ঢাকা ১০:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

মেট্রোরেল যুগে বাংলাদেশ

  • আপডেট সময় : ০২:০২:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২২
  • ১১৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : খুলেছে দ্বিতীয় স্বপ্নের দ্বার। পদ্মাসেতুর পর এবার বাঙালি জাতির আরও একটি অবিশ্বাস্য স্বপ্নপূরণ হলো। যানজটের নগরী ঢাকায় বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের মেট্রোরেলের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরমধ্য দিয়ে যাতায়াতের কষ্ট লাঘব হবে শত বছরের পুরনো এই নগরীর।
গতকাল বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার পর উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের সি-১ ব্লকের খেলার মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নামফলক উন্মোচন করে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন। এসময় তার সঙ্গে জাতির পিতার কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিনুল্লা নুরী, ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিল
মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী: মেট্রোরেলের উদ্বোধনী যাত্রায় প্রথম যাত্রী হিসেবে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ট্রেন ছাড়ে ১টা ৫৩ মিনিটে। আর আগারগাঁও পৌঁছায় ২টা ১১ মিনিটে। প্রধানমন্ত্রীর ট্রেনের চালক ছিলেন মরিয়ম আফিজা, যিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর করে মেট্রোরেলের চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। এই যাত্রায় শেখ হাসিনার সহযাত্রী ছিলেন দুই শতাধিক নাগরিক, যাদের মধ্যে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম, পোশাক কর্মী, রিকশা চালক, সবজি বিক্রেতা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, কূটনীতিক আর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
ট্রেনে প্রধানমন্ত্রী ও তার বোন শেখ রেহানা মাঝের আসনে বসেছিলেন আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা মতিয়া চৌধুরী। যাত্রাপথে আসন থেকে উঠে অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। ধীর গতিতে চলে ১৮ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী দেশের প্রথম মেট্রোরেল। বেলা ২টা ১১ মিনিটে আগারগাঁও স্টেশনে নেমে অপেক্ষমান গাড়িতে চড়ে প্রধানমন্ত্রী চলে যান গণভবনের দিকে।
উদ্বোধনের পর টিকেট কেটে মেট্রোরেলের যাত্রী হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে তিনি অবতীর্ণ হন গার্ডের ভূমিকায়। সবুজ পাতাকা নেড়ে মেট্রো ট্রেন চলাচলের সবুজ সংকেত তিনি দেন। তারপর সেই পতাকায় স্বাক্ষরও করেন সরকারপ্রধান।
বুধবার সকালে দিয়াবাড়ি স্কুলের মাঠে সুধী সমাবেশে মেট্রোরেলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি উত্তরা উত্তর স্টেশন ঘুরে দেখেন এবং বুথ থেকে মেট্রো রেলের টিকেট কাটেন। পরে মেট্রোরেলের যাত্রী হয়ে রওনা দেন আগারগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে।
মুকুটে আরেক পালক: মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক দিতে পারলাম, ঢাকাবাসীকে, আরেকটি পালক সংযোজিত করতে পারলাম।”
বাংলাদেশ দেখিয়েছে: ওবায়দুল কাদের: সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “বাংলাদেশ করে দেখিয়েছে। মেট্রোরেল আর স্বপ্ন নয়, মেট্রো রেল এখন বাস্তব।”
তেঁতুল চারা রোপণ: দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করার পর উত্তরা উত্তর স্টেশনে একটি তেঁতুল গাছের চারা রোপণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকালে দিয়াবাড়ি স্কুলের মাঠে সুধী সমাবেশে উপস্থিত হয়ে প্রথমে ফলক উন্মোচন করে মেট্রোরেলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সরকারপ্রধান। পরে সুধী সমাবেশে যোগ দেন। সেখানে বক্তৃতা করার পর মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করেন শেখ হাসিনা। পরে তাকে উত্তরা উত্তর স্টেশন ঘুরিয়ে দেখানো হয়। স্টেশন দেখার পর ফলকের পাশে একটি তেঁতুল গাছের চারা রোপণ করেন তিনি।
এগিয়ে যাবে বাঙালি দুর্বার গতিতে: দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘হবে জয়’ কবিতার শরণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, “অসম সাহসে আমরা অসীম সম্ভাবনার পথে ছুটিয়া চলেছি, সময় কোথায় পিছে চাব কোনো মতে!”
