিবাদ জানান। একপর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিপেটা করে। কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এই ঘটনায় অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।’
হামলার বিষয় জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, আন্দোলনকারীদের মধ্যে জামাত-বিএনপির লোকজন থাকতে পারেন। পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য অতি উৎসাহী হয়ে তাঁরা হামলা চালাতে পারেন। কিন্তু এই ঘটনার পর ছাত্রলীগ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র বলছে, মাঠটিতে আগে অপরাধমূলক কাজ হতো। এ জন্য তারা মাঠের চারপাশের দেয়াল ভেঙে এমনভাবে সীমানা প্রাচীর করেছে, যাতে বাইরে থেকে ভেতরের অংশ দেখা যায়। মাঠে বালু ফেলে খেলার উপযোগী করেছে ডিএসসিসি। এ জন্য ডিএসসিসির এখন পর্যন্ত ৫৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন বকশিবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের আয়তন ২.৯১ একর। এর মধ্যে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার মালিকানা রয়েছে মাত্র ০.৫১ একরের। তারা কিভাবে পুরো মাঠের মালিকানা দাবি করে ঘৃন্য এই কাজ করছে।