ঢাকা ০৩:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫

মেট্রোরেল ২০৩০ সালের মধ্যে চালু হবে ছয়টি লাইন

  • আপডেট সময় : ০২:৪৪:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৪
  • ৯৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানী ঢাকা যানজট কমাতে ও নগরবাসীকে দ্রুত যাত্রা সেবা দিতে ২০৩০ সালের মধ্যে মেট্রোরেলের ছয়টি লাইন চালু হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
গতকাল শনিবার উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের ডিপোতে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ উদ্বোধন শেষে একথা বলেন তিনি। এসময় রাজধানীর উত্তরা থেকে টঙ্গি পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণের জন্য সমীক্ষা চলছে বলে জানিয়েছেন সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের বলেন, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত অংশের নির্মাণ কাজ আগামী বছরে জুনে শেষ হবে। বিশ্ব ইজতেমা, বইমেলা সহ বিভিন্ন দিবসে মেট্রোরেলের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেলে যাত্রীদের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ২০৩০ সাল নাগাদ চালু হবে মেট্রোরেলের ছয়টি লাইন। ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। দিয়াবাড়িস্থ ডিএমটিসিএল ভবনে বঙ্গবন্ধু কর্নারের শুভ উদ্বোধন করা হল। এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মেট্রোরেল একটি অনন্য মাইফলক। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ এমআরটি লাইন-৬ এর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের শুভ উদ্বোধন করেছিলেন। পরবর্তিতে ৪ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ প্রধানমন্ত্রী আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের মেট্রোরেল চলাচলের শুভ উদ্বোধন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার (২০ জানুয়ারি) থেকে মেট্রোরেল শুক্রবার ব্যতীত প্রতিদিন উত্তরা উত্তর মেট্রোরেল স্টেশন থেকে মতিঝিলের উদ্দেশ্যে সকাল ৭ টা ১০ মিনিটে যাত্রা শুরু করবে এবং মতিঝিল থেকে সর্বশেষ মেট্রো ট্রেন রাত ৮ টা ৪০ মিনিটে উত্তরা উত্তর মেট্রোরেল স্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা মহানগরী ও তৎসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে ও পরিবেশ উন্নয়নে অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর আওতায় ৬ টি মেট্রোরেলের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার নিমিত্ত সরকার সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ গ্রহণ করেছে। এই কর্মপরিকল্পনা অনুসরণে এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫: নর্দার্ন রুট এবং এমআরটি লাইন-৫: সাউদার্ন রুট এর নির্মাণ কাজ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে। অপর দুইটি মেট্রোরেল লাইন এমআরটি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণের নিমিত্তে সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৬টি মেট্রোরেল স্টেশন বিশিষ্ট এমআরটি লাইন-৬ এর ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এমআরটি লাইন-৬ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বর্ধিত করার নিমিত্ত নির্মাণ কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ২৫ শতাংশ। আগামী ২০২৫ সালের জুন মাসে এই অংশের শুভ উদ্বোধন করা যাবে। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯.৮৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১২টি পাতাল মেট্রোরেল স্টেশন বিশিষ্ট বিমানবন্দর রুট এবং নতুনবাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৯টি মেট্রোরেল স্টেশন বিশিষ্ট পূর্বাচল রুট সমন্বয়ে মোট ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ বাস্তবায়নের নিমিত্তে গতবছরের ২ ফেব্রুয়ারি সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। আগামী সেপ্টেম্বর ২০২৪ মাসে এমআরটি লাইন-১ এর পাতাল অংশের কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করছি।
টিটু মিয়ার চার ঘণ্টার ‘যন্ত্রণা’ মুছে দিল মেট্রো রেল: ক্যাপশন: উত্তরা থেকে মতিঝিল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে গতকাল শনিবার।