এই কবিতাংশের সঙ্গে যুক্ত করে বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এগিয়ে যাব আমরা দুর্বার গতিতে, এগিয়ে যাবে বাঙালি দুর্বার গতিতে। গড়ে তুলব সকল বাধা অতিক্রম করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।”
মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিকভাবে মেট্রোরেল ব্যবহার করার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “একটা অনুরোধ থাকবে, অনেক টাকা খরচ করে এই মেট্রোরেল করা হয়েছে। এটাকে সংরক্ষণ করা, এটার মান নিশ্চিত রাখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা- এই সবকিছু কিন্তু যারা ব্যবহার করবেন তাদের দায়িত্ব। “এখানে অনেক আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার হয়েছে। এই সমস্ত জিনিস যেন নষ্ট না হয়। ব্যবহারের ক্ষেত্রে সকলে যতœবান হবেন। খেয়াল রাখবেন কেউ যেন আমাদের রেল স্টেশনগুলিতে আবর্জনা-ময়লা না ফেলে, অপরিচ্ছন্ন করতে না পারে- সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।” সরকারপ্রধান বলেন, “পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সুন্দরভাবে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে এটা ব্যবহার করার জন্য আমি সবাইকে আন্তরিক আবেদন জানাচ্ছি, অনুরোধ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ জানাব, যদি আপনারা কথাগুলি মেনে চলেন।”
তাদের স্মৃতি যেন স্মরণে থাকে: মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামালায় নিহত জাপানি নাগরিককে স্মরণ করেছেন। ২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ের ওই ঘটনার পর মেট্রোরেলের কাজ পুনরায় চালু করার পেছনে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র যে ভূমিকা, তাও স্মরণ করেছেন শেখ হাসিনা। জাপানি নাগরিকদের স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মাণের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের স্মৃতি যেন স্মরণে থাকে, আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” ঢাকার মেট্র্রোরেল নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের কিছুদিন পর ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় সাত জাপানি নাগরিক নিহত হন। ওই হামলায় মোট ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। দুই নারীসহ সাত জাপানি নাগরিকের মধ্যে ছয় জন ছিলেন দুটি মেট্রো রেল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত।
গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্প পর্যন্ত এমআরটি-১ এবং নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে বাড্ডা, মিরপুর গাবতলী, ধানম-ি, বসুন্ধরা সিটি (পান্থপথ) হয়ে হাতিরঝিল লিংক রোড পর্যন্ত এমআরটি-৫ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাছাইয়ের কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা। ওই হামলার পর জাইকা ও ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদুতসহ বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা বেশির ভাগ জাপানি নিজ দেশে ফিরে যান। পরে বাংলাদেশের তরফ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে সেপ্টেম্বরে জাপানিদের ফিরিয়ে আনা হয়। হামলায় নিহতদের মধ্যে হিরোশি তানাকা, হিদেকি হাশিমতো ও নোবুহিরু কুরোসাকি ছিলেন ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্টস গ্লোবাল লিমিটেডের কর্মকর্তা। আর নিহত ওকামুরা মাকোতো, ইউকো সাকাই, শিমোদায়রা রুই ছিলেন এএলএমইসি করপোরেশনের কর্মকর্তা। বাকি একজন কোহিও ওগাসাওয়ারা ছিলেন কাটাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যুক্ত। তবে মেট্রো রেলের কাজে তার সম্পৃক্ততা ছিল না। এছাড়া হলি আর্টিজানে হামলায় আহত হয়েছিলেন যানজট নিরসনের জন্য প্রণয়ন করা কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) সংশোধন দলের প্রধান ওয়াতানা বি তামাকি। এমআরটি লাইন-১ ও ৫-এর সম্ভাব্যতা যাছাই দলের প্রধানও ছিলেন তিনি। চলতি বছরের জুলাইয়ে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রো রেল ডিপোতে নিহতদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছে সরকার। তাদের নির্মম প্রাণক্ষয়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি ও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।” চলতি বছর ঘাতকের গুলিতে প্রাণ হারানো শিনজো আবের ভূমিকা কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ওই ঘটনার পর কিছুদিনের জন্য কাজ বন্ধ ছিল; তার নির্দেশে আবার কার্যক্রম শুরু হয়।”
