প্রযুক্তি ডেস্ক: মেটার তৈরি সর্বশেষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সিস্টেম নিজে থেকেই শেখার ক্ষমতা অর্জন করছে এবং সে অনুযায়ী কাজও করছে বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ।
ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এআইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি নীতিমালায় এমন মন্তব্য করেছেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা জাকারবার্গ। তিনি লিখেছেন, মানুষের চেয়ে অধিক বুদ্ধিসম্পন্ন ‘সুপারইন্টেলিজেন্স’ তৈরির পথে একের পর এক ধাপ অতিক্রম করছে এআই। তার মতে, অদূর ভবিষ্যতেই এই ধরনের উন্নত প্রযুক্তি দৃশ্যমান হবে।
গত কয়েক মাসে আমাদের বিভিন্ন এআই সিস্টেমকে নিজে থেকে ধীরে ধীরে আরো উন্নতি করতে দেখছি। এ উন্নতি এখনও ধীর হলেও বিষয়টি অস্বীকার করার মতো নয়।
অনেক শিক্ষাবিদ ও প্রযুক্তি নেতারা বলেছেন, সুপারইন্টেলিজেন্স নিয়ে মূল ভয়ের বিষয়টি হচ্ছে, এআই যদি নিজেই নিজের উন্নয়ন ঘটাতে থাকে তবে এআই একসময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং মানুষের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে নিজেদের নিয়মে কাজ করতে শুরু করবে, যা বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। এসব ভয় সম্পর্কে সরাসরি কিছু না বললেও জাকারবার্গ সতর্ক করে বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের উন্নতির সঙ্গে বড় ধরনের ঝুঁকিও রয়েছে।
আমরা বিশ্বাস করি, সুপারইন্টেলিজেন্সের সুফল পৃথিবীর সবার সঙ্গে যতটা সম্ভব শেয়ার করতে হবে। তবে এর পাশাপাশি সুপারইন্টেলিজেন্স নতুন ধরনের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জও তৈরি করবে, যেগুলো ঠেকানো জরুরি। আমাদের অবশ্যই এসব ঝুঁকি কমাতে কঠোর হতে হবে এবং যে প্রযুক্তি সবার জন্য উন্মোচন করব, সেটি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে-বলেছেন মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ। এরপরও আমরা বিশ্বাস করি, মুক্ত সমাজ গড়তে হলে মানুষের সর্বোচ্চ ক্ষমতায়ন করা প্রয়োজন।
জাকারবার্গ দাবি করেছেন, সুপারইন্টেলিজেন্স নিয়ে মেটার কাজ অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে আলাদা। কারণ, মানুষের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এআই ব্যবহার করছে তারা, কেবল ‘সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ স্বয়ংক্রিয় করার’ জন্য নয়। শত কোটি মানুষ ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো মেটার পণ্য ব্যবহার করেন, তাদের কথা উল্লেখ করে বিলিয়নেয়ার জাকারবার্গ বলেছেন, তার কোম্পানি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে এআইকে সবচেয়ে ভালোভাবে জুড়ে দিতে পারবে। তিনি বলেছেন, পরিকল্পনা সফল হলে সফটওয়্যার তৈরির মতো কাজে কম সময় ব্যয় করবে মানুষ এবং সৃজনশীল কাজ ও অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বেশি সময় দেবে।
কোম্পানিটির প্রন্তিক আয় প্রকাশের ঠিক আগে এআই নিয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জাকারবার্গের এ মেমো সামনে এল, যেখানে এআইতে বড় বিনিয়োগের পর আর্থিক ফলাফলে লাভের মুখ দেখেছে মেটা।
শেয়ার প্রতি কোম্পানিটি আয় করেছে সাত দশমিক ১৪ ডলার এবং মোট আয় হয়েছে চার হাজার সাতশ ৫২ কোটি ডলার, যা ওয়াল স্ট্রিটের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। ওয়াল স্ট্রিটের ধারণা অনুসারে মেটার শেয়ার প্রতি ও মোট আয় হওয়ার কথা ছিল যথাক্রমে পাঁচ দশমিক ৯২ ডলার ও চার হাজার চারশ ৮০ কোটি ডলার।
মেটার শেয়ারের দাম ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর পেছনে কারণ সম্ভবত, বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, এআই উন্নয়নের জন্য করা কোম্পানিটির শত কোটি কোটি ডলারের বড় বিনিয়োগ সফল হবে। ফরেস্টার’-এর গবেষণা পরিচালক মাইক প্রুলক্স বলেছেন, কিছু দিক থেকে এই সুপারইন্টেলিজেন্স তৈরির প্রতিযোগিতাটি ইতিহাসে পিসি, ওয়েব ব্রাউজার, সার্চ ইঞ্জিন ও স্মার্টফোন তৈরির প্রতিযোগিতার মতোই গুরুত্বপূর্ণ এবং যুগান্তকারী হতে পারে। তবে বড় পার্থক্য হচ্ছে এ প্রতিযোগিতা অনেক দ্রুত এগোচ্ছে। কারণ মেটা ও অন্যান্য কোম্পানিও এমন এআই তৈরি করতে চাইছে, যেটি নিজ থেকেই দ্রুত শেখার মাধ্যমে এ উন্নতির গতিকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।