মিরপুরের বাসিন্দা টিটু মিয়া ২৫ বছর ধরে কাপড়ের ব্যবসা করছেন গুলিস্তানে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে যানজট আর যাতায়াতের ভোগান্তি। আসা-যাওয়া মিলিয়ে চার ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছিল। হঠাৎ তার ‘অসহ্যকর’ ওই চার ঘণ্টা পথ কমে দাঁড়াচ্ছে ২২ মিনিট করে ৪৪ মিনিট।
গতকাল শনিবার সকালে টিটু মিয়া মিরপুর থেকে গুলিস্তানে যেতে চড়ে বসেন মেট্রো ট্রেনে, মাত্র ২২ মিনিটে সচিবালয় স্টেশনে নেমে পৌঁছে যান তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এখন থেকে রাতেও ফিরতেও ট্রেন পাবেন, তাই দুর্ভোগ হবে না। এখন থেকে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে উত্তরা স্টেশন ছাড়ছে প্রথম ট্রেন। আর মতিঝিল থেকে শেষ ট্রেন ছেড়ে যাবে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে। সকাল ১১টার দিকে গুলিস্তানের উদ্দেশে ট্রেনে চড়ে টিটু মিয়া বলেন, “আজ থেকে রাতেও আরামে বাসায় ফিরতে পারব ভেবে মনে হচ্ছে জীবন থেকে দিনে চার ঘণ্টার যন্ত্রণা মুছে গেল।”
সেই ‘যন্ত্রণা’ কেমন ছিল? টিটু বলেন, “সকাল-রাতে আসা যাওয়ার সময় দুই ঘণ্টা করে। ড্রাইভার, কন্ডাক্টরের ক্যাচাল আর যানজট মিলে যে যন্ত্রণা দিত, মেজাজ খারাপ হয়ে যেত আমার। প্রায় প্রতিদিন মাথাব্যথা করত। “অনেক দিন এমনও হয়েছে যে রাতে বাসায় যাওয়ার জন্য বাসে উঠে মৎস্য ভবনের সামনের সিগন্যালেই আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা বসে আছি। অনেক সময় জেদ করে সেই মৎস ভবন মোড় থেকে হেঁটেই মিরপুর চলে গেছি। “সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেট্রো চলবে শুনে কি যে আনন্দ লাগছে তা বলে বুঝাতে পারব না। মনে হল আমি আরও কিছু দিন বেশি বাঁচব। আর এখন মাত্র ২২ মিনিটে মিরপুর থেকে গুলিস্তানে পৌঁছাব, এটা আমার কাছে বিরাট আনন্দের।”
ইবাহীম খলিল হাইকোর্টে ওকালতি করেন, থাকেন মিরপুরে। জানালেন, যানজটের কারণে সময়মতো আদালতে পৌঁছাতে পারতেন না অনেক সময়। “অনেক সময় কোর্ট ধরার জন্য সকাল ৭টাতেও বাসে উঠেছি। রাতের ঘুমও ভালো হত না পথের টেনশনে। তবে গত কয়েক মাস ধরে সকালের মেট্রো ধরে কোর্টে আসতে পারলেও বিকেলে যাওয়ার সময় বিড়ম্বনায় পড়তাম। তখন কীভাবে বাসায় ফিরব, তা নিয়ে টেনশনে থাকতাম। এখন থেকে ট্রেনে চড়ে নিরাপদে বাসায় যেতে পারব এতে আমার অনেক নির্ভার লাগছে।”
ষাটোর্ধ্ব বেসরকারি চারকরিজীবী মো. নাসির উদ্দিনকে প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যেতে হয়। গত কয়েক মাস ধরে সকালে নির্বিঘেœ যেতে পারলেও ফেরার সময় ছিল ভোগান্তি। “বয়স বেশি বলে বাসে উঠতে পারতাম না। আবার উঠলেও সিট খালি না থাকলে দাঁড়িয়ে থাকতে হলে কষ্ট হত। এখন রাতেও মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো সার্ভিস চালু করায় আরামে আসার যাওয়া করতে পারব।” এ কদিন উত্তরা-মতিঝিল-উত্তরা রুটে মেট্রোরেল চলাচল করছে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। আর উত্তরা-আগারগাঁও-উত্তরা রুটে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলছে ট্রেন। এখন থেকে পুরো পথেই ট্রেন চলবে সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। সকাল ৭টা ১০ থেকে সাড়ে ১১টা এবং বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেট্রোরেলে পিক আওয়ার ধরা হচ্ছে। মাঝে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অফ পিক আওয়ার। পিক আওয়ারে ১০ মিনিট পরপর ট্রেন স্টেশনে আসবে। অফ পিক আওয়ারে ট্রেন স্টেশনে আসবে ১২ মিনিট পর পর। বর্তমানে দিনে ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫৬ হাজার যাত্রী মেট্রোতে ভ্রমণ করছেন। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। এ বছরের শেষ দিন উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনের সবগুলোই খুলে দেওয়া হয়। মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের কাজ এখনও চলমান। এ বছর শেষের দিকে ওই অংশ চালু করা সম্ভব হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় আরো বেশ কয়েকটি লাইনে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা আছে। সেগুলো চালু হলে যানজট পরিস্থিতি সহনীয় হবে বলে আশা করছে সরকার।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মেট্রোরেল ২০৩০ সালের মধ্যে চালু হবে ছয়টি লাইন