প্রযুক্তিতে চারটি মাইলফলক ছুঁলো বাংলাদেশ: মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ চারটি মাইলফলক ছুঁয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এরমধ্যে প্রথমত, মেট্রোরেল নিজেই একটি মাইল ফলক। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে প্রথম বৈদ্যুতিক যানের যুগে প্রবেশ করলো। তৃতীয়ত, ডিজিটাল রিমোট কন্ট্রোল যান এটি, যেটি স্মার্ট বাংলাদেশের বিনির্মাণের একটি ধাপে এগুলো বাংলাদেশ। চতুর্থত, বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন যানের যুগে প্রবেশ করল, এটি ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার দ্রুতগতিতে চলবে। মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নে আরেকটি পালক মেট্রোরেল। আরেকটি নতুন অহংকারের পালক বাংলাদেশের মানুষের মাথার মুকুটে সংযোজন করলাম।
মেট্রোরেলের ফলে গাড়ি কমবে সাশ্রয় হবে জ্বালানির: ঢাকায় উদ্বোধন হওয়া মেট্রোরেল সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত। বৈদ্যুতিক ট্রেন হওয়ায় এটি পরিবেশের ক্ষতি করবে না। পাশাপাশি মেট্রোরেলের কারণে ঢাকায় জ্বালানিচালিত গাড়ির ব্যবহারও কমবে। জ্বালানির ব্যবহার কমলে পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন ছিদ্দিক মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য দেন। মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে বুধবার উত্তরার দিয়াবাড়ী প্রান্তে সুধী সমাবেশে তিনি বক্তব্য দেন। ডিএমটিসিএল এমডি বলেন, ‘মেট্রোরেলে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবে। সেই হিসাবে প্রতিদিন ৫ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।’
রাজধানীতে আরও তিনটি মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এমআরটি লাইন-১ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল। আগামী জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী এ লাইনের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’
থিম সং: উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এরিয়াল ভিউ প্রদর্শনীতে বাংলাদেশে মেট্রোরেল নির্মাণযজ্ঞের ইতিবৃত্ত তুলে ধরা হয়। পরে মেট্রোরেলের থিম সং ‘অর্থনীতির চাকা ঘুরবে পেছনে ফেলে যানজট’ পরিবেশন করেন সংগীত শিল্পী, এমপি মমতাজ বেগম।
তার গানের কথা বলা হয়-
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায়, স্বপ্নের মেট্রো রেলের শুভ যাত্রায়।
শেখ হাসিনা আজ অনন্য উচ্চতায়; মেট্রো রেল, আমাদের স্বপ্নের মেট্রো রেল।
বাঁচবে সময়, বাঁচবে পরিবেশ; অর্থনীতির চাকা ঘুরবে পেছনে ফেলে যানজট, এগিয়ে চলবে বাংলাদেশ।
দীপু মনির উচ্ছ্বাস: যানজটের নগরী ঢাকায় বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয়েছে। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার পর উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের সি-১ ব্লকের খেলার মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নামফলক উন্মোচন করে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর মেট্রোরেলে চড়ে মাত্র ১৭ মিনিটে উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বহুল প্রতীক্ষিত এ উড়াল ট্রেনে প্রধানমন্ত্রীর ভ্রমণসঙ্গী ছিলেন দুই শতাধিক যাত্রী। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন পদস্থ ব্যক্তি এবং নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ছিলেন।
এছাড়া প্রথম ট্রেনের নির্ধারিত যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী, তিনজন উপমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর ছয় উপদেষ্টা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৯ সদস্য, ঢাকা মহানগরের ১২টি আসনের সংসদ সদস্য, সচিব এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র। এদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। মেট্রোরেলের উদ্বোধনের পর নিজের ফেসবুক ওয়ালে নিজের তোলা কয়েকটি সেলফি পোস্ট করেছেন তিনি। ক্যাপশনে দীপু মনি লিখেছেন, মেট্রোরেলে ওঠার জন্য প্রস্তুত!
