প্রযুক্তি ডেস্ক: মেটা নিয়ে এলো তাদের নতুন স্মার্ট চশমা ওরিয়ন। বহু নতুন ফিচার যুক্ত করা হয়েছে এই চশমায়। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফিচার হচ্ছে, এতে যুক্ত থাকছে এআই প্রযুক্তি। চোখের ইশারায় চলবে ক্যামেরা, আঙুল নড়লেই নিয়ন্ত্রণে আসবে ভলিউম এখন আর এসব সিনেমার দৃশ্য নয়, বাস্তবেই সম্ভব করে তুলেছে প্রযুক্তি দানব মেটা।
রে-ব্যান ব্র্যান্ডের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি এই স্মার্ট চশমায় প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে ডান লেন্সে একটি ইন-বিল্ট ডিসপ্লে, যেখানে ব্যবহারকারীরা সরাসরি দেখতে পারবেন হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, গুগল ম্যাপ কিংবা রিয়েলটাইম ভাষান্তর। এটিকে মেটা বলছে “বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত এআই চশমা”।
এব ব্যাপারে মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ বলেন, “এটি এমন এক প্রযুক্তি, যা আপনার চারপাশের জগৎ দেখবে, শুনবে এবং বুঝবে আপনার সঙ্গী হয়ে উঠবে প্রতিটি মুহূর্তে।”
গত ৩০ সেপ্টেম্বর, স্মার্ট চশমাটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, এর দাম দাম ধার্য করা হয়েছে ৭৯৯ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯৭ হাজার টাকা।
চশমাটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে হাতে পরা একটি ‘নিউরাল ব্যান্ড’-এর মাধ্যমে, যা আপনার হাতের সূক্ষ্ম নড়াচড়াও বুঝতে পারে। যেমন, তর্জনীর সঙ্গে বুড়ো আঙুল দু’বার ঠেকালে ডিসপ্লে বন্ধ হয়ে যাবে, বাতাসে অক্ষর এঁকে লেখা যাবে টেক্সট, ছোট্ট এক ইশারায় বাড়ানো যাবে ভলিউম কিংবা ক্যামেরা জুম। মেটা দাবি করছে, এ ব্যান্ড এতটাই সেনসিটিভ যে, আঙুলের সামান্য স্পন্দনও অনুবাদ করতে পারে কমান্ডে।
চশমাটিকে শুধুই একটি ডিভাইস বলা ভুল হবে। এটি যেন চলমান ডিজিটাল সহকারী, যা আপনাকে আরও সংযুক্ত রাখবে চারপাশের জগতের সঙ্গে। মেটা বলছে, এটি ডিজাইনই করা হয়েছে এমনভাবে, যাতে ব্যবহারকারী চোখে চশমা রেখেও থাকেন বাস্তব মুহূর্তে মনোযোগী।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই প্রযুক্তি কি মানুষকে আরও মনোযোগী করে তুলবে, নাকি অমনোযোগিতার আরও এক নতুন রূপ তৈরি করবে? এক প্রযুক্তিবিষয়ক সাংবাদিকের অভিজ্ঞতা বলছে ভিন্ন কথা। তিনি জানান, মেটার এক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে লক্ষ্য করেন, সেই কর্মকর্তা কথোপকথনের সময় চশমার লেন্সে চলতে থাকা গেমে মনোযোগ দিয়েছেন! এই অভিজ্ঞতার পর প্রশ্ন উঠে চশমা কি মানুষকে সামনাসামনি কথায় মনোযোগী করবে, নাকি মনোযোগ কাড়বে লেন্সে চলা অন্য কোনো দৃশ্য?
মেটা যদিও বলছে, “যেমনটা স্মার্টফোন এসেছে, মানুষের ব্যবহার বদলেছে, ঠিক তেমনই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মার্ট চশমাও হয়ে উঠবে আমাদের দৈনন্দিন অংশ।” তবে মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের মস্তিষ্ক একই সময়ে দুটি জিনিসে মনোযোগ দিতে সক্ষম নয়।
মেটা বলছে, গাড়ি চালানোর সময় চশমা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিসপ্লে বন্ধ করে দেবে। তবে ব্যবহারকারী চাইলে তা আবার চালু করতে পারবেন আর এখানেই বিশেষজ্ঞদের আপত্তি। গবেষণায় বলা হয়েছে, হ্যান্ডস-ফ্রি ডিভাইস ব্যবহারের সময় গাড়ি দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৪ গুণ বেড়ে যায়। সুতরাং প্রযুক্তির সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে এক ভয়াবহ দিকও।
ওআ/আপ্র/০২/১০/২০২৫