আপডেট সময় : ০২:৪৪:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানী ঢাকা যানজট কমাতে ও নগরবাসীকে দ্রুত যাত্রা সেবা দিতে ২০৩০ সালের মধ্যে মেট্রোরেলের ছয়টি লাইন চালু হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
গতকাল শনিবার উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের ডিপোতে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ উদ্বোধন শেষে একথা বলেন তিনি। এসময় রাজধানীর উত্তরা থেকে টঙ্গি পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণের জন্য সমীক্ষা চলছে বলে জানিয়েছেন সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের বলেন, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত অংশের নির্মাণ কাজ আগামী বছরে জুনে শেষ হবে। বিশ্ব ইজতেমা, বইমেলা সহ বিভিন্ন দিবসে মেট্রোরেলের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেলে যাত্রীদের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ২০৩০ সাল নাগাদ চালু হবে মেট্রোরেলের ছয়টি লাইন। ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। দিয়াবাড়িস্থ ডিএমটিসিএল ভবনে বঙ্গবন্ধু কর্নারের শুভ উদ্বোধন করা হল। এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মেট্রোরেল একটি অনন্য মাইফলক। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ এমআরটি লাইন-৬ এর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের শুভ উদ্বোধন করেছিলেন। পরবর্তিতে ৪ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ প্রধানমন্ত্রী আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের মেট্রোরেল চলাচলের শুভ উদ্বোধন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার (২০ জানুয়ারি) থেকে মেট্রোরেল শুক্রবার ব্যতীত প্রতিদিন উত্তরা উত্তর মেট্রোরেল স্টেশন থেকে মতিঝিলের উদ্দেশ্যে সকাল ৭ টা ১০ মিনিটে যাত্রা শুরু করবে এবং মতিঝিল থেকে সর্বশেষ মেট্রো ট্রেন রাত ৮ টা ৪০ মিনিটে উত্তরা উত্তর মেট্রোরেল স্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা মহানগরী ও তৎসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে ও পরিবেশ উন্নয়নে অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর আওতায় ৬ টি মেট্রোরেলের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার নিমিত্ত সরকার সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ গ্রহণ করেছে। এই কর্মপরিকল্পনা অনুসরণে এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫: নর্দার্ন রুট এবং এমআরটি লাইন-৫: সাউদার্ন রুট এর নির্মাণ কাজ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে। অপর দুইটি মেট্রোরেল লাইন এমআরটি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণের নিমিত্তে সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৬টি মেট্রোরেল স্টেশন বিশিষ্ট এমআরটি লাইন-৬ এর ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এমআরটি লাইন-৬ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বর্ধিত করার নিমিত্ত নির্মাণ কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ২৫ শতাংশ। আগামী ২০২৫ সালের জুন মাসে এই অংশের শুভ উদ্বোধন করা যাবে। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯.৮৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১২টি পাতাল মেট্রোরেল স্টেশন বিশিষ্ট বিমানবন্দর রুট এবং নতুনবাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৯টি মেট্রোরেল স্টেশন বিশিষ্ট পূর্বাচল রুট সমন্বয়ে মোট ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ বাস্তবায়নের নিমিত্তে গতবছরের ২ ফেব্রুয়ারি সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। আগামী সেপ্টেম্বর ২০২৪ মাসে এমআরটি লাইন-১ এর পাতাল অংশের কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করছি।
টিটু মিয়ার চার ঘণ্টার ‘যন্ত্রণা’ মুছে দিল মেট্রো রেল: ক্যাপশন: উত্তরা থেকে মতিঝিল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে গতকাল শনিবার।