পরে আরেকটি পোস্ট দিয়ে তিনি লিখেছেন, উদ্বোধন হলো মেট্রোরেলের!!! অভিনন্দন, অভিবাদন, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা!!! স্টেশন এলাকা ও রেলকোচে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে দীপু মনিকে। এসময় মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্যদেরও ছবি তুলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মেট্রোরেল যুগে বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ০২:০২:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : খুলেছে দ্বিতীয় স্বপ্নের দ্বার। পদ্মাসেতুর পর এবার বাঙালি জাতির আরও একটি অবিশ্বাস্য স্বপ্নপূরণ হলো। যানজটের নগরী ঢাকায় বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের মেট্রোরেলের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরমধ্য দিয়ে যাতায়াতের কষ্ট লাঘব হবে শত বছরের পুরনো এই নগরীর।
গতকাল বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার পর উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের সি-১ ব্লকের খেলার মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নামফলক উন্মোচন করে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন। এসময় তার সঙ্গে জাতির পিতার কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিনুল্লা নুরী, ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিল
মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী: মেট্রোরেলের উদ্বোধনী যাত্রায় প্রথম যাত্রী হিসেবে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ট্রেন ছাড়ে ১টা ৫৩ মিনিটে। আর আগারগাঁও পৌঁছায় ২টা ১১ মিনিটে। প্রধানমন্ত্রীর ট্রেনের চালক ছিলেন মরিয়ম আফিজা, যিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর করে মেট্রোরেলের চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। এই যাত্রায় শেখ হাসিনার সহযাত্রী ছিলেন দুই শতাধিক নাগরিক, যাদের মধ্যে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম, পোশাক কর্মী, রিকশা চালক, সবজি বিক্রেতা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, কূটনীতিক আর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
ট্রেনে প্রধানমন্ত্রী ও তার বোন শেখ রেহানা মাঝের আসনে বসেছিলেন আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা মতিয়া চৌধুরী। যাত্রাপথে আসন থেকে উঠে অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। ধীর গতিতে চলে ১৮ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী দেশের প্রথম মেট্রোরেল। বেলা ২টা ১১ মিনিটে আগারগাঁও স্টেশনে নেমে অপেক্ষমান গাড়িতে চড়ে প্রধানমন্ত্রী চলে যান গণভবনের দিকে।
উদ্বোধনের পর টিকেট কেটে মেট্রোরেলের যাত্রী হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে তিনি অবতীর্ণ হন গার্ডের ভূমিকায়। সবুজ পাতাকা নেড়ে মেট্রো ট্রেন চলাচলের সবুজ সংকেত তিনি দেন। তারপর সেই পতাকায় স্বাক্ষরও করেন সরকারপ্রধান।
বুধবার সকালে দিয়াবাড়ি স্কুলের মাঠে সুধী সমাবেশে মেট্রোরেলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি উত্তরা উত্তর স্টেশন ঘুরে দেখেন এবং বুথ থেকে মেট্রো রেলের টিকেট কাটেন। পরে মেট্রোরেলের যাত্রী হয়ে রওনা দেন আগারগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে।
মুকুটে আরেক পালক: মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক দিতে পারলাম, ঢাকাবাসীকে, আরেকটি পালক সংযোজিত করতে পারলাম।”
বাংলাদেশ দেখিয়েছে: ওবায়দুল কাদের: সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “বাংলাদেশ করে দেখিয়েছে। মেট্রোরেল আর স্বপ্ন নয়, মেট্রো রেল এখন বাস্তব।”
তেঁতুল চারা রোপণ: দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করার পর উত্তরা উত্তর স্টেশনে একটি তেঁতুল গাছের চারা রোপণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকালে দিয়াবাড়ি স্কুলের মাঠে সুধী সমাবেশে উপস্থিত হয়ে প্রথমে ফলক উন্মোচন করে মেট্রোরেলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সরকারপ্রধান। পরে সুধী সমাবেশে যোগ দেন। সেখানে বক্তৃতা করার পর মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করেন শেখ হাসিনা। পরে তাকে উত্তরা উত্তর স্টেশন ঘুরিয়ে দেখানো হয়। স্টেশন দেখার পর ফলকের পাশে একটি তেঁতুল গাছের চারা রোপণ করেন তিনি।
এগিয়ে যাবে বাঙালি দুর্বার গতিতে: দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘হবে জয়’ কবিতার শরণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, “অসম সাহসে আমরা অসীম সম্ভাবনার পথে ছুটিয়া চলেছি, সময় কোথায় পিছে চাব কোনো মতে!”
এই কবিতাংশের সঙ্গে যুক্ত করে বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এগিয়ে যাব আমরা দুর্বার গতিতে, এগিয়ে যাবে বাঙালি দুর্বার গতিতে। গড়ে তুলব সকল বাধা অতিক্রম করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।”
মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিকভাবে মেট্রোরেল ব্যবহার করার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “একটা অনুরোধ থাকবে, অনেক টাকা খরচ করে এই মেট্রোরেল করা হয়েছে। এটাকে সংরক্ষণ করা, এটার মান নিশ্চিত রাখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা- এই সবকিছু কিন্তু যারা ব্যবহার করবেন তাদের দায়িত্ব। “এখানে অনেক আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার হয়েছে। এই সমস্ত জিনিস যেন নষ্ট না হয়। ব্যবহারের ক্ষেত্রে সকলে যতœবান হবেন। খেয়াল রাখবেন কেউ যেন আমাদের রেল স্টেশনগুলিতে আবর্জনা-ময়লা না ফেলে, অপরিচ্ছন্ন করতে না পারে- সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।” সরকারপ্রধান বলেন, “পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সুন্দরভাবে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে এটা ব্যবহার করার জন্য আমি সবাইকে আন্তরিক আবেদন জানাচ্ছি, অনুরোধ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ জানাব, যদি আপনারা কথাগুলি মেনে চলেন।”
তাদের স্মৃতি যেন স্মরণে থাকে: মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামালায় নিহত জাপানি নাগরিককে স্মরণ করেছেন। ২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ের ওই ঘটনার পর মেট্রোরেলের কাজ পুনরায় চালু করার পেছনে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র যে ভূমিকা, তাও স্মরণ করেছেন শেখ হাসিনা। জাপানি নাগরিকদের স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মাণের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের স্মৃতি যেন স্মরণে থাকে, আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” ঢাকার মেট্র্রোরেল নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের কিছুদিন পর ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় সাত জাপানি নাগরিক নিহত হন। ওই হামলায় মোট ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। দুই নারীসহ সাত জাপানি নাগরিকের মধ্যে ছয় জন ছিলেন দুটি মেট্রো রেল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত।
গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্প পর্যন্ত এমআরটি-১ এবং নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে বাড্ডা, মিরপুর গাবতলী, ধানম-ি, বসুন্ধরা সিটি (পান্থপথ) হয়ে হাতিরঝিল লিংক রোড পর্যন্ত এমআরটি-৫ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাছাইয়ের কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা। ওই হামলার পর জাইকা ও ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদুতসহ বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা বেশির ভাগ জাপানি নিজ দেশে ফিরে যান। পরে বাংলাদেশের তরফ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে সেপ্টেম্বরে জাপানিদের ফিরিয়ে আনা হয়। হামলায় নিহতদের মধ্যে হিরোশি তানাকা, হিদেকি হাশিমতো ও নোবুহিরু কুরোসাকি ছিলেন ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্টস গ্লোবাল লিমিটেডের কর্মকর্তা। আর নিহত ওকামুরা মাকোতো, ইউকো সাকাই, শিমোদায়রা রুই ছিলেন এএলএমইসি করপোরেশনের কর্মকর্তা। বাকি একজন কোহিও ওগাসাওয়ারা ছিলেন কাটাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যুক্ত। তবে মেট্রো রেলের কাজে তার সম্পৃক্ততা ছিল না। এছাড়া হলি আর্টিজানে হামলায় আহত হয়েছিলেন যানজট নিরসনের জন্য প্রণয়ন করা কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) সংশোধন দলের প্রধান ওয়াতানা বি তামাকি। এমআরটি লাইন-১ ও ৫-এর সম্ভাব্যতা যাছাই দলের প্রধানও ছিলেন তিনি। চলতি বছরের জুলাইয়ে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রো রেল ডিপোতে নিহতদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছে সরকার। তাদের নির্মম প্রাণক্ষয়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি ও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।” চলতি বছর ঘাতকের গুলিতে প্রাণ হারানো শিনজো আবের ভূমিকা কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ওই ঘটনার পর কিছুদিনের জন্য কাজ বন্ধ ছিল; তার নির্দেশে আবার কার্যক্রম শুরু হয়।”