মিরপুরের বাসিন্দা টিটু মিয়া ২৫ বছর ধরে কাপড়ের ব্যবসা করছেন গুলিস্তানে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে যানজট আর যাতায়াতের ভোগান্তি। আসা-যাওয়া মিলিয়ে চার ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছিল। হঠাৎ তার ‘অসহ্যকর’ ওই চার ঘণ্টা পথ কমে দাঁড়াচ্ছে ২২ মিনিট করে ৪৪ মিনিট।
গতকাল শনিবার সকালে টিটু মিয়া মিরপুর থেকে গুলিস্তানে যেতে চড়ে বসেন মেট্রো ট্রেনে, মাত্র ২২ মিনিটে সচিবালয় স্টেশনে নেমে পৌঁছে যান তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এখন থেকে রাতেও ফিরতেও ট্রেন পাবেন, তাই দুর্ভোগ হবে না। এখন থেকে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে উত্তরা স্টেশন ছাড়ছে প্রথম ট্রেন। আর মতিঝিল থেকে শেষ ট্রেন ছেড়ে যাবে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে। সকাল ১১টার দিকে গুলিস্তানের উদ্দেশে ট্রেনে চড়ে টিটু মিয়া বলেন, “আজ থেকে রাতেও আরামে বাসায় ফিরতে পারব ভেবে মনে হচ্ছে জীবন থেকে দিনে চার ঘণ্টার যন্ত্রণা মুছে গেল।”
সেই ‘যন্ত্রণা’ কেমন ছিল? টিটু বলেন, “সকাল-রাতে আসা যাওয়ার সময় দুই ঘণ্টা করে। ড্রাইভার, কন্ডাক্টরের ক্যাচাল আর যানজট মিলে যে যন্ত্রণা দিত, মেজাজ খারাপ হয়ে যেত আমার। প্রায় প্রতিদিন মাথাব্যথা করত। “অনেক দিন এমনও হয়েছে যে রাতে বাসায় যাওয়ার জন্য বাসে উঠে মৎস্য ভবনের সামনের সিগন্যালেই আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা বসে আছি। অনেক সময় জেদ করে সেই মৎস ভবন মোড় থেকে হেঁটেই মিরপুর চলে গেছি। “সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেট্রো চলবে শুনে কি যে আনন্দ লাগছে তা বলে বুঝাতে পারব না। মনে হল আমি আরও কিছু দিন বেশি বাঁচব। আর এখন মাত্র ২২ মিনিটে মিরপুর থেকে গুলিস্তানে পৌঁছাব, এটা আমার কাছে বিরাট আনন্দের।”
ইবাহীম খলিল হাইকোর্টে ওকালতি করেন, থাকেন মিরপুরে। জানালেন, যানজটের কারণে সময়মতো আদালতে পৌঁছাতে পারতেন না অনেক সময়। “অনেক সময় কোর্ট ধরার জন্য সকাল ৭টাতেও বাসে উঠেছি। রাতের ঘুমও ভালো হত না পথের টেনশনে। তবে গত কয়েক মাস ধরে সকালের মেট্রো ধরে কোর্টে আসতে পারলেও বিকেলে যাওয়ার সময় বিড়ম্বনায় পড়তাম। তখন কীভাবে বাসায় ফিরব, তা নিয়ে টেনশনে থাকতাম। এখন থেকে ট্রেনে চড়ে নিরাপদে বাসায় যেতে পারব এতে আমার অনেক নির্ভার লাগছে।”
ষাটোর্ধ্ব বেসরকারি চারকরিজীবী মো. নাসির উদ্দিনকে প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যেতে হয়। গত কয়েক মাস ধরে সকালে নির্বিঘেœ যেতে পারলেও ফেরার সময় ছিল ভোগান্তি। “বয়স বেশি বলে বাসে উঠতে পারতাম না। আবার উঠলেও সিট খালি না থাকলে দাঁড়িয়ে থাকতে হলে কষ্ট হত। এখন রাতেও মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো সার্ভিস চালু করায় আরামে আসার যাওয়া করতে পারব।” এ কদিন উত্তরা-মতিঝিল-উত্তরা রুটে মেট্রোরেল চলাচল করছে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। আর উত্তরা-আগারগাঁও-উত্তরা রুটে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলছে ট্রেন। এখন থেকে পুরো পথেই ট্রেন চলবে সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। সকাল ৭টা ১০ থেকে সাড়ে ১১টা এবং বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেট্রোরেলে পিক আওয়ার ধরা হচ্ছে। মাঝে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অফ পিক আওয়ার। পিক আওয়ারে ১০ মিনিট পরপর ট্রেন স্টেশনে আসবে। অফ পিক আওয়ারে ট্রেন স্টেশনে আসবে ১২ মিনিট পর পর। বর্তমানে দিনে ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫৬ হাজার যাত্রী মেট্রোতে ভ্রমণ করছেন। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। এ বছরের শেষ দিন উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনের সবগুলোই খুলে দেওয়া হয়। মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের কাজ এখনও চলমান। এ বছর শেষের দিকে ওই অংশ চালু করা সম্ভব হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় আরো বেশ কয়েকটি লাইনে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা আছে। সেগুলো চালু হলে যানজট পরিস্থিতি সহনীয় হবে বলে আশা করছে সরকার।