প্রযুক্তিতে চারটি মাইলফলক ছুঁলো বাংলাদেশ: মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ চারটি মাইলফলক ছুঁয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এরমধ্যে প্রথমত, মেট্রোরেল নিজেই একটি মাইল ফলক। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে প্রথম বৈদ্যুতিক যানের যুগে প্রবেশ করলো। তৃতীয়ত, ডিজিটাল রিমোট কন্ট্রোল যান এটি, যেটি স্মার্ট বাংলাদেশের বিনির্মাণের একটি ধাপে এগুলো বাংলাদেশ। চতুর্থত, বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন যানের যুগে প্রবেশ করল, এটি ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার দ্রুতগতিতে চলবে। মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নে আরেকটি পালক মেট্রোরেল। আরেকটি নতুন অহংকারের পালক বাংলাদেশের মানুষের মাথার মুকুটে সংযোজন করলাম।
মেট্রোরেলের ফলে গাড়ি কমবে সাশ্রয় হবে জ্বালানির: ঢাকায় উদ্বোধন হওয়া মেট্রোরেল সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত। বৈদ্যুতিক ট্রেন হওয়ায় এটি পরিবেশের ক্ষতি করবে না। পাশাপাশি মেট্রোরেলের কারণে ঢাকায় জ্বালানিচালিত গাড়ির ব্যবহারও কমবে। জ্বালানির ব্যবহার কমলে পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন ছিদ্দিক মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য দেন। মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে বুধবার উত্তরার দিয়াবাড়ী প্রান্তে সুধী সমাবেশে তিনি বক্তব্য দেন। ডিএমটিসিএল এমডি বলেন, ‘মেট্রোরেলে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবে। সেই হিসাবে প্রতিদিন ৫ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।’
রাজধানীতে আরও তিনটি মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এমআরটি লাইন-১ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল। আগামী জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী এ লাইনের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’
থিম সং: উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এরিয়াল ভিউ প্রদর্শনীতে বাংলাদেশে মেট্রোরেল নির্মাণযজ্ঞের ইতিবৃত্ত তুলে ধরা হয়। পরে মেট্রোরেলের থিম সং ‘অর্থনীতির চাকা ঘুরবে পেছনে ফেলে যানজট’ পরিবেশন করেন সংগীত শিল্পী, এমপি মমতাজ বেগম।
তার গানের কথা বলা হয়-
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায়, স্বপ্নের মেট্রো রেলের শুভ যাত্রায়।
শেখ হাসিনা আজ অনন্য উচ্চতায়; মেট্রো রেল, আমাদের স্বপ্নের মেট্রো রেল।
বাঁচবে সময়, বাঁচবে পরিবেশ; অর্থনীতির চাকা ঘুরবে পেছনে ফেলে যানজট, এগিয়ে চলবে বাংলাদেশ।
দীপু মনির উচ্ছ্বাস: যানজটের নগরী ঢাকায় বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয়েছে। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার পর উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের সি-১ ব্লকের খেলার মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নামফলক উন্মোচন করে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর মেট্রোরেলে চড়ে মাত্র ১৭ মিনিটে উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বহুল প্রতীক্ষিত এ উড়াল ট্রেনে প্রধানমন্ত্রীর ভ্রমণসঙ্গী ছিলেন দুই শতাধিক যাত্রী। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন পদস্থ ব্যক্তি এবং নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ছিলেন।
এছাড়া প্রথম ট্রেনের নির্ধারিত যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী, তিনজন উপমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর ছয় উপদেষ্টা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৯ সদস্য, ঢাকা মহানগরের ১২টি আসনের সংসদ সদস্য, সচিব এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র। এদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। মেট্রোরেলের উদ্বোধনের পর নিজের ফেসবুক ওয়ালে নিজের তোলা কয়েকটি সেলফি পোস্ট করেছেন তিনি। ক্যাপশনে দীপু মনি লিখেছেন, মেট্রোরেলে ওঠার জন্য প্রস্তুত!
পরে আরেকটি পোস্ট দিয়ে তিনি লিখেছেন, উদ্বোধন হলো মেট্রোরেলের!!! অভিনন্দন, অভিবাদন, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা!!! স্টেশন এলাকা ও রেলকোচে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে দীপু মনিকে। এসময় মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্যদেরও ছবি তুলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে।